somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাহকালের গল্পঃ প্রহেলিকা

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনে হলো যেনো কানের কাছে কথা বলছে কেউ।
চোখ মেললাম কষ্টে- না, কিছুই শুনতে পেলাম না আর, দেখলামও না কাউকে। ঘুমচোখ বুজে এলো আবার।
কিন্তু, পরক্ষণেই স্পষ্ট শুনতে পেলাম কারো কন্ঠস্বর- চোখ মেললাম আবার, এবং চেষ্টা করলাম পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাতে। দেখলাম, আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছেন অচেনা, অপরিচিত দু'জন ব্যক্তি। তাঁদের একজন বললেন প্রথমে, 'আমরা দেবদূত হিসাবে প্রেরিত।'
আমার জিজ্ঞাসু চোখ দু'টো অন্য জনের দিকে ফেরাতেই মুখ খুললেন তিনিও- 'এইমাত্র তোমার আত্মাটাকে সংস্থাপন করা হয়েছে তোমার মাঝে- এটা আমাদের একটা কাজ।'
'আমাদের প্রথম কাজ হলো', আমার চোখসম্মুখে আরো একটু এগিয়ে এলেন প্রথম দূত- 'সমাধীবাসীদের থেকে তাদের আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করে স্রষ্টার নিকট হাজির করা। দ্বিতীয় কাজ- তাদের আত্মায় অবস্থিত পাপ এবং পূণ্যের পরিমাপ সমাপ্ত হলে সেসব আত্মাকে পূনরায় তাদের মাঝে সংস্থাপন করা। তৃতীয় কাজ- পূনঃসংস্থাপিত আত্মার মানুষদের প্রতি স্রষ্টাপ্রদত্ত নির্দেশসমূহ জানিয়ে দেওয়া।'
'আর', আমার দৃষ্টিসম্মুখে এগিয়ে এলেন এবার দ্বিতীয় দূত- 'তোমার প্রতি স্রষ্টার নির্দেশ হচ্ছে, স্বর্গবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে তোমাকে আর একটি মাত্র পূণ্য সংগ্রহ করতে হবে।'
চোখ দু'টো অন্য রকমভাবে প্রশ্নার্থক হয়ে উঠলো আমার। সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট নাড়লেন প্রথম দূত- 'আমাদের প্রস্থানের পর অন্য দূত দ্বারা তোমাকে সাময়িক ছাড়পত্র প্রদান করা হবে, পূণ্য সংগ্রহার্থে পৃথিবীর স্বজনদের নিকট যাওয়ার জন্যে।'
দূতটার কথা শেষ হবার পরপরই আমি আর কাউকে দেখতে পেলাম না- শূন্য, সব ফাঁকা। দেখলাম শুধু, এক জোড়া পরিপূর্ণ উজ্জ্বল আলো উড়ে চলে গেলো আমার সামনে দিয়ে।


অঘোরে ঘুমুচ্ছেন মা।
তাঁর শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমাকে এখন তাঁর চোখে স্বপ্ন এনে দিতে হবে- কারণ, জীবিতদের নিকট থেকে মৃতেরা কিছু পেতে চাইলে স্বপ্নের মাধ্যমেই তা' চাইতে হয়। তারপর তারা তদানুযায়ী যদি কোনো কাজ করে, তবে তার পূন্যগুলো মৃতের নিকট পৌঁছে যায়।
স্বপ্ন দেখাবার পদ্ধতিটা আবার একটু অন্য রকম- ঘুমন্ত কোনো মানুষের চোখের দিকে মৃতেরা তাকালেই তারা সেই মৃতদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
কিন্তু, মায়ের চোখের দিকে চোখ নিয়ে যাবার আগেই থেমে গেলাম আমি, মনে পড়লো হঠাৎ- বালক বেলার কথা।
আমরা (আমি, মা এবং বাবা) তখন আমার মায়ের বাড়িতে থাকতাম। আমার নানু- কেনো জানি নে, মা'কে একবার অনেকগুলো টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে মা শহরে একটা দো'তলা বাড়ি কিনেছিলেন। আমরা দাদুবাড়ি ছেড়ে সেই বাড়িতে গিয়ে থাকতাম।
