প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন যে শিক্ষা একজন মানুষের মন এবং হৃদয়কে শিক্ষিত না করে তা আসলে শিক্ষা না।
আমরা অনেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ওখান হতে দুটি ভিসি স্বাক্ষরিত কাগজ পেলেই নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবী করি।
শিক্ষা যদি আপনাকে বিবেকহীন থেকে বিবেক সম্পন্ন না করে তবে আপনার মত শিক্ষিত ব্যক্তির চেয়ে একজন দিন মজুর অনেক বেশী গুরুত্বপুর্ন এবং দেশ প্রেমিক নাগরিক।
দেশে গত ৬/৭ বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এই বিবেকহীন চক্র যে শুধু পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করছে তা কিন্তু নয়। প্রায় প্রতিটি চাকুরির পরীক্ষার প্রশ্ন ও এরা ফাঁস করে উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করছে। হলে থাকতে যাদের মোল্লার দোকানের টাকা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না তারা কোন এক সোনার কাঠির স্পর্শে ৫/৬ বছরের মধ্যে কোটি পতি হয়ে গেল! কখনো কি এই রাতারাতি ধনী হওয়া ব্যাক্তিদের আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন এই টাকার উৎস কি?
আজ শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় যখন বললেন "প্রশ্ন পত্র ফাঁস কিভাবে সামলাবো?" তাতে আপনার খুব গাত্র দাহ হচ্ছে কেন? আপনার মত উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিগণ যদি এভাবে নিত্যনতুন স্টাইলে প্রশ্ন ফাঁস করতে থাকেন তাহলে কোন দেশের শিক্ষা মন্ত্রীদের পক্ষে এই মহামারী ঠেকানো সম্ভব না।
কোন দিনমজুর তার সন্তান কে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেয় না। ফাঁস হওয়া প্রশ্নের চাহিদা আপনাদের মত শিক্ষিত শ্রেনীর মধ্যেই আজও অবধী সীমাবদ্ধ রয়েছে। অর্থাৎ প্রশ্ন ফাঁস এবং এই ফাঁসকৃত প্রশ্ন পত্রের চাহিদা একমাত্র সুবিধাভোগী, বিবেকহীন এবং অর্থলিপ্সু শিক্ষিত শ্রেনীর মধ্যেই বিদ্যমান। একটু চিন্তা করুন কত নিচু শ্রেনীর মনমানসিকতা হলে একজন শিক্ষিত ব্যাক্তি তার সন্তান ক্লাস ফাইভের এক কোমলমতি শিক্ষার্থীর হাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পত্র তুলে দিতে পারে?
এমন শিক্ষিত শ্রেনীর প্রতিনিধির মুখে এটুকুন অসহায়ত্ব প্রকাশিত হওয়াই কি স্বাভাবিক নয়?
এখন প্রশ্ন আসে শিক্ষিত শ্রেনী এতটা সুবিধাভোগী, বিবেকহীন, ধুরন্ধর এবং অর্থলিপ্সু হল কিভাবে? হুম এটার উত্তর ও আপনার জানা কারন গত কয়েক দশক যাবৎ খুব পরিকল্পনা করে জাতীর বিবেক তৈরির কারিগর হিসেবে বিবেক বিবর্জিত মানুষদের নিয়োগ এবং তাদের সকল প্রকার ব্যাকআপ দিয়ে বিবেকহীনতাকে পদোন্নতির একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে দার করানো হয়েছে।
যে পেশাতে বিবেকহীনতা ছিল ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা সে পেশাতে আজ বিবেক সম্পন্ন মানুষ পাওয়া হচ্ছে একটি আশ্চর্য জনক ঘটনা! এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে আজ যখন আপনারা আমাদের খুব ভালো ভালো উপদেশ দিচ্ছেন তখন নিজের অবচেতন মন কেন যেন বিদ্রোহ করে উঠে। বলে যেসকল ব্যক্তিবর্গ একট চেয়ার নিজের রুমে বেশী রাখার জন্য নিজের ক্লাসমেটের সাথে হীন কোন রাজনীতি নেই করতে পারেনা, যারা শুধু মাত্র ভিন্ন মতের হওয়ার জন্য নিজের ছাত্রের ডাটা চুরি করে নিজের চাটুকার ছাত্রটির নামে প্রকাশ করে দিতে পারেন, যারা এমন সব কাজ করেন যা এখানে লিখতে গেলে হয়ত ঐ লিখে শেষ করা যাবে না, তারা কিভাবে আমাদের নৈতিকতা শিক্ষা দিবেন?
আর তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের আদর্শে উজ্জিবিত শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন ফাঁস করবে না তো কি প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাবে?
এসকল শিক্ষার্থীরা চুরি করবে না তো চুরি ঠেকাবে!
আজকের এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রীর পূর্বশুরিরা যেমন দায়ী তেমনি এই জাতীর বিবেক খ্যাত বিবেকহীন প্রানীগুলোর দায় কোন অংশে কম না।
জানিনা এই বিবেকহীনতার প্রতিযোগিতা কবে শেষ হবে? কত দিন পরে আমরা পাব এমন এক প্রজন্ম যে প্রজন্ম ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষাতে অংশগ্রহন করা হতে বিরত থেকে পরীক্ষা বর্জন করবে। অথবা ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পিছনে না ঘুরার মত নৈতিক শিক্ষা লাভ করবে।