somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেইল্যা রাজাকার থেকে ‘আল্লামা’ সাঈদী!

০১ লা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের খবর - ১ মার্চ, ২০১৩

দেইল্যা রাজাকার থেকে ‘আল্লামা’ সাঈদী!
আল ইহসান ডেস্ক:

একাত্তরের আগে ছিলো মুদি দোকানদার ও তাবিজ বিক্রেতা। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে গেলো প্রথমে শান্তিকমিটির সদস্য ও পরে রাজাকার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। নিজে জড়িত থেকে, নেতৃত্ব বা সহযোগিতা দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী নিয়ে সংঘটিত করলো হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, সম্ভ্রমহরণসহ জঘণ্যতম মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ। আগের ‘দেইল্যা’ বা দেলু নামের সঙ্গে তাই রাজাকার যুক্ত হয়ে তাই কুখ্যাত হলো ‘দেইল্যা রাজাকার’ নামে।
মুক্তিযুদ্ধের পরে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর আবির্ভুত হলো ‘আল্লামা’ ‘মাওলানা’ পরিচয়ে। ওয়াজ করে বেড়ালো দেশে-বিদেশে। কালক্রমে হলো যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাতের নায়েবে আমির। এভাবেই বাবা-মায়ের দেয়া দেলোয়ার হোসেন শিকদার ওরফে ‘দেইল্যা’ বা দেলু বা ‘দেইল্যা রাজাকার’ নামক ব্যক্তিটি হয়ে গেলো ‘আল্লামা’ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
তবে একাত্তরের অপরাধ ঢেকে নতুন পরিচিতি পেতে সে দাখিল পাসের সনদপত্র জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত উপ-কমিটি। তদন্তকালে ওই উপ-কমিটি খুঁজে পেয়েছেন আরও কয়েক ধাপে নাম পাল্টানোর আরও ঘটনাও। কেননা মাত্র ১০ বছরে পাস করা কথিত দাখিল পাসের সনদপত্রে তার নাম দেখানো হয় মোস্তফা দেলাওয়ার হোসাইন। আলিমের সনদপত্রেই সেটা হয়ে যায় আবু নাঈম দেলাওয়ার হোসাইন।
আর জালিয়াতি করে জন্ম তারিখের পাশাপাশি এসব নামকেও পাল্টে করা হয় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
তাবিজ বিক্রেতা থেকে রাজাকার কমান্ডার :
বর্তমানে জামাতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার তৎকালীন ইন্দুরকানীর (বর্তমানে জিয়ানগর উপজেলা) সাউথখালী গ্রামে ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করে। তার পিতা মরহুম ইউসুফ আলী শিকদার। তার প্রকৃত নাম দেলোয়ার হোসেন শিকদার। তাকে ‘দেইল্যা’ নামে সকলে চিনতেন। মওদুদীবাদী জামাতের ছাত্র রাজনীতি করার কারণে সাঈদী শর্ষিনা মাদরাসা থেকে বহিষ্কৃত হয়। পরে বারইপাড়া মাদরাসা থেকে তৃতীয় বিভাগে আলিম পাস করে। এরপর উচ্চতর ডিগ্রি না নিলেও নামের সঙ্গে ‘আল্লামা’ টাইটেল ব্যবহার করছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে শ্বশুর বাড়িতে থাকতো সাঈদী। সংসার চালানোর জন্য পারেরহাটে তার একটি ছোট মুদি দোকান থাকলেও সে মূলত তাবিজ বিক্রি করতো।
অভিযোগ করা হয়েছে, সাঈদী ছিলো উর্দু ভাষায় পারদর্শী এবং বাকপটু। এটাকে ব্যবহার করে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সে সখ্য এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। এ কারণে সে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হতে সক্ষম হয়। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পরই সে ছিলো শান্তিকমিটির সদস্যও। তার নেতৃত্বে এবং তার সহযোগিতায় পিরোজপুরের পারেরহাট বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, সম্ভ্রমহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে।
দেইল্যা রাজাকার থেকে ‘আল্লামা’ সাঈদী! :
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, সাঈদীর আসল নাম দেলোয়ার হোসেন শিকদার। একাত্তরের আগে সে পিরোজপুরে এ নামেই পরিচিত ছিলো। লোকে তাকে প্রথমে ‘দেইল্যা’ বা দেলু এবং মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধের জন্য ‘দেইল্যা রাজাকার’ নামেও চিনতেন। স্বাধীনতার পর একাত্তরের ১৯ ডিসেম্বর সে নিজের অপরাধকে আড়াল করার জন্য বোরকা পরে গরুর গাড়িতে চড়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে অস্ত্রসহ যশোরের রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করে। অনেকদিন পর তার অপরাধের কাহিনী জানাজানি হলে সে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর সে আত্মগোপন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসে এবং ভুয়া মাওলানা পরিচয়ে ওয়াজ মাহফিল শুরু করে। নিজের নাম পাল্টে করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এভাবেই সে ‘আল্লামা’ ‘মাওলানা’র পরিচয়ে নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে।
