বাংলার স্থানীয় প্রধান ও জমিদার, যারা মুগল সম্রাট আকবর [১৫৫৬-১৬০৫] ও জাহাঙ্গীর [১৫৫৬-১৬২৭] এর রাজত্বকালে মুগলবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তারা ইতিহাসের বারোভূঁইয়া নামে পরিচিত। মূল সংস্কৃত শব্দ ভৌমিক > [প্রকৃত] ভূমিক > [বাংলা] ভূঁইয়া। ভূঁইয়া অর্থ ভূ-স্বামী। প্রাচীন বড় জমিদার বা সামন্ত রাজা উপাধি এটি। বারোভূঁইয়া শব্দটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল যে, অনেকে বাংলাদেশকে 'বারোভূঁইয়ার দেশ' বলে অভিহিত করেন। তাদের মনে করা হতো ২০০ বছর স্থায়ী বাংলার স্বাধীন সালতানাতের উত্তরাধিকারী। তবে তারা একই সময়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন এবং ১২ জনই ছিলেন এমন প্রমাণ ইতিহাসে মেলে না।
আবুল ফজল রচিত 'আকবরনামা'য় ভূঁইয়াদের ১৩ জনের নাম পাওয়া যায়। সেগুলো হলো_ ঈশা খান মসনদ-ই-আলা, ইব্রাহীম নরল, করিমদাদ মুসাজাই, মজলিস দিলওয়ার, মজলিস প্রতাপ, কেদার রায়, শের খান, বাহাদুর গাজী, তিল গাজী, চাঁদ গাজী, সুলতান গাজী, সেলিম গাজী এবং কাসিম গাজী।
মির্জা নাথানে 'বাহারিস্তান-ই-গায়েবী'তেও ১৩ জন ভূঁইয়ার নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন_ মুসা খান মসনদ-ই-আলা, আলাওল খান, আবদুল্লাহ খান, মাহমুদ খান, বাহাদুর গাজী, সোনা গাজী, আনোয়ার গাজী, শেখ পীর, মির্জা মুনিম, মাধব রায়, বিনোদ রায়, পাহলওয়ান এবং হাজি শামসুদ্দিন বাগদাদী।
সাধারণ মানুষের কাছে মুঘল আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশ ও দশের রক্ষক হিসেবে এ দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হলেও আধুনিক ঐতিহাসিকদের কাছে বারোভূঁইয়াদের মূল্যায়ন: ভুঁইফোড় স্থানীয় জমিদার।
বারোভূঁইয়ারা তাদের স্বাধীন চেতনা, দেশপ্রেম, অদম্য সাহস ও বীরত্ব দিয়ে তিন যুগ ধরে শক্তিশালী মুগল সাম্রাজ্যের আগ্রাসন প্রতিহত করতে পেরেছিলেন। বাংলার মুঘল সুবাহদার ইসলাম খান চিশতি ১৬০৮-১৬১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তার দায়িত্বকালের মধ্যে ভূঁইয়াদের মুগল সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করেন। তারপর থেকে 'বারোভূঁইয়া' নামটি শুধু লোককাহিনী আর ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়।