somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে যাকাত ও উশরের বিধান----- ৩য় কিস্তি

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাকাত ও উশরের নিসাব ও পরিমাণ নির্ধারণে হিকমত :

যাকাত ও উশরের নিসাব ও পরিমাণ নির্ধারণের মধ্যেও মহান আল্লাহর এক অপার হিকমত ও রহমত বিদ্যমান রয়েছে। এ নিসাবের পরিমাণ এত বেশী নয় যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণী এ ব্যাপারে পেরেশান হয়ে উঠবে, আবার এতটা কম নয় যে, আমাীর-উমরা ও ধনিক-বনিক শ্রেণী এবং সমাজের এলিট পারসন লোকদের দৃষ্টিতে তা অনুল্লেখ্য বিবেচিত হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালার এটাও এক বিরাট হিকমত যে, তিনি এটাকে কারোর অভিমত কিংবা ব্যক্তিগত হিম্মত ও উৎসাহ উদ্দীপনার উপর ছেড়ে দেননি অথবা মানবীয় আবেগ-অনুভূতির কাছেও সোপর্দ করেননি যার মধ্যে সব সময় উথাল-পাতাল চলে, চলে ওঠা নামা সর্বদাই। একে আইন প্রণয়ণকারী বা আলিম-ওলাম কিংবা শাসন কর্তৃত্বে সমাসীন ব্যক্তিবর্গের হাওলাও করেননি। আর তা এজন্য করেননি যে, এদের কারোর উপরই পরিপূর্ণ আস্থা স্থাপন সম্ভব নয় এবং এরা কেউ প্রবৃত্তির খেয়াল খুশীর হাত থেকে মুক্ত ও নিরাপদ নয়, আর এসব দিকের প্রতি লক্ষ্য রেখেই যাকাত কে তার নিসাব ও পরিমাণ সহ ফরয করা হয়েছে। নবী করীম সা. যেমন যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেই সঙ্গে সেই সব বস্তু সামগ্রীও চিহ্ণিত করে দিয়েছেন, যে গুলোর উপর যাকাত ফরয এবং তিনি এটাও বলে দিয়েছেন যে, যাকাত কখন ওয়াজিব হবে। {‘ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ’ - ইফা-২৫০পৃষ্ঠা }

পরিশ্রম ও ব্যয় হিসেবে সম্পদের যাকাত ও উশরের পরিমাণ নির্ধারণ :
ইসলামী শরীয়ত যাকাত আইনে সর্বত্র এ বিষয়টিকে মূলনীতি হিসেবে ব্যবহার করেছে যে, যে ফসলে পরিশ্রম ও ব্যয় কম, তার যাকাতের পরিমাণ বেশী এবং পরিশ্রম ও ব্যয় যে পরিমাণে বৃদ্ধি পায়,যাকাতের পরিমাণও সে পরিমাণে হ্রাস পায়।
উদাহরণসরূপ : যদি কেউ লুকায়িত ধনভান্ডার পেয়ে বসে কিংবা সোনা-রূপা ইত্যাদির খনি আবিষ্কৃত হয়, তবে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে দান করা ওয়াজিব। কেননা, এখানে পরিশ্রম ও ব্যয় কম এবং উৎপাদন বেশী। এর পর বৃষ্টি বিধৌত ক্ষেতের কথা আসে, এতে পরিশ্রম ও ব্যয় অপেক্ষাকৃত একটু বেশি। তাই এর যাকাত পাঁচ ভাগের এক ভাগের অর্ধেক অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ ধার্য করা হয়েছে। এর পর রয়েছে ঐ ক্ষেত, যা কূপ থেকে সেচের মাধ্যমে কিংবা খালের পানি ক্রয় করে সিক্ত করা হয় । এতে পরিশ্রম ও খরচ বেড়ে যায়। ফলে এর যাকাত তারও অর্ধেক অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ ধার্য করা হয়েছে এরপর আসে সাধারণ সোনা-রূপার ও পণ্য সামগ্রীর পালা। এগুলো অর্জন করতে পরিশ্রম ও ব্যয় অত্যাধিক। এজন্যে এগুলোর যাকাত তারও অর্ধেক অর্থাৎ চল্লিশ ভাগের এক ভাগ ধার্য করা হয়েছে। {মাআরেফুল কুরআন(সংক্ষিপ্ত)৪১৮পৃষ্ঠা বাংলা সংষ্করণ।}

