somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয়রা চিটার নহে :)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- আপকো হিন্দি আতা হ্যায়?
-হিন্দি আতা হ্যায়, উর্দু আতা হ্যায়, বাংলা আতা হ্যায়, ইংলিশ আতা হ্যায়... কেয়া কেহনা হ্যায় জালদি বাতাও

একটি নতুন দেশে মাটিতে পা দেবার সাথে সাথেই আমি কিভাবে চার চারটি ভাষায় পারদর্শী হয়ে গেলাম সে গল্প বলবার আগে আগের দিন ঢাকায় আমার শ্বশুরের সাথে কথোপকথনটি শেয়ার করি, বউ বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছ- খুব সাবধানে থাকবা। ইন্ডিয়া কিন্তু চিটারদের দেশ।
জী বাবা বলে তখন সহমত পোষণ করলেও এখন থেকে আমার সামনে কেউ ইন্ডিয়ানদের চিটার বললে আমি শুরুতেই তীব্র প্রতিবাদ করব... কারণ First Impression is d last impression বলে যেমন একটি কথা আছে তেমনি প্রথম অভিজ্ঞতাতেই ভারতীয়রা আমার সাথে চরম সততার পরিচয় দিয়েছে যার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব!
এবার মূল গল্পে প্রবেশ করা যাক, বাংলাদেশ বিমান কলকাতা এয়ারপোর্টে যখন ল্যান্ড করে তখন আমার আড়াই বছর বয়সী সন্তান জুহায়ের তার মায়ের কোলে গভীর ঘুমে... আমি কোলে নিলে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে বলে আমি ল্যাপটপ আর আমার স্ত্রী লিসির হ্যান্ডব্যাগ ক্যারি করে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করি। ফর্ম ফিলাপের ফর্মালিটিস করবার সময় লিসির হ্যান্ডব্যাগ ফ্লোরে রাখি যা পরবর্তীতে সঙ্গে নিতে বেমালুম ভুলে যাই... আমার জন্য অবশ্য এরকম ভুল নতুন কিছু না! এরপর আমাদের পাসপোর্টে সিল মারা হল, আমাদের সবার ছবি তোলা হল, বাকি লাগেজগুলো কালেক্ট করলাম, মানি এক্সচেঞ্জে গিয়ে দুহাজার টাকা ভাঙিয়ে রুপি করলাম, বন্ধু শিবলীর দেয়া ভোডাফোনের সিমে রিচার্জ করলাম, প্রিপেইড ট্যাক্সির টিকেট কেটে ট্যাক্সিতেও উঠে পড়লাম। তখনও পর্যন্ত দুজনের কারোরই সেই হ্যান্ডব্যাগ এর কথা মনে নেই। প্রায় আধা ঘণ্টা যাবার পর লিসির খেয়াল হল তার হ্যান্ডব্যাগ নেই... আমি তখনও নিশ্চিন্ত, নিশ্চয়ই সেই ব্যাগ বাকি লাগেজের সাথে আছে কিন্তু ক্যাব থামিয়ে লাগেজডোর খুলে আমারতো পুরা পাছায় হাত (মাথায় হাতের চেয়েও খারাপ অবস্থা)... কারণ হারিয়ে যাওয়া সেই হ্যান্ডব্যাগে ডলার আর টাকা মিলিয়ে প্রায় নব্বই হাজার টাকার সমপরিমাণ ক্যাশ :'(
হ্যান্ডব্যাগ হারানোর চেয়েও দুঃখজনক ছিল বোধহয় সেই মুহূর্তে আমার মোবাইলে ভুলে চাপ পড়ে বাংলাদেশে কল চলে আসে এবং আমাদের কথোপকথনে আমার শাশুড়ি জেনে যায় ব্যাগ হারানোর কথা! এমনিতেই উনি টেনশনের রোগী তাই অতিরিক্ত টেনশন নিতে না পেরে আমেরিকায় ফোন করে তার মেজ মেয়েকে জানিয়ে দেন আমরা প্লেন থেকে নামতে না নামতেই ব্যাগ হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহ্‌র রহমত যে ফোনটা ভুলে চট্টগ্রামে আমার মাবোনের কাছেও চলে যায়নি তাহলে আমাকে সেই কঠিন সময়েও ঠাণ্ডা মাথায় এক সাথে পাঁচজন নারীর কেমনে হারালাম, এখন কি হবে এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হত!!! ট্যাক্সিক্যাব ঘুরিয়ে এয়ারপোর্টে ব্যাক করছি আর মনে মনে আল্লহকে ডাকছি... ফেরত পেলে কয় রাকাত শোকরানা নফল নামায পড়ব সেটা যেমন মনে মনে ঠিক করলাম সেই সাথে ডিসিশান নিলাম ব্যাগ ফেরত না পেলে পরদিনই ঢাকা ব্যাক করব :( এয়ারপোর্টে ফিরে এসেই যেই ঢুকতে যাব তখনই সেই গার্ডের আগমন যার সাথে কথোপকথন দিয়ে এই লেখার শুরু।যেহেতু কলকাতা তাই বাংলাতেই ঘটনা বুঝিয়ে বলে ঢুকতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তিনি বাংলা বোঝেননা বিধায় আমাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন হিন্দি আতা হ্যায়?
বাংলাদেশ বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিজ থেকেই আমাদের কাছে এসে আমাদের সমস্যা শুনে এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলেন। অতিরিক্ত টেনশনে ওনাকে ঠিকভাবে ধন্যবাদটুকুও দিতে পারিনি, আফসোস নামও ভুলে গেছি :(
এয়ারপোর্ট ম্যানেজার সব শুনে শুধু লিসিকে ভেতরে যাবার পারমিশন দিলেন... আমরা বাপছেলে ওয়েটিং লাউঞ্জে অসহায়ের মত ব্যাগসহ লিসির ফেরত আসার অপেক্ষায় ছিলাম। অতঃপর মিনিট দশেক পর ব্যাগসহ তাকে ফেরত আসতে দেখে মনে হয়েছিল কলিজায় পানি এসেছে :) লিসির হিজাব আর কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ কোনরকম ভেরিফিকেশন প্রশ্ন না করেই ব্যাগ ফেরত দেয়... যেই মেয়েটি ব্যাগটি খুঁজে পেয়েছিল সে নাকি প্রায় আধা ঘণ্টা আমাদের হন্য হয়ে খুঁজেছিল!
সত্যি বলতে কি এত সহজে ব্যাগটা ফেরত পাব আশা করিনি তারপরও আল্লাহ্‌র রহমতে এত দ্রুত সেই ব্যাগ ফেরত পেয়েছিলাম তার আসল কারন বোধহয় ভারতীয়রা কিপটুস হলেও চিটার নয় ;)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×