somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহুতরা

০৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাহুতরা। এর মানে কি? অথবা এই শব্দটি কোথায় ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে বলতে গেলে আমাকে বেশ কয়েকবছর আগে পিছিয়ে যেতে হবে। যেতে হবে কোন এক মার্চের পড়ন্ত দুপুরে যখন আমি একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একটা ট্রাউজার পড়া অবস্থায় চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম, ঠিক সেই সময়টায়। আমি চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম আমাদের কিংবদন্তির ৪২৭ নাম্বার রুমে। রুমের আর বাকি বাসিন্দাদের মাঝে শুধু বখতিয়ার, মাহাবুব সাহেব ছিলেন। মাহাবুব সাহেব অতি মাত্রায় একজন ভালো মানুষ। তার পছন্দের জিনিস একটাই গোল্ডলিফ সিগারেট। বখতিয়ার সম্পর্কে বলা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। শুধু এটুকু বলা যেতে পারে কোন এক বিশেষ কারণে আট তার প্রিয় সংখ্যা।

তো আমি চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম, মাহাবুব সাহেব ধুমায়া প্লেন উড়াচ্ছিলেন (মোবাইলে)। সে সময় বখতিয়ার রুমে ঢুকে তার লাল রঙের গেঞ্জিখানা দূরে ছুঁড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি পাশ ফিরে ওর দিকে তাকালাম। মাহাবুব সাহেবের দিকে একটা গোল্ডলিফ সিগারেট ছুঁড়ে দিয়ে বখতিয়ার আমাকে বলল, "মানুষ আর মানুষ নাই। সব বাহুতরা হয়ে গেছে!" আমি আর মাহাবুব সাহেব চোখাচোখি করে একসাথে বলে উঠলাম, "বাহুতরা?" বখতিয়ার ওরফে বখা একটু বিষাদগ্রস্থ হয়ে বলল, " হুম। বাহুতরা।"

বখতিয়ারের বিষণ্ণতা দেখে মাহাবুব সাহেব চুপচাপ সিগারেট ধরিয়ে বললেন, "চুপ করে থাকলে তো আর মন ভালো হবেনা। কি ব্যাপার খুলে বল ব্যাটা!" আমি উঠে গিয়ে বখার হাত ধরে টেনে পাশে বসালাম। বখা মুখে এক টুকরো চিলতে হাসি এনে বলল, "বাহুতরা হচ্ছে বাহুতরা। এরা ফাত্রা পোলাপানের থেকে হাজার গুণ বেশি খারাপ।"

আমি আমার ভুড়িতে একটা টোকা দিয়ে বললাম, "Detailsপ্লিজ!" এবার বখা ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল, "বাহুতরা হচ্ছে বাপে-মায়ে ক্ষেদানো পোলাপান, সব এলাকায় এমন ১০/১২টা পোলাপান থাকে। এরা নিজেদের বাপ-মায়ের সম্মান তো ডুবিয়েছে, সাথে এলাকার মান-সম্মানের দফারফা সারা করেছে। এরা কখনও ভালো কিছু চিন্তা করতে পারেনা। যদিও কোন ভালো কাজ করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার পেছনে বড় কোন অভিসন্ধি আছে।" আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, "বুঝলাম। কিন্তু এই বাহুতরা ব্যাপার নিয়ে তুই এত্ত চিন্তিত ক্যান?" বখা মাহাবুব সাহেবের দিকে ফিরে বলল, "মাঝে মাঝে মনে হয় আসলে আমরাও এক টাইপের বাহুতরা।"

এই কথা শুনে সিগারেটে একটা কড়া টান দিতে গিয়ে মাহাবুব সাহেব খক খক করে কেশে উঠলেন। আমি একটু অবাক হয়েই বললাম, "খারাপ তো কখন কিছু করি নাই আমি। এলাকা কিংবা বাপ-মায়ের নামও ডুবাই নাই। না না! আমরা বাহুতরা না।" মাহাবুব সাহেব দুই ঢোক জল গিলে নিয়ে বললেন, "আমরা বাহুতরা না। আমরা আসলে বলদ।" বখা এবার একটু সিরিয়াস হয়েই বলল, "না। আমরাই বড় বাহুতরা। অভি, তুই তোর বুকে হাত দিয়ে বল কি চিন্তা করে এখানে এসেছিলি আর কি করছিস, মাহাবুব সাহেব আপনিও চিন্তা করে দেখুন।" আমি বললাম, "আমার যা চিন্তা ছিল তা পূরণ হয়নি। এর কারণ আমাদের চারপাশের এই যে অবস্থা..." বখা আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, "আরে না। চারপাশের অবস্থাকে দোশ দিসনা। তুই চাইলেই তোর ইচ্ছা কে বাস্তবে টেনে আনতে পারতি। তুই নিজের চেষ্টাকেই নষ্ট করে দিয়েছিস। তাহলে কি হয়? তুই তো তোর নিজের চেষ্টাকেই মেরে ফেলেছিস। নিজের কাছেই হেরে গেলি! তুই তো বড় বাহুতরা। আমি, মাহাবুব সাহেব, আমরা সবাই নিজেদের কাছে হেরে যাওয়া মানুষ। আমরাই তো আসল বাহুতরা।"

এসব শুনে আমি মাহাবুব সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। মাহাবুব সাহেব চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। উনি সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে জানালা দিয়ে আরো দূরে দেখা চেষ্টা করে বললেন, "আসলে আমরা হেরে যাই আমাদের কাছে না। হারি সময়ের কাছে। এর জন্য আমরাই দায়ী। আমার ইচ্ছা ছিল হব পাইলট। আর পড়ি এখন অর্থনীতি। আসলেই সব ইচ্ছা দিন দিন মরে যাচ্ছে।" বখা বিছানায় গা ছেড়ে দিয়ে বলল, "হারতে হারতে তো জনম শেষ হয়ে যাচ্ছে। হারা যাবেনা। হারলেই বাহুতরা হয়া যাব।"

একথা বলার সাথে সাথেই আমরা একটা কম্পন অনুভব করলাম। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে যা বোঝার তা আন্দাজ করে নিলাম। ভূমিকম্প হচ্ছে। আমরা দৌড়ে চারতলা থেকে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম আমাদের সাথে আরো অনেক ছেলেপিলে নেমে এসেছে। বখা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "বাহুতরা। সব বাহুতরা। আসলে দুনিয়াই বাহুতরা। নাহলে এত্ত জোড়ে ক্যামনে কাপে?" মাহাবুব সাহেব ফিচেল মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললেন "খালি বাহুতরা না ফাকির ভাই বলতেও মন চায়।"

ফাকির ভাই? এই ব্যাপারে না বলি আর। সে এক লম্বা গল্প। আপাতত আমি বাহুতরা হওয়া থেকে বিরত থাকি। আর যাই করি বাহুতরা হয়ে বাঁচতে পারবনা। না না না!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×