মার্কিন হামলার আশঙ্কায় পরমাণু চুল্লিতে পুড়ছে পাকিস্তান!
উপমহাদেশের পারমাণবিক প্রতিযোগিতার আগুনে আবারও ঘি ঢালতে শুরু করেছে পাকিস্তান। দেশটিতে জাতীয় পর্যায়ে চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও বিরামহীনভাবে একের পর এক পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বর্তমান বিশ্বে সর্বাপেক্ষা দ্রুত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে পাকিস্তানে। কিন্তু পরমাণু কর্মসূচিতে কেন পাকিস্তানের এই তড়িঘড়ি? এ কি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি নাকি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রভাব? তবে কি সত্যিই মার্কিন হামলার আশঙ্কায় ভুগছে পাকিস্তান? অপরদিকে নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা ৩০ লাখ ডলারেরও বেশি অর্থের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু বোমা তৈরির প্রযুক্তি সরবরাহ করার তথ্য সম্প্রতি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পরমাণু ইস্যুতে আবারও বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ পাকিস্তান। আর পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিকে আবারও বিতর্কিত করে তুলেছেন সেই পুরনো পুরোহিত। নিজ দেশের পারমাণবিক কর্মসূচির গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়াটাই বোধহয় তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনিÑ পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির স্থপতি খ্যাত বিজ্ঞানী ড. আবদুল কাদির খান। তিনি এক বিবৃতিতে সম্প্রতি দাবি করেছেন, পরমাণু বোমা তৈরির প্রযুক্তির জন্য নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের ৩০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ ঘুষ দিয়েছিল উত্তর কোরিয়ার সরকার। ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাইয়ে লেখা উত্তর কোরিয়ার এক সরকারি কর্মকর্তার এ সংক্রান্ত একটি চিঠির অনুলিপিও প্রকাশ করেছেন তিনি। চিঠির তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল জাহাঙ্গীর কেরামতকে উত্তর কোরিয়া ৩০ লাখ ডলার দিয়েছে। এছাড়া লে. জেনারেল জুলফিকার খানকে পাঁচ লাখ ডলার এবং অলঙ্কার দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ আছে চিঠিতে। কাদির খানের প্রকাশিত এ চিঠিতে উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির সেক্রেটারি জন বিয়ংয়ের সাক্ষর রয়েছে। কাদির খান দাবি করছেন, তিনি নিজে এ অর্থ সেনাকর্মকর্তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এ অর্থের বিনিময়ে একটি পরমাণু কর্মসূচির নথিপত্র উত্তর কোরিয়ার কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল কাদির খানের। তিনি আরও দাবি করেছেন, তার দেওয়া সেন্ট্রিফিউজ ও নকশার সহায়তায়ই উত্তর কোরিয়া ইউরেনিয়ামভিত্তিক বোমা তৈরির কাজ শুরুর মাধ্যমেই বর্তমানে প্লুটোনিয়ামভিত্তিক পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বের কিছু গোয়েন্দা সংস্থা এ ঘটনাকে সত্যি বলে মনে করলেও ড. কাদির খানের এ চিঠিকে এক মিথ্যে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছে পাকিস্তান। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কেরামত ও লে. জুলফিকার খান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কাদির খানের প্রকাশ করা ওই চিঠিটি ভুয়া। তারা আরও বলেন, উত্তর কোরিয়ার কাছে পরমাণু প্রযুক্তি পাচার করার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর ক্ষেত্রে এটি কাদির খানের একটি অপচেষ্টা মাত্র।
ড. কাদির খানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পরমাণু অস্ত্র প্রযুক্তি প্রসারের এ অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ২০০৪ সালে পারভেজ মোশাররফের শাসনামলে লিবিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ায় গোপনে পারমাণবিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের দায় স্বীকার করে মিডিয়ার প্রধান শিরোনাম হয়েছেন তিনি। গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার কারণে পাঁচ বছরের বেশি সময় পাকিস্তানে গৃহবন্দি হয়েও থাকতে হয়েছে তাকে। তারপরেও থেমে নেই তিনি। বরং পাকিস্তানের পরমাণু বির্তকের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোকেও নানাভাবে জড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এই কিছুদিন আগেও ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হলে ভারত বাঙালিদের পক্ষে দাঁড়াতে সাহস করত না আর বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানও ভেঙে যেত না’Ñ বলে দাবি করে নিউজ উইক সাময়িকীতে প্রবন্ধও লিখেছেন তিনি। সব মিলিয়ে নিজের দেশকে বিপদে ফেলার ক্ষেত্রে যেন সিদ্ধহস্ত হয়ে পড়েছেন ড. কাদির খান।
