লাল গালিচা মাঠ
একটা মাঠ যদি হয় লাল রঙের তবে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হবেই তার দিকে। সময়টা ছিল এপ্রিলের শেষ এবং মে মাসের শুরুর দিক। প্যারিস থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টার পথ পারি দিয়েছিলাম বেলজিয়ামে ট্রেনে করে। ট্রেনের জানালা ছূঁয়ে যাচ্ছিল মাঝে মাঝেই দিগন্ত বিস্তৃত লাল মাঠ ।
অবশেষে সেইই মাঠের আকর্ষণে একদিন গাড়িতে ঘুরে ঘুরে সেই মাঠের মধ্যে প্রবেশ করলাম। অজস্র লাল ফুল ফুটে আলোকিত করে রেখেছে পুরো ভ্যালি এলাকা।
লালপপি ফুলের মাঠ এক দারুণ সৌন্দর্য নিয়ে জেগে উঠে বসন্ত কালে । এরা আপন মনে ফোটে বন্য ফুল। আমার সৌভাগ্য পৃথিবীর এই অকৃত্তিম সুন্দরের সাথে আমার দেখা হয়েছে কয়েক বার। দূর থেকে যেমন দেখা যায় লাল গালিচা বিছানো মাঠ জুড়ে কাছে গেলে কাছের দৃশ্য ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় কিন্তু দূরের দিকটা ঘন লাল রঙ।
২। বেগুনি সুগন্ধ
ল্যাভেণ্ডার গাড় থেকে হালকা বেগুনি গাড় নীল এবং সাদার মধ্যে দেখা যায়। নানা প্রজাতির ছোট ছোট এই ফুলে অত্যাশ্চর্য নরম সুগন্ধ। এমন কি গাছের পাতাও সুগন্ধে ভরা। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ঔষধ হিসাবে প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। ল্যাভেণ্ডার চা, তেল, সুগন্ধী পারফিউম অনেকের খুব পছন্দ।
শুকনো পাতা, ফুল কাপড়ের ভাজে রাখা হয় পোকা না ধরার জন্য। তেমনি বালিশের পাশে ঘরে অনেকেই লেভেণ্ডার ফুল রেখে দেন এ্যারমেটিক প্রভাবে রিলাক্স হওয়ার জন্য।
ল্যাভেণ্ডার অনেকদিন আমার পছন্দের তালিকায় যোগ হয়েছে । নিজের বাগানটি এখনও এমন করে গড়তে পারিনি। তাই সময় সুযোগ মতন কাছেই এই বাগানে গিয়ে সময় কাটিয়ে আসি।
৩। সূর্যের আলোয় রাঙা
পরন্ত বিকালের শেষ আভায় লজ্জাবতি রঙে রাঙ্গা হয়ে উঠেছে সূর্যের শেষ চুমুতে। বিশাল বড় গাছটি ভর্তি ফূল আর ফুল। সাদা রঙের আপেল ফুল এমন রঙিন হয় সূর্যে রশ্মীর ছোঁয়ায়।
৪। নীড়ে ফেরা
লেইকের পাড়ে আপন মনে খেলছিল পাখিগুলি। যখন সূর্য পাটে বসল। পূর্ব আকাশে ছড়ালো গোলাপি আভা। তখন দল বেঁধে এক সাথে উড়াল দিল । অপূর্ব মায়া ছড়িয়ে। মনে হলো যেন তাদেরকেও বলা আছে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে এসাে তাড়াতাড়ি খেলা শেষে।
উড়ে যাওয়া পাখির ঝাঁককে তাড়াতাড়ি ধরে ফেললাম, আমার ছবিতে। ডানা ছড়ানো এক ঝাঁক গাঙ্গচিল।
৫। হলুদ ফিজেন্ট
হলুদ এই ছোট পাখিগুলো ওরা জানে এখানে এলেই খাবার পাওয়া যাবে। বসন্ত এলেই উড়ে আসে। কোন কষ্ট করতে হয় না খাবার খোঁজার জন্য। দল বেঁধে গাছে বসে থাকে আর একজন একজন করে এসে খেয়ে যায় খাবার নিয়ম করে।
৬। কাঠঠোকরা
