নুহাশ পল্লী ঢাকার অদুরে গাজীপুরে অবস্থিত বাগানবাড়ী। কার্যত: এটি এটি নুহাশ চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর যা পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ পরিচিত।
কিংবদন্তী কথাসাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নুহাশ পল্লী প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার ধানমণ্ডিতে তার বাসস্থান হলেও তিনি সুযোগ পেলই নুহাশ পল্লীতে চলে আসতেন সময় কাটাতে। কখনো আসতেন সপরিবারে, কখনো আসতেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রাতভর আড্ডা দিতে। প্রতি বছর ১লা বৈশাখে নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো।
নুহাশ পল্লীতে ঢুকে মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই হাতের বাঁ-পাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজের ঘর।
এর পাশেই তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান। লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। ওই লিচুবাগের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
আমি যখন হুমায়ুন আহমেদের সমাধি স্থলে গিয়ে উনার সমাধিস্থলের একটা ছবি নিতে গেলাম। দেখলাম কাচের বাউন্ডারী ঘেরা সমাধিস্থলের ভিতরে কবরটি ধরে একজন ভক্ত দাড়িয়ে আছে এবং এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কবরের দিকে, মনে হচ্ছিলো যেন হুমায়ুন আহমেদ তাকে একটা গল্প শুনাচ্ছে!
নুহাশ পল্লীতে হাটছি আর ভাবছি, কি করে গেলেন তিনি। তার জন্যে নাকি তার পরিবারের জন্যে, নাকি তার ভক্তদের জন্যে???
হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘নুহাশ পাল্লী’ নামের এই বাগানবাড়ি। এখানে ২৫০ প্রজাতির দুর্লভ ঔষধি, মসলাজাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। নুহাশ পল্লীর প্রধান ফটক পেরোলেই চোখে পরবে কাঁচা সবুজ গালিচা খুব যত্ন করে কাটা দুবা ঘাসগুলো দেখে যে কারো ভালো লাগবে। শুরুতেই ডান পাশে একটি সুদৃশ্য স্ট্যাচু চোখে পড়বে। দৃষ্টিনন্দন এ স্ট্যচু তে একজন মা তার ছেলে কে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
সবুজ মাঠের এক পাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত লম্বা খাঁচায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
মাঠের দুই পাশে স্থানে স্থানে রয়েছে ছোট ছোট জলাধার। যেখানে পদ্ম, শাপলা সহ রয়েছে আরো অনেক জলজ ফুল।
আরেকটু এগোলেই ডান পাশে মাটির তৈরী একটি বাড়ি রয়েছ। দেখতে মাটির মনে হলেও ঘর টি পাকা আর পাকা ঘরের দেয়ালে মাটি মেখে মাটির ঘরের রুপ দেয়া হয়েছে। চমৎকার এই বড়ি টি লতা জাতীয় ফুলগাছে বেষ্টিত।
একটু এগোলেই চোখে পড়বে দাবা ঘর!
সবুজ মাঠের মাঝে রয়েছে ট্রি হাউজ।
আরেকটু আগুলেই ডান পাঁশে চোখে পড়বে বৃষ্টিবিলাস নামন মূল ঘরটি।
বৃষ্টিবিলাস পেড়িয়ে আগোলেই ঢালেই চোখে পড়বে জোরেসিক পার্ক,
রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গাছে সাজানো ঔষধি উদ্যান।
চোখে পড়বে অনেকগুলো বড় বড় ক্যাকটাস। (ক্যাকটাসের মধ্যে ওখানে যারা ঘুরতে যায় তারা তাদের নাম লিখে আসে)
আরেক পাঁশে আছে মৎস্য কন্যা! (উপরে আমার মেয়ে)
মৎস্য কন্যার পুকুর পাড়েই আছে দানবীয় দৈত্য!
আছে অন্যদিন পরিবারের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হুমায়ুন আহম্মেদের একটি স্ট্যচু।
ঢাল পেড়িয়ে আরো নিছে নামলে চোখে পড়বে লীলাবতী দীঘি, এই লীলাবতী দীঘির ঘাটে বসেই হুমায়ুন আহম্মেদ জ্যোৎস্না উপভোগ করতেন।
লীলাবতী দীঘির পাড়েই আছে ভূতবিলাস নামক দুইটি ঘর যেখানে তিনি আমাবস্যার রাতে রাত্রিযাপন করতেন!
এখনো সবই আছে নেই শুধু হুমায়ুন আহমেদ!
এক হুমায়ুন আহমেদের অভাবে হাড়িয়ে যেতে বসেছে নুহাশ পল্লীর সুন্দরজ্য।
এখন সেখানে পিকনিক হয়, হয় কনসার্ট।
তাই এখন আর নেই পাখির কলরব, নেই পুকুরে রাজহাঁস আর শাপলার সুন্দরজ্য।
ঘাসের সতেজতা হারিয়ে সবুজ রঙ এখন গোল্ডের রূপ ধারণ করে চলেছ!
আছে শুধু বাধ্যজন্ত্রের শব্দ আর গাড়ীর হর্ন। ঘাসের উপর পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম মাংসের হাড় আর পরে থাকা উচ্ছিষ্ট।
সবশেষে হুমায়ুন আহমেদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে নুহাশ পল্লী ত্যাগ করলাম। আর মনে মনে বললাম ভালো থাকুন হুমায়ুন আহমেদের সৃতি বিজরিত "নুহাশ পল্লী
বিঃদ্রিঃ এখানে অনেক ছবি আমার আগের স্যার বেঁচে থাকার সময়ের, কিছু আছে ২২.০১.১৬ তে তোলা। এখন অবস্থা অনেকটাই খারাফ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৫