কাহিনী, চিত্রনাট্য, পরিচালনাঃ রুম্মান রশীদ খান
কাহিনী সংক্ষেপঃ
আসাদ আহমেদ ওরফে এটু (শাকিব খান) বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন ব্যাটসম্যান। মিতু ওরফে এম আই টু (জয়া আহসান) একজন টপ মডেল। মডেলিং করে নিজের একমাত্র ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ বহন করছেন তিনি। খুবই কষ্টের কাহিনী এইদিকটাতে। সিনেমা হলে আবেগ আটকায়ে রাখা যায় না। রায়ান খান (ইমন) জাতীয় দলের অধিনায়ক। এটু ওরফে নায়ক আর নায়িকা ওরফে এম আই টুর প্রেম সহ্য করতে না পেরে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেন রায়ান খান। এবং সেই ষড়যন্ত্রে ডিরেক্টর রুম্মান রশীদ খানের একান্ত বাধ্যগত নায়ক নায়িকারা পা দেন। এইভাবে চলতে চলতে ১৬ ডিসেম্বারে পাকিস্তানের সাথে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচ চইলা আসে। সেই ম্যাচে মারমুখী ব্যাটিং দ্বারা এটু ১১ নাম্বারে ব্যাটিং করতে নেমে ১৪ বলে যেখানে ৫৫ রান দরকার সেই ম্যাচ নিজে ৫২ রান করে জিতায়ে দিলেন নিজের দেশকে। শেষ দৃশ্যে নায়িকা এম আই টু মাঠে আসেন আর এটু নায়িকার হাত ধইরা বলেন, "উইল ইউ ম্যারি মি"
আবেগঘন আলোচনাঃ
সিনেমার শুরু হয় জ ই মামুনের লীড নিউজ টক শো দিয়া। সেইখানে তার সাথে থাকেন শিল্পী আসিফ আর হাবিবুল বাশার। শো তে তারা বাংলাদেশ পাকিস্তান সিরিজের শেষ ম্যাচ নিয়া কথা বলেন।
সিনেমার অসংগতিও শুরু এইখান থিকাই। জ ই মামুন বলেন আসাদ আহমেদ নাকি দীর্ঘদিন ধরে সেঞ্চুরি/ হাফ সেঞ্চুরি করতে পারছেন নাহ। এইটা বলে যখন সেদিনের ম্যাচের হাইলাইটস দেখানো হয় সেইখানে দেখা যায় আসাদ আহমেদ ওরফে এটু ৫০ করে ব্যাট তুলতেছে।
ও আচ্ছা, ভালো কথা। এই সিনেমার জন্য ফতুল্লা স্টেডিয়ামটা দুইদিনের জন্য ভাড়া করা হইছিলো। নায়ক চার ছক্কা মারে ফতুল্লায় আর সেইটা ডিরেক্টরের ক্যামেরা দিয়া আইসা পড়ে আমাদের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। বোলার বলিং করার সময় স্ট্রেইটে দেখা যায় ফাকা স্টেডিয়াম, আর নায়ক ওরফে এটু ছক্কা মারলে দেখা যায় স্টেডিয়ামে মানুষ নাচে। দারুণ ক্যামেরার কাজ, হু।
মডেল মিতু ওরফে এম আই টু পিস্তল ঠেকিয়ে একটা প্রোগ্রাম থেকে এটুকে নিজের বাড়িতে নিয়া যায় তার ভাইয়ের সাথে দেখা করানোর জন্য। সে আবার এটু এর বড় ভক্ত। একান্তই মাথার মধ্যে মাইনষের গু ঢুকায়ে না দিয়া থাকলে এই লেভেলের সুন্দর আইডিয়া কোন কাহিনীকারের মাথায় আসা সম্ভব নাহ।