যাকাত ও অন্যান্য দান-সাদাকাহর প্রতি উৎসাহ ও তাকীদ :
মুমিনের সম্পদ উপার্জনের লক্ষ্য হলো, দুনিয়ার ও আখিরাতের শান্তি লাভ করা। মুমিনের ধন-সম্পদ সঞ্চিত হয়ে থাকবার জন্যে নয়। বরং উপার্জনকারী নিজের প্রয়োজন পূরণের পর তার নিকট যে সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, তা সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। তাই যাকাত ছাড়াও স্বীয় সম্পদ হতে নিজ আত্মীয় স্বজন, প্রতিবশী,ইয়াতিম, মিসকীন ও সাহায্য প্রার্থীদের এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতে হয়।

আল কুরআনে যাকাত ও বিভিন্ন ধরনের দান সাদকার প্রতি তাকীদ ও উৎসাহ দানের ঘোষণা :

১. সকল নবী-রাসূলগণের যুগে যাকাত- মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
وَجَـعَلْـنَا هُمْ أَئِمَّةً يَـهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَـيْـنَا إِلَـيْـهِمْ فِـعْـلَ الْـخَيْـرَاتِ وَاِقَـامَ الصَّلوةِ وَاِيْـتَاءَ الزَّكواةِ وَكَـانُـوْا لَـنَا عبِدِيِـنَ-
“আর আমি তাদেরকে (নবীগণকে) নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করবে এবং তাদেরকে এই মর্মে প্রত্যাদেশ করেছিলাম যে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে আর তারা আমারই ইবাদতকারী”। {সূরা আম্বিয়া-৭৩}

২. যাকাত সফলতার উপায় : ইরশাদ হচ্ছে,
قَـدْ أَفْـلَحَ الْـمُـؤْمِنُـوْنَ- اَلَّذِيْـنَ هُمْ فِىْ صَلَاتِـهِـمْ خَاشِـعُـوْنَ- وَالَّذِيِـنَ هُمْ عَـنِ الَّلغْـوِمُعْـرِضُوْنَ- وَالَّذِيِـنَ هُمْ لِلـزَّكـواةِ فَـاعِـلُـوْنَ
“অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা বিনয়-নমরো নিজেদের নামাযে এবং যারা নিরর্থক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকে এবং যারা যাকাত দানে সক্রিয়”। {সূরা মুমিনুন-১-৪}

৩. যাকাত হলো বর্ধিষ্ণু পবিত্র ব্যবসা : ইরশাদ হচ্ছে,
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْـلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوْا الصَّلواةَ وَاَنْـفَـقُـوْا مـِمَّا رَزَقْـنهُمْ سِرًّا وَعَلَانِـيَّـةً يَرْجُـوْنَ تـِجَـارَةً لَـنْ تَـبُوْرَ- لِـيُـوَ فِّـيَـهُمْ اُجُـوْرَهُمْ وَيَزِيْدَ هُمْ مِنْ فَضْلِه- اِنَّهُ غَـفُـوْرٌ شَـكُـوْرٌ
“নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই এমন ব্যবসায়ের আশা করতে পারে যার ক্ষয় নেই। এজন্য যে , আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশী দেবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল গুণগ্রাহী”। {সূরা ফাতির-২৯-৩০।}

