কখনও কি শুনেছেন বাংলাদেশের কোন হিন্দু জামাত শিবির করে ? কিংবা কখনও কি শুনেছেন ভারতের মুসলমানরা বিজিপি করে ? কিংবা শুনেছেন কি কখন ও হিন্দুরা মসজিদে যায় কিংবা মুসলমানরা পূজা করে ? এটা করতে এবার ভারতে দেখা গেছে এক মুসলমান মহিলা নিজ বাড়িতে মন্দির স্থাপন করেছেন । এক মুসলমান পুরুষ পূজা শুরু করছেন । হ্যাঁ এটা ব্যতিক্রম । ধর্মীয় দিক থেকে নিষিদ্ধ হলেও অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরে তারা তাই করছেন । আমরা বাংলাদেশে বড় জোড় পূজার সময় মণ্ডপের আশে পাশে দাড়িয়ে একটা ফটোসেশন করি । ফেবুতে সেই ছবি শেয়ার করি । লাইক পাই ।
ভেতরে ভেতরে ধর্মীয় বেড়া জাল আমাদের কুরে কুরে খায় । শেষ করে দেয় । আমরা ধ্বংস হয়ে যাই । বন্ধুত্বের বন্ধনে যতোই জড়াই না কেন দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কখনও গোচে না । কাঁধে কাঁধ রেখে যতোই হাটি চোখের আড়াল হলেই বিশ্বাসের ভীত নড়বড় করে । ভেতরের কাল কেউটো ফণা তুলে দাড়ায় । কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না ।
জন্ম এ দেশে, মৃত্যুও হয় এ দেশে তবু দেশকে আপন ভাবতে পারি না । দেশ প্রেম, মানব প্রেম সব কিছুর ভেতর দেয়াল হয়ে দাড়ায় ধর্ম । ধর্মই সব তচনচ করে দেয় । নিজ দেশে পরবাসী হয়ে কেটে যায় জীবন এপার ওপার বাংলার কিছু মানুষের । তাদের আমি সংখ্যা লঘু বলে বহুদূরে ঠেলে দিতে পারি না । দেই না । তাদের কখনও সংখ্যা লঘু বলি না । ধর্ম যার যার দেশে সবার । তবে আমরাই আবার পেছনে বসে ঘুটি চালি । ধর্ম নিয়ে বিবাধটা ঝুলিয়ে রাখি । ধর্মের লেবাসে সন্ত্রাসকে কবুল করি, হজম করি । গুজরাটে হাজার হাজার মানুষ হত্যার পরও মোদীদের মতো লোক প্রধানমন্ত্রী হয় । গোলাম আযম,নিজামিরা জাতীয় পতাকা গাড়ীতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় । বলি কারা এদের নির্বাচিত করে ? কারা এদের পেছনে শক্তি যোগায় ? সবাই সব জানি । তবুও কেউ নিজের দোষ স্বীকার করি না । ধর্ম নিয়ে যতোদিন বাণিজ্য হবে ততোদিন এইসব হানাহানি লেগেই থাকবে । কেউ বন্ধ করতে পারবে না । এমন কি আল্লাহ্, খোদাও না । তিনি তা করবেন ও না । বিবেক নামের এক জিনিষ দিয়ে তিনি আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন তাই নিজেরটা নিজেরই বুঝে নিতে হবে ।
এবার আসি আসল কথায় নারায়ণগঞ্জের এমপি সাব যার নামের শেষের অংশ শুনার পরে অনেকেই মন্তব্য বা কমেন্ট করতে সাহস করবেন না । নারায়ণগঞ্জে এমন একটিই পরিবার রয়েছে , হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন আমি ওসমান পরিবারের কথা বলছি । সেই এমপি সাব শ্যামল কান্তি ভক্ত নামের এক শিক্ষককে প্রকাশ্য স্কুলের বারান্দায় এনে কানে ধরে উঠবস করিয়েছেন । কেন করিয়েছেন কি কারণে করিয়েছেন সেটি ভিন্ন ইস্যু । ভিন্ন কথা । একজন সাংসদ হচ্ছেন দেশের আইন প্রণেতা । তারা দেশের জন্য জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন করেন । তাই আইনের প্রতি তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা অন্যদের তুলনায় বেশি হবারই কথা ।
স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত যতো বড় অন্যায়ই করুক না কেন তাকে শাস্তি দেবার জন্য দেশে আইন আদালত রয়েছে । শিক্ষককে শাস্তি দেবার ভিডিওটি এখন ভাইরাল । ফেবুতে ঘুরে বেড়াচ্ছে । ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, শ্যামল কান্তিকে অপেক্ষারত জনসম্মুখে এনে সাংসদ ক্ষমা চাওয়াচ্ছেন । সব দেখে শুনে এমনই মনে হচ্ছে, তিনি একটি সালিশের মধ্যস্থতা করছেন । উত্তেজিত জনগণকে শান্ত করছেন । মিটমাট করে দিচ্ছেন । কিন্তু কেন এমন শাস্তি ? সেটা রয়ে গেছে ঘটনার আড়ালে । কেউ মুখ খুলছেন না । অন্য একটি মাধ্যমে যতোটুকু জানতে পেরেছি সেটা হচ্ছে, ঐ শিক্ষক নাকি ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করেছেন । আবার অনেকে বলছেন, ঐ শিক্ষককে স্কুল থেকে তাড়াবার জন্যই নাকি এমন নাটক সাজানো হয়েছে । এ সবই উড়া কথা । বিশ্বাসযোগ্য নয় । ( এদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভুতি ইদানিং খুবই নাজুক অবস্থায় আছে কথায় কথায় নাড়া খায় । কে কি বললো তাতে খুন খারাবি শুরু হয়ে যায় । আর ওদিকে যে, খোদ রাজধানীতে বসে এক ভন্ড পীর আল্লাহ,নবী রাসুল তার বিবি,কন্যাকে নিয়ে নানান কথা বলে যাচ্ছে তাতে কারো অনুভুতিতে আঘাত লাগে না । কেননা ঐ ভন্ডকে কিছু করতে গেলে থোতা মুখ ভোতা করে দিবে । আবারও প্রমাণ হলো বাঙালি হচ্ছে শক্তের ভক্ত নরমের যম ।)
শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেই মানুষ আইন প্রণেতা হন । শিক্ষকেরা ও আইনের উর্ধ্ধে নন । শ্যামল ক্লান্তি ভক্ত যতো অন্যায়ই করুক না কেন একজন আইন প্রণেতা কখনওই প্রকাশ্য জনসম্মুখে কাউকে অপদস্থ করতে পারেন না । ধর্মের দোহাই দিয়ে, মানুষ পুড়িয়ে মারা যায় ,ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বাহির করা যায় । পুরো পরিবারকে প্রকাশ্য উলঙ্গ করে রাখা যায় । কান ধরে উঠ বস করানো যায় । এ সবই যদি ধর্মের নামে করা যাবে তা হলে আইন আদালতের কি প্রয়োজন রয়েছে ?
ধর্ম ই কি সব ? মানবতা,মানবিকতা বলে কি কিছু নাই ? ধর্ম কি আমাদের মানবতা,মানবিকতা শিক্ষা দেয় না ? যে ধর্ম মানবতা,মানবিকতা শিক্ষা দেয় না সেটা আবার ধর্ম হয় কি করে ? একজন শিক্ষকের অপরাধের সীমা কতোটা অতিক্রম করলে এমন শাস্তি তারে দেওয়া যায় ? এ প্রশ্ন সবার কাছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫০