এবারের নববর্ষ নারী লাঞ্ছনায় অশ্রুসিক্ত,ক্ষত- বিক্ষত। যদিও এ ঘটনা নতুন নয়। যুগে যুগে নারী
লাঞ্ছিত হয়েছে , নারীদের উপরে লাঞ্ছনা –নির্যাতন চালিয়েছে পুরুষ। আবার প্রতিকার,প্রতিবাদ ,
অপরাধের জন্য শাস্তি বিধানও পুরুষ করেছে। তবে এ ঘটনার সম্পুর্ন প্রতিরোধ করা যে সম্ভব
হয়নি তার প্রমান তো সদ্য ঘটে যাওয়া লাঞ্ছিত নারীর স্ব-ভয়ে পালিয়ে বাঁচার আলোক চিত্রই বলে
দেয়। স্বাধীনতা ,গনতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন অথবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি যাই
বলিনা কেন, সকল সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে বাংলা ১৪২২ সালের নারী লাঞ্ছনার মত
নিন্দিত ঘটনা । আমি ক্ষুব্ধ, মর্মাহত, লজ্জিত। আমি দেশবাসীর সাথে এঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এতদিন দেশ পুরুষ শাসিত ছিল। রাষ্ট্রীয় দায়টা তাই পুরুষের ওপরে ছিল। আজতো সে
ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। বাংলা দেশ অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের রোল মডেল হয়ে উঠেছে। দেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এখন নারী, জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার এখন নারী, মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী এখন নারী , দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের চেয়ার পার্সন নারী।
প্রশাসন ও আইন –শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী সুনামের সাথে
দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । তাহলে এ জঘন্য নারী লাঞ্ছনার প্রতিকার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি
কেন হবেনা ? আমরা আশা রাখি, নারী শাসিত এই সুসময়ে নারীকে আর আনন্দ উৎসবে
যেতে আতংকিত হতে হবে না। কোন অভিভাবককে অকারনে চোখের জল মুছতে হবে না।
অতীতের কোন লজ্জা আর আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে না। আমি ক্ষোভে ,অপমানে, প্রতিবাদে
এ বছর বাংলা নববর্ষে কোন লেখা লিখিনি । প্রতিনিয়ত বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি ,
আমরা এ কোন অরন্যে বসবাস করছি , যেখানে আমাদের মায়েদের ,মেয়েদের , নারীদের
কোন নিরাপত্তা নেই। যে কোন সময় নর-রুপী ছদ্মবেশী হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে অসহায়
শান্তিপ্রিয় মাতৃসমাজের ওপর । নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এসব
ঘটনার সময় দায় এড়ানোর চিন্তা কেন করেন ? এ দায় থেকে তারা অব্যাহতি পেতে পারেন না।
গত সপ্তাহ ভরে শুধু পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া, টকশো ,মানবাধিকার সংস্থা, দেশের নারী সংগঠন,
পুরুষ সংগঠন , আইনজীবী সমিতি, মহিলা আইনজীবী সমিতি, নারী নেতৃবৃন্দ ,সরকার সকলের
দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি । অপেক্ষা করেছি এ নিন্দনীয় ঘটনার সঠিক প্রতিকার ও প্রকৃত
দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির কোন ব্যবস্থা কোন জায়গা থেকে নেয়া হয় কিনা, কিন্তু হায়- , অভাগা
যে দিকে চায় ,সাগর শুকিয়ে যায়। অভাগা বাঙালি জাতির সরলতা আর উদারতার সুযোগ নিয়ে
শয়তানের সেই নীল নকশা ছাড়া আর কোথাও কিছু চোখে পড়েনি। এবার ও অপরাধী নাগালের
বাইরে। তাহলে কি এ ঘটনার প্রতিকার নেই এ ভেবে সান্ত্বনা পেতে হবে ? না । বর্তমানে
জনগনের সরকার ক্ষমতায় । আমরা এ নিন্দনীয় ঘটনার পুনারবৃত্তি রোধ ও প্রকৃত দোষীদের
দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির প্রতীক্ষায় রইলাম। লেখক- শিক্ষকও সাংবাদিক [ তারিখ—২৫.০৪.১৫ ]