সম্পাদকীয় - ৩ মার্চ, ২০১৩
সকল ছানা-ছিফত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। এমন ছানা-ছিফত যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। অপরিসীম, অকৃত্রিম, অগণিত দুরূদ ও সালাম মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। এমন দুরূদ ও সালাম মুবারক যা তিনি পছন্দ করেন।
সব ব্লগার নাস্তিক নয়- এটা ঠিক। আসলে বর্তমানে যেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ফুঁসে উঠেছে তারা শুধু নাস্তিক-ই নয় বরং তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য, মহা কুৎসিত, অসভ্য ও বর্বর ভাষায় মহা মিথ্যাচার করে চলছে। এটার নাম তো নাস্তিকতা নয়। বরং এটা এদেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানদের তথা পৃথিবীর প্রায় সোয়া তিনশ কোটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত। এটা চরম সাম্প্রদায়িক উসকানি। এটা পবিত্র ও হক্ব দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি মহা বিদ্বেষ এবং চরম অবমাননাকর ও মহা মিথ্যাচারমূলক। এটা শাশ্বত সত্য, সমাজ ও সভ্যতার উপর আঘাত। এটা প্রচলিত যে কোনো আইন, সংবিধান তথা সনদের সাথে সাংঘর্ষিক। এটা শুধু ধর্মীয় অনুভূতির আলোকে নয় বরং যেকোনো বিবেচনায় কোনোমতেই বরদাশত যোগ্য নয়। তাহলে সমাজ, রাষ্ট্র সব বিশৃঙ্খলায় ভরে যাবে, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সাম্প্রদায়িক হানাহানি লেগে যাবে। প্রচলিত আইনেই এটা চরম পরম অপরাধ তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
উল্লেখ্য, ব্লগ শব্দটি ইংরেজি ইখঙএ শব্দ থেকে এসেছে। ইখঙএ শব্দটি ডবন এবং খড়ম এ দুটি শব্দের সমন্বয়ে ঘটিত। ডবনখড়ম মানে হচ্ছে ওয়েব ডায়েরি। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা অনেকেই ডায়েরি লিখে থাকি। সেটা হচ্ছে কাগজের ডায়েরি। আর ডবনখড়ম মানে হচ্ছে ওয়েবে বা ইন্টারনেটে ডায়েরি লিখা। তথা ডিজিটাল দিনলিপি। আর এর সংক্ষিপ্ত হচ্ছে ইখড়ম।
‘ব্লগ’ ধারণাটি বাংলাদেশে বিগত কয়েক বৎসর ধরে আলোচনা হলেও সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় ব্লগ ধারণাটি নিয়ে আসে সামহোয়্যার ইন নেট নামে একটি আইটি কোম্পানি। তারা ইংরেজি ভাষায় একটি ব্লগ খোলে সামহোয়্যার ইন ব্লগ নামে।
বাংলা ভাষার প্রথম পাবলিক ব্লগ হওয়ার কারণে সামহোয়্যার ইন ব্লগের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ২০০৯-২০১০ থেকে নাস্তিকরা এই ব্লগে মুসলমানদের ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর, পবিত্র ঈদুল আযহা ও পবিত্র হজ্জ নিয়ে অশালীন, অযৌক্তিক, অশ্লীল সব কমেন্ট করতে শুরু করে। আস্তে আস্তে শুরু হয় পবিত্র দ্বীন ইসলাম, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জড়িয়ে কুৎসিত ও মহা মিথ্যা আক্রমণ।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ব্লগাররা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্লগ ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেসহ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রধান খলীফা, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিভিন্ন বিধিবিধানকে কটাক্ষ করে মনগড়া ও ভয়ঙ্কর ধরনের মন্তব্য লিখে নিজেদের বিকৃত রুচি প্রকাশ করতে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এসব ব্লগার আরও অশ্লীল ও অশালীন ভাষায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকে। (নাঊযুবিল্লাহ)
এসব ব্লগ বন্ধ ও চিহ্নিত ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৮৮৬/১২) করা হয়। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব, ইনস্পেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, র্যা বের ডিজি, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) বিবাদী করা হয়।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহম্মদ খোরশিদ আলম সরকার এ রিটের উপর শুনানির পর গত বছর ২১ মার্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করে মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননাকারী ব্লগগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের বিষয়ে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করে। পাশাপাশি আদালত ওইসব ব্লগ ও ব্লগারদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি, র্যা ব ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি নির্দেশনা দেয় এবং রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পিটিশনে উল্লেখ করা ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু সরকারপক্ষ অদ্যাবধি এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, উল্টো এসব নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী ব্লগারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। তাদেরকে গানম্যান উপহার দিয়েছে। সামহোয়্যার ইন ব্লগ-এর পাশাপাশি আমার ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, ধর্মকারি ব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, প্রজন্ম ব্লগ এরাও সমানতালে মহান ইসলাম উনার বিরুদ্ধে বিষোধগার করে চলছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
তবে বর্তমান চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে কমপক্ষে ২৪টি ব্লগ আইডি এবং ছয় শতাধিক ফেসবুক আইডি ও পেজ বন্ধ করেছে সরকার। এ ছাড়া প্রতিটি বাংলা ব্লগ ও ফেসবুক পেজ তদারকির আওতায় আনা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে কমপক্ষে ২০টি ফেসবুক আইডি। বিটিআরসি জানিয়েছে, এই তদারকি চলতেই থাকবে।
কিন্তু বিটিআরসি’র তৎপরতায় সন্তুষ্ট হতে পারছে না এদেশের ৯৭ ভাগ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। অভিযোগ রয়েছে- বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হিন্দু হওয়ায় তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী ব্লগগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং খুব সহজেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী ব্লগগুলোতে প্রবেশের বিকল্প ব্যবস্থা থাকছে।
উল্লেখ্য, ব্লগ নিয়ে নাড়াচাড়া করে এমন লোকের সংখ্যা মাত্র লাখ খানেক। কিন্তু তাতেই দেশ-জুড়ে উত্তাল বিক্ষোভ চলছে। এমতাবস্থায়ও যদি নাস্তিক্যবাদী প্রক্রিয়াকে নির্মূল না করা হয় তবে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ যত বেশি অবগত হবে তত বেশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে এবং এর সুযোগ নিবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামধারী পত্রিকা ও ধর্মব্যবসায়ী তথা জামাত।
কাজেই, দেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অধিকার ৯৭ ভাগ মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা বন্ধ রাখার নিমিত্তে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারদের জন্য যথাযথ শাস্তির আইন পাস করা এখন সময়ের দাবি। ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশের সরকার, রাষ্ট্র দ্বীন ইসলাম উনার সরকার যত তাড়াতাড়ি এ সত্য উপলব্ধি করবে ততই সবার জন্য কল্যাণকর।
প্রসঙ্গত, সার্বিক কামিয়াবীর জন্য আমাদেরকে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মহান মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ যেতে হবে। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)