somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

..:: না বলা ভালোবাসা :: একটি ছোট গল্প ::..

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় সকাল ৯টা , বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার রোডে । গন্তব্য উত্তরা , সজল এর সাথে দেখা করতে যাবো । আমার অনেক ভালো ফ্রেন্ড , ভালোর থেকেও অধিক ভালো । অনেক দিন দেখা হয়না সজল এর সাথে , আমি কখনো সজল এর সাথে দেখা করতে এর আগে উত্তরা আসিনি । সজলই সবসময় আমার সাথে দেখা করতে ধানমন্ডিতে আসতো । আমি ওকে বলেছি আমি আজ ওর সাথে দেখা করতে উত্তরা যাবো ।

আজ ওকে আমি একটা সারপ্রাইজ দেবো , যা ওর সাথে পরিচয় এর ৩ বছরেও দেওয়া হয়নি । একটি রুমাল , আর রুমালে লেখা ''এই রূমালটি শুধু আমাদের ভালোবাসার মাঝের ছোট ছোট ভুল গুলো মুছে ফেলার জন্য , আমি যে তোমাকেই ভালোবাসি '' । আর রুমালের মধ্যে একটি তাজা লাল গোলাপ মোড়ানো । যার প্রতিটা পাপড়িতে লিখেছি '' তোমাকেই ভালোবাসি '' ।

সজল উত্তরা তে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইন এ পড়াশোনা করছে । অনেক ভালো আবৃতি করতে পারে , আর ওর হাতের আঁকা ছবি গুলো দেখলে মনে হয় জীবন্ত প্রতিছবি । আর ও সবার থেকে একটু অন্য রকম সব দিক থেকে , কথা বার্তা , আচার-আচরন , পোশাক-আশাক , চলাফেরা । তবে একটু বেশি লাজুক ।

প্রায় ২০ বিশ মিনিট অপেক্ষার পর বাস আসলো , ভাগ্য ভাল ছিল তাই একটি সিট ও পেয়ে গেলাম । উঠেই সজলকে ফোন দিয়ে বললাম উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এর সামনে অপেক্ষা করতে । রাস্তায় মোটামুটি ভালোই জ্যাম আছে যেতে অনেক্ষন লেগে যাবে , এই ফাকে ওর আর আমার কিছু কথা বলি ,

আমি একটু ভিতু সবসময় , ঢাকাতে চলাফেরা করার অনেক বড় একটি সমস্যা রাস্তা পার হাওয়াতে । রোড সিগন্যাল এ থাকলেও আমি রাস্তা পার হতে ভয় পেতাম । এমনি আমি একদিন ভার্সিটির সামনে দারিয়ে , রাস্তার ওপারে ভার্সিটি । জ্যাম নেই কিন্তু কিছুক্ষণ পর পরই গাড়ি যাচ্ছে , আমিও রাস্তা পারহতে পারছিলাম না । এমন সময় উজ্জল শ্যামবর্ণের , মাঝারি শরীর , আমার থেকে ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা একটি ছেলে এসে নামলো , কাধে ব্যাগ সাথে আর্ট পেপার । চুল গুলো তার ওগোছালো , চোখে সাদা চশমা । পঢ়নে জিন্স এবং সাদাকালো টি-শার্ট । একবার আমার দিকে তাকালো , আমিও তাকালাম ( চোখাচোখি ) । মুহূর্তেই ছেলেটি রাস্তা ওপারে চলে গেল , আমি তখনও দারিয়ে । এদিকে ক্লাস এর সময় হয়ে যাচ্ছে , ১০ মিনিট পরেই মেনেজমেন্ট টিউটোরিয়াল পরিক্ষা ।

বিষণ্ণ মনে দারিয়ে আছি , দেখলাম ওই ছেলেটি ওপারে একটি ছেলের সাথে কথা বলছে আর আমার দিকে আড় চোখে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে । ছেলেটি কথা শেষ করে আবার রাস্তা পার হয়ে এপারে চলে আসলো , মনে হলো আমার দিকেই আসছে । ছেলেটি আমার কাছে এসেই জিজ্ঞাসা করলো ,

ছেলেঃ- আপনাকে অনেক্ষন ধরে খেয়াল করছি আপনি এখানে দারিয়ে আছেন , কোন সমস্যা থাকলে বলেন ।
আমিঃ- না মানে তেমন কিছুই না , রাস্তা পার হতে পারছিনা ।

( ছেলেটি আমার কথা শুনে মনে হলো অবাক )

ছেলেঃ- এই কথা ( হা হা করে হেসে ) ,চলুন আমি আপনাকে সাহায্য করছি আপনার কোন আপত্তি না থাকলে ।
আমিঃ- না আমি একাই পারবো ।
ছেলেঃ- পারবেন ? তাহলে আমি যাই ।

( মনে মনে ভাবলাম একাই পারবো কথাটা বলে ভুলই করলাম )

আমিঃ- এই যে শুনুন , ঠিক আছে আমাকে একটু হেল্প করুন ।
ছেলেঃ- ওকে চলুন । আর আর আপনি এতো রাস্তা পার হতে ভয় পান কেন ? ফিউচারে অনেক সমস্যায় পরবেন । এখানে কোন সাব্জেক্ট এ পড়ছেন ? ( জিজ্ঞাসা করলো )

আমি কিছুই বললাম না , রাস্তা পার হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ক্লাস এর আর ৩ মিনিট আছে । আমি উনাকে বললাম , ক্লাস এর দেরি হয়ে গেছে আমি যায় । এই বলে আমি ভার্সিটিতে ঢুকে গেলাম । ( এর পরে ছেলেটার রি-একশন কি ছিল জানিনা, কারন থাঙ্কস ও বলিনি )

বাস বনানী চলে এসেছে , বনানী বাস স্ট্যান্ড থেকে আমার এক ক্লাস ফ্রেন্ড জিসান উঠলো । ওর সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো , কারন জিসান এরই বাল্য কালের বন্ধু সজল । জিসান এর মাধ্যমেই সজল এর সম্পর্কে জানা । জিসান আমাকে বাসের মধ্যে দেখেই জিজ্ঞাসা করলো -

জিসানঃ কিরে তুই বাসে , কোথায় যাবি ?
আমিঃ আবার কোথায় !! সজলের সাথে দেখা করতে ।
জিসানঃ (অবাক হয়ে) কিরে তুই সজল এর সাথে দেখা করতে যাবি মানে !! এর আগে এমন তো কখনো শুনিনি ।
আমিঃ হুম , শুনিছনি ; আজ শুনলি । আর আজকেই প্রথম ওর সাথে দেখা করতে আমি নিজ থেকে উত্তরা যাচ্ছি ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য । তুই কোথায় যাবি ?
জিসানঃ তাই নাকি কি সারপ্রাইজ , আর আমি উত্তরা ল্যাব এইড হসপিটাল এ যাবো , একজন রিলেটিভ ওখানে এডমিট হয়েছে । তুই কোথায় নামবি ?
আমিঃ ওহ । আছে সারপ্রাইজ , এখন বলা যাবে না । সজল কে বলেছি হাউজ বিল্ডিং এর সামনে আসতে , ওখানেই নামবো ।
জিসানঃ ওহ ঠিক আছে এখন শুনবো না । আমিও হাউজ বিল্ডিং এর সামনে নামবো ।
আমিঃ ঠিক আছে তাহলে একসাথে নামা যাবে ।

আমরা খুটিনাটি বলছি আর বাস বনানী ফ্লাই ওভার পার হয়ে আবার উত্তরার দিকে চলতে লাগলো ...

রাস্তা পারাপারের ওই ঘটনার ৪ দিন পর ...

ওই দিন কোন রকম রাস্তা পার হয়ে ক্লাস গেলাম , একটা ক্লাস করেই লাইবেরি তে গিয়েছিলাম । লাইবেরিতে ঢুকেই জিসান এর সাথে দেখা হলো -

আমিঃ কিরে জিসান , ক্লাস এ দেখলাম না কেন ? কোথায় ছিলি ?
জিসানঃ হুম , প্রথম ক্লাস টা করতে পারলাম না । বাইরের একটা ফ্রেন্ড এসেছে ওকে ভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলাম , ও কিছু ছবি আঁকালো আমাদের ভার্সিটির ।
আমিঃ ওহ ! পরের ক্লাস করবি ? করলে চল ।
জিসানঃ না , আজ কে আর কোন ক্লাস করবো না । তাছাড়া আজ আর কোন ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নেই ।
আমিঃ তা ঠিক বলেছিস । পরের ক্লাসটা না করলেও চলবে ।
জিসানঃ হ্যাঁ ! তাহলে চল বাইরে যায় । আমার ফ্রেন্ড বাইরে ছবি আঁকাচ্ছে চল গিয়ে দেখি । তুই তো ছবি আকানো অনেক পছন্দ করিস ।
আমিঃ তাহলে চল যায় , দেখি তোর ফ্রেন্ড কেমন ছবি আঁকে ।

