বুয়েট ছাত্রের জীবন নিয়ে বাংলাদেশে বানানো একমাত্র সিনেমা 'পিতার আসন'। আমি এটার একটা সিক্যুয়েল বানানোর স্বপ্ন দেখে আসছি যেদিন মুভিটা প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেই। আমার সিক্যুয়েলের ধারনা সম্পর্কে লিখার আগে যারা 'পিতার আসন' মুভিটা সম্পর্কে অজ্ঞাত তাদেরকে মুভিটার একটু রিভিউ দেয়া দরকার বলে মনে করছি।
পিতার আসন
ইংরেজি নামঃ The Great Chair
কাহিনী ও সংলাপ-মনোয়ার হোসেন ডিপজল
পরিচালনা-এফ আই মানিক
নায়কঃ শাকিব খান
নায়িকাঃ গেস করেন দেখি!!
শ্যুটিং প্লেইসঃ আইইউটি।
গতানুগুতিক বাংলা সিনেমার সব উপাদানই উপস্থিত এই মুভিতে। বস্তি, ভিলেন, মারামারি সব কিছুই আছে। ওজনে ভারী মহিলাদের আইটেম সং এর সাথে নৃত্যও রয়েছে। সেই নৃত্য দেখে আর মদ খেয়ে জীবনের কঠিন কষ্টের বুলি সুরে সুরে আওড়ানো ডিপজলের দুঃখ দেখলে আপনি কাঁদতে বাধ্য। (আর পারছি নাহ, পার্টটা বাদ দিচ্ছি)
রাজা মিয়ার (রাজ্জাকের) গরীব ফ্যামিলি। সে একজন গার্মেন্টস ওয়ার্কার। ফ্যামিলি নিয়ে থাকে বস্তিতে। তবে তার ছেলে দুলাল ঘরের মধ্যেই সু পরে চলাচল করে। তার এক মেয়ে রয়েছে নাম রেখা।
সেলিম (শাকিব খান) রাজা মিয়ার সাথেই থাকে। ছোট বেলায় ১০ বছর বয়সে তার বাবা মারা গেছে। আর তার মা তাকে জন্ম দিয়েই মারা গেছে। তখনই রাজা মিয়া তাকে বুকে তুলে নেয়। সে এখন বুয়েটের ছাত্র। আলোর অভাবে রাস্তায় ল্যামপোস্টের নিচে বসে পড়াশুনা করে। দিনে ৪ ঘন্টার জন্য কাজ করার জন্য সময়ও পায়। এই সময়টায় সে ভ্যানে করে কাপর ফেরি করে। সে দুইটা গরীব ছেলের টিউশনি করে তবে বিনামূল্যে। বলাবাহুল্য সে ও সর্বদাই জিন্স প্যান্ট, জিন্স শার্ট আর সু জুতা পড়েই ঘোরাফেরা করে। রাজা মিয়ার মেয়ে রেখা মনের অজান্তেই হতদরিদ্র(?) বুয়েট শিক্ষার্থি সেলিমের প্রেমে হাবুডুবু খায়। মুভির একদৃশ্যে দেখা যায় যে রেখা তার **** (দেহের স্পর্শ কাতর জায়গা) থেকে সেলিমের নীলক্ষেত প্রিন্টের বুয়েটের আইডি কার্ডটা বের করে পরম ভালোবাসার দৃষ্টিতে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
দীনা (অপু বিশ্বাস) কোটিপতির (আলীরাজ) মেয়ে। সেও সেলিমকে ভালোবাসে। সেলিমও তাকে ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিক। কারন বাংলা সিনেমায় তারা তখন একে অপরের অঘোষিত চিরন্তন সাথী।
রাজা মিয়া(রাজ্জাক) চাকুরিচ্যুত হয়ে সেলিমকে (শাকিব খান) নিয়ে আলীরাজের সহায়তায় নতুন করে গার্মেন্টস খুলে কোটিপতি বনে যান।
এরই মধ্যে শাকিব খান একদিন সংবাদ পত্রের মারফতে জানতে পারে সে বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার। পত্রিকা হাতে দৌড়াতে দৌড়াতে সে এই খবর রাজা মিয়া আর তার বৌকে জানাতে যায়। অতঃপর বুয়েট থেকে বের হয়ে সে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার (!!) হিসেবে কাজ শুরু করে।
