ঘটনা - একঃ
বৃষ্টির দিনে ফিটফাট হয়ে অফিসে আসা কষ্টকর। তার উপর রাস্তায় পানি উঠার সমস্যাতো আছেই। জুতার অবস্থাতো বারোটা বাজে। তাই নতুন দামী জুতা জোড়া অফিসে রেখে যাই। আর বাসায় আসা যাওয়ার জন্য নিউমার্কেট ফুটফাত এলাকা থেকে ৩৫০ টাকা দিয়ে একজোড়া রাফ জুতা কিনেছিলাম ২ মাস আগে। উদ্দেশ্য, বৃষ্টি বা রাস্তার পানিতে ভিজলেও যেন তেমন কোন ক্ষতি না হয়। সেই জুতা জোড়ার সোল সামান্য আলগা হয়ে উঠাতে প্যাকেট করে নিয়ে যাচ্ছিলাম মুচির দোকানে। বাসায় যাওয়ার পথে মুচিকে দিয়ে একটু সেলাই করে নেব। যাচ্ছি বাইকে করে।
ঘটনা - দুইঃ
বাস টার্মিনাল আসতেই এক পুলিশ সার্জেন্ট হঠাৎ লাফ দিয়ে আমার বাইকের সামনে এসে গাড়ি থামাতে বলে। আমিও লক্ষ্মী ছেলের মত গাড়ি থামাই। বলে - লাইসেন্স কই? লাইসেন্স বের করে দিতেই লাইসেন্সটা নিয়ে একটি ঝুপড়ির মত কোণায় চলে গেলেন। আমিও গেলাম পিছু পিছু। ওখানে যাওয়ার পর বলে - গাড়ির ডকুমেন্ট কই। ডকুমেন্ট দিলাম। ইন্সুরেন্স কই? তাও বের করে দিলাম। এরপর বলে - তোমার ইন্সুরেন্সের মেয়াদ তো শেষ হয়ে গেছে। রিনিউ করনি কেন? আমি ইন্সুরেন্স পেপারটা নিলাম। দেখলাম ২ মাস আগে ডেট শেষ হয়ে গেছে। বললাম - স্যার, বুঝতে পারিনি কখন লাস্ট ডেট চলে গেল। আগামী রবিবার এ রিনিউ করে নেব।
সার্জেন্টঃ এটার জন্য তোমার ৪০০০ টাকা জরিমানা আসবে।
আমিঃ স্যার ইন্সুরেন্সতো ২৬০ টাকা, আর জরিমানা ৪,০০০ টাকা?
সার্জেন্টঃ হাইকোর্টের অর্ডার।
আমিঃ স্যার, এখন আমার কি করতে হবে?
সার্জেন্টঃ ৪,০০০ টাকা দিয়ে দাও। আর গাড়ি নিয়ে চলে যাও।
আমিঃ এত টাকা তো নেই।
সার্জেন্টঃ কত আছে?
আমিঃ ৪৫০০ টাকা ছিল। ৪৪০০ টাকা দিয়ে এই জুতা জোড়া কিনলাম এখন (বাইকে ঝুলানো জুতার প্যাকেটের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম)। হাতে মাত্র ১০০ টাকা আছে।
সার্জেন্টঃ দূর ব্যাটা! মানিব্যাগ বের কর, দেখা কত আছে?
আমিঃ (মানিব্যাগ খুলে দেখালাম, বেশ অনেকগুলো ১০ টাকার নোট আছে) বললাম স্যার, সব তো খুচরা টাকা মোট ২০০ টাকার মতো হবে হয়তো।
(এই সময় নেপথ্য ট্রাফিক পুলিশ মানে সার্জেন্টের চ্যালা যে এতক্ষণ আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সে কথা বলে উঠল)
ট্রাফিকঃ তোর জুতার সাইজ কত?
আমিঃ ৯ নম্বর
ট্রাফিকঃ আমার স্যারের জুতার সাইজও ৯ নম্বর। হয় ঐ নতুন জুতা দিয়ে যা, নয়তো কেইসের পেপার নিয়ে ফুট।
আমিঃ (মনে মনে খুশি হয়ে) না স্যার, কেইস করিয়েন না। ওসব আমার খুব ভয় লাগে আর ঝামেলাও পোহাতে হয়। তারচেয়ে বরং আমি নতুন জুতার প্যাকেটা নিয়ে আসছি।
এরপর জুতার প্যাকেটটা গাড়ি থেকে এনে ট্রাফিক পুলিশের হাতে দিয়ে আমার ডকুমেন্টগুলো সব বুঝে নিয়ে চেহারায় খুব দুঃখী দুঃখী একটা ভাব নিয়ে বাইক চালিয়ে চলে আসলাম।