সব পাখি শীত এলে দক্ষিণে উড়ে গেলেও এই কাঠঠোকরা আমার জন্য রয়ে যায় বাড়ির মাঝেই। মাঝে মাঝেই শুনি তার ঠক ঠক শব্দ তুলে খাবার খোঁজার শব্দ। গাছের মাঝে লুকিয়ে থাকা পোকা মাকড় ঠিক খুঁজে বের করে খাওয়ার জন্য। নিস্তব্ধ শীতকালটা ও মাতিয়ে রাখে। ঠকঠক শব্দের দ্যোতানায়।
৭। বনতিতির
বনতিতির গুলো লম্বা লম্বা পা মেলে এত জোড়ে হাঁটে। ওদের সাথে হেঁটে সব সময় হেরে যাই। তবে প্রায় সময় ওরা আমাকে দেখতে আসে উঠানে গা ছড়িয়ে বসে থাকে। ওরাও শীতকালে এখানেই থাকে। মাঝে মধ্যে শীতকালেও দেখা দিতে আসে। ওরা দলবদ্ধ হয়ে থাকে। একা একা থাকে না । ওদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধনটা বেশ জোড়দার।
৮। শকুন
বাজ অথবা শকুন ঠিক নামটা জানি না কিন্তু ওদের দেখা পাই প্রায় সময়। ডানা মেলে উড়ে। চক্কর দেয় আবার বসে থাকে। সেদিন বসন্ত সময়ে আমিও রোদ পোহাচ্ছিলাম। সেও ডানা মেলে রোদ পোহাচ্ছিল। খুব কাছে পেয়ে গেলাম ছবির ল্যান্সে। আর আকাশটা ছিল অপূর্ব নীল। নীল আকাশের মাঝে তার অবয়ব ফুটেছে বেশ।
৯। ভালোবাসা
বসন্ত এলেই এমন দৃশ্য সারাদিন দেখতে হয়। পাখিরা ভাব ভালোবাসা করে।
১০। একঝাঁক ছোট পাখি
এই পাখি গুলোর নাম লারক। যখন হাওয়ায় উড়ে কালো হলদে পাখি আমি কেবল মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি উড়ন্ত ওই পাখির ঝাঁকের কাছে আমার অনেক ঋণ আছে । এরা দল বেঁধে ঢেউ তুলে উড়ে আকাশে। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম চলছিলাম ট্রেনে। ওরাও যেন লম্বা ট্রেনের মতন চলছিল সাথে সাথে ঢেউ হয়ে। অনেকগুলো পাখি এক সাথে যেন আস্ত একটা বড় পাখি বানিয়েছে । খোলা আকাশে পেয়ে তাদের বেঁধে রাখলাম আমার কাছে ক্যামেরার ক্লিক মেরে।
১১। পৃথিবীর সব চেয়ে ছোট পাখি
এক সময় ভাবতাম পৃথিবীর সব চেয়ে ছোট পাখি হামিংবার্ড ওর সাথে দেখা হওয়ার কোন সুযোগ নাই। অথচ এখন ওরা আমাকে ঘিরে থাকে । অদ্ভুত দ্রুত গতিতে উড়ে। কত রকম রঙ ওদের ছোট গা ভর্তি। কেউ নীল কেউ সবুজ কেউ বা লাল হলুদ।
আমি তাদের জন্য খাবার বেড়ে দেই। কখনো আমার খুঁজে ঘরেও ঢুকে পরে। এই পাখিটা ঠিক সন্ধ্যা বেলা ঘরে ঢুকে পরেছিল। সন্ধ্যায় তাকে আর বাইরে ছেড়ে দিইনি। যত্ন করে ছোট একটা তুলার বিছানা করে রাতে তাকে শুতে দিয়েছিলাম। খেতে দিয়েছিলাম মধু।
সকালে তাকে গাছে ছেড়ে দিলাম।
১২। পৃথিবীর সব চেয়ে বড় পাখি
উটপাখি মাটিতে মুখ গুজে বসে নেই দৌড়ে চলে এলো কাছে। এত্ত বড় পাখি কিন্তু উড়তে পারে না। কিন্তু দৌড়ায় ভীষণ জোড়ে। গাড়ির জানলা খুলতেই মুখ ঢুকিয়ে দেখে নিল কে আছে। তারপর খাবার নিয়ে চলে গেলো লম্বা পা ফেলে। ওর সাথে দেখা হলো আফ্রিকান লায়ন সাফারিতে
ছবি কপি করবেন না কেউ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:০৫