মানুষকে কিসে অনুপ্রাণিত করে তা নিয়ে অনেকে অনেক রকম ফিলোসোফি এবং থিওরী দিয়েছেন। তবে, আমার ট্রেইনারের মতে, 'সেলফ ডিপেন্ডেন্সী থিওরী' বা 'আত্মনিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব'-টাই সেরা।
এই তত্তানুযায়ী, মানুষকে বাহ্যিক অনেক কিছু দিয়ে অনুপ্রাণিত করা যায়। যেমন- পদমর্যাদা, টাকা-পয়সা, স্বীকৃতি ইত্যাদি। অন্যার্থে, কোন কিছু করে দেয়ার বিনিময়ে কিছু পাওয়ার মাধ্যমে এই ধরণের বাহ্যিক অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে- আমি যদি প্রতিষ্ঠানের সেলস টার্গেট হিট করি, আমার বেতন বাড়বে অথবা আমি গ্রুপের সেলস লিডার হবো।
অন্যদিকে, আরেক ধরণের অনুপ্রেরণাদায়ক বস্তু থাকে যাকে 'অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণাদাতা' বলা হয়। এই ধরণের অনুপ্রেরণা হৃদয়ের ভিতর থেকে আসে যা পাওয়ার ফলে সহকর্মীরা কোন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। যেমন- ব্যক্তিস্বাধীনতা, শ্রেষ্ঠত্ব, অভীষ্ট লক্ষ্য ইত্যাদি। 'এই ধরণের অনুপ্রেরণা পেলে আমি কোন কাজ করি, কারণ আমি তা ভিতর থেকে অনুভব করি' - এমনই থাকে সহযোগীদের মনের চিন্তা।
বাহ্যিক অনুপ্রেরণা স্বল্প সময়ের জন্যে আর অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণা দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয়।
বাহ্যিক অনুপ্রেরণাঃ
আপনার টিমের কিছু কিছু সহকর্মী আছে যারা অনুপ্রেরণা পায় যখন বস বা বসের বস তার সম্পর্কে কি ভালো চিন্তা করছে তা জানতে পারে। এরফলে দেখা যায়, যখন বস উপস্থিত থাকেন, সে প্রাণপণে কোন কাজ সমাধা করে। আবার, এমনো অনেকে আছে যারা তাদের বন্ধু-বান্ধবদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। তারা হয়তো বন্ধুদের পি,এইচ,ডি ডিগ্রী অথবা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া দেখে ভাবতে থাকে, আমি এখনও একজন কেরানীই হয়ে রইলাম!
আরেক ধরণের মানুষ আছেন যারা সব সময়ে নিজেকে 'লিডার বোর্ড'-এ দেখতে চান। তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাফল্য লাভ করলে অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তারা কোন কিছু অন্যদের চেয়ে ভালো করার মাধ্যমে সহকর্মীদের চেয়ে এগিয়ে যেতে চান। আর, এজন্যেই, অনেক প্রতিষ্ঠান সহকর্মীদের মাঝে 'পিয়ার টু পিয়ার' জরীপ চালিয়ে কে কিসে ভালো করছেন তা বের করে।
আবার অনেকে আছেন যারা টাকা-পয়সা দ্বারা অনুপ্রাণিত হোন। এই ধরণের মানুষেরা কোন ভালো জায়গায় ছুটি কাটানো, দামী ঘড়ি বা গাড়ি কেনার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন। কোন চাকরী থেকে এই ধরণের সুবিধা না পেলেই তারা গোল বাধিয়ে দেন। সেইজন্যেই, লাইন ম্যানেজারদের উচিৎ, এই ধরণের মানুষেরা কিসে তাদের বেতনের টাকা ব্যয় করেন তা জানা। এটা জানতে পারলে, সেই ব্যক্তি যখন কোন কাজে ভালো করবে না, তখন তাকে সেই জিনিস অফার করার মাধ্যমে কাজে মনোনিবেশে সাহায্য করতে পারবেন।
অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণাঃ
এই ধরণের অনুপ্রেরণা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। তিন ধরণের অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণা রয়েছে-
ক) ব্যক্তিস্বাধীনতাঃ অনেক ব্যক্তি আছেন যারা স্বাধীনচেতা। তারা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে চান। এই ধরণের মানুষদেরকে তাদের ইচ্ছা মতো কাজ করতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
খ) শ্রেষ্ঠত্বঃ অনেক সময়ে দেখা যায়, অনেকে দেড়/দুই বছর কাজ চাকরী করে হাঁপিয়ে উঠেন। তারা নতুন কোন কিছু করার জন্যে মুখিয়ে থাকেন। এই ধরণের মানুষদেরকে নতুন কোন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিলে তারা কাজে অনুপ্রাণিত লাভ করেন।
গ) অভীষ্ঠ লক্ষ্যঃ প্রত্যেকেরই চাকরী করার পিছনে কোন না কোন কারণ থাকে। কাজ করার পিছনেও কমবেশি উদ্দেশ্য থাকে। একজন সফল ম্যানেজারকে তার অধিনস্তদের সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে তাদের কাজের পিছনের কারণগুলো জানতে হয়। একজন ভালো কর্মী তার ম্যানেজারের সাথে ব্যক্তিগত এসব বিষয় শেয়ার করে। কেউ যদি কোন সপ্তাহে কাজে খারাপ করে, তাহলে ম্যানেজার হতো বলবেন- তুমি আগামী বোনাস পাবে না। সেই কাজে খারাপ করাটা যদি এক মাস হয়, তাহলে, ম্যানেজার উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন- কিশোর, আমি তোমার জন্যে কি করতে পারি? আর, কেউ যদি ছয় মাসের বেশি কাজে অনবরতঃ খারাপ করতে থাকে, তখন অন্য কোন টেক্টিকস ব্যবহার করতেই হয়। তখন হয়তো ম্যানেজার আমাকে প্রতি দিনের কাজে সাহায্য করতে থাকবেন। কিংবা, তিনি হয়তো আমাকে নতুন কোন কাজে নিয়োজিত করতে পারেন, যেমন, অন্য কোন ব্রাঞ্চে ঘুরে আসা, অথবা অন্য কোন ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া। এগুলো করে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি হয়তো আমার মনকে আরও বিস্তৃত হবার সুযোগ করে দেন যাতে আমি ভালো বোধ করতে পারি।
আর, এভাবেই, একজন ম্যানেজারকে দলের বিভিন্ন কর্মী কিসে অনুপ্রাণিত হয় সে সম্পর্কে খোঁজ রাখতে হবে। ব্যাপারটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তবে, একজন ম্যানেজার যদি সঠিক ভাবে জানতে পারেন তার কোন কর্মী কিসে অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে, তাদের কাছ থেকে কাজ বের করে আনাটা খুব সহজ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১২