Book Review: Power of Habit-Part Three -Chapter Eight: Saddleback Church and Montgomery bus boycott: How movement happens
স্যাডলব্যাক চার্চ এবং মন্টেগোমারী বাস ধর্মঘটঃ কিভাবে একটি আন্দোলন তৈরি হয়
১ল ডিসেম্বর ১৯৫৫ সাল। অফিস থেকে বাসায় ফিরবার পথে, মন্টেগোমারী শহরে বাসের সিটে বসেছিলেন রোজা পার্ক নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। তখনকার নিয়মে চালকের পিছনের চারটি সিট ছিল সাদাদের জন্য রিজার্ভ। রোজা পার্ক যে আসনে বসে ছিলেন সেটি রিজার্ভ সিট ছিল না কিন্তু ৪ জন সাদা যাত্রীকে দাঁড়ানো দেখে চালক রোজা পার্ক সহ চার জনকে সিট ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ যাত্রী উঠে যান কিন্ত রোজা পার্ক উঠতে অস্বীকার করেন। বাস চালক পুলিশ ডাকেন, পুলিশ রোজা পার্ককে গ্রেফতার করে। সেই মুহুর্তে একটি সিভিল মুভমেন্ট এর জন্ম হয়। এই গ্রেফতারের ঘটনার পর বর্ণবাদ নিয়ে কোর্টে আইনগত ভাবে যে লড়াই চলছিল তা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, সাধারন মানুষ সম্পৃক্ত হয়। বাস ধর্মঘট চলে একবছরের উপর এবং সুপ্রীম কোর্টে সাদাদের জন্য সিট রিজার্ভ অবৈধ ঘোষনার পরই তার অবসান ঘটে। মার্টিন লুথার কিং এর নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। শুধু মন্টেগোমারী নয়, এখানে থেকেই বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। রোজা পার্কের আগেও বাসে সাদাদের সিট ছেড়ে না দেবার জন্য অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে, চালকের সাথে তর্ক করার জন্য পুলিশ কোন কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে মেরেছে এরকম ঘটনাও ঘটেছে কিন্তু এরকম আন্দোলন তখন তৈরি হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে এরকম আন্দোলন তৈরী হবার জন্য সামাজিক অভ্যাসের তিনটি উপাদান একত্র কাজ করেঃ
একঃ আন্দোলন শুরু হয় বন্ধুত্বের সামাজিক অভ্যাস এবং ঘনিষ্ঠ লোকজনের মাঝের শক্তিশালী বন্ধনের (Close tie) কারনে।
দুইঃ এটা বাড়তে থাকে পারিপার্শিক কম্যুনিটি অভ্যাস তথা প্রতিবেশী এবং এলাকার একই রকমের লোকদের মাঝের দুর্বল বন্ধনের (weak ties) কারনে। যেটাকে peer pressure ও বলা হয়। অনেকটা একটা সাধারন ইস্যুতে জনমত তৈরি হলে অনেক লোকের পক্ষেই নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব হয় না। অন্যরা কি বলবে ভেবে তারা আন্দোলনের পক্ষে চলে আসে। এটাই দুর্বল বন্ধনের সামাজিক অভ্যাস।
তিন: একটা আন্দোলন অনেক সময় লম্বা সময় ধরে চালু রাখতে হয়। অসংখ্য মানুষ যারা হয়ত সরাসরি নেতৃত্ব দানকারীদের কাছের কেউ নয় কিম্বা সরাসরি তাদের দ্বারা প্রভাবিত হবার সুযোগ হয় না বরং নিজস্ব শক্তিতে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। তার মানে, এটা একটা সামাজিক অভ্যাসে পরিণত করা দরকার হয়, সফল নেতারা সেটাই করেন। তারা আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলিকে সমাজের নতুন অভ্যাস তৈরি করতে পারেন।
এই তিনটি উপাদান যখন একত্র হয় তখন আন্দোলন নিজের গতিবেগেই চলমান হয় এবং ক্রিটিক্যাল মাস অর্জন করে।
রোজা পার্ক সমাজে একজন পরিচিত মুখ ছিলেন, ছিলেন সম্মানিত এবং গ্রহনযোগ্য। ঔ সময়ে মন্টেগোমারী শহরে অনেক রকম ক্লাব বা বিভিন্ন ছোট বড় সামাজিক গ্রুপ প্রচলিত ছিল। প্রায় প্রত্যেকেই কোন না কোন এরকম সামাজিক গ্রুপে জড়িত ছিলেন। রোজা পার্কও অনেক রকম সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন। শহরের প্রভাবশালী অনেকের সাথেই তার জানাশোনা ছিল। সুতরাং রোজা পার্ক যখন গ্রেফতার হন, মানুষের সামাজিক অভ্যাস তথা বন্ধুত্বের অভ্যাসকে চালু করে দেয়। এই খবর স্ফলিংগের মত ছড়িয়ে পড়ে। মন্টেগোমারি NAACP এর সাবেক প্রধান নিক্সন এবং একজন সাদা আইনজীবি ক্লিফোর্ড ডার তার জামিনের ব্যবস্থা করেন। তারা রোজা পার্ককে তার গ্রেফতারকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা দায়েরের অনুরোধ করেন। যদিও তার স্বামী রাজী ছিলেন না কারন তিনি রোজা পার্কের জীবনের ঝুকি আছে বলে মনে করেছিলেন কিন্তু রোজা পার্ক বলেন এতে যদি মন্টেগোমারী এবং সাধারন মানুষের উপকার হয় তাহলে তিনি এই মামলা লড়বেন। রোজা পার্কের একজন বন্ধু রবিন্সন যিনি একটি স্কুল শিক্ষকদের দলের প্রধান ছিলেন, তিনি বেশ কিছু স্কুল শিক্ষক নিয়ে মাঝ রাতে মিটিং করে পরবর্তী সোমবারে যেদিন রোজার মামলা আদালতে উঠবে সেদিন বাস বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। তারা অনেকগুলি কাগজ ছাপিয়ে করে পরেরদিন স্কুলের ছাত্রদের মাধ্যমে তা বিতরণ করেন। পুরো কৃষ্ণাঙ্গ সমাজে ব্যাপারটি আলোড়ন তৈরি করে। এমনকি যারা রোজা পার্ককে তেমন চিনতেন না তারাও অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে (peer pressure) আন্দোলনের পক্ষ নেন। অর্থাত আন্দোলন সফল করার দ্বীতিয় সামাজিক অভ্যাস তথা সামাজিক চাপ (লোকে কি বলবে) তৈরি হয়। যখন ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের অভ্যাস এবং সামাজিক চাপ (লোকে কি বলবে) এর সম্মিলন ঘটে তখন আন্দোলন চূড়ান্ত গতি লাভ করে। নিক্সন এবং ক্লিফোর্ড ডার তাদের এই আন্দোলনে মার্টিন লুথার কিং কে অন্তর্ভুক্ত করেন, তিনি এই আন্দোলন কে সামাজিক অভ্যাসে পরিনত করেন যার ফলে একসময় দাসত্বের মানসিকতা মেনে নেয়া এই কৃষ্ণাঙ্গ জনতা দিনের পর দিনের বাস বয়কট করে আন্দোলন চালু রাখে। তার নেতৃত্বে এই আন্দোলন চূড়ান্ত রুপ লাভ করে। বাস ধর্মঘট চলে একবছরের বেশী, নিম্ন আদালতে হেরে যান রোজাপার্ক। শেষ পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্ট থেকে বাসে সাদাদের জন্য সিট রিজার্ভ করা অসাংবিধানিক ঘোষনা করলে একবছর পর এই বাস বয়কট শেষ হয়।
১৯৭৯ সালে রিক ওয়ারেন নামে এক যবক ধর্ম প্রচারক চিন্তা করলেন তিনি একটা চার্চ স্থাপন করবেন, তিনি ক্যালিফোর্ণিয়ার স্যাডলব্যাক উপত্যাকাকে জায়গা হিসাবে চুড়ান্ত করলেন। তিনি সেখানে পৌছে প্রথম জমায়েত করলেন উনার বাসায় যেখানে সাতজন যোগ দিয়েছিলেন। ত্রিশ বছরে স্যাডলব্যাকে আমিরিকার একটা বৃহত এবং মডেল চার্চে পরিনত হয়। প্রেসিডেন্ট ওবামার শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং সে সময় তাকে আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা হিসাবে বিবেচনা করা হতো। কিভাবে রিক ওয়ারেন সফল হলেন? ওয়ারেন বলেন, আপনি যদি মানুষকে ভয় দেখিয়ে ধর্মের দিকে আনেন সেটা দীর্ঘদিন কাজ করবেনা যা করতে হবে তা হলো আপনাকে একটা সামাজিক অভ্যাস তৈরি করতে হবে, সেটা হলো বিশ্বাসের অভ্যাস।