তারপর একে একে সেলিমের সাথে রেখার আর রেখার ভাই দুলালের সাথে বিয়ে হয় সেলিমের প্রেমিকা দীনার। সেলিম এবং দীনা কেউই এতে খুশি না। দীনা তো একদিন উত্তেজনা বসত শাড়ি খুলে সেলিমের সাথে ***। (থাক) এসব দেখে সেলিমের গর্ভবতি বউ কাঁদতে কাঁদতে দৌড় মেরে ডুপ্লেক্স বাড়ির সিড়ি থেকে পড়ে যায়।
এইরকম চলতে চলতেই চলে আশে ছবির শেষ দৃশ্য। সেখানে দেখা যায় সকল ক্ষমতার উৎস মুলত ছোট সাহেব (ডিপজল)। তারই ইচ্ছাতে সর্ব কার্জ সাধন হয়েছে।
পিতার আসন-২
এটাতে নায়ক হবে স্বয়ং ডিপজল। তার নায়িকা দিবো কি না ভাবছি! যদি দিতেই হয় তবে ওজনে ভারী এমন কাউকেই দিবো।
মুভির শ্যুটিং হবে বনানীর কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঐটাকেই বুয়েট বলে চালিয়ে দিবো। আগের ভার্সনের মতো এ ভার্সনে নায়ক হবে বুয়েটের কৃতি ছাত্র। তার পাশের ফলাফল ঢাকার রাস্তায় পোস্টারিং করে জানানো হবে। বুয়েটের কমার্স ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করে বের হয়ে সে একজন চিকিৎসক হিসেবে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিবে। তার স্পেশালিটি হবে পায়ুপথের চিকিৎসা। পাইলসের ডাক্তার হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি রবে তার। সে বিনামূল্যে গরীবদের পাইলসের অপারেশনও করে দিবে।
বুয়েটে পড়াকালীন সময়ে সে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে পলাশীর মোড়ে খুজলির মলম বিক্রি করবে। মাঝে মাঝে নিজের ক্লাস মেইটদেরকে বিনামূল্যে খুজলির মলম দান করবে। খুজলি সম্পর্কে তার কাছে যেকোন সময়ে বেশ ফলপ্রসূ উপদেশ পাওয়া যাবে।
রাতে ঘরে বিদ্যুতের অভাবে সে রাস্তায় বেরিয়ে চাঁদের আলোয় পড়াশুনা করবে। যেদিন চাঁদের আলো থাকবে নাহ সেদিন সে বক্ষিলাদের বাড়ির পেছনে ওদের বাথরুমের ছোট জানালা দিয়ে আসা মৃদু আলোতে পড়তে বসবে।
তারপর একদিন বক্ষিলা বাথরুমে থাকাকালীন সময়ে বক্ষিলার বাবা বাথরুমের পেছনে ডিপজলের সন্দেহজনক নড়াচড়া দেখে হাতেনাতে ধরে ফেলবে তাকে।
ডিপজল তখন বলবে, "নাহ মানে, নীলক্ষেতের ফটোকপি বইতো তাই দুইটা লাইন একেবারেই দেখা যাচ্ছিলো নাহ। তাই ভাবলাম বইটা একটু আলোতে ধরি।"
ডিপজল দুইটা টিউশনি করবে। তবে এবার শুধু বিনামূল্যে টিউশনিই করবে নাহ, খুজলির টাকার লভ্যাংশ দিয়ে দুই ছাত্রের ভরণপোষণের দায়ভারও নেবে। আর ছাত্র না হয়ে ছাত্রী হলে ভবিষ্যতে যৌতুক দিয়ে হলেও নিজের ছাত্রীদের জন্য সুপাত্র নিশ্চিত করবে।
শেষ দৃশ্যে বেরিয়ে আসবে শাকিব খান। শাকিব খান লোকসম্মুখে ডিপজলকে কানে কানে জিগ্যেস করবে-
"কেমনে কি ডুড? বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পইড়া ডাক্তার হইলা ক্যামনে?"
ডিপজলও কানে কানে উত্তর দিবে-
"তুই যেমনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হইসিলি সেরাম কইরাই আমি ডাক্তার হইসি"
শাকিব, "মাগার, কমার্স ডিপার্টমেন্ট পাইলি কই?"
ডিপজল,"পরিচালকে পয়দা করছে। আবেহ,ডুড, আর কিছু জিগাইস নাহ আমারে। দৌড়ের উপরে আছি। এক ব্যাডার পাইলস কাটবার গিয়া ঝামেলা লাগাইয়া দিসি। পুরা ****ই কাইডা হালাইসি।"
The end