শাকিব খানের ড্রেস চয়েস কইরা দেন কে তা আমার খুব জানার ইচ্ছা। উনি মনে হয় শাকিব খানের বুকের লোমগুলা খুব ভালোবাসেন। যেই পোশাকেই দেখি না কেনো ঢালিউড কিংকে, সবখানেই তার বুকের কেশের ঘন গহীন জঙ্গল দৃশ্যমান। বোধ করি উনি ওইখানেও চুলের মত কইরা তেল দেন নিয়মিত। সপ্তাহে দুইবার উকুন নাশক সাবানও দেন।
নায়ক ওরফে এটু বাইকে কইরা এম আই টু ওরফে নায়িকাকে নিয়া মারাত্মক স্পীডে ক্যান্টনমেন্টের পাশের (এম ই এস) ওভারপাসে উঠেন। তার পাশেই দেখা যায় সুন্দর ভি আই পি সাতাশ লোকাল বাস। তাও আবার একটা না, দুইটা। আর নায়ক ওরফে এটু এর বাইকের সামনে পিছনে দেখা যায় প্রচুর প্রাইভেট কার, সি এন জি আর মাইক্রোবাস। অনেকক্ষন পরে সিগনাল ছাড়লে যেইরকম হয় ওইরকম আর কি।
এটু ওরফে নায়ক এম আই টু ওরফে নায়িকারে নিয়া বাইকে করে আসেন মেয়েদের পিছনে ডি এস এল আর নিয়া ঘুরা ফটোগ্রাফারদের প্রিয় স্থান দিয়াবাড়ির কাশফুলের চিপায়। যেখানে নরম ছোয়া পাওয়া যায়। কাশফুল দেখলেই আবার জন্মবিরতিকরন পিল ফেমিকনের কথা মনে পইড়া যায়। ইদানিং ঝাড়ুর কথাও ভাবি।
এইখানে নায়ক ওরফে এটু আর এম আই টু ওরফে নায়িকা লিপ কিস করতে গিয়া থাইমা যান। চোখে দেখা অভিজ্ঞতা বলে, ডিরেক্টর নিশ্চয়ই পুলিশের কথা ভাইবা ঐখানে চুমাচাটির সিন বাদ দিছেন। পুলিশ আবার দিয়াবাড়ির কাশফুলের চিপা থিকা হরহামেশাই মিলনেরত মহৎ নারী-পুরুষদের উদ্ধার করেন।
গরীবের প্যারিস হাতিরঝিলের ব্রিজের উপরে এটু ওরফে নায়ক এম আই টু ওরফে নায়িকার কোলে মাথা দিয়া শুয়ে আছেন এমন টাইমে কাহিনীতে মধ্যযুগীয় বাংলা চলচ্চিত্রের মত কইরা প্যাঁচ লাগাইতে আসেন বিশিষ্ট শিল্পপতির কন্যা পলি। তিনি মেডিক্যাল ডিকুমেন্টস নিয়া আসেন যে তিনি গর্ভবতী এবং আসাদ তারে গর্ভবতী করেছেন, সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কিছু ছবি (ছবি পর্দায় দেখানো হয় না)। পলির বাপের ভূমিকায় যেই ভদ্রলোক অভিনয় করছেন উনার অভিনয় দেইখা রীতিমত মনে হইলো পাগল ছাড়া পাইছে। ডিরেক্টর ভুলে মানুষ চিনতে না পাইরা পাগলরে কাস্ট করছে।
একদিন নায়ক প্র্যাক্টিস শেষে ফেরার পথে এমপির ছেলে আর তার সাঙ্গোপাঙ্গদের ক্রিকেট ব্যাট দিয়া পিটান। এক-দুইটা পিটা দিতেই হঠাৎ ক্রিকেট ব্যাট নিচের দিক দিয়া গোল, নৌকার বৈঠার মত কিছু একটাতে রুপ নিলো। ডিরেক্টর এইটা কিসের প্রতিক হিসাবে দেখাইতে চাইছেন তা তিনিই জানেন। (আমার মনে হয় সরকারি দলের আসে পাশে থাকতে চান নৌকার বৈঠা হইয়া।)
