অসুস্থ শরীরে বুদ্ধ এগিয়ে চললেন। তাঁর দেহত্যাগের নির্ধারিত স্থান, তাঁর পথ চেয়ে রয়েছে। মল্লদের শালের বনে দুটি যমজ শালবৃক্ষের মাঝে তাঁর জন্য শয্যা তৈরি করে দেয়া হলো। উত্তরে মাথা আর দক্ষিণে পা দিয়ে ডান কাত হয়ে শুয়ে পরলেন বুদ্ধ।
রাতের শেষ প্রহরে বুদ্ধ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। তার মুখ থেকে উচ্চারিত শেষ উপদেশটি ছিলো-
"যা কৃত, যা সৃষ্ট, তা নাশ হবেই, শেষ হবেই। তাই আলস্য না করে জীবনের মূল লক্ষ্যের দিকে তাড়াতাড়ি এগোও।"
শেষ বাক্যে বুদ্ধ দুটি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ১) তার প্রধান দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি- 'সবকিছুই পরিবর্তনশীল', ২) লক্ষ্য প্রাপ্তিতে অলসতা না করে এগিয়ে যাওয়ার উপদেশ।
বুদ্ধের আবিষ্কৃত চারটি আর্য সত্য-
১) দুঃখ সত্য
২) দুঃখের কারন রয়েছে
৩) দুঃখের বিনাশ রয়েছে
৪) দুঃখ বিনাশের পথ রয়েছে
(১) দুঃখ সত্যের বর্ননায় বুদ্ধ যে পাঁচটি উপাদানকেই দুঃখের বলে অবিহিত করেছেন তা হলো-
রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার, বিজ্ঞান।
(২) দুঃখের কারন হিসেবে বুদ্ধ উল্লেখ করেছেন যাবতীয় তৃষ্ণাকে (কামভোগের তৃষ্ণা, বৈভবের তৃষ্ণা)
(৩) এই তৃষ্ণার নিরোধই প্রকৃতপক্ষে দুঃখের বিনাশ।
(৪) দুঃখ বিনাশের জন্য বুদ্ধ আটটি পথের (আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ) কথা বলেছেন। এই পথগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করে অধ্যয়ন করা হয়-
ক) জ্ঞানঃ
-সঠিক দৃষ্টি
-সঠিক সংকল্প
-সঠিক বচন
খ) শীলঃ
-সঠিক কর্ম
-সঠিক জীবিকা
-সঠিক চেষ্টা
গ) সমাধিঃ
-সঠিক স্মৃতি
-সঠিক সমাধি
বুদ্ধের (সিদ্ধার্থ গৌতমের) জন্ম খ্রি. পূ. ৫৬৩ এর কাছাকাছি সময়ে। সিদ্ধার্থের মা মায়াদেবী বাপের বাড়ি যাবার সময় কপিল্বস্তু থেকে কিছু দূরে লুম্বিনী নামক শালবনে সিদ্ধার্থের জন্ম হয়। ২৯ বছর বয়সে সিদ্ধার্থ ঘর ছাড়েন। ৩৬ বছর বয়সে বোধিজ্ঞান প্রাপ্ত হন এবং এরপর টানা ৪৫ বছর ধরে তিনি ধর্ম ও দর্শনের উপদেশ দিয়ে আশি বছর বয়সে মারা যান।
তুচ্ছঃ
বুদ্ধ শেষবারের মত যেইবার বৈশালি দর্শন করে পাবাপুরে পদার্পন করলেন। সেখানে তিনি চুন্দ নামক এক স্বর্ণকারের আমবাগানে আশ্রয় নিলেন। চুন্দ বুদ্ধকে ভোজনের জন্য আমন্ত্রন জানালেন।
চুন্দ বুদ্ধের জন্য শূকরের মাংস এবং অন্ন (ভাত) রান্না করেছিলেন।
চুন্দের দেয়া আতিথ্য গ্রহন করে বুদ্ধ আবার পথচলা শুরু করলেন। পথে চুন্দের দেয়া খাদ্য খাবার কারনে বুদ্ধের উদরাময় হলো। তবে কেউ জেনো চুন্দের উপর কোনোরূপ দোষারোপ না করে তাই তিনি বলেছিলেন দুটি পিন্ডই তাঁর জীবনে সমান মূল্যবান। প্রথমটা হলো সুজাতার প্রদত্ত ক্ষীর, যেটা খেয়ে তিনি বোধিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়টি চুন্দের দেয়া আহার, যেটা খেয়ে তিনি মহানির্বান লাভ করেছেন।
[তথ্যঃ অন্তর্জাল এবং 'মহামানব বুদ্ধ', -রাহুল সাংকৃত্যায়ন]