আহ্! তুষারপাত শুরু হলো, দ্রুত শুভ্রতায় ভরে উঠছে চারপাশ। ছোট ছোট বলের ঝরে পরা প্রথম বরফপাতে ভিজে আমি তুলছি প্রিয় নীলাভ- বেগুনি ল্যাভেন্ডার । এখনও ওরা সতেজ ফুটিয়ে চলছে ফুল অবিরাম, শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে। আমার খুব মন খারাপ হয়ে যায়, জানি না কি ভাবে বাঁচাব ওদের এই শীতে। প্রচণ্ড শৈত্য প্রবাহে তুলতুলে নরম হয়ে ঝরে যাবে । কালো হয়ে যাবে পাতা। বসন্তে মাথা তুলে জাগবেনা হয়তো বা আবার। হাসবে না মন ভুলানো রঙের হাসি আর অপূর্ব সৌরভে জড়িয়ে রাখবে না আমাকে।এক পথ পারি দেয়ার ভাবনা ঋতু বদলের সাথে,ভাবছি বসন্ত আসার। আর সাথে একটা অনুভুতি জাগছে, যেন একটা ব্রীজের এ পাড়ে দাঁড়িয়ে ওপারে যাওয়ার ভাবনা ভাবছি। এপার আর ওপারের মাঝে কতটা ব্যবধান? এক বার দাঁড়িয়ে ছিলাম মিসিগানে সামনে বয়ে যাচ্ছিল সেন্টক্লেয়ার নদী। ওপারে সার্নিয়া, কানাডার একটি শহর দেখা যাচ্ছে ব্লুরিভার ব্রীজটি যেখানে মিলিয়েছে দুইটি দেশকে। মনে হয়েছিল কখনও কি দেখা যাবে ওপারের ওই শহর। কি আছে সেখানে, কেমন জীবন যাপন। নীল নদীর পুল পেরিয়ে যাওয়া হবে কি অন্যপাড়ে কখনও? জীবন বড় অদ্ভুত একবার সুযোগ করে দিল সেই শহরে যাওয়ার।পীস ব্রীজ বা শান্তি সেতুপেরিয়ে। বড় বড় ব্রীজ তার উপর দিয়ে ব্ড় বড় লরি, ট্রাক পেরিয়ে যাচ্ছে, অনেক রকম পণ্য নিয়ে। এপার ওপারের জীবন যাত্রায় অনেক পার্থক্য, এপারে যেমন শান্ত নিরবতা ওপারে তেমন ব্যস্ত নাগরিক জীবন। দুই দেশের পতাকা উড়ছে পাশাপাশি আমেরিকা কানাডার।
রাতের ঘন অন্ধকারে শুয়েছিলাম এক ঘন বনের ক্যাম্পগ্রাউণ্ডে, অসংখ্য বনো জন্তু আর পাখির সাথে সার্নিয়ায়।একবার পারি দিয়ে ছিলাম, নিউ ব্রান্সউইক থেকে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডর সংযোগ বিশাল সমুদ্রের উপর কনফেডারেশন ব্রীজ। এক সন্ধ্যার অপরূপ সংযোগ সময় হয়ে উঠে ছিল দুই প্রভিন্সের পথের সংযোগ সময় অদ্ভুত বিশাল এক পুল পারি দিয়ে। ওপারে পৌঁছে যাওয়ার অনুভুতি সত্যি অন্য রকম। অন্য কিছু জানার অনুভব।যখন বিশাল যমুনা পাড়ি দিতাম স্টিমারে সে অনুভবের সাথে যমুনা ব্রীজ পেরিয়ে যাওয়ার অনুভবটা বড়ই অন্য রকম। দ্রুততার সাথে অনেক আবেগ আর আনন্দ হারানো। আার সহজিয়া চলার সাথে অনেকবার স্টিমারে যমুনা পাড়ি দেয়ার নানা রকম কষ্টের অথচ বুকের ভিতর জড়িয়ে থাকা ভালোলাগার গল্পগুলো হারিয়ে ফেলা।
গভীর রাতে এক বর্ষাকালে যমুনা সেতুর উপর থেমে গেলো আমার গাড়ি। কারণটা ছিল তেলের সাথে জলে মিশিয়ে দিয়েছিল তেল বিক্রিতা! অবাক বিষ্ময়ে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে মাঝরাতে যমুনার সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম সে রাতে।অথবা অবাক হয়ে চেয়ে দেখা, আমি গোল্ডেনগেট, পৃথিবীর এক সপ্তম আশ্চর্যর উপর দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছি ঝকঝকে অনুভবে। এমন কত সংযোগ কত পুল পাড়ি দিতে হয়, আমাদের জীবনের ধাপে ধাপে, মাঝে মাঝে অবাক বৈচিত্র মরীচিকার মায়ায় হারাই। সব অজানা রহস্য হয়ে উঠে সুন্দর স্বপ্ন মধুর আমার কাছে। প্রতিটি অজানা আসে চ্যালেঞ্জিং হয়ে আমার কাছে তাকে গ্রহণ করি সাহসে। তার সাথে পাল্লা দেই অকুত ভয়ে শেষ সীমানা দেখার দুঃসাহসিক স্বপ্ন নিয়ে। ইচ্ছে করি আরো অনেক সেতু পেরিয়ে যাওয়ার। শৈশব, কৈশোর, য়ৌবন পেরিয়ে পৌড়. বৃদ্ধ থেকে অন্য জীবনে সুন্দরের মায়ায়। বৈচিত্রের ঝাল মসলা আর ফুলের সুরুভি উপভোগ করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৬