বাইরে এসে দেখলাম একটি ছেলে ছবি আঁকাচ্ছে , কয়েকজন তাকে ভিড় করে দারিয়ে আছে ।

জিসানঃ সজল এদিকে দেখ , আমার ক্লাস ফ্রেন্ড সজনী । তোর ছবি আঁকানো দেখার জন্য ক্লাস না করে চলে এলো ।

( আমি ছেলেটাকে দেখে অবাক , মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি )

সজলঃ হাই ( আমার দিকে তাকিয়ে ) ।
আমিঃ হাই । আপনার ছবি আঁকানো দেখতে এলাম , জিসান বলছিল আপনি ভালো ছবি আকান ।
সজলঃ ধন্নবাদ । একটু ভালো আকার চেষ্টা করি এই আরকি একটু । ( হাসি মুখে )
আমিঃ আপনাকে পরিচিত মনে হচ্ছে , কোথায় যেন দেখেছি ।
সজলঃ হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন , আপনি অনেক ভিতু , রাস্তা পার হতে পারেন না । এবার বুঝুন কোথায় দেখেছেন ?
আমিঃ ওহ হ্যাঁ মনে পড়ছে , ওই দিন জন্য অনেক ধন্নবাদ আপনাকে ।

আজ ধন্নবাদ দিচ্ছেন বলেই হা হা করে হেসে দিল সজল , আর সেই দিন থেকেই সজল আমার অনেক ভালো বন্ধু , শুধু বন্ধু না আমার একটি আত্তা । আর বন্ধুত্বের মাঝে নীবির সম্পর্ক ভালোবাসা যা আজ পর্যন্ত বলা হয়নি একজন আরেকজন কে । কিন্তু আমরা দুজনেই জানি আমরা একজন আরেক জন কে অনেক ভালোবাসি ।

বাস হাউজ বিল্ডিং এ এসে থামলো , আমি আর জিসান বাস থেকে নেমেই সজল কে ফোন দিলাম ।
আমিঃ কোথায় তুমি ? আমি হাউজ বিল্ডিং এর সামনে এসে গেছি ।
সজলঃ হাউজ বিল্ডিং এর এর অপজিট সাইট এ , তুমি এপারে চলে আসো । পার হতে পারবে তো ? ( হাসতে হাসতে ) ।
আমিঃ কি যে বলো , আমি এখন অনেক সাহসী , পারবো । ( জিসান আছে আমার সাথে এটা ওকে বললাম না )

এপার থেকেই ওকে দেখতে পেলাম । রীতিমত আমি অবাক সজল আজ পাঞ্জাবি পরেছে জা কিনা ওর সবচেয়ে বিরক্তিকর পোশাক । তবে পাঞ্জাবি পড়ে যে ওকে এতো ভালো লাগছিল ও হয়তো এটা জানেনা । আমি রাস্তা পার হচ্ছি , আজ গাড়ি গুলো যেন একটু বেশিই জোরে চালাচ্ছে । রাস্তার প্রথম অর্ধেক পার হলাম । শেষ অর্ধেক টুকু পার হচ্ছি ... কেমন যেন ভয় ভয় কাল করছে মনের ভিতর । ও যদি আমার ভালোবাসার রুমাল , গোলাপ ফিরিয়ে দেয় । হটাত মাথা ঘুরে উঠলো , রাস্তার মাঝ খানে দারিয়ে পড়লাম । এটা দেখে সজল আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো । পিছন দিকে দেখলাম একটি গাড়ি দ্রত আমার দিকে আসছে ... .
.
.
.


যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন আমাকে সবাই মিলে একটি গারিতে তুলতে লাগলো হসপিটাল এ নেওয়ার জন্য । আমি তখন চিৎকার করে সজল কে ডাকতে থাকলাম । কিন্তু ওই দিন আর সজল আমার ডাকে সারা দেয়নি , আমাকে বাচাতে গিয়ে ওর নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে ... :'(

(কাল্পনিক)

১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×