রিক ওয়ারেন যখন শুরু করেন তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে চার্চে আসবার আহবান জানান। তিনি জানতে চান তারা কেন চার্চে আসেন না? তারা বলেন এটা বিরক্তিকর, সংগীত আকর্ষনীয় নয়, তাছাড়া যে বক্তব্য দেয়া হয় তা তাদের জীবনের বাস্তবতার সাথে মিলে না। ওয়ারেন তাদের ইস্যুগুলো গুরুত্ব সহকারে নিলেন। তিনি তাদের বললেন যদি কেউ শর্ট এবং হাফ শার্ট পড়তে চান তো পড়তে পারেন। ভালো মিউজিকের জন্য ইলেক্ট্রিক গিটার কিনেন। আলোচনার বিষয়বস্ত বদলিয়ে দেন যেমন কিভাবে নিজের সমন্ধে ভালো অনুভব করবেন, কিভাবে স্ট্রেস ম্যানেজ করবেন ইত্যাদি। তার এই উদ্যোগ কাজ করা শুরু করে, তিনি স্কুল অডিটোরিয়াম ভাড়া নিয়ে সাপ্তাহিক জমায়েত শুরু করেন, অংশগ্রহনকারী লোকজন বাড়তে থাকে। এরই মাঝে তিনি অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং হতাশায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি স্যাডলব্যাক ভ্যালি ছেড়ে এরিজোনায় চলে যায় যেখানে তার শ্বসুরের বাড়ি। সেখানেও তিনি দীর্ঘদিন হতাশায় ভুগতে থাকেন। সে জায়গায় হঠাত তিনি একদিন নিজের মধ্যে একধরনের শক্তি অনুভব করেন, যেন প্রভু তাকে বলছে তুমি মানুষ তৈরি কর, আমি চার্চ তৈরি করব। তিনি স্যাডলব্যাকে ফিরেন নতুন উদ্যম নিয়ে।
এবার তিনি একটি পরীক্ষা করার চিন্তা করেন, উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বাস বিষয়টা মানুষের মধ্যে একটা সামাজিক অভ্যাস হিসাবে তৈরি করা। সামাজিক চাপ (peer pressure- লোকে কি বলবে) তৈরি করে লোকজনকে চার্চমুখী করা। তিনি তার কিছু অনুসারীদের নিজ বাসায় তাদের চেনা পরিচিত/প্রতিবেশীদের নিয়ে ক্লাস করার পরমর্শ দেন। ধীরে ধীরে তিনি তার সকল অনুসারীদের ছোট ছোট দল করে দেন এবং তাদের সাপ্তাহিক বৈঠকের জন্য পরামর্শ দেন। এ্টি তার নেয়া একটি সেরা সিদ্ধান্ত ছিল, যা চার্চের যাওয়ার বিষয়টা সামাজিক অভ্যাস হিসাব তৈরী করে। চার্চের সাপ্তাহিক জমায়েত অনেক বড় হওয়া শুরু করে তবে আসল কাজ হয় সপ্তাহ জুড়ে বাসায় বাসায় হওয়া ছোট ছোট প্রতিদিনের জমায়েতগুলি। ছোট দলগুলিতে বেশির ভাগ সময় ওয়ারেন নিজে থাকতেন না, তাছাড়া সেখানে পুরো সময় ধর্ম নিয়ে আলোচনা হতো তাও না। এই দলগুলির জন্য তিনটি নিয়ম ছিলঃ প্রতিদিন কিছু সময় ধ্যান করা, শতকরা ১০ভাগ আয় দান করে দেয়া আর একটা ছোট দলের সদস্য হয়ে দলের মিটিং এ অংশগ্রহন করা। এই কাজগুলি দলে অংশগ্রহন কারীদের মধ্যে শক্তিশালি বন্ধন এবং বিভিন্ন দলের (inter team) মাঝে দুর্বল বন্ধনের অভ্যাস তৈরি হয়। এই দুই অভ্যাসের সাথে যোগ হয় সাপ্তাহিক জমায়েত যেখানে ওয়ারেন ন্তৃত্ব দিয়ে এটাকে সামাজিক অভ্যাসে পরিনত করেন। তিনটি অভ্যাসের মিলিত হবার ফলে চার্চ তৈরির আন্দোলন সফল হয়।
কোন আন্দোলন এজন্য হয় না যে সবাই একদিন শুভ সকালে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমরা আজ থেকে এই কাজ করব কিম্বা এরকম কিছু করব না। বরং সমাজের কোন সমস্যা বা ইস্যু থেকে বন্ধুত্বের শক্তিশালী অভ্যাস থেকে একটা আন্দোলনের সুচনা হয়, সামাজিক দুর্বল বন্ধন অভ্যাসের ( peer pressure, লোকে কি বলবে) মাধ্যমে এই আন্দোলন গতি এবং ভর অর্জন করে। তারপর নেতৃত্ব এটাকে একটা সামাজিক অভ্যাসে পরিনত করতে পারলে এটা প্রয়োজনীয় সময় ধরে চলার শক্তি অর্জন করে এবং সফলতার দিকে যায়।
পরের অধ্যায়ে এই বইএর ইতি টানা হয়েছে। মানুষ কি তার অভ্যাসের জন্য দায়ী? কেউ কেউ এই প্রশ্ন তোলেন যে অভ্যাস যদি মস্তিষ্কের প্রোগ্রাম হয়, এটা যদি ইংগিতের বিপরীরে স্বয়ংক্রিয় কাজ হয়, তাহলে একটা খারাপ অভ্যাস যেমন জুয়া খেলা কিম্বা মাদকাসক্ত হওয়া ইত্যাদির জন্য কি মানুষকে দোষারোপ করা ঠিক হবে? পরের অধ্যায়ে লেখক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৮