"The secret mosques opening their doors to gay Muslims"
এই শিরোনামে গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (ABC) একটি সংবাদ প্রকাশ করে।
সমকামীদের জন্য মসজিদের দুয়ার খুলছে!
একজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিমের জন্য অবাক হবার তো বটেই, রীতিমত চোখ কপালে তোলার মত সংবাদ।
সংবাদটার শুরুটা দামির আহমেতোভিক নামের এক বসনিয়ান সমকামীর কাহিনী দিয়ে। আহমেতোভিকের দাবী সে একজন ধর্মপ্রান মুসলমান। আহমেতোভিকের মতে, বসনিয়ায় তিনি কিছু সমকামীদের জানেন যারা সমকামী এবং মুসলিম। তারা এমন একটা মসজিদ খুজছেন যেখানে নামাজ পড়তে তাদের বাঁধা দেয়া হবে না। আহমেতোভিক সম্প্রতি মুসলিম ফর প্রোগ্রেসিভ ভ্যালু এর ব্রিসবেইন শাখায় যুক্ত হয়েছেন যেটার লক্ষ্য আল কায়দা, ওহাবী মতবাদ এবং গোঁড়া ইসলামিক মতবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ইসলামিক ব্যাখা নির্মান করা।
এরপরেই আছে মেলবোর্নের ইমাম নূর ওয়াসিমের কথা যে সমকামীদের পক্ষে তার নিজস্ব উদার-নৈতিক ইসলামিক ব্যাখ্যা প্রচারে সাহসী পদক্ষেপ নেন। সমকামীদের সমর্থনের জন্য নূর "মারহাবা" নামে একটি দল তৈরি করেন।
আমেরিকার ইমাম দালি আব্দুল্লাহ্রও দাবী কোরআনে সমকামীতাকে কোন ভাবেই অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।
কোরআনে কি আসলেই কোন বিধিনিষেধ নেই সমকামীতা নিয়ে!!
আসুন দেখি কোরআনে কি আছে-
কেউ যদি বিধিবদ্ধ উপায় ব্যাতিরেকে অন্য কোন উপায়ে যৌন কামনা চরিতার্থ করতে চায় তাহলে সে সীমালংঘনকারী বলে বিবেচিত হবে। এমনটাই বর্নিত রয়েছে সূরা আল মোমেনুনের ৫-৭ নং আয়াতে।
সূরা আ’রাফ এর ৮০-৮৪, সূরা হুদ এর ৭৪-৮৩, সূরা আল হেজর এর ৫৮-৭৭, সূরা আল আম্বিয়া এর ৭৪-৭৫, সূরা আশ শোয়ারা এর ১৬০-১৭৩, সূরা আল আনকাবুত এর ২৮-৩৫, সূরা আস সাফফাত এর ১৩৩-১৩৮, সূরা যারিয়াত এর ৩১-৩৭, সূরা কামার এর ৩৩-৩৮ সমকামিতা সম্পর্কে হযরত লূত (আ) এর জাতির ঘটনা বর্নিত রয়েছে। বলা আছে কিভাবে সমকামিতায় লিপ্ত সেই জাতিকে আল্লাহ আযাব দিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকেদের দলে হযরত লূত (আ) এর স্ত্রীও ছিলেন।
আল কুরআনে সেই জাতিকে বলা হয়েছে মারাত্মক সীমালংঘঙ্কারী জাতি, নাফরমান জাতি, মূর্খ জাতি, ফাসাদি জাতি, পাপী সম্প্রদায়। আল কুরআনে তাদের শাস্তির বর্ননার সাথে সাথেই সেখান থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহন করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ্ তাআলা।
সূরা আল হেজরের ৫৮-৭৪ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত এই জাতির ধ্বংসযজ্ঞের বর্ননার পরপরই ৭৫ ও ৭৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে-
“অবশ্যই এ (ঘটনার) মাঝে পর্যবেক্ষনসম্পন্ন মানুষদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।” (৭৫)
“অবশ্যই এর মাঝে ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন (মজুদ) রয়েছে ” (৭৭)
সূরা আয যারিয়াতেও এই জাতির আযাবের কথা শেষেই ৩৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে-
“(তাদের ধ্বংস করে) আমি পরবর্তী এমন সব মানুষদের জন্যে একটি নিদর্শন সেখানে রেখে এসেছি, যারা আমার কঠিন আযাবকে ভয় করে”
কুরআনে এবং হাদিস বিষয়ে যারা ভালো জ্ঞান রাখেন তারা হয়তো আরও ভালোভাবে খুজে বের করে গুছিয়ে লিখতে পারবেন। আমি সাধ্য মোতাবেক চেষ্টা করে এইটুকু পেয়েছি। তবে সমকামীতা যে ইসলামে নিষিদ্ধ তা বোঝাতে কি এইটুকুই যথেষ্ট না?
আহমেতোভিক, নূর ওয়াসিম, দালি আব্দুল্লাহ্রা সমকামী হবেন সেটা তাদের নিজেদের ইচ্ছা। ইসলামের নামে এইভাবে মিথ্যা প্রচার করার কোন অধিকার তাদের নাই। তাও আবার ইসলামের লেবাস ধরে। এভাবে ধর্ম নিয়ে যারা ভুল ব্যাখা দেয় তারাই ইসলামের প্রকৃত শত্রু।
আপাতদৃষ্টিতে আহমেতোভিক, নূর ওয়াসিম আর দালি আবদুল্লাহ্ এবং এরকম অনেক সমকামীই নিজের জীবন ভয়ে ভিত থাকায় আপনার মনে তাদের জন্য মায়া সঞ্চার হবে; তবে ইসলামের নামে ভুল ব্যাখার যে পয়জন সে ইনজেক্ট করছে সেটাও এড়িয়ে যাবেন না।
একজন মুসলমান হিসেবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ইসলামে যেমন রাজা আর প্রজার জন্য আলাদা বিধান নেই তেমনি গোঁড়া ইসলাম আর প্রগতিশীল ইসলাম বলেও কিছুই নেই। ইসলাম একটাই যেটা আমাদের মুসলমানদের বিশ্বাসে শাশ্বত জীবন বিধান। এইটাতে সংযোজন আর বিয়োজন করার কিছুই নেই। আধা মানবো আর ভাব ছুটে যাবে বলে আধা মানবো না এমন অপশন ইসলাম প্রোভাইড করে না।
মুসলমানের পরিচয় নিয়ে সমকামীতা সমর্থন করা এমনকি নিজে সমকামী হওয়া এসকল মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কেবল সন্দেহই নয় একটা উদ্বেগও থেকে যায়। এরা কি প্রকৃতই কুরআন সুন্নাহর অনুসারী? নাকি ইসলামকে ডিভাইড করার অগ্রসৈনিক?
কুরআনে আমার খুব পছন্দের একটা আয়াত আছে যা হয়তো এদের মত পথভ্রষ্টদের জন্যই-
“আল্লাহ্ তাআলা যাকে পথহারা করে দেন তাকে পথে আনার (দ্বিতীয়) কেউই নেই......”(সূরা আল আ’রাফ-১৮৬)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:২৫