পার্ট-১
হ্যালো...
কে আবির। হুম আমি আবির।সোনাবাবুটা আমার আমাকে ভুলে তুমি বার বার কোথায় চলে যাও। তুমি জান না তোমাকে ছাড়া আমি একমুহুর্ত থাকতে পারি না।
তখন ভোর ৪.০০টা প্রচন্ড মানসিক অস্থিরতায় নীলার ঘুম ভেঙে গেল।নীলা অনুভব করল এটা একটা স্বপ্ন ছিল।দীর্ঘ একটি বছর কেটেছে শুধু এই ভেবে আবির ফিরে আসবে।সময়ের স্রোতে ক্ষত বেড়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীর অসার হয়ে আসছে নীলার।
৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তুমি বলেছিলে আমাকে ভুলে যাও।তুমি যেটা চাও সেটা কখনওই হবার নয়।এই কথা শোনার পর কিছু বোঝার আগেই নীলা অজ্ঞান হয়ে যায় জ্ঞান ফিরে দেখে নীলার হোস্টেল এর বান্ধবীরা তার চারদিক ভীর করে আছে।আমি আর কখনো তোমাকে সোনা বলতে পাবো না।আর কখনো পাবো না তোমার হাতে হাত রেখে স্বপ্নিল ভুবনে হেটে চলতে।নীলা বিড় বিড় করে কথাগুলো বলেই চলছে আর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে বারবার। সে কিছুতেই মানতে পারছিল না যে মানুষটা দুই দিন আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলত তুমি হিনা আমার এই পৃথিবী অন্ধকার সে কিনা আজকে অন্য একজন এর কাছে চলে গেছে।তার প্রথম প্রেমিকার কাছে চিরজীবন এর জন্য।
প্রচন্ড যন্ত্রণা আর গ্লানি নীলার বিবেক, বুদ্ধি,হুশ সবকিছু গ্রাস করে ফেলে।পৃথিবীরর সবথেকে জঘন্যতম কাজ যেটা কোন কিছুর সমাধান দিতে পাড়ে না।সেই কাজটি সে করে বসল।সে বিষ পানে নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে সব কিছু ওয়াস করা হয়।রাখে আল্লাহ মারে কে, ঠিক তাই নীলা বেচে গেল।
সেদিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বভালবাসা দিবস।কিন্তু ভালবাসার মানুষ পাসে না থাকলে ভালবাসা দিবস বলে কোন কিছুর আলাদা অনুভূতি মনকে কখনই স্পর্শ করে না। হয়ত তুমি থাকলে একটা গোলাপ হাতে সামনে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতা আর বলতা নীলা আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যেও না।তখন আমিও বলতাম ধুর পাগল তোমাকে ছাড়া কি আমি বাচতে পারব বল।অগোছালো চিন্তাগুলো মাথায় ঘুরপাক করছিল নীলার। হঠাৎ ফোনে রিং বেজে উঠল।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছিলনা নীলা।আবির আমাকে কল করবে তার উপর এই ভালবাসা দিবসে নীলা কেমন যেন অস্থির হয়ে গেল।আবেগে সে কল রিসিভ করতে পারল না।কিছুক্ষন পর একটা ছোট মেসেজ আসল।
নীলু সোনা আমি জানি তুমি আমাকে কখনও মাফ করতে পারবা না।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এখনো তোমাকে অনেক ভালবাসি।তোমাকে প্রতি মুহুর্তে প্রতি সেকেন্ডে আমি আমি চাই।নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি তোমাকে ভুলে যেতে কিন্তু পারি নি।যতই ভুলে যেতে চাই তুমি ততই বেশি কাছে চলে আসো।তোমাকে ছাড়া আমি অর্থহীন। এই ভালবাসা দিবসে আমি তোমাকে আবার বলতে চাই বার বার বলতে চাই তোমাকে ভালবাসি অনেক ভালবাসি।আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে ঘৃণা করে দূরে চলে যাও।সেজন্য তুমি যখন কল দিতা আমি আরো বেশি বেশি কথা বলতাম ফোনে যেন তুমি আমাকে ঘৃণা কর।কারন তুমি যখন জানবা আমার ক্যান্সার সেটা তুমি মেনে নিতে পাবা না।আমাদের কখনো মিল হবে না।আমাকে ভুলে যাও তুমি একটা ভাল ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও।আমি আর বেশি দিন বাঁচব না।
নীলা আবেগ ধরে রাখতে পারল না।চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ছড়ছে।সে সারারাত ঘুমাতে পারল না।অনেক চিন্তা মাথায় উকি দিল।কি করবে কোথায় যাবে কিছু বুঝতে পারছে না।কিন্তু মন তো বোঝে না সে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আবিরের কাছে থাকতে চায়।সে আবিরের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পায় না।অনেক খুজেছে কোথাও পাই নি তাকে।
পার্ট-২
বুকের ভেতর জমানো ভালবাসাকে সঙী করে কেটে গেল পাচটি বছর। নীলা এখনো কুমারী। সে এখন একটি সরকারি হাসপাতালে কাজ করছে।তার এখন একটাই ধ্যান জ্ঞান দরিদ্র মানুষের সেবা করা আর ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা। সে কখনো আবির এর যায়গায় অন্য কাউকে স্থান দিতে পারে নি কখনো পাবেও না।
বছর শেষে নীলার বদলি হয়ে গেল চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে।চট্রগাম নীলা এসেছিল একবার আবিরের সাথে।তাই চট্রগ্রাম আসার পর নীলার বুকের ভিতরের নীরব যন্ত্রণাগুলো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।সে প্রতি রাতে এখনো ঘুমাতে পারে না।
তখন রাত আনুমানিক ১.০০। মেডিকেল থেকে কল আসল ইমারজেন্সি পেসেন্ট আপনাকে এখনি আস্তে হবে।নীলা ছুটে গেল হাসপাতালে।ডেলিভারি কেস বাচ্চা আর মা দুজনের অবস্থা সংকাজনক।অপারেশন করা লাগল ছেলে বাচ্চা হয়েছে।বাইরে বের হয়ে সে পেসেন্ট এর হাসব্যান্ডকে খুজল।পিছন থেকে কে যেন ডেকে বলল আমি পেসেন্ট এর হাসব্যন্ড।নীলা এই দৃশ্য কখনওই কল্পনা করতে পারে নি।যে মানুষটাকে সে এখনো মন থেকে স্বামির আসনে বসিয়ে রেখেছে সে কিনা ঘর করছে অন্য মানুষের ঘর।নীলা অজ্ঞান হয়ে যায়।আবির নীলা কে কোলে নিয়ে কেবিন এর দিক হাটছিল।আবিরের চোখে জ্বল ঝরছে।মানুষ অনেক সময় নিয়তির কাছে বন্দী হয়ে যায় কিছুই করার থাকে না।আবির যে মেয়েটিকে নিয়ে ঘর করছে সে মেয়েটি তার প্রথম প্রেমিকা ঠিক কিন্তু আবিরের সাথে যখন তার ব্রেকাপ হয় তখন আবির সত্যিকার ভালবাসা খুজে পেয়েছিল নীলার কাছে আর নীলাকে সে মন থেকে ভালবেসে ফেলে।কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন।
আবিরের বাবা একবার খুব অসুস্থ হয় তখন আবিরের হাতে হাতে রেখে বলে বাবা আমি চাই তুমি আমার বোনের মেয়েকে বিয়ে কর।।মেয়েটির এই পৃথিবীতে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই ওর মাকে আমি কথা দিয়েছিলাম তোমার সাথে ওর বিয়ে দিব।এই বলে আবিরের বাবা মারা যায়।আবির নিয়তির কাছে বাধা পরে যায়।
নীলার যখন জ্ঞান ফিরে আসে সে তখন স্বাভাবিক পৃথিবীতে ছিল না।বিকারগ্রস্থ হয়ে পরে।
সেদিন আবির অনেক কেঁদেছে আর ভাবছে জানি তুমি আমাকে কখনো বুঝবা না নীলা।আমি চেয়েছিলাম তুমি বিয়ে করে সুখী হবা তাই তোমার কাছ থেকে মিথ্যে অভিনয় করে দূরে চলে গেছলাম।তুমি কেন এত ভালবাসো আমায়।আবির আবারো দূরে চলে যায়।কিন্তু নীলা মেয়েটি প্রচন্ড কষ্টে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।