কিন্তু ড. কাদির খানের চেয়েও বড় বিপদের আশঙ্কায় ভুগছে পাকিস্তান। তাদের সাম্প্রতিক পারমাণবিক কর্মসূচিই সে অশনি সংকেতকে স্পষ্ট করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ধারণা অনুযায়ী, পাকিস্তান যে হারে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে তাতে করে আগামী এক দশকের মধ্যে ১৫০ থেকে ২০০ পরমাণু অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে তারা। পরমাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হ্যান্স এম ক্রিসটেন্সেন ও রবার্ট এস নরিস ‘বুলেটিন অব অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস’-এর সর্বশেষ সংস্করণে উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তান প্লুটোনিয়াম উৎপাদনে দুটি নতুন পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের পথে রয়েছে। তাছাড়া, পরমাণু অস্ত্রের আরও জ্বালানি উৎপাদনে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা সংবলিত অপর একটি স্থাপনা তৈরি করতে যাচ্ছে। জার্নালের ‘পাকিস্তানস নিউক্লিয়ার ফোর্সেস, ২০১১’ শীর্ষক নিবন্ধে অস্ত্র বিশেষজ্ঞদ্বয় উল্লেখ করেন, ‘এভাবে সম্প্রসারণ কাজ অব্যাহত রাখলে পাকিস্তান দ্রুতই দেড়শ থেকে দুইশ পরমাণু অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও দেশটি শক্তভাবে তার পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা ও দক্ষতা ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানের এই তৎপরতা বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় দ্রুতগতির।’
ধারণা করা হচ্ছে, ইসলামাবাদের কাছে বর্তমানে আনুমানিক ৯০ থেকে ১১০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। অথচ মাত্র দুবছর আগেও ২০০৯ সালে তার পরমাণু অস্ত্রের মজুদের সংখ্যা ছিল ৭০ থেকে ৯০-এর মধ্যে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এক নতুন ধরনের ‘ডেলিভারি সিস্টেম’-এর উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের পরমাণু অস্ত্রসম্ভার সম্প্রসারণ খাতে ইতোমধ্যে যোগ হয়েছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম মধ্যম পাল্লার ব্যালাস্টিক ও স্বল্প পাল্লার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র। এতে আরও যোগ হয়েছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম নতুন দুই ধরনের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। চারটি নতুন ডেলিভারি সিস্টেম ও প্লুটোনিয়াম উৎপাদনে দুটি নতুন চুল্লির প্রকল্প থেকে এটি পরিষ্কার, দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ আগামী ১০ বছরে আরও বেড়েই চলবে। পারমাণবিক কর্মসূচির বিপর্যয় সম্পর্কে কোনোরকম মাথাঘামানো ছাড়াই বিপুল উদ্যমে পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলছে পাকিস্তান।
অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই জাপানে ঘটে গেছে সুনামি পরবর্তী ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়। এর পরেও হুঁশ ফেরেনি পাকিস্তানের। তাহলে কি সত্যিই মার্কিন হামলার আশঙ্কায় ভুগছে পাকিস্তান? সম্প্রতি অ্যাবোটাবাদে আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন হত্যা ও পাকিস্তানে মনুষ্যবিহীন মার্কিন বিমান ড্রোন হামলার ইস্যুতে আগের সেই সুসম্পর্ক আর নেই পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের। বরং এখন সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে চীনের সঙ্গে।
পাকিস্তানকে যে কোনো ব্যপারে উসকে দিতে চীন বরাবরই অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় একধাপ এগিয়ে। ভারতকে চাপের মুখে রাখার জন্যই চীন পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। তার ব্যতিক্রমও হয়নি। চীন বরাবরই একথা সরাসরি বলে আসছে যে, পাকিস্তানের পরমাণু চুল্লির প্রসারে চীনের সাহায্যের দুয়ার পাকিস্তানের জন্য সবসময়ই খোলা। আর এই উপমহাদেশে পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিদ্বন্দি রাষ্ট্র ভারত। সুতরাং এই দু’দেশই যে ভারতকে ফাঁকি দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করবে সেটা হিসাব করার জন্য দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে হয় না।
যার ফলাফল স্বরূপ- চীন কিছুদিন আগেই ঘোষণা দিয়েছে ১৯৭০ সালের পারমাণবিক প্রযুক্তির প্রসারে পাকিস্তানকে তারা সহায়তা করবে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ‘চাশোমা’ এলাকায় এই প্রসারের কাজ চলবে বলে ঘোষণাও দিয়েছে চীন। কিন্তু এক্ষেত্রে ভুলে গেলে চলবে না যে, জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু চুল্লিতেও ১৯৭০ সালের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে এই বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে ‘কোনো রকম প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ছাড়া এই প্রযুক্তি সম্পূর্ণ নিরাপদ’ বলে দাবি করেছে চীন। চীনের এই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ফলে চিন্তিত ভারত। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তান এই দুই দেশের মধ্যে একটানা চলছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। গোটা অঞ্চলই ভবিষ্যতে হুমকির সম্মুখীন হবে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকেই।