নামায এবং যাকাত জান ও মালের বিশাল কুরবানীর প্রতিনিধিত্বকারী দুটি ইবাদত। এর প্রতি যত্ম বান হওয়া এ কথাই প্রমাণ করে যে, মানুষ তার জান ও মালের শ্রেষ্ঠ পুঁজিকে একটি সফল ব্যবসায়ে নিয়োজিত করেছে এবং এমন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছে, যার ক্রেতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। যিনি তার প্রতিফল বা লাভ প্রদানে এমন মুক্তহস্ত যার চিন্তাও মানুষ করতে অক্ষম।

৪. যাকাতের সীমাহীন প্রতিদানের উদাহরণ :
মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,
مَثَـلُ الَّذِيْنَ يُنْـفِـقُوْنَ اَمْوَالَـهُمْ فِىْ سَبِـيْلِ اللهِ كَمَثَـلِ حَـبَّـةٍ اَنْبَـتَتْ سَبْـعَ سَـنَابِـلَ فِىْ كُلِّ سُنْبُلَـةٍ مِائَـةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضعِـفُ لِـمَنْ يَّشَـاءُ وَاللهُ وَاسِـعٌ عَلِـيْمٌ
“যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত একটি শস্যদানার মতো, যে দানা সাতটি শীষ উৎপাদন করে এবং প্রত্যেক শীষে একশটি দানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রশস্ত-মুক্ত হস্ত এবং জ্ঞানী”। {সূরা আল বাকারা-২৬১।}
যাকাতের বিরাট প্রতিদান ও সওয়াবকে আল্লাহতায়ালা একটি হৃদয়গ্রাহী ঈমান উদ্দীপক উপমার মাধ্যমে বর্ণনা করে একথা বুঝাতে চান যে, বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে যা কিছু খরচ করবে আল্লাহ তা এতোটা বাড়িয়ে দেবেন যে, এক একটি দানার বিনিময়ে সাতশত দানা দান করবেন। বরং এর চেয়ে অধিকও দিতে পারেন। বান্দার গভির নিষ্ঠা এবং আবেগ উচ্ছাসের স্বীকৃতি আল্লাহ দিয়ে থাকেন। তিনি পরিমাণে এত বেশি দান করেন যে, বান্দা তা ধারণাই করতে পারে না। আর এ দান ও পুরষ্কার আখেরাতের জন্যই নির্দিষ্ট নয়, বরং দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের সমাজকে মঙ্গল, বরকত, সচ্ছলতা ও উন্নতি দান করে থাকেন।

৫. যাকাত ও সুদের বিপরীতমূখী আর্থিক ও নৈতিক ফলাফল :
মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন : يَـمْحَقُ اللهُ الرِّبوا وَيُرْبِىْ الصّدَقَاتِ “আল্লাহ সুদকে নিশ্চি‎হ্ণ করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন”। {সূরা আল বাকারা-২৭৬।}
যাকাত ও সদকা প্রদানের মাধ্যমে মানুষ নিজের কষ্টার্জিত ধন-সম্পদ ব্যয় করে থাকে। পক্ষান্তরে সুদের দ্বারা সম্পদ ধীরে ধীরে সঞ্চয় করে। অবশ্য বাহ্যিকভাবে দেখা যায় যে, সুদ দ্বারা সম্পদ বর্ধিত হয় এবং সদকা ও খয়রাত দ্বারা কমে য়ায়। কিন্তু কুরআন বলছে এর বিপরীত, সুদ দ্বারা ধন-সম্পদ নিশ্চিহ্ণ হয় এবং দান দ্বারা সম্পদ বর্ধিত হয়। দান হলো মানবতার প্রতি রহমত আর সুদ হলো মানবতার প্রতি অভিশাপ। সুদ হলো হৃদয়হীনতা, স্বার্থপরতা, কৃপণতা ও সংকীর্ণতার ফল এবং এরকম ঘৃণ্য গুণাবলী সৃষ্টির সহায়ক। অথচ এর বিপরীত যাকাত ও সদকা হলো স্বার্থহীনতা, মহানুভবতা, দানশীলতা, সহমর্মীতা ও সহানুভূতির ফল এবং এরকম মহান গুণাবলীর সৃষ্টি ও বর্ধিত করণের সহায়ক। যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থায় সম্পদের আবর্তনের পথ প্রশস্ত হয় এবং সম্পদ থেকে ফায়দা গ্রহণ ও তা বর্ধিত করণে সামগ্রিক শক্তি নিয়োজিত হয় বিধায় সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ বাস্তবতাকে আল্লাহ তায়ালা নিম্নোক্ত আয়াতে এভাবে বর্ণনা করেছেন :
وَمَـا اتَيْتُمْ مِـنْ رِّبًا لِّيَـرْبُوْا فِىْ اَمْوَالِ النَّـاسِ فَلَا يَرْبُوْا عـِنْدَ اللهِ- وَمَا اتَـيْـتُمْ مِـنْ زَكواةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللهِ فَأولـئكَ هُمُ الْـمُضْعِـفُوْنَ
“আর মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সুদে যা দিয়ে থাকো, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করেনা। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাকো তা-ই বৃদ্ধি পায়। যাকাত ও সদকা প্রদানকারীরাই সমৃদ্ধশালী”। {সূরা আর রূম-৩৯।}

