শিক্ষকের সম্মান সবার ওপরে। কারণ তারা আমাদের পরম মমতা ও ধৈর্য নিয়ে হাত ধরে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমাদের প্রকৃত মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তারা যদি আমাদের লেখাপড়া না শেখাতেন, তাহলে আমরা মূর্খই থেকে যেতাম, ভালো- মন্দ বুঝতে পারতাম না। বুঝতাম না
জীবনে উন্নতি করার জন্য কোন পথ অবলম্বন করা শ্রেয়। ফলে আমাদের
জীবনে পলে পলে নেমে আসত বিপদ, যা আমরা মোকাবিলা করতে জানতাম না। শিক্ষা ছাড়া মানুষকে কেউ মানুষ বলে না। শিক্ষা না থাকলে আমাদের চোখ থাকতেও অন্ধের মতো চলতে হতো। সব থাকা সত্ত্বেও আমরা মূর্খ থেকে যেতাম। যে মূর্খ তাকে কোনো পড়া পড়তে দিলে চোখ থাকার পরও সে পড়তে পারে না। কত দুঃখ লাগে তার। লজ্জায় তখন মাথা নুয়ে যায়।।এই লজ্জা, এই দুঃখ থেকে কে আমাদের মুক্ত করে আলোর পথ দেখান—আমাদের ওস্তাদজিরা। তাহলে দেখো, তারা আমাদের কতো উপকার করলেন, আমাদের জীবন গঠনে তাদের অবদান কতো। বাদশা আলমগীর তার ছেলেকে দিয়ে ওজু করার জন্য ওস্তাদের পায়ে পানি ঢেলে সেবা করার মাধ্যমে শিক্ষকের সম্মান প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনি প্রমাণ করতে চাইলেন, শিক্ষকের কাছে রাজার ছেলে কিংবা ফকিরের ছেলের আলাদা কোনো মর্যাদা নেই। সবাই শিক্ষকের কাছে ছাত্র। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এক মুচির কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর জানলেন কুকুর কোন দিন বালেগ হয়। মুচি সে প্রশ্নের উত্তর অনায়াসে বলে দিলেন তাকে। ব্যস, সেই থেকে মুচি তার ওস্তাদ হয়ে গেলেন। সেই থেকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কখনও ওই শিক্ষকের অসম্মান হতে দেননি। শিক্ষকের অপমান করে কেউ কোনো দিন ভালো ছাত্র হতে পারে না, আদর্শ মানুষ হতে পারে না। আজকাল যেভাবে শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে, আশঙ্কা করছি, অচিরেই দেশ থেকে ইলমচর্চা উঠে যাবে।
যারা বড়োদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে, তারা আল্লাহর দয়া থেকেও
বঞ্চিত হয়। কবি শেখ সাদী (রহ.) এ কথাই বলে গেছেন তার কবিতায়।
এখন আমাদের দায়িত্ব কী? কীভাবে তাদের ঋণ পরিশোধ করা যায়, তার
চেষ্টা করা আর ঠিকমতো লেখাপড়া করা, তাদের সঙ্গে দেখা হলে সালাম দেয়া। এমন আচরণ না করা যার তাদের সেবা করা। সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের বদনাম না করা। শিক্ষকের বদনাম করা হলে এটা তাদের প্রতি অনাচার হয়ে যায়। তাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা, প্রতিটি ছাত্রেরই কর্তব্য। তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু বুঝতে চাইলে এমনভাবে প্রশ্ন করা, যাতে বেয়াদবি না হয়ে যায়। তবেই একজন শিক্ষককে সঠিক সম্মান করা হবে।