আশঙ্কার কারণ হিসেবে পরমাণু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সবচেয়ে পুরানো পরমাণু চুল্লি ডিজাইনে তৈরি করা হবে পাকিস্তানের এই চুল্লি। চীন যদি পাকিস্তানকে নতুন একটি পরমাণু চুল্লি তৈরিতে সাহায্য করতে চায় তাহলে এই পুরানো ডিজাইনের মধ্যেই দুটি দেশ আটকে থাকবে। ফলে জাপানের মতো বিপর্যয় এই দুই দেশেও ঘটতে পারে। পাকিস্তানের মতো একটি জঙ্গি রাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে মানবসৃষ্ট সন্ত্রাসবাদী হামলার সম্ভাবনাকেই বড় করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রযুক্তি বরাবরই নিরাপদ বলে দাবি করে আসছে পাকিস্তান সরকার।
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) উদ্বেগকে বরাবরই নাকচ করে দিয়ে আসছে ইসলামাবাদ। এ বিষয় নিয়ে পাক সরকারের বক্তব্য ছিল, একটি মুসলিম এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েও পরমাণু শক্তি অর্জন করায় পাকিস্তানকে টার্গেট করা হচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক ড. কাদির খান এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা নিরাপদ জায়গায় সুরক্ষিত আছে। তালেবান এবং অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন কোনো দিনই এর হদিস পাবে না। হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন মানুষ জানেন কোথায় পারমাণবিক বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক বছর ধরেই আমরা পারমাণবিক বোমা সুরক্ষিত জায়গায় রাখার কাজ করে এসেছি। এই অস্ত্রগুলো টানেলের মধ্যে শায়িত অবস্থায় আছে। চাইলেই সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। পাকিস্তান কোনো বিরতি ছাড়াই বিগত ১০ বছর ধরে নিউক্লিয়ার প্রোগ্রামের কাজ করে আসছে। একই সঙ্গে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়াও সমানভাবেই চলছে। পাকিস্তান কখনই পারমাণবিক বোমা সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে না। আমরা শুধু এর উপকরণগুলো তৈরি করে জড়ো করে রেখেছি যাতে প্রয়োজনের সময়ে খুব দ্রুত একে পরিপূর্ণ পারমাণবিক বোমায় রূপ দেওয়া যায়।’
কিন্তু ড. কাদির খান ভুলে গিয়েছেন যে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে সেখানে এখন তীব্রভাবে উত্থান ঘটেছে জঙ্গিবাদের। প্রশ্ন উঠতেই পারেÑ একটি জঙ্গি রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকৃতপক্ষে কতখানি নিরাপদ? যে কোনো হামলা বা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে তা যে সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাবে না তার গ্যারান্টি কী করে দিচ্ছেন পাক পরমাণু বোমার জনক আর পাকিস্তান সরকার?
তাদের এতসব কথার ফুলঝুরি যে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে যাছে সেটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায়। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচির শক্তিশালী নৌ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। হামলার ধরন দেখে ধারণা করা হচ্ছে, করাচির নৌ ঘাঁটি পিএনএস মেহরানে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা সামরিক দিক থেকে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ হামলার জন্য তারা নাইট ভিশন গগলস বা রাতের অন্ধকারেও দেখতে সক্ষম বিশেষ ধরনের চশমা ব্যবহার করেছে। ১৯৭৫ সালে স্থাপিত এ ঘাঁটি করাচির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটিই করাচিতে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর এক মাত্র বিমানঘাঁটি। হামলা চালানোর সময় সন্ত্রাসীরা পিএনএস মেহরান ঘাঁটিতে মই বেয়ে প্রবেশ করেছে । তারা এ ঘাঁটির ভেতর ছিল প্রায় ১৭ ঘণ্টা। সন্ত্রাসীদের হামলায় মার্কিন নির্মিত দু’টি গোয়েন্দা বিমান বিধ্বস্ত এবং ১০ পাকসেনা নিহত হয়েছে। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তরের হামলার পর কোনো সেনাঘাঁটির ওপর আর এত মারাত্মক হামলা হয়নি।
আর এই ঘাঁটি থেকে ১৫ মাইল দূরে মাসরুর বিমানঘাঁটিতেই রয়েছে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার সম্ভাব্য ভাণ্ডার। করাচির মেহরান ঘাঁটিতে হামলার পর সে সব বোমার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
