পুরো নাম শামস আল দীন মোহাম্মদ। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের সেরা সুফি ব্যক্তিত্ব। বলা যায়, শামসের হাত ধরেই জালালুদ্দিন রুমী'র নবজন্ম হয়। রুমীকে তিনি ৪০ দিন ধরে শিক্ষা দিয়েছিলেন। শামস তাঁবরিজি এবং রুমী সম্পর্কে লেখা তুর্কি লেখক এলিফ শাফাকের 'দ্যা ফরটি রুলস অব লাভ' বইটি সারা পৃথিবীতে ৭ লক্ষের অধিক কপি বিক্রি হয়।
=============
১ম নিয়মঃ
=============
আমরা যেভাবে খোদাকে দেখি, তা আমাদের নিজেদের প্রত্যক্ষ প্রতিচ্ছবি।
খোদার মুখোমুখি হওয়ার চিন্তা যখন মনে আসে, তখন যদি ভয় আর তিরস্কার পাওয়ার কথা মনে হয়, এর অর্থ, আমাদের ভিতরে খুব ভয় এবং দোষ রয়েছে।
আর, যদি খোদার স্মরণে মন ভালবাসা ও মমতায় পূর্ণ হয়ে যায়, আমাদের অবস্থাটাও তখন ঐ রকমই।
=============
২য় নিয়মঃ
=============
যে প্রেমের সন্ধান করে, সেই ব্যক্তি বদলে যায়। প্রেমের সন্ধান করতে করতেই একজন মানব পরিণত হয়। যে মূহুর্ত থেকে কেউ প্রেমের সন্ধানে বের হয়, এটা তার ভিতরে এবং বাইরে পরিবর্তন ঘটায়।
=============
৩য় নিয়মঃ
=============
বিশ্বের প্রতিটি বস্তু আর প্রতিটি মানুষের ভিতর দিয়ে তুমি খোদাকে অনুধাবন করতে পারবে। কারণ, খোদা কোন মসজিদ, সিনাগগ কিংবা চার্চের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। তারপরো, তুমি যদি জানতে চেষ্টা করো তিনি আসলে কোথায় আছেন, তাঁর সন্ধান পাওয়ার কেবলমাত্র একটি জায়গা রয়েছে, সেটি হচ্ছেঃ সত্যিকার প্রেমিকের অন্তর।
=============
৪র্থ নিয়মঃ
=============
বুদ্ধিমত্তা আর ভালোবাসা ভীন্ন বস্তু দ্বারা গঠিত। বুদ্ধি মানুষকে গিঁটে বেঁধে রাখে, কোন ঝুঁকিই নেয় না। কিন্তু, ভালোবাসা সকল জটিলতা নিরসন করে, আর সব রকম ঝুঁকিই তা নিতে পারে।
বুদ্ধি সর্বদা সতর্ক থেকে পরামর্শ দেয়- ‘’খুব বেশি উচ্ছাস থেকে দূরে থাকো।‘’ অন্যদিকে, ভালোবাসা বলে, ‘’কোন কিছু চিন্তা না করেই ঝুঁকি নাও।‘’
বুদ্ধি সহজে ভেঙ্গে পড়ে না, অন্যদিকে ভালবাসা অনায়াসে নিজেকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে পারে। অথচ, ধ্বংসস্তূপের মাঝেই ধন ভাণ্ডার লুকিয়ে রয়েছে। একটি ভাঙ্গা হৃদয় সেই ধনভান্ডার গোপন করে রাখে।
=============
৫ম নিয়মঃ
=============
বিশ্বের বেশিরভাগ সমস্যা ভাষাগত ভুল এবং সাধারণ ভুল বোঝাবুঝি থেকে তৈরী হয়। কখনো শব্দকে আক্ষরিক অর্থ বা তার সরাসরি মর্মার্থ হিসেবে নিবেন না। আপনি যখন ভালবাসার বলয়ে পা রাখেন, শব্দ নিজে থেকেই অচল হয়ে যায়। যা কোন শব্দের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় না, তা একমাত্র শুধু নীরবতার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়।
=============
৬ষ্ঠ নিয়মঃ
=============
নিঃসঙ্গতা এবং নির্জনতা দুটি পৃথক জিনিস।
তুমি যখন নিঃসঙ্গ...... ‘আমি সঠিক পথে আছি’- এই বিশ্বাসে নিজেকে বিভ্রান্তির জালে ফেলা খুব সহজ। নির্জনতা আমাদের পক্ষে আরও ভালো, কারণ এর অর্থ একাকীত্ব বোধ না করে একা থাকা। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে, তোমার আয়না হবে এমন কোনো ব্যক্তির সন্ধান করা সবচেয়ে ভাল।
মনে রেখো, একমাত্র অন্য মানুষের হৃদয়ে তুমি সত্যিকার অর্থে নিজেকে এবং তোমার মাঝে সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতিকে চিনতে পারবে।
=============
৭ম নিয়মঃ
=============
তোমার জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, জীবনে হয়ে যাওয়া ঘটনাগুলো যতই ঝামেলাজনক মনে হতে থাকুক, হতাশার ধারে কাছেও যেও না। এমনকি যখন সকল দরজা বন্ধ হয়ে যায়, মহান স্রিষ্টিকর্তা শুধু তোমার জন্যে একটি নতুন দরজা খুলে দিবেন।
কৃতজ্ঞ হও! সব ঠিক থাকলে কৃতজ্ঞ হওয়াটা সহজ। একজন সুফি শুধু তাকে যা দেওয়া হয়েছে তার জন্যে কৃতজ্ঞ হোন না, তাঁর যেসব চাওয়া অস্বীকার করা হয়েছে সেগুলোর জন্যেও কৃতজ্ঞ হোন।
=============
৮ম নিয়মঃ
=============
ধৈর্য অর্থ নিষ্ক্রিয়ভাবে সহ্য করা নয়। এর অর্থ একটি প্রক্রিয়ার শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য রাখা।ধৈর্য অর্থ কি? এটার অর্থ হলো- কাঁটার দিকে তাকিয়ে সেটাকে গোলাপ হিসেবে দেখা, রাতের দিকে তাকিয়ে সকালকে দেখা।
অধৈর্যতা মানে, অদূরদর্শী হয়ে পরিণতি দেখতে না পাওয়া। খোদা-প্রেমীদের ধৈর্য কখনোই শেষ হয়ে যায় না। কারণ, তাঁরা জানেন, অর্ধচন্দ্রাকার চাঁদ পূর্ণ হওয়ার জন্যে সময়ের প্রয়োজন।
=============
৯ম নিয়মঃ
=============
পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর বা দক্ষিণের মাঝে কমই পার্থক্য আছে। আপনার গন্তব্য যাই হোক না কেন, প্রত্যেক ভ্রমনের যময় আপনাকে ভ্রমনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হবে। আপনি যদি সেই সফরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেন, তাহলে আপনি সুদূরে প্রসারিত এ বিশ্ব নয়, তার বাইরেও ভ্রমণ করতে পারবেন।
=============
১০ম নিয়মঃ
=============
ধাত্রী জানে, যখন কোন ব্যথা নেই, বাচ্চা বের হওয়ার দ্বার উন্মোচন হয় না, আর মা-ও জন্ম দিতে হোন অপারগ। সেজন্যে, নতুন সত্ত্বার জন্ম হতে হলে, কষ্টের প্রয়োজন। শক্তিশালী হওয়ার জন্য মাটির যেমন তীব্র উত্তাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, ভালবাসা কেবল বেদনায় নিখুঁত হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৩