হঠাৎ করে একদিন আমার বাবা মারা গেলেন। কে বা, কারা যেনো আমার সহজ-সরল ছাপোষা বাবা'কে মেরে ফেললো। বাবা মারা যাবার কিছুদিন পর একদিন দেখলাম, এক অচেনা ভদ্রলোকের হাত ধরে বেশ হাসি হাসি চেহারা করে মা বাড়ি ঢুকলেন। ভালো করে কিছু বুঝে উঠবার আগেই মা আমায় কোলে তুলে নিয়ে বললেন- এ হচ্ছে তোমার নতুন বাবা। এবার থেকে একে 'বাবা' বলে ডাকবে।
সেদিনের সেই নতুন বাবা'র মাঝে আমি আমার মরে যাওয়া বাবা'টাকে পেতে চেয়েছিলাম। আমার মরে যাওয়া বাবা'টা আমাকে বড্ডো আদর করতেন।
কিন্তু, নতুন বাবা আসার দু'-তিন দিন পর একদিন সকালে কী যেনো এক কাজে মায়ের ঘরে গিয়েছিলাম আমি- দেখি, নতুন বাবা ধেঁই ধেঁই করে নাচ্ছেন। এবং আরো একটু লক্ষ করতেই দেখি, মা'কে পাজাকোলা করে বাবা নাচ্ছেন।
আমাকে দেখতে পেয়েই মা'কে নামিয়ে দিয়ে বাবা অগ্নিচোখ করে আমার দিকে তাকালেন। মা'কে বললেন, একে শাসন করতে পারো না? যখন-তখন না বলে না ক'য়ে যার-তার ঘরে ঢোকে।
মা হনহন করে হেঁটে এসে ঠাস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন আমার গালে। বললেন, আর কখনো যেনো না বলে-ক'য়ে এ ঘরে ঢুকবি নে।
সেদিনের পর থেকে আর কোনোদিন মায়ের ঘরে যাওয়া হয় নি, মায়ের ভালোবাসা পাওয়া হয় নি- পাই নি।
যে মা বেদনায় নীল হয়ে প্রসবকৃত সন্তানের প্রতি নিজের দায়িত্বকে ভুলে যায় দ্বিতীয় স্বামীর অলৌকিক প্রভাবে, সেই নির্বোধ মায়ের নিকট থেকে কেবল উপেক্ষাই পাওয়া সম্ভব- গুরুত্ব নয়, পূণ্যও নয়।
সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ালাম আমি- অন্য কোথাও যাবো, অন্য কারো দ্বারস্খ হবো- হতে হবে। চারপাশের ছোটো-খাটো ঘর-বাড়িগুলোর মাঝে মাথা উঁচু করে দন্ডায়মান ছোটো চাচার জাকজমকপূর্ণ বিরাট প্রাসাদের সামনে এসে এক মুহূর্ত দাঁড়ালাম। পরক্ষণেই পা উঠোলাম আবার, এবং একসময় উপরে উঠবার সিঁড়িতে পা রাখলাম- ছোটো চাচার রুমটা দো'তলায়, আমাকে তাঁর কাছে যেতে হবে।

সিঁড়ি ভেঙে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে উঠতে মনে হতে লাগলো- একদিন ছোটো চাচা'র ঘরটা ছিলো সাধারণ, ছিলো চারপাশের বাড়িগুলোর সাথে মিশে। আর, একটা ভডভডে (স্টার্ট দেবার পর 'ভড্ ভড্ত' জাতীয় এক ধরণের শব্দ হয়) মোটরবাইক ছিলো চাচা'র। ফজর নামাজ শেষ করেই চাচা বেরিয়ে পড়তেন সেটা নিয়ে- অন্যের কাজে, অন্যের সাহায্যার্থে।
আমাকে নিয়মিতই রাত জেগে পড়তে হতো, তাই জানি- প্রায় প্রতিদিনই চাচা রাত করে বাড়ি ফিরতেন। আর প্রতিদিনই ভাত নিয়ে জেগে থাকতেন দাদি।
হাত-মুখ ধুঁয়ে খেতে বসলেই দাদি বলতেন, পড়াশুনো শেষ করে চুপ করে আছিস- একটা চাকরি-বাকরি কিছু দেখ। বাড়ির খেয়ে বনের মো'ষ তাড়িয়ে আর কতো দিন চলবে?
আর চাচাও প্রায় প্রতিদিনই দাদি'র কথার ঠান্ডা প্রতিবাদ করে বলতেন- উঁহু মা, কথাটা একেবারেই ঠিক বললে না। আমি বাড়ির খাই ঠিকই, কিন্তু বনের মো'ষ তাড়িয়ে বেড়াই নে- বাইরের মানুষের উপকার করে বেড়াই। বাইরের মানুষের উপকার করা তো খারাপ না মা। আর ওই গানটা শুনেছো না- ‘মানুষ তো মানুষের জন্যে, জীবন তো জীবনের জন্যে ...(।)?’ বলেই চাচা তাঁর মোটরবাইকের মতোই ভডভডে গলায় গেয়ে উঠতেন-
"মানুষ তো মানুষের জন্যে, জীবন তো জীবনের জন্যে
একটু সহানুভুতি কী মানুষ পেতে পারে না?
