শিক্ষকসংকটের কারণে অচলাবস্থার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজি। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় কলেজটিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করে আবার তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার ছাত্রের বিপরীতে ন্যূনতম ৮০ জন শিক্ষক দরকার। অথচ বর্তমানে সেখানে মাত্র ছয়জন নিয়মিত শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজির ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন বিতরণ শুরু হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার ১০ দিন আগে হঠাৎ করে পুরো ভর্তিপ্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন ভর্তি হতে ইচ্ছুক শত শত শিক্ষার্থী।
গত ৪ জানুয়ারি কলেজের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে এই শিক্ষাবর্ষের ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যাঁরা ভর্তির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের কলেজের হিসাব শাখায় আবেদনপত্র কেনার রসিদ দেখিয়ে ৩০০ টাকা ফিরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। ভর্তি বন্ধ করার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন শাখার এক চিঠিতে বলা হয়, কলেজটিতে বিভিন্ন বিষয়ে যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংখ্যা একেবারেই কম। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়নি। কলেজটি ভর্তির শর্ত পূরণ করলে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শর্ত হিসেবে ওই চিঠিতে বলা হয়, কলেজের পরিধি বিস্তৃত হওয়ায় শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজের স্বার্থে অধ্যক্ষের পাশাপাশি উপাধ্যক্ষের একটি পদ সৃষ্টি করতে হবে। সেই সঙ্গে শূন্যপদগুলো পূরণ করে তিনটি বিভাগে মোট ৮০ জন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
১৯৪৭ সালে ইনস্টিটিউট হিসেবে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষে এটিকে কলেজে উন্নীত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয় এবং এখান থেকে বিএসসি ডিগ্রি দেওয়া শুরু হয়। প্রথম থেকে সুনামের সঙ্গে চললেও ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষক পদ অবলুপ্ত করা হয়। পরে তিনটি বিভাগ খোলা হলেও শিক্ষক বাড়ানো হয়নি।
১৯৯৭ সালে কলেজের পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণের জন্য ৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের অধীনে ২৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে ওই প্রকল্প শেষ হওয়ার পর আবার শুরু হয় শিক্ষকসংকট। অনেক শিক্ষক প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাঁদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। প্রায় তিন বছর বেতন-ভাতাও পাননি। ফলে ধীরে ধীরে তাঁরা যেতে থাকেন। প্রকল্পের ছয়জন শিক্ষক এখনো শিক্ষকতা করছেন। তাঁরা কোনো বেতনাদি পাচ্ছেন না। এর বাইরে এখন তিনটি বিভাগে নিয়মিত (রাজস্ব খাতে) শিক্ষক আছেন মাত্র ছয়জন।
বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ অবস্থায় গত বছর কলেজটি কিছু খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ না থাকায় শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় সে নিয়োগ দিতে দেয়নি। নতুন পদ সৃষ্টির আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি বিধিবিধান মেনে সব প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগবে। কারিগরি অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) হয়ে সব কিছু চূড়ান্ত হবে। সে ক্ষেত্রে এ বছর নতুন ছাত্রভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে চাইলেও সহজে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।
কলেজটিতে কমপক্ষে ৮০ জন শিক্ষক দরকার। সেখানে স্থায়ী শিক্ষক আছেন মাত্র ছয়জন। এত অল্প শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইদ্রীস আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা পদ সৃষ্টির জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। তা এখনো মন্ত্রণালয়ে পৌঁছানো হয়নি। তিনি নিজে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছেন। কিন্তু অধিদপ্তরের মাধ্যমে না হলে মন্ত্রণালয় তা আমলে নেবে না বলে মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ভর্তি বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ তাঁদের রসিদ দেখিয়ে ফরমের টাকা ফেরত নিতে বললেও অনেকে টাকা ফেরত নিচ্ছেন না। নতুন কোনো খবরের আশায় প্রতিদিন তাঁরা ভিড় করছেন কলেজ ক্যাম্পাসে।