somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

দমকা হাওয়ার দিনগুলোতে

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগস্টের প্রথমদিন বিকেল বেলা। ফাঁকা রাস্তায় শোঁ শোঁ শব্দে ছুটে চলছে বাস। জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি। আকাশ মেঘলা। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার অল্প ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট এসে গায়ে লাগছে। কিন্তু জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছে করছে না। আজ আর বৃষ্টির সাথে কোনো আড়ি নেই, নেই ভিজে যাওয়ার ভয়। ঠান্ডা-কাশির চিন্তাও মাথা থেকে ছুটি নিয়েছে। আকাশের চেয়েও ঢের কালো আজ আমার মনের আকাশ। বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কাঁদতে পারছি না। পুরুষের কাঁদতে নেই।

কাঁদতে না পারলেও কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা কোনো অবস্থাতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। যে ঘটনা এক মুহূর্তের মধ্যে আমি সহ আরও মানুষের জীবনের চিত্র বদলে দিয়েছে। ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে একটু একটু করে সাজানো স্বপ্নের জগৎ। চাইলেই তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলা যায় না।

সকাল থেকে অফিসের কাজে ব্যস্ত সবাই। প্রতিদিনের মতো নাশতা বিরতি, দুপুরের খাওয়ার সময় সবাই মিলে হাহাহিহি। রোজকার মতোই চলছিল সব। বিকেলের দিকে ‘বস’ আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবাইকে মিটিং রুমে উপস্থিত হতে বললেন। আমরা যথা সময়ে সেখানে উপস্থিত হলাম। ‘বস’ আসলেন এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেন। তাঁর কথার বিষবস্তু তাদের বিজনেস ভালো যাচ্ছে না। তাই তাঁরা আমাদের ডিপার্টমেন্ট বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন। আমরাও আর কথা না বাড়িয়ে তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে মিটিং রুম থেকে বের হয়ে এলাম। আজই আমাদের অফিসের শেষ দিন। হুট করে এমন একটা সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না কিন্তু মেনে নিতে হচ্ছিল।

ডেক্সে এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলাম যাতে করে দ্বিতীয়বার এখানে আর না আসতে হয়। এর মধ্যে আমাদের এইচআর রুমে এলেন অফিসের কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য। তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক ভাই তাঁকে বললেন, ‘ভাইয়া আমাদের ডিপার্টমেন্ট ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে।’ কাল থেকে আমরা আর অফিসে আসছি না। এটা শোনার সাথে সাথে উনার মুখ একদম লাল হয়ে গেল। কিছু সময়ের জন্য নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন তিনি, মনে হচ্ছে এখই হু হু করে কেঁদে ওঠবেন। আমার ভেতরেও জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে কিন্তু বাইরে হাসি হাসি মুখ নিয়ে ভাইয়াকে বললাম, ‘ভাইয়া কিচ্ছু হয়নি, আমাদের সম্পর্ক তো আর নষ্ট হচ্ছে না। আমাদের যোগাযোগ হবে ইন শা আল্লাহ।

বাস-স্টপে দাঁড়িয়ে আছি। একের পর এক আমার রুটের বাস চলে যাচ্ছে কিন্তু ওদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই। বেশ কিছুক্ষণ পরে একটি বাসে উঠে বসলাম। এই রাস্তা দিয়েই প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরি। কাজের দিনগুলোতে অফিসের কাছেই ভাড়া বাড়িতে থাকি যাতে একটু আয়েশে অফিস করা যায়। এক বৃহস্পতিবারের আনন্দের কথা চিন্তা করে সারা সপ্তাহ কেটে যায় আমার। অন্যান্য দিনগুলোতে বাড়ির রাস্তা দীর্ঘ মনে হলেও আজ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমি চাইছি এই রাস্তা যেনো না ফুরায়। এভাবেই চলতে থাকুক বাসের চাকা আর আমিও চলতে থাকি গন্তব্যহীন।

একটা সময় বাস গন্তব্যে পৌঁছালো। একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটছি, ওদিকে নানা চিন্তাতারা এসে সমস্তকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। আমি অসহায়ের মতো সব গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
বাড়িতে এসে ঠোঁটের কোণে শুকনো হাসি টেনে সবার সাথে কথা বলছি। তবে তাতে কোনো প্রাণ নেই। ক্ষণে ক্ষণেই অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছি। বাড়ির লোকেরা কিছু আন্দাজ করতে পেরে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে?’ আমি, শরীর খারাপ বলে কাটিয়ে নিলাম। কারণ অফিসের ঘটনা বাড়িতে বলার সাহস আমার নেই। কখনো হবেও না।

শনিবার যথারীতি আমার ভাড়া বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে এলাম। কিন্তু বাড়ির লোক জানে, আমি অফিসে যাচ্ছি। এভাবেই দিনের পর দিন যাচ্ছে। আমি আমার সাথে যুদ্ধ করছি। বিভিন্ন জায়গায় সিভি আর ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছি। মিথ্যে অভিনয় করছি কিন্তু কাছের মানুষদের কিছুই বলতে পারছি না। আমার ভাড়া বাসার ছাদ আর ওই দূরের আকাশ ছাড়া কেউ জানে না, ভেতরে আমি কি বিষাদের তীর নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
মহাদেব সাহার ওই কবিতার মতো বলতে হয়,

‘কেউ জানে না একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস
নিয়ে বেড়ায়-
কোনো বিষণ্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,
এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস
যেন একখানি অন্তহীন প্রগাঢ় এপিক!’
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×