এই সন্ত্রাসী হামলা চালনোর মধ্যদিয়ে দেশটির পরমাণু স্থাপনায় হামলার মহড়া চালানো হয়েছে বলেই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ। এ পর্যন্ত পাওয়া ধারণা অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ১০০টি পরমাণু বোমা আছে বলে মনে করা হয়। এ ঘটনার পর পাকিস্তান সরকার বলছে, পাকিস্তানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট কঠোর। পরমাণু ঘাঁটি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা যে কোনো দুস্কৃতিকারীর জন্য প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া এ সব ঘাঁটিতে যারা কাজ করেন তাদের ওপরও কঠোর নজর রাখা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এত কিছুর পরেও তাহলে কীভাবে হামলা চালাচ্ছে সন্ত্রাসবাদীরা? যে হারে কঠোর নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত ঘাঁটি বা এলাকায় হামলা চালানোর দক্ষতা অর্জন করেছে সন্ত্রাসীরা তাতে করে যদি কোনোদিন পাকিস্তানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে তেজস্ক্রিয় উপাদান হাতিয়ে নিয়ে ‘ডার্টি বম্ব’ তৈরি করে ফেলে তাতে সত্যিই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ধারণা করছেন, শুধু সন্ত্রাসীদের হামলাই নয়; পাকিস্তানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করেছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে ইরানের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। যদিও এ তথ্য সংক্রান্ত কোনো সূত্রই তিনি প্রকাশ করেননি। অনেকেই ধরে নেবেন, পরমাণু অস্ত্র বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পুরানো বিবাদী ইরান কারণে অকারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে কথা বলতেই পারে। এ নিয়ে মাথা ঘামানোর তেমন কিছু নেই। কিন্তু তাই বলে বরাবরের মতো এবারের এই হামলার আশঙ্কাকেও একেবারে নাকচ করে দেওয়া চলে না। এর সঙ্গে ভিন্ন কিছু বিষয়ের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।
এই যেমন কিছুদিন আগে জাপান সুনামি পরবর্তী পরামাণু বিপর্যয়ের পেছেনে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া গবেষণার প্রকল্প হার্পকে (হাই ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাকটিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম) এজন্য দায়ী করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়ে থাকে, হার্পকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র এমন অস্ত্র তৈরি করেছে যা দিয়ে তারা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর দ্বারা কৃত্রিমভাবে সুনামি ও ভূমিকম্প সৃষ্টিও করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যাটরিনা ঝড় আঘাত হানার পর প্রথম অভিযোগ ওঠেছিল- এটি ছিল হার্পের ভুল পরীক্ষার ফল। এরপর পাকিস্তানে বন্যা, হাইতিতে ভূমিকম্প এবং জাপান বিপর্যয়ের জন্যও দায়ী করা হচ্ছে হার্প প্রকল্পকে। এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলোÑ আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে আয়নমণ্ডলের সৌরবিদ্যুতের ওপর প্রভাব তৈরি করা। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই ধারণা করছেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্র তরঙ্গের শক্তি ব্যবহার করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তকরণ এবং ভূমিকম্প সংগঠনের মতো ভয়াবহ কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১০ সালের পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা ও অতিবৃষ্টির পেছনেও যুক্তরাষ্ট্রের হার্প প্রযুক্তিকে দায়ী করেছিল পাকিস্তানের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেশকিছু সংস্থা। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল যেহেতু তালেবান ও আল কায়েদার নিয়ন্ত্রণে ছিল তাই হার্প প্রযুক্তি ব্যবহার করে বন্যার মাধ্যমে এ অঞ্চলে পুরোদস্তুর বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও এই বিষয়গুলোর কোনোটিকেই যথাযথভাবে প্রমাণ করা যায়নি। তারপরেও সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে থেকেই যায়। তবে শুধু কৃত্রিম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই নয়- যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো মুহূর্তেই পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালাতে সক্ষম তা ওসামা বিন লাদেন নিধনে অ্যাবোটাবাদের হামলাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু উপযুক্ত কোনো অজুহাত ছাড়াই সরাসরি একটি স্বাধীন সার্বভৗম রাষ্ট্রে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আরেকবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। তাই সরাসরি সামরিক হামলায় না গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটিয়ে পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানতে পারলেই তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক। এছাড়াও তাদের হাতে আছে বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি সিআইএ। সিআইএ’র মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সুতরাং পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনায় সন্ত্রাসবাদীদের একের পর এক হামলা যে সিআইএ’র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইন্ধনে নেই সে বিষয়েও নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। বরং সিআইএ’র সহায়তায় যদি কোনো জঙ্গি সংগঠন পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয় তাহলে সেই অজুহাতেই জঙ্গি রাষ্ট্রকে শায়েস্তা করার নামে পাকিস্তানে হামলা চালানো আরও সহজ হয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন