somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“আসুন , আগামি শনিবার আমরা দলে দলে আত্মহত্যা করি”

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহর জুড়ে অসুখী মানুষের দল
আমাদের ছুটির দিনটা পুরোটাই গিলে খেলো নতুন সরকারী প্রজ্ঞাপনটা ।


প্রজ্ঞাপনের শিরোনাম শুনেই চমকে উঠলাম আমরা, অনলাইন পত্রিকাগুলোর মত ভুয়া কোনও খবর ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম বটে, কিন্তু বেশিক্ষণ সেই ভ্রান্তি থাকলো না । চোখ কচলে আবার দেখালাম আমরা, নাহ ঠিকই আছে, প্রজ্ঞাপনের শিরোনামে বড় করে লেখা, "আসুন , আগামি শনিবার আমরা দলে দলে আত্মহত্যা করি" । আমরা বিস্মিত হই । আমরা রুদ্ধশ্বাসে পড়তে থাকি, সরকারী ভাষা নয় যেন কোনও কবির অত্যন্ত আবেগিয় ভাষায় বর্ণিত শব্দমালা । " আজ জাতি আজ চরম ক্রান্তিকালে উপস্থিত । যেদিকে দেখা যায় হাহাকার হাহাকার আর হাহাকার । কারও দরিদ্রতার হাহাকার কারও সব পাওয়ার হাহাকার, কারও আবার সব পেয়ে কিছু না পাওয়ার হাহাকার । এই হাহাকারের পেছনে ছুটে ছুটে প্রতিটা মানুষ পরিণত হচ্ছে ব্যর্থ মানুষে । বেড়ে যাচ্ছে ব্যর্থ জীবনের জঞ্জাল, ব্যর্থ মানুষের স্তূপ । এই হাহাকারভরা স্তূপ এখন পৌঁছে গেছে সর্বোচ্চ স্তরে । সরকার অনুভব করছে, এইভাবে ব্যর্থ মানুষ টেনে নিয়ে যাওয়া মানে রাষ্ট্রের ক্ষয় । এমনিতেই বিপুল পরিমাণ মানুষের বোঝা সরকারের কাঁধে, সেখানে যুক্ত হওয়া ব্যর্থ মানুষের মিছিল দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে দারুনভাবে । একজন ব্যর্থ মানুষের পেছনে যে খরচ সেটি অন্য কোথাও বিনিয়োগ করলে এই দেশের অপার সম্ভবনা পাবে ঝড়ের গতি । এই গিজগিজে মানুষের দেশে লোকসংখ্যা কমিয়ে ফেলাই হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ । তাই যারা ব্যর্থ, কাউকে আর কিছু দিতে পারছেন না, তারা নিজের জীবনের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন । দেশের তরে জীবন দিন । আগামি শনিবার আত্মহত্যা করুন , দেশকে সামনে এগুতে সাহায্য করুন" ।


সবার আগে প্রতিক্রিয়া দেখালো টেলিভিশন চ্যানেলগুলো । মুহূর্তের মধ্যে প্রতিটি চ্যানেলে হাজির হয়ে গেলেন শহরের সেরা কিছু কথা বিক্রেতা । উত্তেজিত ভঙ্গিতে একে অপরের মুণ্ডপাত করতে লাগলেন । কে কি বলছে কেনও বলছে কার জন্য বলছে কে জানে । চ্যানেল নাক-কান-গলা খুলে বসলো, রিয়ালিটি শো, কে হতে চায় প্রথম আত্মহত্যাকারি স্পন্সরড বাই শেষ বিদায় স্টোর । পিছিয়ে থাকলো না রেডিও স্টেশনগুলো । আরজে'রা একটু পর পর বলে উঠলো, আপনি কি এই প্রজ্ঞাপনের সাথে একমত ? হ্যাঁ হলে ওয়াই লিখে আর না হলে এন লিখে পাঠিয়ে দিন আমাদের নাম্বারে । এখন পর্যন্ত হ্যাঁ ভোট এগিয়ে আছে বিপুল ব্যবধানে । আর দেরি নয়, এখনই আপনি পাঠিয়ে দিন আপনার মতামত । ততক্ষণে আমরা শুনে ফেলি ইয়ো ইয়ো মধু মিয়াঁর মরমী সঙ্গীত, এই দুনিয়া পিতলদি ! ঝড় উঠলো সামাজিক মাধ্যমে , ফেসবুকে খোলা হলো ইভেন্ট, "মরতে দে, নাহলে মাইরালা" । সেটার জবাবে আরেকটা ইভেন্ট খোলা হলো, আমার জীবন আমি দেবো যখন খুশি তখন দেবো ! বিরোধী দল প্রতিক্রিয়া দেখালো একটু দেরীতে । লম্বা বিবৃতিতে তারা জানালো , " দেশের এই বিপদের কথা আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম । তাই আমরা পেট্রোল বোমা দিয়ে মেরে মানুষ মেরে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলাম । কিন্তু এই জালিম সরকার বিরোধী দলের সাফল্ল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের সাফল্ল্যকে নিজেদের দিকে টেনে নিতে আজ নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে । কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগন আমাদের সাথে আছে । তারা পেট্রোলে পুড়ে মরবে কিন্তু আত্মহত্যা করবে না " । আমরা কেবল বিস্মিত হই । চা'এর দোকানে বেড়ে চলে ভিড়, কোলাহল । অপরিচিত মানুষ আপন হয়ে যায় মুহূর্তেই । কিন্তু কারও মুখে প্রশান্তি নেই, সমাধান নেই । বিভ্রান্তি বেড়ে চলে অবিরাম । আমরা কি ব্যর্থ ? আমরা কি মরে যাবো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে ? আচ্ছা, ব্যর্থ মানুষের সংজ্ঞা কি?

প্রিয় ঘাসফুল...

তুমি জানো আমি সবদিক থেকেই একজন ব্যর্থ মানুষ । নাহ, ভ্রু কুঁচকানোর কিছু নেই । ব্যর্থ মানুষের বলার মতো কোনও গল্প থাকে না । আমারও নেই । তাই আমি রাজপুত্রের গল্প বলি, অচেনা তেপান্তরের গল্প বলি । যেসব গল্পে আমি কোনোদিন ছিলাম না, কোনোদিন থাকবোও না । আমার সব গল্পই হবে হাহাকারের গল্প, হারিয়ে ফেলার গল্প । তোমার গল্পটা হারিয়ে ফেলার গল্পও না । যা কোনোদিন ছিলই আমার, তা আবার হারাই কিভাবে! জানো মেয়ে, তুমি মানে হিসেব নেই, কোনও ভাগশেষ নেই । অথচ কোথায় যেন অনিঃশেষ এক গভীরতা পরে রয়েছে তোমার নামে । তুমি মানে স্রেফ ভেসে যাওয়া অজস্র স্রোতের টানে, অথচ কোনও পিছুটান নেই কোথাও । তাই শেষমেষ তুমি আমি তুমি দুটি ব্যাখাহীন শব্দের চিঠি হয়ে রই, পোস্ট হয়ে হয়ে গেছে এক ভুল সময়ে, ঠিকানা ছাড়াই ।


আর সব ব্যর্থ মানুষের মতোই হতে পারতো আমার খুব প্রিয় শব্দযুগল । ভাবতে ইচ্ছে করে তুমি চৌকিদারের বাঁশি হতে পারতে, আমার নির্ঘুম রাতগুলো কেটে যেতো তুমিও জেগে আছো এই শুনে । ভাবতে ইচ্ছে করে তুমি ছোট্ট একটা নীলচে দেওয়াল হতে পারতে , আমার রৌদ্রবেলা কেটে যেতো কোথাও আমার অবসর আছে এই ভেবে । ভাবতে ইচ্ছে করে খুব, তুমি কখনও না পৌঁছানো একটা ট্রেন হতে পারতে, আমি নাহয় এক স্টেশনেই কাটিয়ে দিতাম পুরোটা জীবন কোথাও আমার অপেক্ষা আছে জেনে । কিন্তু কিছুই হয়না, হয়না বলেই মাঝে মাঝে মনে আমি শুয়ে আছি আছি একা এক বিশাল বরফে ঢাকা কাঁচের ঘরে । আর আমার সমস্ত অপরাধ, সব নির্বুদ্ধিতার শাস্তি হিসেবে, তুমি রয়ে যাও ঠিক কাঁচের ওপাশে ।


তোমাকে চেয়েছি এর চেয়ে আনন্দময় আর কিছু নেই আমার জীবনে । তুমি আমার নও এরচেয়ে দুঃখময়ও কিছু নেই আমার কাছে । বলতে পারো কি নাম আছে এমন অনুভূতির ? বলতে পারো কোথায় গেলে ইচ্ছে করবে আবার সুখী হতে?

শহর জুড়ে অসুখী মানুষের দল (২)

"আপনার ঘর আছে, বাড়ি আছে, অথচ আপনি সুখী না । বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে করে না আপনার । আপনি ভেবে দেখেছেন কি যদি আপনার এই অনিচ্ছাকৃত জীবনের পেছনে যে খরচটুকু হচ্ছে সেই অর্থে আমরা একটা গরিব শিশুর মুখে খাবার তুলে দিতে পারি ? একজন সম্বলহীনকে বাড়ি তুলে দিতে পারি ? ভেবে দেখেছেন কি আপনি যে জীবনটা অপচয় করছেন, আমার সুখ নেই কেনও বলে, সেই জীবনের বিনিময়ে কারও চোখে জলতে পারে আলো, সুস্থ হতে পারে কারও হৃদপিণ্ড, কারও লিভার? " প্রধানমন্ত্রী চোখ মোছেন , আমরাও আবেগ আক্রান্ত হয়ে পড়ি । "আপনার পেছনে দৈনিক কত বিনিয়োগ হচ্ছে, অথচ এই বিনিয়োগ আমরা কোনও অর্থকরী খাতে বিনিয়োগ করি তাতে আমরা অল্পদিনেই হয়ে উঠতে পারি উন্নত দেশের একটি । এরপরেও যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না , তারা জেনে রাখুন, আপনার আত্মদান বৃথা যাবে না । আপনার নাম স্মরণীয় করে রাখা হবে কোনও না কোনওভাবে । কোথাও না কোথাও যেনও মানুষ আপনাকে স্মরণ করে আমরা সেই ব্যবস্থা আমরা করবো । আপনাকে দেওয়া হবে বীরের মর্যাদা , নামজাদা সব পদক । এছাড়াও আপনার আত্মদান যেনও বৃথা না যায় সে জন্য আপনার উপরে যে বিনিয়োগ আমরা করতাম তার একটা অংশ আমরা আপনাদের পরিবারকে দান করবো । আপনার পরিবার যেমন এতে উপকৃত হবে তেমনি তারা আপনার দেশপ্রেমে গর্ববোধ করবে ।" প্রধানমন্ত্রী চোখ মোছেন । আমরাও চোখ মুছি । "হে দেশপ্রেমিক দেশবাসী, আপনারা যেন আত্মদানে কোনওপ্রকার কষ্ট না পান বা কোনও অতৃপ্তি না থাকে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা করবো সর্বাধিক আরামদায়ক মৃত্যুপদ্ধতি । এছাড়াও স্বেচ্ছায় মৃত্যু পদ্ধতি বেছে নিতে চাইলে থাকছে তারও সুযোগ । যদি কেউ পেট্রোলবোমায় মরতে চান তবে তাকে সেভাবেই মরতে দেওয়া হবে, কেউ ঘুমের অসুধ খেয়ে মারা যেতে চাইলে তাই । এমন সুযোগ আর কেউ কি পেয়েছে কোনওকালে ? তাই প্রিয় দেশবাসী, দেশসেবার এমন সুযোগ হেলায় হারাবেন না । আসছে শনিবার দেশের জন্য আত্মহত্যা করুন । নিজের জীবনকে , নিজের মৃত্যুকে মহিমান্বিত করুন । " আমাদের বুকের ভেতরে দেশপ্রেম উথলে ওঠে, আমরা আকাশ কাঁপিয়ে হাততালি দেই ।

প্রিয় ঘাসফুল... (২)


জানো, আমাদের শহরে শুরু হয়েছে দেশপ্রেমের উৎসব । দলে দলে লোকজন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে । দেশের উন্নতির জন্য সরকারের আহবানে সাড়া দিচ্ছে মানুষ । সবাই যে দেশপ্রেম দেখাচ্ছে তাও না । আমাদের জহীর, বেকার জীবনের উপরে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে মরবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে । বলছে, এই সুযোগ, মরে বীরও হলাম আবার বেকার জীবন থেকেও মুক্তি পেলাম । আর বাবলু স্ত্রী- পরিবারের উপরে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক আগে থেকেই মরবে বলে ঠিক করে রেখেছিলো, এইবার সুযোগ পেয়ে, ও ও ঠিক করেছে মহান আত্মত্যাগী হবে । আর আমি ? আমিও নাম লিখিয়েছি, তোমাকে পাওয়ার আশায় । অবাক হচ্ছো ? এই জীবনে তোমায় নাইবা পেলাম, অন্য জীবনে যদি পাই ! আর সহস্র বছর পর অন্য কোথাও অন্য কোনও সময়ে যদি তুমি চৌকিদারের বাঁশি হও আমি ঠিক জাগবো রাত তোমার সাথে । যদি তুমি নীল দেওয়াল হও, সব ক্লান্তি ফুরালে ঠিকই ফিরবো ঘর । তুমি যদি কখনও না পৌঁছানো ট্রেন হও আমিও ঠিক স্টেশনে বসে রবো দিন রাত্রি অঝোর সময়কাল । সেবার আমার অনেক অনেক গল্প থাকবে , অনেক শব্দের চিঠি থাকবে । তোমায় আমি পড়ে নেবো , হিসেব করেই বুঝে নেবো ।

পাগলামো মনে হচ্ছে ? হোক না । শেষমেশ কাটাকুটি করে ভাগফল কিংবা ভাগশেষ একই জায়গায় এসেই তো মিলে যায় । কিংবা কোথাও মেলে না । দুইটি আলাদা তারা, আলাদা যাদের ছায়াপথ, তাদের আকাশ এক হলেও তারা কখনও মিলেমিশে চলতে পারে না । তারচেয়ে বরং এই হোক । এইটুকু স্বার্থপরতা করলামই নাহয় । আমার অনেক অপরাধের মতো, আরেকবার ক্ষমা করে দিও । এই জন্মের সব অপরাধ, পরের জন্মে পুষিয়ে দিবো । এবার শুধু ক্ষমা করো......

যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ...

আজ শনিবার । আত্মহত্যা দিবস । এক নীল তাঁবুর নীচে জড়ো হয়েছি আত্মত্যাগী 'দেশপ্রেমিক' মানুষেরা । তাঁবুটা জনসম্মুখ থেকে একটু আড়ালে । বাইরের শব্দ পাওয়া যায় কিন্তু বাহির থেকে ভিতরে কিংবা ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যায়না । আমি গলা উঁচিয়ে আশেপাশে তাকাই । পরিচিত কেউ কি চোখে পরে? জহির আসবে না জানি, একটা স্কলারশিপ হয়ে গেছে ওর, ও এখন বিদেশে গিয়ে দেশের সেবা করতে চায়, আত্মহত্যা করলে দেশের উপকার হবে এই থিওরি আর সে বিশ্বাস করে না । বাবলুও আসবে না । যে পরিবারের উপরে সে চরম বিতৃষ্ণ হয়েছিলো, হঠাৎ ওর মনে হয়েছে, নাহ পরিবারকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার দরকার । নাহলে বড্ড অন্যায় হয়ে যাবে তাদের প্রতি । তাই বলে অপরিচিত সবাই তা নয় , কাউকে কাউকে চিনতে পারলাম । সাদা পাঞ্জাবী পরা মাঝবয়সী ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো রাস্তায় । হঠাৎ রাস্তায় হাত চেপে ধরে বলেছিলো, তার মেয়েটা পড়াশুনা শেষ করতে পারছে না টাকার অভাবে । মেয়েটার পড়া শেষ হলেই একটা চাকরি হবে, ফুরাবে দুঃখ কষ্টের দিন । সামান্য কিছু টাকা সাহায্য চেয়েছিলেন ভদ্রলোক, এসব ব্যাপার এড়িয়ে যেতে হয় মিথ্যা কথা ভেবে , আমিও হাতটা ঝাঁকুনি দিয়ে সরে গিয়েছিলাম, সরে যাওয়ায় নিয়ম । চিনলাম এক পা'ওয়ালা রিকশাওয়ালাকে । একটা কৃত্রিম পায়ের জন্য টাকা জমাচ্ছিলো সে । দুটো পা হলেই আয় রোজগার বাড়বে এই আশায় । এক কোনায় বসে মুখ লুকাতে ব্যস্ত মেয়েটাকেও চিনলাম । না চেনার কারণ নেই, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কল্পনা করে কতদিন সরস হয়েছে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডা । বড় বেশি সুন্দর ছিলো মেয়েটা, সেটাই তার জন্য কাল হবে কে জানতো । হঠাৎ মনে হলো এখানে যারা আসেছে কেউই স্বেচ্ছায় দেশপ্রেম দেখাতে আসেনি । অথচ বাহিরে তাদের তাদের নামেই উৎসব । জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ , সরকারী দল, বিরোধী দল । দেশপ্রেমী মানুষগুলোকে দেখার বিপুল আগ্রহ নিয়ে । মাইকে সরকারী কর্মকর্তারা একে একে নাম ঘোষণা করছে আর সরকারী দলের লোকজন তীব্র হর্ষধ্বনিতে গুণগান করছে তার । অথচ প্রতিটা নাম শোনার সাথে সাথে শিটকে যাচ্ছে লোকজন, হর্শধনিতে শিউরে উঠছে । কারও মুখে ক্ষীণ সুখ নেই, আলো নেই । বাহিরে কোনও মহান নেতা, তীব্র আবেগে, আত্মদান প্রকল্পের সফলতা বর্ননা করছেন, " আমাদের মতো মহান জাতির পক্ষেই সম্ভব এমন আত্মত্যাগ করা । এইভাবেই সারা বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিবো আমরাও পারি । আজ সর্বাধিক সংখ্যক আত্মহত্যাকারী দেশ হিসেবে আমাদের নাম উঠতে যাচ্ছে রেকর্ড বুকে।" উল্লাসে ফেটে পড়ে বাহিরের মানুষ, ভেতরের মানুষেরা আর শিটকে যায় । আমি মেয়েটার দিকে তাকাই । তারও কি স্বপ্ন ছিলো কোনও ঘোড়ায় চড়া রাজকুমারের? একটা ছোট্ট হলদেটে সংসারের আর নীল দেওয়ালের ? বাহিরে আবার কারও নাম ঘোষণা হয়, বলা হয় তার আত্মত্যাগকে কতভাবে পুরস্কৃত করা হবে , তার নামে জয়ধ্বনি হয় । হঠাৎ খুব চাপাস্বরে ফোঁপানির আওয়াজ শুনি । কারও হয়তো মনে পরে গেছে বালিশের নীচে গোলমেলে হিসেবের জীবনের কথা । আমার আর খুঁজে দেখতে ইচ্ছে করে না, কিছু শুনতে ইচ্ছে করে না । আমি বরং তোমার কথা ভাবি ।


অনেক বছর পর, সহস্র কিংবা তারও বেশি, যখন আবার আমি জন্ম নিবো, তখন তুমি আমাকে চিনতে পারবে তো ?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১৪
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×