ও বন্ধু, মানুষ তো মানুষের জন্যে, জীবন তো জীবনের জন্যে, ...।"
চাচা'র সে ভডভডে সুরের গান শুনে বড়ো হাসি পেয়ে যেতো আমার, বেশ হাসতামও আমি নিঃশব্দে। কিন্তু, গানের কথাগুলো উপলব্ধিতে আসতেই একদম চুপ করে যেতাম আমি। প্রায়দিনই ঐ সময়টাতে পড়া ফেলে আমি একটাই স্বপ্ন দেখতাম- আর কিছু নয়, আমিও মানুষ হবো, মানুষের জন্যে মানুষ- একদম আমার ছোটো চাচা'র মতো মানুষ।
কিন্তু, এক পৌর-নির্বাচনে এলাকার সকল শ্রেণীর লোকজন মিলে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিলেন চাচা'কে মেয়র পদে। এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে চাচা'কে নির্বাচিতও করলেন। তারপর বেশ অল্প সময়ের ব্যবধানেই দেখতে পেলাম, চাচা'র গলায় টাই এলো, শরীরে স্যুট এলো, পুরনো ঘর ভেঙে নতুন প্রাসাদ উঠলো, মোটরসাইকেল ফেলে চকচকে টয়োটা প্রাইভেট কার এলো, ...।
তাঁর চারপাশের মানুষগুলো যেমন ছিলো, তেমনই রইলো ঠিক- কেবল ক্ষমতার আসন পাওয়া মনুষের জন্যে মানুষ-চাচা হয়ে গেলেন নিজের জন্যে মানুষ।
তারপর হঠাৎ একদিন উপলব্ধি করলাম, আমি আর স্বপ্ন দেখি নে- মানুষ হবো, মানুষের জন্যে মানুষ, ...।
আর একটা ধাপ ভাঙলেই দ্বিতীয় তলার করিডোর। কিন্তু, সে করিডোর আমার ছোঁয়া হলো না আর; শুধু ছুঁতে যাওয়া পা'টা নিচে নেমে আসতে থাকলো ধীরে-
প্রথম স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে প্রথমই সে স্বপ্ন দেখা ভুলানো আদর্শ বিক্রেতা আমার ছোটো চাচা কী দিতে পারবে আমায়? পূণ্য?
হুঁহ্!


দেশের অসংখ্য পাঠক-পাঠিকার মূল্যায়নে ফুপু ছিলেন একজন বিখ্যাত নারীবাদী লেখিকা। সমাজের সব শ্রেণীর সহায়হীন নারীদের নিয়ে তিনি লিখতেন। দেশের উপেক্ষিত নারী সমাজের উন্নয়নই ছিলো তাঁর লেখার মুখ্য উদ্দেশ। মোদ্দাকথা, সর্বদা সাদাসিধে পরিচ্ছদে ফুপু ব্যস্ত থাকতেন নারীদের নিয়ে, নারীদের কল্যাণভাবনা নিয়ে। এক জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিকে নিয়মিতই প্রবন্ধ প্রকাশিত হতো তাঁর, নারীবাদী প্রবন্ধ সব।
কিন্তু, একদিন ফুপু'র বিয়ে হয়ে গেলো, এক সুশ্রী পাইলটের সাথে। সে পাইলটের ঘরণী হবার পর ফুপু আর লেখেন নি কোনোদিন- কোনো প্রবন্ধ, জনপ্রিয় সেই পত্রিকায়, কোনো পত্রিকায়। কেবল প্রতি বছর একুশের বইমেলাতে ফুপু'র একাধিক সংখ্যক বই বের হতো, এখনো হয়। নারীবাদী প্রবন্ধ আর নয়, সব রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস- নারীশরীরের বহুমাত্রিক ব্যাবহারের কাহিনী।
শুনেছিলাম, পাইলট ফুপা'টা নাকি প্রচন্ড ভালোবাসতেন ফুপু'কে। এবং দেখেওছি। বিয়ের পর থেকে ফুপু'কে কখনো হাসিখুসিবিহীন দেখি নি আমি।
অথচ, ফুপু'র ভাবনাতে আনা উপেক্ষিতা সে মানুষগুলো তেমনই রয়ে গেলো, এবং শেষ অব্দি তাঁর নিজের কাছেতেও- সত্যি, সুখ পেলে মানুষের কাছে তার চতুর্পাশ বিস্মৃত হয়ে যায়, সুখ পাওয়া মানুষ অন্ধ হয়ে যায়।
ফুপু'র ঘরে যেতে চেয়েছিলাম, তাঁর ঘুমচোখে চোখ রাখবো বলে। সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা'টা রেখেওছিলাম, কিন্তু, হলো না যাওয়া, নামিয়ে নিলাম সে পা।
খোলস পাল্টানো সরীসৃপের মতো পরিবর্তিত রূপের মানুষ- অসম্ভব সুখ-সাচ্ছন্দে ডুবে থেকে অন্ধ হয়ে অবহেলিত সমূহ নারীকে সহজেই ভুলে যাওয়া চোখে আমার ফুপু সামান্য এই আমাকে কী দেখতে পাবে? দেখবে?

