ছবি-গুগুল
গত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমরা দুজন দুজন কে প্রথম দেখেছিলাম। সামনে থেকে দুজন দুজনকে দেখছিলাম শুধু। খুব ইচ্ছে করছিল ওকে ছুয়ে দেই, কিন্তু পারিনি। কিভাবে পারব আমিতো ওকে স্কাইপিতে দেখছিলাম।
ওর অপলক চেয়ে থাকা দেখে বেশ লজ্জা লাগছিল আমার । লজ্জায় কিছুক্ষণ দৃষ্টি নত করে রেখেছিলাম। চোখ তুলে আমিও দেখে নিয়েছিলাম তাকে। যাকে এত ভালোবাসি অথচ তাকে একটাবার দেখব না তা কি হয়? অনেকদিন মেহেদি বলেছিল আমাকে দেখতে চায়। লজ্জা আর ভয়ে আমি কখনো রাজি হইনি। তবে ও জোর করেনি। ও আমার মতামতের গুরুত্ব দিয়েছে সবসময়। আমি চাচ্ছিনা ব্যাস আর জোর করেনি।
ভালোবাসা দিবসে ওকে ছোট্ট একটা উপহার দিতে ইচ্ছে করেছিল। কিন্তু কিভাবে দিব তাই ভাবছিলাম। হঠাৎ বুদ্ধি এল যে ওর সাথে ভিডিও চ্যাট করব। ও খুব খুশি হয়েছিল। যা আমি ভুলব না কখনো।
মনটা ভালো নেই কারন মেহেদির সাথে কথা হয়নি। কোন খবরই পাচ্ছিনা। অনেকগুলা ম্যাসেজ দিয়েছি কোন উত্তর আসেনি। ওর কোন বিপদ হলনাতো? অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠছে বার বার। অফিস শেষে যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা ফোন আসল। কথা বললাম কিছুক্ষণ। আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম ফোনের মানুষটার সাথে কথা বলে। কারন ফোনের অপর পাশে যিনি কথা বলেছেন তিনি মেহেদির বড় আপা। মেহেদি কখন আমার কথা ওর বোনকে বলেছে কিছুইত বলেনি আমাকে। তিনি আমার সাথে দেখা করতে চান কালই। মেহেদির সাথে কথা ছিল ও আগে দেশে আসবে দেন পরিবারের সাথে কথা বলবে। কি জানি কি করছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
পরদিন সময় নিয়েই বের হলাম। বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুরু দুরু করে কাঁপছিল। একটা রেস্টুরেন্ট এ মেহেদির আপা দেখা করতে বলেছে। ঠিক সময়েই পৌছে গেলাম। আমি ফোন দিলাম কোথায় আছে আপা জানার জন্য। আপা আমাকে আগেই চিনেছিল। হাত দিয়ে ইশারা করে বলল এদিকে এসো। কাছে গিয়ে সালাম দিলাম। উনি সালামের উত্তর দিয়েই বলল
- বাহ! তুমিতো দেখছি ঠিক সময়েই এসেছ মোহনা?
- মুচকি হাসি দিয়ে বললাম কেমন আছেন আপা?
- ভালো, তুমি কেমন আছ?
- জ্বি ভালো আছি।
- কি খাবে বল?
- কিছু খাবো না আপা।
- না তা কি হয় কিছু একটাতো খেতেই হবে।
- আচ্ছা শুধু এক কাপ কফি হলেই চলবে।
- আচ্ছা।
আমি খেয়াল করলাম আমি ঘামছি । আপা কফির অর্ডার দিল। কফি আসার পর খেতে খেতে মেহেদির আপা কথা বলছিল। এটা সেটা অনেক কিছু। এর মধ্য সে কিভাবে আমার কথা জানলো কিভাবে চিনল তাই বলছিল।
- তোমার কথা মেহেদি আমাকে কিছুদিন আগেই বলেছিল। যে কারনে তোমাকে কিছু বলার ছিল। তাই এখানে ডেকেছি
- জ্বি, বলুন কি বলবেন?
- তুমি কিভাবে নিবে আমি জানিনা। তবে তোমাকে জানানো উচিত । মেহেদি আমাকে খুব অনুরোধ করছে তাই এসেছি। তুমি মে বি জানোনা মেহেদি অস্ট্রেলিয়াতেই বিয়ে করেছে কয়েকদিন আগে। ও তোমাকে বলেছিল বিয়ে করবে কিন্তু ও কথা রাখতে পারেনি। কিছু মনে করোনা।
মনে হল আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে, নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
- আপা আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
- না মোহনা ভুল হচ্ছেনা, এটাই সত্যি।
- আমি তা বিশ্বাস করিনা। কারন মেহেদি আমাকেই ভালোবাসে।
- সরি মোহনা, ও তোমাকে জানাতে পারেনি কিছুই।
আমার কন্ঠরোধ হয়ে আসল। নিরবে আমি কাঁদতে থাকলাম। এ কিছুতেই হতে পারেনা। আমি বিশ্বাস করিনা। বুকের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে আমার। কিছুটা সময় নিয়ে বললাম আপাকে
- আমি যাচ্ছি আপা।
কয়েক কদম সামনে এগিয়ে গেলাম আমি ঠিক পেছন থেকেই কে যেন আমকে ডাকল মোহনা বলে, আমি স্থির হয়ে দাঁড়ালাম
- গুল্টুকে না দেখেই চলে যাবে?
পেছন ফিরে তাকাতে ভয় হচ্ছিল আমার , কেবলি মনে হচ্ছিল এটা আমার মনের ভুল। কিন্তু আবারো আমি শুনতে পেলাম
- তোমার গুল্টু তোমার কাছেইত ফিরে এসেছে।
আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি কি মেহেদিকেই দেখছি?
আনন্দে বুকের ভেতরটা আন্দোলিত হতে লাগল, আনন্দের অশ্রু ঝরতে লাগল।
ধীরপায়ে ওর কাছে গেলাম আর বললাম
- এত্তগুলা ঘুষি খাবা। সবার সামনেই ওকে আমি জড়িয়ে ধরলাম।
- পাগলি মেয়ে একটা। এবার ছাড় সবাই দেখছেত।
লজ্জায় আমি ওকে ছেড়ে দিলাম। ওর আপা কাছে বসিয়ে বলল
- মেয়ে এত ভালোবাসো আমার ভাইটাকে? সরি আমি তোমাকে দুঃখ দেয়ার জন্য। আমার কোন দোষ নেই সব দোষ তোমার গুল্টুর, হিহিহিহি। সব প্ল্যান ওর ছিল। আজই বাসায় গিয়ে মা বাবাকে বলবে আমরা আসছি খুব শিগগির তোমাকে বউ করে নিয়ে আসব আমাদের বাড়িতে।
- আমি আপার কথা শুনে শুধুই চুপ করে ছিলাম ।
আপা আমাদের রেখেই চলে গেল। গুল্টু আর আমি বেড়াতে চলে গেলাম শহর ছেড়ে দূরে।ও আমার হাতটি ধরে চোখে চোখ রেখে বলল
- ভালোবাসি
- আমিও ভালোবাসি তোমাকে অনেক।
হঠাৎ করেই কপালে ওর ঠোঁটের ছোয়া পেলাম। লজ্জায় আমি শেষ হয়ে গেলাম। ও বলছিল
- তুমি আমার সোনা বউটা। আর কখনোই কাঁদাবো না প্রমিজ।
- আমার সমস্ত ভালোবাসা শুধুই তোমার জন্য।
ওর বুকের মাঝেই মিশে রইলাম অনেকক্ষণ ।