ছবি-গুগুল
রোমানা বেগম অনেক বিলাপ করে কাঁদছেন।
-ওরে নুরি কই গেলিরে তুই? আমাদের রেখে তুই চলে গেলি?
সেকি চিৎকার! যে কেউ এ দৃশ্য দেখলে তার চোখে জল চলে আসবেই।
রোমানা বেগমের কান্না দেখে নুরির মা বাবা চুপ হয়ে আছেন। মনে হচ্ছে রোমানা বেগমই নুরির মা। কি অদ্ভুত! নুরির মা হয়ত ভাবছেন মানুষ এভাবে তার কাজের মেয়ের জন্য কাঁদতে পারে?
হ্যাঁ পারেত, এই যে রোমানা বেগম কাঁদছে। নুরির মা বাবা লাশ নিয়ে চলে গেল। ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই রোমানা বেগমের কান্না শেষ। রোমানা বেগমের কান্না শেষ দেখে তার আত্মীয় স্বজন বেশ অবাক হলেন।
তার মানে রোমানা বেগমের সবই অভিনয় ছিল? কিন্তু এই অভিনয়ের বিরুদ্ধে কেউই কিছু বলতে পারেনি।
নুরি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এটাই জানে নুরির মা বাবা । নুরির লাশ নিয়ে যাচ্ছে আর নিয়ে যাচ্ছে এক লাখ টাকা , হয়ত এটাই নুরির জীবনের দাম ছিল। তাই নুরির মা বাবা থানায় কোন কেস ফাইল করেনি। এতগুলো টাকা পেয়েছে আর কি লাগে?
কিশোরী মেয়ে নুরি খুব হাস্যজ্জল ছিল। যদিও তাকে অনেক কষ্ট সইতে হত। সারাদিন পর খাবার খেত, একটু ভুল হলেই মার খেত। আর গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে বাড়ির কর্তার নির্যাতন সহ্য করতে হত। নুরি সইতে না পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
নুরি পারেনি তার মায়ের সাথে বাবার সাথে কথা বলতে। বাড়ি যাওয়ার জন্য খুব ছটফট করেছে। ছোট্ট একটা মেয়ে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে সময় কাটিয়েছে। এত নির্যাতন সইতে পারেনি। নুরিকে অপবাদ দেয়া হয়েছে সে বাড়ির কাজের বুয়ার ছেলের সাথে প্রেম করেছিল। সেই ছেলে ওর সাথে প্রতারনা করায় তাই সে আত্মহত্যা করেছে।
রোমানা বেগমের স্বামী বেশ নামকরা এবং দাপটে মানুষ। একজন মুখোশ পরা ভদ্রলোক। টাকার অভাব নেই। রাজনীতি করেন বলে সব নেতাই তার পরিচিত। থানার লোক পরিচিত। পুলিশ এসে শুধু লাশ নামিয়েছে। আর কিছুই করেনি। তাদের মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নুরির মা বাবাকে টাকা দেয়া হয়েছে। ব্যাস! সবার মুখ বন্ধ।
নুরি আত্মহত্যা করেছে নাকি মেরে ফেলে হয়েছে এটা বুঝতে আর কারো বাকি নেই। কিন্তু এই অসহায় গরীব মেয়েটির হয়ে কথা বলার মত কেউই ছিলনা। কেউ বলতে পারেনি এটা আত্মহত্যা নয় এটা হচ্ছে হত্যা। দাপটে মানুষের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চায় না।
আমাদের সমাজে নুরিরা এভাবেই হেরে যায়, তাদের জীবনের মূল্য নেই বললেই চলে। টাকাওয়ালা মানুষের কাছে আজ নুরি হেরে গিয়েছে সত্যিই কিন্তু শেষ বিচারের দিন এর বিচার ঠিকই হবে। নুরি ঠিকই তার ন্যায্য বিচার পাবে। কারন উপরে কেউ একজন আছে এটা ভুলে গেলে চলবেনা।