শেষের দিকে নায়ক যখন গ্যাম্বলারদের মাইরা নায়িকাকে উদ্ধার কইরা আবারো হাতিরঝিল হইয়া ফতুল্লা ওরফে মিরপুরে আসছেন ততক্ষনে ৯ উইকেট পইড়া গেছে। বাই দা ওয়ে, এই মুভি আপনাদের গ্যাম্বলার সম্পর্কে জ্ঞান উল্টাইয়া দিবে। যারা হ্যান্সি ক্রোনিয়েরে মাইরা ফালাইতে পারে তারা এটু ওরফে নায়কের সাথে পারেনা। এটু আইসা তাদের মাইরা নায়িকা ওরফে এম আই টুরে উদ্ধার কইরা নিয়া যায়। ডিরেক্টর গ্যাম্বলার সম্পর্কে আদৌ কিছু জানেন কিনা তা নিয়া সন্দেহ থাইকাই গেলো।
সিরিজের শেষ ম্যাচটা হয় ১৬ ডিসেম্বারে। তখন আর যাইহোক, এত গরম পড়ে না যে নায়কার হাটুর উপরে উঠানো এবং হাতাকাটা ছোট জামা গায়ে দিয়া জ্বালাপুড়ি নির্গমন করতে হবে।
ছবির কস্টিউম আর মেকাপ নিয়া না বললেই না। এক দৃশ্যেই দেখা যায় নায়ক মাথা ঘুরানোর আগে চুল শুকনা বাতাসে উড়ে, আর মাথা ঘুরানোর পড়ে দেখা যায় জেল দিয়া ব্যাক ব্রাশ করা। এমনকি হঠাৎ কইরা দুই পাশে দিয়া মুরগি ছিলা কাটিং এর জায়গায় কেমনে ঠাসা ঠাসা চুল আইসা পড়ে সেই ব্যাপারেও কবি নিরব।
ক্রিকেট নিয়া সিনেমা সবচেয়ে বেশী বানাইছে বলিউড। ওদের সিনেমা গুলাতে ওরা এফর্ট দিছে প্রচুর। তারপরেও খেলোয়াড়দের লাইফ পোর্ট্রে করা নিয়া প্রচুর সমালোচিত হইছে। সেইখানে আমাদের এই লেভেলের সিনেমা কোন দিক থিকাই তুলনার যোগ্য নাহ। এই সিনেমা দেখলে যে কেউ স্বীকার করবো যে যোজন যোজন দূরে আছি আমরা। ক্রিকেটারদের ফিটনেস কেমন হয় তা কারো অজানা নাহ। এইরকম ভুঁড়িওয়ালা নায়কেরে ক্রিকেট খেলতে দেখলে শুধু হাসিই না, মাঝে মাঝে কানতেও মনে চায়।
একজন ক্রিকেটারের লাইফ পোর্ট্রে করার মত সাহস যে তাদের হইছে সেইটা নিয়াও আমি ঢেকুর তুলি। এই মুভি যারা দেখেছেন কিংবা দেখার রুচি যাদের হবে তারা আমার নানারে ব্যাট হাতে দিলে আর এই মুভির ব্যাটিং দেখলে আলাদা করতে পারবেন নাহ কোনটা আমার নানা মারছে আর কোনটা এটু মারছেে।
শাকিব খান বুয়েট ছাত্রের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ক্রিকেটার চরিত্রেও অভিনয় করলেন।
অপেক্ষায় রইলাম তার ডিএমসি কিংবা অন্য কোন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রের চরিত্র এবং অবশ্যই অবশ্যই তিনি সৈনিক চরিত্রে এই ভুঁড়ি নিয়া কিভাবে দৌড়াবেন সেইটা দেখার জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:২৪