মামা'র বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়াতেই তাঁর চাপদাড়িআটা চেনা মুখটা ভেসে উঠলো চোখে, দাঁড়িয়ে গেলাম আমি পরপরই-
মামা নিয়মিত ইমামতি করতেন তাঁর এলাকার এক মসজিদে। এলাকার অধিকাংশের চোখে তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানি হুজুর। প্রতি শুক্রবার তিনি যখন মিম্বরে বসে বক্তৃতা করতেন, মসজিদের সবাই তখন মুগ্ধ হয়ে শুনতো তাঁর কথা। মামাবাড়ি গিয়ে মাস খানিক থেকেওছিলাম একবার। দেখতাম, প্রতিদিন ভোরে কোরান তেলাওয়াত শেষ করে মামা আসতেন আমার কাছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু উপদেশ দিতেন তিনি, ভালো ভালো সব উপদেশ। কিন্তু, প্রায়ই তিনি আমাকে একটা পরামর্শ দিতেন- যখন সময় পাবে, সুরা বানী ঈস্রাইল পড়বে, অর্থসহ। আর দেখবে, আল্লাহ কী কী নির্দেশ করেছেন আমাদের প্রতি, সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবে।
একদিন বেশ মন যোগ করা আগ্রহ নিয়ে একটা অর্থসহ কোরান খুলে বসেছিলাম, সুরা বানী ঈস্রাইল পড়বো বলে। সুরাটা শেষ করেই কী পড়লাম তার কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। কিন্তু, তার ভেতরকার একটা কথা মনে গেঁথে গিয়েছিলো খুব। কথাটা হলো-
''পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাঁদের মধ্যে কেউ অথবা, উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনিত হন, তবে তাঁদের প্রতি 'উহ্' শব্দটাও করো না।''
আচ্ছা, মামা কী এই আয়াতটার জন্যেই আমাকে বানী ঈস্রাইল পড়তে বলতেন? বোধহয়। আয়াতটার সাথে মামা'র দায়িত্বজ্ঞানেরও বেশ মিল দেখতাম- আমার অশীতিপর নানী'র প্রতি মামা'র ছিলো সব ক্ষণের মনোযোগ। নানি'র গোসলজল তুলে দেয়া, অযুর পানির ব্যবস্থা করা, প্রার্থনার জায়নামাজ বিছানো, সব মামা একাই করতেন, বাড়িতে দু'জন কাজের মেয়ে থাকতেও। আর প্রায়দিনই ভোরবেলা তাসবিহ্-তাহলিল সেরে নানি ডাকতেন মামা'কে, এবং মামা এলে তাঁর মাথায় হাত রেখে ঠোঁট বিড়বিড় করতেন- আল্লাহ, মঙ্গল করো, মঙ্গল করো, ...।
কিন্তু, বেশ সম্ভ্রান্ত বংশের এক সুন্দরী মেয়ের সাথে একদিন বিয়ে হয়ে গেলো মামা'র। তারপর পেরুলো না ছ'মাসও, কী অবিশ্বাস্য পরিবর্তন মামা'র- নানি'কে তিনি পাঠিয়ে দিলেন এক বৃদ্ধাশ্রমে! এটা নাকি আধুনিকতা, উন্নত সামাজিকতা নাকি!
