এখানে বাড়িগুলো অন্য রকম লাইন দিয়ে এক দেয়ালের সাথে আরেক ঘর গড়ে উঠেছে। শক্ত মজবুত পাথরের ভীতে। শীত কাটানো জেনো জড়াজড়ি করে। কাঠের স্তুপ কয়লার ধূঁয়া চিমনি গলে আকাশে মিশে প্রতি বাড়ির ছাদ ফূরে। একই রকমের মধ্যেও, একদেশ থেকে অন্য দেশে গেলে ধীরে ধীরে কিছু ব্যাতিক্রম চোখ পরে। প্রকৃতির সাথে, ভাষা, খাবার এবং চালচলন, পোশাকের বৈচিত্র অল্প বিস্তর পরিবর্তন হতে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে যদিও এক মনে হয়।
প্রতিদিন ঘুরছি ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে এক দেশ পেরিয়ে অন্য দেশে , ফ্রান্স, র্জামান, বেলজিয়াম, নেদারল্যাণ্ড হুটহাট যখন যেখানে ইচ্ছা চলে যাচ্ছি। এবং দেখছি রাস্তার পাশে সারিসারি উঁচু বাড়ি ছোটছোট জানলা দরজা। রাস্তা, বাড়ি ঘর সুনসান। মনে হয় যেন এখনই পায়ে পা মিলিয়ে কাঁধে বন্দুক নিয়ে মার্চ করতে করতে সৈন্যদল চলে আসবে যে কোন দিক থেকে। অথবা হঠাৎ করে রাস্তার ঢাল বেয়ে উঠে আসবে ট্যাঙ্ক লরীর বহর। আর তাদের ভয়ে লুকিয়ে আছে সমস্ত মানুষ। কী ভয়াবহ ভাবে এক একটা পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এক এক দিকে। গাছের আড়ালে মাঠে প্রচ- শীতে সময় কাটিয়েছিল। এ জীবনে আর দেখা হয়নি তাদের অনেকের, ভয়াবহ বিচ্ছিন্নতা পরিবারে, যুদ্ধের কারণে। অথবা হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের খুঁজে পেয়েছে জীবনের বহু বছর গড়িয়ে যাওয়ার পরে।
সময়টা প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধ বা সিভিল ওয়ারের নয় তবু কেনো যে আমার কানে সৈন্যদের বুটের শব্দ বাজছে সারাক্ষণ। সুন্দর দেখতে দেখতে মানষলোকে ভাসছে মানুষের যন্ত্রনা। বোম, গোলাগুলি আতংক, কোন একসময় ঘিরে ছিল এইসব জনপদ।
আসলে ইউরোপ আমেরিকার বর্তমান ঘরবাড়ির বৈশিষ্টাই এই সুনসান নিরবতা। আমাদের দেশের মতন লোকজনের মেলা নেই। কথার গমগম শব্দ নেই। কেবল বড় শহর গুলো জমজমাট দেখা যায়, কিছু জায়গায় বাদ বাকি সবখানে দেখা যায় হুসহাস কিছু গাড়ি চলে যাচ্ছে রাস্তা পেরিয়ে। কখনো মানুষ হাঁটতে দেখা যায় না তেমন।
এখন সব কিছুই শান্ত সুন্দর। ভালোলাগছে এই সীমানার বেরী বাঁধ উঠিয়ে ওদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথ চলা। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে ঘন্টা দুই বা তিনের বেশী লাগে না। যদি বর্ডার চেকিং এর ব্যবস্থা বহাল থাকত। তবে পারাপারে সময় চলে যেত আরো কয়েক ঘণ্টা। অথচ সুযোগের সদব্যবহার করে এক দেশের মানুষ চলে যাচ্ছে অন্য দেশে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে নিত্য দিন সচ্ছন্দে। পৃথিবীর সব দেশের সব সীমানা বাঁধার পাহাড় উঠে গিয়ে পৃথিবীটা যদি মানুষের একটা দেশ হয়ে যেতো। তবে অনেক সুন্দর হতো। সংকির্ণতা, দখলদারী , বর্ণ বৈষম্যের ভেদাভেদ কমে যেতো পরবর্তি প্রজন্মে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৬