৬. যাকাতের প্রতিদান চিরস্থায়ী প্রশান্তি : মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
اِنَّ الْذِيْنَ امَنُوْا وَعَمِلُوْا الصّلِحتِ وَاَقَامُوْا الصَّلوةَ وَاَتَـوُالزَّكواةَ لَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّـهِمْ وَلَا خَـوْفٌ عَـلَيْـهِمْ وَلَاهُمْ يَـحْزَنُوْنَ
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকার্য করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবেনা”। {সূরা আল বাকারা-২৭৭।}

৭. যাকাত ক্ষমা এবং হিকমত লাভের উপায় : ইরশাদ হচ্ছে,
اَلشَّيْـطَانُ يَعِدُكُمْ الْـفَقْرَ وَيَأمُرُكُمْ بِالْـفَحْشآءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ- يُـؤْتِى الْحِـكْمَةَ مَـنْ يَّشَاءُ وَمَـنْ يُّـؤْتَ الْحِكْمَةَ فَـقَدْ اُوْتِىَ خَيـْرًا كَـثِيـْرًا
“শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। এবং আল্লাহ মুক্তহস্ত প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। তিনি যাকে ইচ্ছা হেকমত দান করেন আর যে হিকমত লাভ করে প্রকৃত পক্ষে সে বিরাট সম্পদ লাভ করে”। {সূরা বাকারা-২৬৮-২৬৯।}

৮. যাকাত আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও রাসূলের রহমতের দোয়া লাভের মাধ্যম :
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَمِـنَ الْاَعْـرَابِ مَنْ يُـؤْمِنُ بِـاللهِ وَالْـيَـوْمِ الْاخِرِوَيَـتَّـخِذُ مَا يُـنْـفِـقُ قُرُبتٍ عِـنْدَ اللهِ وَصَلواتِ الرَّسُـوْلِ اَ لَا اِنَّـهَا قُرْبَةٌ لَّـهُمْ سَيُدْ خِلُـهُمْ اللهُ فِىْ رَحْـمَتِه- اِنَّ اللهَ غَـفُـوْرُ رَّحِـيِـمٌ-
“আর মরুবাসীদের কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তা আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং রাসূল সা. এর পক্ষ থেকে রহমতের দোয়া নেবার উপায় বানায় । মনে রেখো প্রকৃত পক্ষে তা তাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায় এবং তাদেরকে অবশ্যই নিজ রহমতে দাখিল করবেন। নি:সন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। {সূরা আত তাওবা-৯৯।}

আল-হাদীসে যাকাত ও অন্যান্য দান সাদকার প্রতি উৎসাহ ও তাকীদ :

