আক্কাস আলী তার বন্ধুর সহযোগিতায় নতুন ফেসবুক আইডি খুলেছে।বন্ধ বলেছে সে ফেসবুকে অনেক মেয়ের সাথেই কথা বলে।বেচারা আক্কাস বাস্তবে তার কলেজের কোন মেয়ে তার দিকে চোখ দিয়ে তাকায় না।এই নিয়ে তার আফসোস। তাই এবারে চিন্তা করলো ফেসবুক আইডি খুলে মেয়েদেরকে পটাবে।ফেসবুক আইডির নাম দিল "আক্কাস আলী"....
এবারে সে দিনরাত ফেসবুকে পরে থাকতো। বেঁচে বেঁচে মেয়েদের রিকোয়েস্ট দিত।কিন্তু ব্যাপারটা এবারেও মিলছে না।কোন মেয়েই তার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে না।সে মেয়েদের প্রফাইল ঘুরে ঘুরে লাইক কমেন্ট করে সেটার রিপ্লেও করেনা।এবার সে ভিষন চিন্তিত।সমস্যা টা কোথায়? তার নাহয় চেহারা ভাল না তাই বাস্তবে কেউ তার সাথে কথা বলেনা কিন্তু ফেসবুকে তো ছবি দেয়া নাই তাইলে কেন মেয়েরা এক্সেপ্ট করেনা।বেচারা এত ঘেটেও বুঝতে পারেনা তার সমস্যাটা কোথায়...!!!
.
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেছে। ফেসবুকে যেতেই দেখলো নোটিফিকেশন। ২ মাস ফেসবুক চালাতে চালাতে অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছে।নোটিফিকেশন এ লিখা ছিল "Tiya Hossain" accepted your friend request..... বেশ খুশি সাথে সাথে মেসেজ দিল।
-হাই।
-হ্যালো।
-কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
-আমিও ভালো।
.
এরপর মেয়ে একটা লাইক দিলো। বাহ।বেশ ভালোই জমিয়ে নিয়েছে।আস্তে আস্তে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলো মেয়েটার সাথে।যে বন্ধু তাকে ফেসবুক খুলে দিছে তাকেও মেয়েটার কথা বলেনি যদি আবার সে পটিয়ে ফেলে তাই।
ইদানিং ভালোই তুমি তুমি করে কথা হয়।কেয়ার করে।ভালোই যাচ্ছে দিনকাল।
-হ্যালো টিয়া কি করো?
-হ্যা ঘুম থেকে উঠলাম তুমি?
-হ্যা ভালোই।
.
ভালোভাবেই চলছে সব।মেয়েটাকেও পটিয়ে ফেলেছে।গর্বে আক্কাসের বুক ফুলে উঠে একেবারে।এবারে সে মেয়েকে পটিয়েছে। কলেজে তার মোটামুটি ভালোই বন্ধু আছে। তার মধ্যে যে বন্ধুটি ফেসবুকে একাউন্ট খুলে দিয়েছে মানে রুহুল, আর সোহান এবং মন্টু।
.
একবার কি হলো আক্কাসের গ্রামের বাড়ি যেতে হবে সে এইবারে খুব চিন্তিত।সেখানে মোবাইলের নেট নাই ফেসবুকে আসবে কিভাবে? মেয়েটাকে তো পটিয়ে ফেলেছে এবারে না আসলে মেয়েটাকে তো আর পাবেনা।গ্রামে থাকবে ৫ দিন।৫ দিন চ্যাট না হলে শেষ।সে গ্রামে গিয়ে দিন রাত গ্রামের মাঠে পরে থাকতো আর মেয়েটার সাথে চ্যাট করতো।এভাবে গ্রামে থাকা অবস্থায় ৪ দিন চলে গেল।যেদিন সে ফিরে যাবে পড়াশুনার জন্য সেদিন আবার সকালে ফেসবুকে ঢুকলো।গিয়ে দেখলো টিয়ার আইডিতে মেসেজ দেয়া যাচ্ছেনা।বেচারা আক্কাস ভেঙ্গে পরলো।ফেরত গিয়ে রুহুলের সাথে দেখা করলো আর টিয়ার সম্পর্কে সব খুলে বললো।আর চোখে পানি আসতেছে আক্কাসের।ওইদিকে রুহুলের মাথায় হাত! রুহুল বলতেছেঃ-
-আরে ব্যাটা থাম!
-দোস্ত মাইয়াডারে অনেক কষ্টে পডাইছিলাম।
-থাম ভাই।
-কিভাবে থামি?এত কষ্টের জিনিস!
-ব্যাডা!! ওইডা মন্টুর ফেইক আইডি।
-কি কস!
-হ্যা।ওইটা মন্টুর ফেইক আইডি।আগে বললেই হইতো আমারে।আমি জানতাম!
-ভাই আমি বুঝিনাই।
.
বেচারা আক্কাস।একখান পটাইলো তাই আবার ফেইক আইডি।এরপর থেকে যতবার কলেজে যাইতো মন্টু তার দিকে ট্যারাই ট্যারাই চাইতো আর আক্কাস আফসোস করতো।কত্ত গোপন চ্যাট করেছে মন্টুর সাথে।বেচারার কান্না আসে এখনো ওইসব মনে পরলে।গ্রামে গিয়েও কত কষ্ট করে সে চ্যাট করতো।আর শেষে এই অবস্থা।আহারে!! আফসোসে আফসোসে আক্কাসের বহু দিন চলে যাচ্ছে।বুকে ধাক্কা খায় ওই কথা মনে করলেই।আর ফেসবুকে গিয়ে মেয়েদের রিকোয়েস্ট দিতে ভয় পায় এখন।এইডাও কিনা আবারো মন্টুর আইডি হয়।কি জানি!!! এই বার মন্টু না হইলেও যদি সোহানের আইডির হয়।কপালের দোষ বলা যায়না।নাহ এই জনমে আর মেয়ে পটাইতে পারবেনা।তার কপালে নাই।এইভাবেই দিনকাল যায়।আল্লাহর কাছে বলে-"আল্লাহ আমারে একটা টিয়া দেও।কিন্তু এইবারে পোলা টিয়া না মাইয়া টিয়া দিও".....
.
.
"ফেসবুকে আক্কাস"
-সিয়াম মেহরাফ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