somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেনারা (অতিপ্রাকৃত গল্প)

০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






দিনশেষে বাড়ি ফিরছিল দিপু।রাস্তায় প্রচন্ডরকমের ভীড়।হাটঁতে অসুবিধা হচ্ছে। "দেখে মনে হচ্ছে কুরবানীর গরুর হাট" মনে মনে ভাবলো দিপু।সবার মাঝে অস্থিরতা।কি সব ছেলেমানুষী যে শুরু হয়েছে! কিছুদিন ধরে শহরে নানা গুজব ছড়াচ্ছে।হাস্যকর ধরনের গুজব।আর জনগণও সেই গুজবে তাল মেলাচ্ছে।সন্ধ্যা হতে না হতেই বাড়ি ফেরার টনক পড়ে যায়।রাতে নাকি রাস্তাঘাটে "তেনারা" চলাফেরা করে।"যত্তসব গন্ডমূর্খের দল" বিড়বিড় করে গালি দিল লোকজনকে।দিপু নিজে উচ্চশিক্ষিত।মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির সিনিয়র অফিসার হওয়ায় অহংকার একটু বেশি।নিজের গাড়ি না থাকলেও সে সবসময় অফিসের গাড়িতে চড়ে।কিন্তু আজ নাকি তার ড্রাইভার লোকমান আলি গুরুতর অসুস্থ।তাকে নাকি গতকাল রাতে "তেনারা" ধরেছিল।তাই আজ কাজে আসেনি।ফলে দিপুকে হেঁটে হেঁটে যেতে হচ্ছে।দিপু ভাবছে নিশ্চয় কাজে না আসবার জন্য লোকমান আলি এই অজুহাত দাঁড় করিয়েছে।ব্যাটা ছাগল।দীর্ঘদিন ধরে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস না থাকায় কিছুদূর যেতেই দিপু ক্লান্ত হয়ে পড়লো।সামনে একটা চায়ের টং দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে বসলো।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে।দিপু অবাক হয়ে লক্ষ করলো রাস্তাঘাট প্রায় খালি হয়ে এসেছে।অথচ কিছুক্ষণ আগেও ভীড়ের জন্য সে ঠিকমত হাঁটতে পারছিল না।কিছুক্ষণ পর চা এলো।কয়েক চুমুকে শেষ করে আরেক কাপ চেয়ে পাঠালো ।এখানে বসে থাকতে ভাল লাগছে।এই ভালোলাগার সাথে অফিসে সুন্দরী সেক্রেটারির পাশে বসে থাকার ভালোলাগার কোন মিল নেই।দ্বিতীয় কাপে চুমুক দিল দিপু।পাশের কয়েকটা টুলে বসে লোকজন আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডার বিষয় যথারীতি "তেনারা" ।একজন গমগমে গলায় বলে যাচ্ছে-

"ভাইয়েরা শুনেন।আমার দুলাভাই সেদিন গ্যাস্টিকের ব্যথার ঔষধের জন্য বাসার পাশের ফার্মেসিতে যাচ্ছিল।গিয়ে দেখে ফার্মেসি বন্ধ।বাধ্য হয়ে বাসা থেকে একটু দূরে অন্য ফার্মেসিতে যায়।ঔষধ নিয়ে আসার সময় দুলাভাই দেখতে পায়,কালো আলখাল্লা পড়া কিছু লোক রাস্তার মাঝখানে কি যেন মুছছে।দুলাভাই কিছুটা অবাক হয়ে সামনে এগোতেই দেখতে পায়,সারা রাস্তা রক্তে মাখামাখি। কালো আলখাল্লাধারীরা সেই রক্ত পরিষ্কার করছিল।এটা দেখে দুলাভাই ভয়ে পেয়ে তাদের জিজ্ঞেস করে -আই কে তোমরা কি করো এখানে?তখন আলখাল্লাধারীদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে মাথার হুড ফেলতেই দুলাভাই দেখে,যেখানে মাথা থাকার কথা সেখানে শেয়ালের মাথা।আর বাকি শরীর মানুষের মতোই।এটা দেখে প্রচন্ড ভয়ে দুলাভাই জ্ঞান হারায়।"
এটুকু বলে লোকটা থামতেই পাশে বসা লোকগুলো চোখ বড় বড় করে তাকায়।মনে হয় লোকগুলো ঘটনা শুনে ভয় পেয়েছে।এটা দেখে হাসি পাই দিপুর।সে টাকা মিটিয়ে রাস্তায় উঠে পড়লো।নাহ,তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।ইভা নিশ্চয় চিন্তা করছে।দিপু যখন হাঁটা শুরু করেছে তখন সন্ধ্যা মিলিয়ে রাত হয়ে গেছে।রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ নেই।"গুজব ভালোভাবেই ছড়িয়েছে" ভাবলো দিপু।ঝিঝি পোকা ডাকছে।বাসা থেকে আরো বেশি দূরে নেই।দিপু এখন যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তার উভয়পাশে বেশ বড়সড় কিছু গাছের বাগান।ফলে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মনে হয় পার্কের ভেতর দিয়ে হাঁটছে।গাছ গুলোর মধ্য দিয়ে কিছুদূর এগোলো দিপু।জায়গাটা বেশ নীরব।এমনকি ঝিঝিপোকার ডাকও আর শোনা যাচ্ছে না।কিছুটা অস্বস্থি অনুভব করলো দিপু।ঠিক তখনি প্রচন্ড শব্দে উপর থেকে কিছু একটা এসে পেছনে পড়লো।চমকে উঠলো দিপু।পেছনে তাকালো সে।কিছু নেই।নিশ্চয় মনের ভুল।একটু পরে আবার পেছনে প্রচন্ড কিছু পতনের শব্দ হলো।এইবার দিপু কিছুটা ভয় পেল।মুহূর্তে ভূতপ্রেত নিয়ে সমস্ত ঘটনা তার মনে পড়ে গেলো।এতে ভয় দশগুন বেড়ে গেল।ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালো সে।কিছু নেই।ফলে ভয় আরো বেড়ে গেল।সে দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো।আতংকে মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।কিছুদূর এগোতেই আবারো শুনতে পায় প্রচন্ড শব্দে কিছু একটা পেছনে পড়লো।দিপুর মনে হচ্ছে কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে।আশেপাশের গাছগুলোতেও তান্ডব ছড়িয়ে পড়েছে।পেছনে আবার শব্দ হতেই সে ছুটতে শুরু করলো।কোনমতে পার্কের মতো জায়গাটা থেকে বেরুলো।

খোলা জায়গায় পৌঁছুতেই সে রাস্তায় বসে পড়লো।ঘামে ভিজে গেছে সমস্ত শরীর।ভয়াবহ ভাবে হাপাচ্ছে সে।এমনসময় কেউ একজন তার কাঁধে হাত রাখলো।আহ! এতোক্ষণে কোন মানুষের সংস্পর্শে এলাম।মনে আশা নিয়ে সেদিকে তাকাতেই সব আশা উবে গেল।ভেতরের প্রচন্ড আতংক চিৎকার করে বের করার জন্য মুখ খুললো দিপু।কিন্তু কোন আওয়াজ বেরুলোনা।গলাটা যে আগেই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে পাশে দাঁড়ানো ভয়ানক অশরীরীটা।
কেউ যদি তখন ওইখান দিয়ে যেত তাহলে সে দেখতো কালো আলখাল্লাধারী কিছু লোক রাস্তার রক্ত পরিষ্কার করছে।দিপুর রক্ত।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২৩
৩৭টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×