ব্যক্তিগত কথাকাব্য : স্বপ্নগ্রহণ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বালকবেলা থেকেই, আমার হাতের লেখা (হস্তাক্ষর) ফাটাফাটি রকমের সুন্দর ছিলো, বর্তমানেও আছে— এখন বরং আরো সৌন্দর্য পেয়েছে সে লেখা । যদি হস্তাক্ষরের লিঙ্গভেদ থাকতো, এবং সেই হস্তাক্ষর যদি ছেলে হতো— কলেজ-য়্যূনিভার্সিটির হস্তাক্ষর-মেয়েরা সকাল-সন্ধ্যা তার বাসার গেটে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতো, তাকে একপলক দেখার জন্যে । এবং শুধু মেয়ে হয়ে জন্মাবার অপরাধে তারা সবাই বিয়ের প্রস্তাব দিতে লজ্জা পেতো, আফসোস করে মরতো । কিংবা যদি ভাগ্যক্রমে সে মেয়ে হয়েই বসতো— নির্ঘাত তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো এলাকার যুবসমাজের মধ্যে । এ বলতো আমি বিয়ে করবো, ও বলতো ও বিয়ে করবে, সে বলতো সে বিয়ে করবে । তারপর হয়তো কোনো একদিন কোনো এক মন্ত্রী-মিনিস্টারের ছেলের বৌ হয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন পার হয়ে যেতো তার । অথবা কপাল খারাপ হলে হয়তো কোনো বখাটে সন্ত্রাসের খপ্পরে পড়ে যেতো । তারপর কোনো একদিন ধর্ষিতা হয়ে ভ্রান্তলজ্জায় আত্মহননের রাস্তা বেছে নিতে হতো তাকে, কিংবা নির্মম অ্যাসিডে ঝলসে যেতো তার সুন্দর মুখখানা ।
হাতের লেখা সুন্দর ছিলো বলে আমার বাবা প্রায়ই আমাকে পিঠ চাপড়ে বলতেন— পড় বাপ, ভালো করে পড়— দেখবি তোর একদিন বড়ো চাকরি হবে । যে ফাইন হাতের লেখা— দেখবি তুই একদিন কোর্টের বড়ো একজন মুহুরী হবি । একনামে তোকে সবাই চিনবে ।
আমার দরিদ্র বাবা মুহাম্মদ আক্কাস আলী তার সেজোছেলেকে নিয়ে এরচে’ বড়ো স্বপ্ন দেখেন নি কখনো । অথবা দেখার সাধ থাকলেও সাধ্যের অভাবে ভয় পেয়েছেন ।
হ্যাঁ তিনি ভয়ই পেয়েছিলেন— নয়তো বড়ো স্বপ্ন কে না দেখে ?
আজ বাবা বেঁচে নেই । কিন্তু তাঁর সেই ভয়টা এখনো বেঁচে আছে । আমার মস্তিষ্কের ভেতর সর্বদাই ভয়টা তার অস্তিত্ব জানান দেয় । জীবনে বড়ো কিছু হতে চেয়ে তাই বারবার আমি হতাশ হই, থুবড়ে পড়ি ।
ক্লাস ফাইভে থাকাকালীন যখন শ্রদ্ধেয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মুখাবয়বটাকে অবিকল ফুটিয়ে তুলেছিলাম পেন্সিলে— স্বজনরা অনেকেই বলেছিলো— তুই দেখিস একদিন বড়ো একজন চিত্রশিল্পী হবি ।
সেই থেকে আমিও স্বপ্ন দেখতে লেগে গিয়েছিলাম— অবশ্যই হবো । একদিন দেশের নামকরা একজন চিত্রশিল্পী হবো আমি । তারপর দুঃসময় আর অসামর্থ্য কবে যে কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছে আমার সে চিত্রশিল্পী হবার মন, স্বপ্ন— কে বলবে !
