somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধার্মিক নাকি ধর্মান্ধ?

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা জন্মসূত্রে মুসলিম। দিনশেষে সৃষ্টিকর্তাকে আমরা সবাইই ভালোবাসি। ধর্ম ভয় একেবারেই নেই কারো ভিতরে এটা কেউ বলতে পারবে না। গড়েমিলে নামাজ রোজাও যে কখনো করিনা তাও কিন্তু না। কিন্তু আত্মিক ভাবে কি আমরা আসলেই মুসলিম? আত্মিক দিক থেকে মুসলিম হতে হলে লাগেটা কি?

সর্ব প্রথম এবং প্রধান স্টেপ হলো, জানা লাগে।

"হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান করো" -- সূরা আল- মায়েদা (৩৫)

স্পষ্ট ভাবে কোরআনে লিখা আছে যে তোমরা আল্লাহর অনুসন্ধান করো। তার নিয়ম নীতি সম্পর্কে অবগত হও, তার ব্যাখা জানো এবং পালন করো। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে আমরা তা কেনো পালন করবো? সব কিছুর পেছনে কারণ আছে। এর কারণ টা কি? ইবাদত আল্লাহর জন্যে, মানুষের নিজেদের প্রয়োজনে। আমাদের প্রয়োজন টা কি??

ধরা যাক আমার মা এসে আমাকে বললো আমার ভাইকে একটা চড় মারতে। আমি সবার আগে যে প্রশ্নটা করবো সেটা হচ্ছে "কেনো"। সবার আগে আমি কারণটা জানতে চাইবো। তারপর তার ব্যাখ্যা শুনবো। তারপর ঈশ্বর প্রদত্ত বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করবো থাপ্পড়টা মারা ফরজ কিনা।

তেমনি কোরআনে আমাদের আদেশ দেয়া আছে আমরা কি করবো, আমাদের কি করা উচিত। কিন্তু কেনো করবো এবং কিভাবে করবো তার ব্যাখাটা নিতে হয় হাদীস থেকে। আর এইখানেই এসে প্যাঁচ টা লাগে। আল্লাহ কোরআনকে সংরক্ষণের ওয়াদা করেছেন। হাদীসকে না। হাদীস সংরক্ষণের দায়িত্ব মানুষের। মানুষ ঠিক এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থে শরীয়ত বিকৃত করে ফতোয়া তৈরি করে আসছে যুগ যুগ ধরে। আর আমরা তা শিখেই বড়ো হই মাথা ভর্তি কনফিউশন নিয়ে।

ভিকারুননিসা স্কুলে ক্লাস সিক্সের ধর্ম টিচার ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। অত্যন্ত ধর্মভীরু পর্দাশীল সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী রমণী। তো একদিন তাকে ক্লাসে প্রশ্ন করা হলো, "আচ্ছা ম্যাডাম, আল্লাহ তো নারী বা পুরুষ কোনোটাই নন। ফেরেশতা দের মধ্যেই নারী পুরুষ নেই। তাহলে প্রেরিত পুরুষ বা নবী রাসূল রা শুধুই পুরুষদের মধ্য থেকে হয় কেনো?" সে আমাকে অত্যন্ত লেইম একটি যুক্তি দিলো। কারণ মেয়েরা মাসের পুরোটা সময় পবিত্র অবস্থায় থাকতে পারেনা। কোনো দুর্যোগের সময় জরুরি ভিত্তিতে ওহী নাযিল করার দরকার হলে তখন সমস্যা হবে।

বাবা ছাড়া যে ঈসা (আ) কে পাঠালেন, চোখের পলকে যে সাগর দুই খন্ড করে যে রাস্তা বানিয়ে ফেললেন তার কাছে জরুরি সময়ের জন্য পিরিয়ডের কোনো সল্যুশন নাই?? এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? না জানলে বলতে পারতেন যে পরে জানাবো। কিন্তু মনগড়া যুক্তি কেনো?

আমি বলছিনা শুধু পুরুষদের নবী রাসূল হওয়াটা অনুচিত। এটাও বলছিনা যে নারীদের ও নবী হতে হবে। শুধু না হওয়ার পেছনের শুদ্ধ কারণ টা জানতে চেয়েছিলাম। এবং সেই কারণ টা আর যাই হোক পিরিয়ড চলে বলে সম্ভব না- এটা হতে পারেনা।