আশা ছিলো মামা'র কাছ থেকে ব্যর্থ হবো না, কিন্তু, আমি ব্যর্থ হলাম- মামি'র অদ্ভুত প্রভাবে স্রষ্টার শাশ্বত নির্দেশকে ভুলে গিয়ে নানি'র প্রতি ধর্মপ্রাণ (?) মামা'র চরম কৃতঘ্নতা আমাকে ব্যর্থ করলো। গেট পেরিয়ে আমার আর এগোনো হলো না।

পথের মোড়টাতে এসেই দাঁড়িয়ে গেলাম।
আর কার কাছে যাবো আমি? আমার কি স্বজন বলতে আর কেউ নেই? আপাতত কারো চেহারা ভাসছে না চোখে। তবু চেষ্টা করি মনে করতে। চেষ্টার প্রচন্ডতায় দু'টো চোখ আমার বুজে আসে একসময়- আমি আর কার কাছে যাবো? কোথায়? কার দ্বারে?
নাহ্, আর কোথাও যাওয়া হবে না। শূন্যহাতে ফিরে যাওয়া ছাড়া একজন মৃত মানব হিসেবে কিছুই করার নেই আমার, আর কিচ্ছু করবার নেই।
ভবিষ্যত পরিনতির কথা ভেবে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। তবু ঘুরে দাঁড়ালাম আমি, যে পথে এসেছিলাম ঠিক সেই পথে- ঠিক সেই ফেরার পথে।
কে যেনো বলেছিলো কথাটা- দোযখ-বেহেস্ত যেখানেই ঠাঁই হয় তোমার, আমি তোমার সাথেই র'বো চিরোদিন।
সঙ্গে সঙ্গে নীরব হাসিতে চোখ দু'টো উপচে উঠলো আমার-
মনে পড়েছে। দীর্ঘ ৩ বছর পঙ্কিলতাবিহীন প্রেমপর্ব শেষে একদিন এসেছিলো আমাদের বাসর রাত। আমার মাথাটাকে নিজের কোলে নিয়ে আদর করতে করতে গল্প করছিলো ও- তৃথা, আমার স্ত্রী। হঠাৎ কী যেনো কী ভেবে আমি বলেছিলাম, আমি তো তোমার মতো ধর্মভীরু নই, আমি তো দোযখে যাবো।
সঙ্গে সঙ্গে ও কেমন গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলো। মুখটা নিচে নামিয়ে এনে ওর বাঁ' চোয়ালটা দিয়ে আমার ডান চোয়ালটাকে বেশ লেপ্টে ধরে ও বলেছিলো, দোযখ-বেহেস্ত যেখানেই ঠাঁই হয় তোমার, আমি তোমার সাথেই র'বো চিরোদিন।
তারপর থেকে যেদিন, যখনই দোযখ-বেহেস্তের কথা তুলতাম আমি, তৃথা তখনই বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলতো ঐ একই কথা- তোমার সাথেই র'বো ...।
তৃথা'র কথা মনে হতেই ঝট্ করে ঘুরে দাঁড়ালাম আবার- আমি এখন তৃথার কাছে যাবো, হ্যাঁ, তৃথা, যে মেয়েটা কোনো ক্ষণের জন্যেও প্রতারক ছিলো না, কখনো কোনোভাবেই নিজের প্রতি অখুশি হতে দেয় নি খুঁতখুঁতে মনের এই আমাকে, এখন আমি তার কাছে যাবো, সেই তৃথা'র কাছে, আমার সেই তৃথা'র কাছে। আমি জানি, অসম্ভব ধর্মভীরুতায় সিক্ত আমার তৃথা আমাকে ব্যর্থ করবে না কোনোভাবেই।


বেশ খুশি খুশি মন নিয়ে ঢুকে পড়লাম আমাদের ( আমার এবং তৃথা'র) একসময়ের ঘরটাতে। একটা হাল্কা পাওয়ারের বাল্ব ঘরটাকে বেশ আলোময় করে রেখেছে। পরপরই অগণন দুঃসময়-সুসময়ে তৃথা'র প্রতি বিশ্বাস জমে জমে বিশ্বাসী চোখ দু'টো উঠিয়ে তাকালাম আমাদের একসময়ের বিছানাটাতে, এবং সঙ্গে সঙ্গেই একদম নিথর হয়ে গেলাম আমি-

লোমহীন মশ্রীণ শরীরের আমার তৃথা বেশ প্রসন্ন চেহারাতে আমার একসময়ের সর্বাধিক প্রিয় বন্ধু- বিরুৎ এর বিবস্ত্র লোমশ শরীরটাকে নিয়ে ব্যস্ত; ব্যস্ত প্রচন্ড, ...।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×