ইটের তলায় চাপা পরা লতা ঘাসের স্মৃতি নিয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল অথবা যারা ঘাস লতা পাতা আর পাখিদের ছায়ায় ঘিরে থাকা এই বাউল ভুখন্ডে একা থেকে থেকে একদিন করতলে ফড়িংয়ের ভাঙ্গা ডানা দেখে ব্যাথা পেয়েছিল। তারা একদিন এও দেখেছিল যে পাতা আর পাখির গান নগরীর সকল গলিতে মর্মর বাজেনা। তারা বুঝতে শিখেছিল ছাত্রত্ব চলে যাবার পর কি নিদারুন অস্তিত্বহীনতা তৈরী হয়েছে। অথচ একদিন তুমুল আলোড়নের মাঝে স্বপ্ন, ডানা মেলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে আকাশে। তারা একে অন্যের হাত ধরেছিল, ঝাঁক বাধা পাখিদের কাছে জেনেছিল উড়ার সাধ ভাগ হলেও কমেনা বরং ক্রমাগত স্বাদ বাড়তে থাকে। বিষন্ন বাতাশে মাঝে মাঝে উড়ুক্কু গন্ধও মাখে। এক সময় তারা নিজেদের দেখতে পেলো, বিষন্ন এক শহরের গলির মোড়ে সিগারেট হাতে দাড়িয়ে প্রতিমুহূর্তে শুন্য হয়ে যেতে। যখন তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দুর্দম সময় দুমড়ে গেছে। তখন তারা জ্যা পল সাত্রের অস্তিত্ববাদ নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো। তারপর থেকেই ক্রমাগত কমতে থাকলো আজিজ সুপার মার্কেটের বারান্দার ধুলো,চায়ের দোকানের অপরিপক্ক পাতা। কখনো রাতে কখনো সন্ধ্যায় কখনোবা ভরা দুপুরে। শহরের দিকভ্রান্ত বাতাশে যেসব ধুলো উড়ে, জমা হতে থাকলো আব্রুর আস্তিনে আর কলারে। প্রতিদিন, প্রতিদিন। সেসব ধুলোর মহিমা বাড়াতে একদিন আবারো হাতের উপর হাত রাখার ইচ্ছা জাগে তাদের। জন্ম হয় উন্মোচনের ভাষা। একদিন তাদের প্রত্যেকের করতলে শোভা পায় উন্মোচন নামের একটি ছোট কাগজ। তবু কাগজ বিক্রেতাদের কাছে সেই কাগজের দামে কোনরকম হেরফের হয়না। ঐ কাগজের বিনিময়ে পাড়ার কটকটি মিঠাইওয়ালাও মিঠাইয়ের পরিমান একটু বাড়ায় না। ইট চাপা স্মৃতি নিয়ে বেড়ে উঠা ঘাসেদের গায়ে গায়ে একদিন রোদ্দুর লাগে। একদিন সেসব চাপা দেয়া ইটের উপর ইমারতও হয়। তবে তাদেরই কারো কারো আকাশে রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়েনা কখনোই।
অনেক বছর পর এমনই রোদ্দুর না পাওয়া আরো একদল ঘাসেদের দেখা যায় সোহরাওয়ার্দীর গড়া বিকৃত বাগানটিতে। তারা আবার জ্যা পল সাত্রের অস্তিত্ব বাদ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে.....
মা মা তোমার চাপা পড়া ঘাসের ঘোর লাগা সন্তানটি যখন রাস্তায় উঠে, যখন তাকে দ্রুত রোদের খুঁজে যেতে হবে বলে সিএনজির সন্ধানে ব্যস্ত ছুটাছুটি করতে হয়। তখন একদল মানুষ চিৎকার করে জানতে চায় ওই সিএনজি যাইবো নি? যখন তোমার ঘোরলাগা অসংসারী সন্তান বাসে উঠে হাতল ধরে ঝুলতে থাকে, তখন পাশের যাত্রীরা আড়চোখে বার বার তাকায় আর নিজেদের পকেটের উজন নিশ্চিত হতে সেখানে হাত রাখে গোপনে। মা মা সোহরাওয়ার্দীর সবুজ ছায়ায় যাদের আজ দেখা গেল তারা আবার হাত ধরতে চায়। আমি পালিয়ে এসেছি, আমার হাতে কুষ্ঠ মা। মা আমার হাতে কুষ্ঠ। আমার গাড়ির পাশে দাড়িয়েছে এক অন্ধ। বলছে ...বাবা আমার চোখ নাই কিছু করতে পারিনা।.... শহরের ভ্যাপসা গরমে গাড়ির কাচে বাড়ি খেয়ে গড়িয়ে একসময় চাকায় পিষ্ট হয়েছে অন্ধ ভিখিরির সরল শব্দ। "আমি অন্ধ কিছু করতে পারিনা।" মা মা আমি অন্ধ নই তারপরও আমি কিছু করতে পারিনা। সাদা ঘাস, চাপা পড়া অবস্থায় বেশি দিন বাঁচেনা মা। (এডিট হবে)