হতে পারি আমি জন্মসূত্রে মুসলিম। কিন্তু তাই বলে ইসলামের রীতিনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবোনা সেটা কোথায় বলা আছে? ধর্ম কখনোই মানুষকে অন্ধ হতে বলেনি। অ্যানালাইজেশন অপ্রয়োজনীয় হলে তো আল্লাহ মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দিতো না। অনুসন্ধান করতে বলতো না। প্রশ্ন না করলে জানবো কিভাবে এর পেছনের কারণ কি? মনের মধ্যে কনফিউশন থাকলে মনে প্রাণে ধর্ম বিশ্বাসই বা করবো কিভাবে? এবং কনফিউশন দূর করতে অবশ্যই এই ধরণের অপব্যাখা কাম্য না।
কিন্তু ধর্ম নিয়ে একটু কৌতুহলবশত ঘাটাঘাটি একটু বেশি প্রশ্ন করতে গেলেই তথাকথিত হুজুর সম্প্রদায়ের চুলকানি শুরু হয়ে যায়। মূসা (আ) তো স্বয়ং আল্লাহকেই প্রশ্ন করতো। "আল্লাহ আপনি কে? আপনাকে দেখা যায় না কেনো? আপনি কখন ঘুমান? আমাকে দেখা দিন।" আল্লাহ ধৈর্য এবং ব্যাখাসহ উত্তর দিতেন। আর মহানবীর বৈবাহিক জীবন সম্পর্কে একটু সেনসিটিভ প্রশ্ন তুলতে গেলেই "তুই কাফের"।

আসলে কাহিনী তো সেটা না। ফতোয়াবাজরা কখনোই চায় না যে আমরা ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জানি। জেনে গেলে তো তাদের পচাঁশি বছর বয়সে ১২ বছরের মেয়ে বিয়ে করার রীতিতে বাঁধ পরবে। স্বার্থ না থাকলে তারা কখনোই ইসলামের মতো ঝামেলামুক্ত ধর্মের এতোগুলো শাখা বের করতো না। একদল শিয়া উপাধি গ্রহণ করে। একদল সুফীবাদের মতো চরম পর্যায়ের ভণ্ডামি চালু করে। আর আমরা যারা সুন্নি তাদের মধ্যেও কত কেচ্ছা। একেকজন একেক মাজহাবের অনুসারী। সেদিন মামীকে দেখলাম অন্য নিয়মে সিজদা দেয়। জিজ্ঞেস করতে বললো, আমরা তো রফাদানী। রফাদানীরা এভাবেই সিজদা দেয়। আমি হতবাক। এ আবার কেমন মাজহাব যে সিজদা দেয়ার নিয়মই বদলে দেয়! এক ধর্মেরই কত ডালপালা বের করে তারা জোচ্চরি করে। অথচ ইসলামে এদের কোনো অস্তিত্বই নেই।

"যারা দ্বীন সন্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন, দলে বিভক্ত হয়েছে হে নবী! তাদের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই।" -- সূরা আন আমর (১৫৯)

খুব কম মানুষই প্রকৃত ধর্ম জানে। একজন Atheist ইসলাম নিয়ে সন্দেহ তুললে যেখানে আমাদের যুক্তিতর্ক এবং প্রমাণসহ তাদেরকে ধরাশায়ী করার কথা সেখানে অধিকাংশ মানুষ তাদের উত্তরই দিতে পারিনা। পারবোই বা কিভাবে। ছোটকাল থেকে "মেনোপজের সল্যুশন নেই বলে আল্লাহ মেয়েদেরকে আসমানি কিতাব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন" শিখে বড় হওয়া জেনারেশন আমরা। ব্রেইন ওয়াশ করে সুস্থ মানুষকে টেররিস্ট বানানো এতো সস্তা হওয়ার কথা ছিলনা যদি আমাদের ধর্ম সম্পর্কে শুদ্ধ জ্ঞান থাকতো। ইন দ্যাট কেইস, মমিসিং এর পীরের গুলশানে ডুপ্লেক্স বাড়ি থাকতো না অবশ্য। শব ই বরাতের রাতে রুটি হালুয়ার দোকানদারের ব্যবসাও লাটে উঠতো। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের সহজ সরল মানুষ গুলোর তাহলে মক্তবে হুজুরের কাছে শিখে সারা জীবন ভুল নিয়মে সিজদা দিয়েও মাটির নিচে যেতে হতো না। বেচারা হুজুরেরই বা দোষ কোথায়। সেও তো ছোট কালে তাই শিখে বড় হইছে।

(*অসংখ্য মাজহাবের মধ্যে প্রধান চারটা মাজহাব হচ্ছে হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী। এই নাম গুলি আল্লাহ বা মুহাম্মাদ (সা) এর দেওয়া নয় এমনকি যাঁদের নামে এই মাযহাব তৈরি করা হয়েছে তারাও এই নাম গুলো দেয়নি। মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত চারটি মাযহাব, দল বা ফিকাহ ইসলামের কোনো নিয়ম বা বিধান মেনে তৈরি করা হয়নি। কারন ইসলাম ধর্মে কোনো দলবাজী বা ফিরকাবন্দী নেই। মুসলমানদের বিভক্ত হওয়া থেকে এবং ধর্মে নানা মতের সৃষ্টি করা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে। এমনকি অনেক মাজহাব কালের গহীনে হারিয়েও গেছে। *সূত্র-- উইকিপিডিয়া)

ধর্ম সম্পর্কে আমার স্বল্প জ্ঞানে যা ধরলো মাথায় তারই বহিঃপ্রকাশ। যে কোনো প্রকাশ সমালোচনা ও কারেকশন (অবশ্যই রেফারেন্স সহ) গ্রহণযোগ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×