ক্লাস সিক্স পাশ করে যখন সেভেনে উঠি— হঠাৎ করে ইচ্ছে হলো— আমি কবি হবো । শুরু হয়ে গেলো প্রচেষ্টা । তারপর বেশ অল্প সময়ের ব্যবধানেই দেখলাম একদিন সাহিত্য পত্রিকা কিশোর কণ্ঠের ছড়া পাতায় নিজের নামটা মূদ্রিত হলো । কী যে আনন্দ পেয়েছিলাম ঐদিন— কী বলবো ! পত্রিকার একটা কপি কিনে নিয়ে ছুটতে ছুটতে আমি ক্লাস না করেই বাড়ি চলে গিয়েছিলাম সবাইকে দেখাতে— দেখো পত্রিকায় আমার নাম এসেছে ! তোমাদের কারো কখনো এসেছে এমন ?
অবশ্যি, আমার লেখা আর কোনো ছড়া কিংবা কবিতা আর কোথাও ছাপা হয় নি কখনো ।
তারপর ক্লাস নাইন পার করবার পর কবি হবার পোকা মাথা থেকে কবে একদিন বেরিয়ে গেলো— আমি বুঝতেও পারলাম না । সে পোকা আর ফিরে আসে নি কখনো । ফিরে এসে কী করবে ? আমার বাপের কি টাকা-পয়সা আছে, না আমার মোটা মাথার মামা-খালু আছে, যে, সে আমাকে মাধ্যম করে এদের আশ্রয়ে নিজেকে একটু প্রকাশ করবে সর্বসমক্ষে ?
স্বপ্ন কখনো মরে যায় না— শুধুমাত্র একরূপ থেকে আরেক রূপে অন্তরিত হয় । সম্ভবত ক্লাস টেনে থাকতে হঠাৎ একদিন খেয়াল চাপলো গল্পকার হবার, বড়ো ঔপন্যাসিক হবার । শুরু হলো গল্প লেখা । পড়াশুনোর বারো বাজিয়ে একটার পর একটা গল্প লিখে চলা ।
২০০২ সনের ১৩ নভেম্বর যখন প্রথম আলো পত্রিকায় প্রথম লেখা গল্পটাই প্রথম ছাপা হলো— আমার খুশি আর দেখে কে !
এই খুশিটাও বেশি দিন স্থায়ী হলো না । দারিদ্রতা আবার আমার হাত থেকে কলম কেড়ে নিলো । থেমে গেলাম ।
ভালো গান গাইতাম বলে শাহীন আপু (যশোর ছেড়ে খুলনায় আসার পর পরিচয় । আমার সাথে রক্তের তাঁর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও আমার বড়োবোনের চে' কম কিছু নন তিনি) প্রায়ই চাপাচাপি করতো— চল তোকে উদীচীতে ভর্তি করে দি । তুই চেষ্টা করলে অনেক বড়ো শিল্পী হতে পারবি ।
ভেতরে প্রচন্ড ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও কখনো বলি নি— আচ্ছা চল । আমি ভর্তি হবো ।
কী হবে ওসব গান-টান শিখে ? গরীব লোকের বাচ্চাদের ওসব শিখতে নেই । ওদের সাথে ওসব গান-টান যায় না, বড়ো বেমানান ।
২০১৩ সালের ফেব্রয়ারি মাসে সহোদর ছোটোভাই তুহিন অর্ণব হঠাৎ করে আবদার করে বসলো— দাদা, তোর লেখালেখিটা আবার শুরু কর প্লীজ ! আমার বিশ্বাস, তুই আমাদের(দেশ, সমাজ)কে অনেক কিছুই দিতে পারবি ।
শুরু করলাম ব্লগিং । তারপর থেকে এখনো চলছে । এবছরের একুশের বইমেলায় একটা বই বের করার স্বপ্ন ছিলো । হলো না । টাকা নেই, পয়সা নেই; ধরা নেই, চরা নেই; পাঠক নেই, টাঠক নেই— বই বের করছে ! শখ কতো ! পুরোনো পাগলে ভাত পায় না— নতুন পাগলের আমদানী !
কে বলবে— হয়তো কোনোদিনই, কোনো বইমেলাতেই, কোনো বই বের করা হয়ে উঠবে না । স্বপ্নের বসত স্বপ্নেতেই রয়ে যাবে— সত্যিটা তার দেখা হবে না কোনোকালেই ।
আত্মার শব্দাবলি : ভয়
সুপণ শাহরিয়ার
মিস্ত্রীপাড়া, খুলনা
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন