অ্যাবেলার্দ মধ্যযুগের একজন নামকরা দার্শনিক এবং ধর্মতত্ত্ববিদ। প্যারিসে শিক্ষাদানের সময় ধর্মশাসক ফুলবার্টের ভাইঝি হেলোইজের প্রনয়ে পড়েন অ্যাবেলার্দ।
অ্যাবেলার্দের চেয়ে প্রায় কুড়ি বছরের ছোট হেলোইজ তখন জ্ঞানের অন্বেষণে লড়াকু একজন। জীবনের প্রকৃত সত্য, প্রকৃত উদ্দেশ্য, মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে সে ব্যস্ত। তখন এই বিষয়ে তাকে শিক্ষাদানের জন্য প্যারিসে কেবল একজনই যোগ্য শিক্ষক ছিলেন এবং তিনি পিটার অ্যাবেলার্দ।
এইভাবেই শিক্ষকের সাথে প্রেমের শুরু হয় হেলোইজের। তৎকালীন সমাজের নৈতিকতার বেড়াজাল ঠেলে অ্যাবেলার্দ আর হেলোইজ তাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়েছেন।
(বলাবাহুল্য, প্রেম করছেন যেহেতু তাইলে সেক্স অবশ্যই করবেন। দার্শনিক ছিলেন বইলা যে দৈহিক চাহিদা তারে নাড়া দেয় নাই তা কিন্তু না। বর্তমানের আরও দশটা প্রেমের মতই তাহারাও সেক্সে লিপ্ত হইছিলেন। না হইয়া অবশ্যই উপায় নেই, কেননা প্রেম করার বহু শ্রুতিমধুর কারনের সাথে শ্রুতিকটু হইলেও যুগলের সেক্সের বাসনা একটা সাংঘাতিক বাস্তবিক কারন। সম্ভবত, সবচাইতে ইফেক্টিভ কারনও হইয়া থাকতে পারে কোন কোন কেইসে।)
যাহোক, হেলোইজের কথা বলছিলাম।
হেলোইজ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় প্যারিসের রক্ষণশীল সমাজে থাকাটা বিপদজনক বুঝতে পেরে তারা অ্যাবেলার্দের জন্মস্থানে পালিয়ে যান। কিন্তু হেলোইজের চাচা ফুলবার্টের কারসাজীতে তারা আবারও ফিরে আসেন। ফুলবার্ট ভাতিজীর মান সম্মান রক্ষার খাতিরে গোপনে অ্যাবেলার্দ আর হেলোইজের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। হেলোইজ বুঝতে পেরেছিলো তার চাচার এসকল কারসাজীর মূল উদ্ধেশ্য ছিলো অ্যাবেলার্দের ক্ষতি করা। অ্যাবেলার্দের কথা চিন্তা করে হেলোইজ পালানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু খুব বেশী দেরী হয়ে গিয়েছিলো। অ্যাবেলার্দ প্যারিসে আটক হন এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হন।
অ্যাবেলার্দ এবং হেলোইজ দুজনেই বুঝতে পারেন তাদের পরিনতির কথা। তাই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে দুজনের কাছথেকেই দুজন বিদায় নিয়ে মঠবাসিনী এবং ধর্মযাজকের কাজ বেছে নেন।
এরপর বহু বছর তাদের সামনা সামনি দেখা না হলেও পত্র আদানপ্রদান চলেছে। বহুবছর পর প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে আবারও দেখা হয়ে যায় অ্যাবেলার্দ এবং হেলোইজের। বহু প্রতিক্ষার পর এই দেখা হেলোইজ এবং অ্যাবেলার্দ দুইজনকেই মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেয়। ভালোবাসাই যে এই অস্তিত্বের মূল কারন সেটা বুঝে যান দার্শনিক অ্যাবেলার্দ এবং তার ছাত্রী হেলোইজ।
এরপর তাদের আর কোনদিন দেখা না হলেও যোগাযোগ হয়েছে পত্রের মাধ্যমে।
সেইসকল পত্রাবলী আজও বিখ্যাত হয়ে আছে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে।
প্রেম নিয়ে স্কেপ্টিক্যাল হইলেও দার্শনিক অ্যাবেলার্দ এবং তার ছাত্রীর প্রেমের কাহিনী আমায় মাঝে মাঝে নিজের স্কেপ্টিসিজম নিয়া বিব্রত বোধ করায়।
তখনই যদি আবার সংবাদ শিরোনাম দেখি পরিমল টাইপের শিক্ষকদের লুচ্চামীর কান্ডকীর্তি নিয়া, তখন দোটানায় পইরা যাই। দার্শনিকরা কি কইরা গেলেন। না পারলেন নীতিশাস্ত্র শিখাইতে, না পারলেন প্রেম করা শিখাইতে।
আহা, দুঃখিত।
দার্শনিকেরা হয়তো পথ ঠিকই দেখাইছেন, কিন্তু আমরাই না পারলাম নীতিশাস্ত্র মানতে, না পারলাম তাদের কাছ থেকে প্রেম করা শিখতে।
আমরা পারি নাই কেনো?
টেকনোলোজির কারনে?? মধ্যযুগে (অ্যাবেলার্দের সময়ে) যদি এই টেকনোলোজি থাকতো!!
এইটা কি হইতে পারতো যে অ্যাবেলার্দ যখন ছাত্রীর প্রেমে পইড়া তার সাথে সেক্স করেছেন তখন যদি ৮ মেগাপিক্সেলের স্মার্টফোন এবং অন্তর্জাল থাকতো তবে অ্যাবেলার্দও সেইটা গোপনে ভিডিও কইরা অন্তর্জালে ছাইড়া দিতেন এবং যখন তখন সেইটা দিয়ে তার ছাত্রীরে ব্ল্যাকমেইল করতেন?
সমস্যাটা কি ফিলোসোফিতে নাকি টেকনোলোজিতে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