১. দানের দ্বারা সম্পদ বাড়ে :
عَـنْ اَبِىْ يَـحْيى خَرِيْمِ ابْـنِ فَاتِكٍ - قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَـنْ اَنْـفَـقَ نَـفَـقَـةً فِىْ سَبِيْلِ اللهِ كُتِبَ لَه سَـبْـعُ مِـائَـةِ ضِـعْـفٍ -
হযরত আবু ইয়াহইয়া খারীম ইবনে ফাতিক রা. থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি জিনিস দান করলো, তার জন্য সাত শতগুণ সওয়াব লিখা হবে। {জামে আত তিরমিযী।}

২. দানের সম্পদকে আল্লাহ নিজ হাতে প্রতিপালন করে বর্ধিত করেন :
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করীম সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি তার পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুরও সদকা করে, আল্লাহ সেটা নিজ হাতে নিয়ে বর্ধিত করতে থাকেন যেমন তোমরা তোমাদের সন্তান প্রতিপালন কর। তারপর সেটা একটা পাহাড়ের সমান হয়ে যায়। { সহীহ আল বুখারী।}

৩. দানের দ্বারা কিয়ামতে আরশের ছায়ায় আশ্রয় লাভ হবে :
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন। নবী করীম সা. বলেছেন, কিয়ামদের দিন আল্লাহর আরশ ব্যতীত যখন কোথাও কোন ছায়া থাকবে না, সাত প্রকারের লোক র্আশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি এমন হবে, যে এমন গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে যে, তার বাম হাত জানতে পারে না যে ডান হাত কি খরচ করলো। {সহীহ আর বুখারী।}

৪. সদকাদানকারী ব্যক্তির জন্য স্বয়ং রাসূল সা. দোয়া করতেন :
বর্ণিত আছে নবী করীম সা. এর দরবারে যখন কেউ সদকার মাল নিয়ে হাজির হতো তখন তিনি অত্যন্ত খুশি হতেন এবং তার জন্যে রহমতের দোয়া করতেন। একবার আবু আওফা রা. সদকা নিয়ে নবীর দরবারে হাজির হন। তখন নবী করীম সা. তাঁর জন্যে নিম্নোক্ত দোয়াটি করেন : اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى الِ أَبِىْ اَوْفى- “হে আল্লাহ! আবু আওফার পরিবারের উপর আপনার রহমত নাযিল করুন”।{সহীহ আল বুখারী।}

৫. দানের দ¦ারা আল্লাহর রাগ ঠান্ডা হয়ে যায় ঃ
রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রিয় সাহাবী হযরত আনাস রা. বলেন, নবী করীম সা. বলেছেন, সদকা ও দান করার ফলে আল্লাহর রাগ ঠান্ডা হয়ে যায় এবং খারাপ মৃত্যু থেকে মানুষ রক্ষা পায়। {আসান ফিকাহ।}
৬. দানকারীর জন্য ফেরেশতার নেক দো’য়া আর কৃপণের জন্য বদ দো’য়া :
عَـنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - مَا مِنْ يَوْمٍ يُّصْبِحُ الْعِبَادُ اِلَّا مَلَـكَانِ يَنْزِلَانِ فَيَـقُوْلُ اَحَدُهُـمَا اَللّـهُمَّ اَعْـطِ مُـنْـفِـقًا خَلَفًا- وَيَقُوْلُ الْاخَرُ اَعْـطِ مُـمْسِكًا تَلَفًا-
“হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যখনই আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, তখনই দু’জন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তার মধ্যে একজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি দানকারীকে প্রতিদান দাও। আর অন্যজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! কৃপণ ব্যক্তিকে ধ্বংস করো”। { সহীহ আল বুখারী ও মুসলীম।}

ধারাবাহিক ভাবে চলবে.....................
২য় পর্ব
Click This Link

১ম পর্ব
Click This Link
৩টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×