১০ বছর বয়সে দাখিল পাস! :
এদিকে নিজেকে ‘আল্লামা’ ‘মাওলানা’ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রমাণে এই যুদ্ধাপরাধী দাখিল পাসের সনদপত্র জালিয়াতি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, দাখিলের সনদপত্রে তার নাম ছিল মোস্তফা দেলাওয়ার হোসাইন। আলিমের সনদপত্রে সেটা ছিল আবু নাঈম দেলাওয়ার হোসাইন। আগের দাখিল সনদপত্র অনুযায়ী সাঈদীর জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৩ মার্চ। আর সেখানে তার দাখিল পাসের বছর দেখানো হয়েছিল ১৯৫৭ সালে। সে হিসেবে সে দাখিল পাস করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে!
জালিয়াতির মাধ্যমে তার নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্যদিকে সনদপত্রে ঘষামাজা করে দাখিলে তার বয়স করা হয় ১৬ বছর। আলিমে ১৯ বছর করা হয়।
জানা গেছে, সাঈদীর দাখিল ও আলিম পরীক্ষা পাসের সনদপত্র ও জন্ম তারিখ সংশোধন করা হয়েছে কথিত পরীক্ষার যথাক্রমে ৪৮ ও ৫১ বছর পর। উল্লেখ্য, পাবলিক পরীক্ষার আইন অনুযায়ী পাস করার দুই বছরের মধ্যে একজন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর বয়স সংশোধন করা যায়। কিন্তু দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নাম ও বয়স পাল্টেছিলেন পাস করার ৫১ বছর পর।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় মনোনয়নপত্রে এসব অসঙ্গতি ধরা পড়তে পারে তা বুঝতে পেরে ওই বছরের ১০ নভেম্বর মাত্র ৪ ঘণ্টার মধ্যে মাদরাসা বোর্ড থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে নাম ও বয়স পরিবর্তন করে সংশোধিত সনদপত্র বের করে আনা হয়। এ দুর্নীতি ও সনদ জালিয়াতির সঙ্গে মাদ্রাসা বোর্ডের কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই সে আদৌ দাখিল পাস করেছে কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্বঘোষিত এই “আল্লামা” পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা তৎকালীন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১০ বছর বয়সে দাখিল পাসের সনদপত্র বের করে এনেছে।
২০১২ সালের ১২ আগস্ট সাঈদীর নাম ও বয়স পাল্টানোর অভিযোগের তদন্ত করতে একটি উপ-কমিটি গঠন করে জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। কমিটির সদস্য আব্দুল ওহাবকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়।
এ উপ-কমিটি দীর্ঘ তদন্ত করে সাঈদীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়ে স্থায়ী কমিটির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে গত ২১ জানুয়ারি ২০১৩ ঈ.। তবে উপ-কমিটি জালিয়াতি পেলেও তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সাঈদীর সনদ বাতিল করার সুপারিশ এবং নাম ও বয়স পাল্টানোর ঘটনায় জড়িত মাদরাসা বোর্ডের কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ না থাকায় প্রতিবেদনটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগে সাঈদীর দশ বছর বয়সে দাখিল পাস ও পাস করার ৫১ বছর পর নাম ও বয়স পাল্টানোর খবরটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা সচিব মাদরাসা বোর্ডের কাছে প্রকাশিত খবরটির বিষয়ে সব কাগজপত্র তলব করে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

উন্মাদযাত্রা

লিখেছেন মিশু মিলন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

একটা উন্মুল ও উন্মাদ সম্প্রদায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজের শিকড় থেকে বিচ্যুত হলে যা হয় আর কী, সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো ঘুরপাক খায় আর নিন্মগামী হয়! এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক || ঈদের খুশিতে একটা গান হয়ে যাক || নতুন গান || হঠাৎ তাকে দেখেছিলাম আমার বালক-বেলায়||

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬

ঈদ মোবারক। ঈদের দিন আপনাদের জন্য আমার একটা নতুন গান শেয়ার করলাম। অনেকগুলো নতুন গানই ইতিমধ্যে আপলোড করা হয়েছে ইউ-টিউবে। ওগুলো ব্লগে শেয়ার করতে হলে প্রতিদিনই কয়েকটা পোস্ট দিতে হবে।



তবে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×