শহর জুড়ে অসুখী মানুষের দল
আমাদের ছুটির দিনটা পুরোটাই গিলে খেলো নতুন সরকারী প্রজ্ঞাপনটা ।
২
প্রজ্ঞাপনের শিরোনাম শুনেই চমকে উঠলাম আমরা, অনলাইন পত্রিকাগুলোর মত ভুয়া কোনও খবর ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম বটে, কিন্তু বেশিক্ষণ সেই ভ্রান্তি থাকলো না । চোখ কচলে আবার দেখালাম আমরা, নাহ ঠিকই আছে, প্রজ্ঞাপনের শিরোনামে বড় করে লেখা, "আসুন , আগামি শনিবার আমরা দলে দলে আত্মহত্যা করি" । আমরা বিস্মিত হই । আমরা রুদ্ধশ্বাসে পড়তে থাকি, সরকারী ভাষা নয় যেন কোনও কবির অত্যন্ত আবেগিয় ভাষায় বর্ণিত শব্দমালা । " আজ জাতি আজ চরম ক্রান্তিকালে উপস্থিত । যেদিকে দেখা যায় হাহাকার হাহাকার আর হাহাকার । কারও দরিদ্রতার হাহাকার কারও সব পাওয়ার হাহাকার, কারও আবার সব পেয়ে কিছু না পাওয়ার হাহাকার । এই হাহাকারের পেছনে ছুটে ছুটে প্রতিটা মানুষ পরিণত হচ্ছে ব্যর্থ মানুষে । বেড়ে যাচ্ছে ব্যর্থ জীবনের জঞ্জাল, ব্যর্থ মানুষের স্তূপ । এই হাহাকারভরা স্তূপ এখন পৌঁছে গেছে সর্বোচ্চ স্তরে । সরকার অনুভব করছে, এইভাবে ব্যর্থ মানুষ টেনে নিয়ে যাওয়া মানে রাষ্ট্রের ক্ষয় । এমনিতেই বিপুল পরিমাণ মানুষের বোঝা সরকারের কাঁধে, সেখানে যুক্ত হওয়া ব্যর্থ মানুষের মিছিল দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে দারুনভাবে । একজন ব্যর্থ মানুষের পেছনে যে খরচ সেটি অন্য কোথাও বিনিয়োগ করলে এই দেশের অপার সম্ভবনা পাবে ঝড়ের গতি । এই গিজগিজে মানুষের দেশে লোকসংখ্যা কমিয়ে ফেলাই হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ । তাই যারা ব্যর্থ, কাউকে আর কিছু দিতে পারছেন না, তারা নিজের জীবনের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন । দেশের তরে জীবন দিন । আগামি শনিবার আত্মহত্যা করুন , দেশকে সামনে এগুতে সাহায্য করুন" ।
৩
সবার আগে প্রতিক্রিয়া দেখালো টেলিভিশন চ্যানেলগুলো । মুহূর্তের মধ্যে প্রতিটি চ্যানেলে হাজির হয়ে গেলেন শহরের সেরা কিছু কথা বিক্রেতা । উত্তেজিত ভঙ্গিতে একে অপরের মুণ্ডপাত করতে লাগলেন । কে কি বলছে কেনও বলছে কার জন্য বলছে কে জানে । চ্যানেল নাক-কান-গলা খুলে বসলো, রিয়ালিটি শো, কে হতে চায় প্রথম আত্মহত্যাকারি স্পন্সরড বাই শেষ বিদায় স্টোর । পিছিয়ে থাকলো না রেডিও স্টেশনগুলো । আরজে'রা একটু পর পর বলে উঠলো, আপনি কি এই প্রজ্ঞাপনের সাথে একমত ? হ্যাঁ হলে ওয়াই লিখে আর না হলে এন লিখে পাঠিয়ে দিন আমাদের নাম্বারে । এখন পর্যন্ত হ্যাঁ ভোট এগিয়ে আছে বিপুল ব্যবধানে । আর দেরি নয়, এখনই আপনি পাঠিয়ে দিন আপনার মতামত । ততক্ষণে আমরা শুনে ফেলি ইয়ো ইয়ো মধু মিয়াঁর মরমী সঙ্গীত, এই দুনিয়া পিতলদি ! ঝড় উঠলো সামাজিক মাধ্যমে , ফেসবুকে খোলা হলো ইভেন্ট, "মরতে দে, নাহলে মাইরালা" । সেটার জবাবে আরেকটা ইভেন্ট খোলা হলো, আমার জীবন আমি দেবো যখন খুশি তখন দেবো ! বিরোধী দল প্রতিক্রিয়া দেখালো একটু দেরীতে । লম্বা বিবৃতিতে তারা জানালো , " দেশের এই বিপদের কথা আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম । তাই আমরা পেট্রোল বোমা দিয়ে মেরে মানুষ মেরে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলাম । কিন্তু এই জালিম সরকার বিরোধী দলের সাফল্ল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের সাফল্ল্যকে নিজেদের দিকে টেনে নিতে আজ নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে । কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগন আমাদের সাথে আছে । তারা পেট্রোলে পুড়ে মরবে কিন্তু আত্মহত্যা করবে না " । আমরা কেবল বিস্মিত হই । চা'এর দোকানে বেড়ে চলে ভিড়, কোলাহল । অপরিচিত মানুষ আপন হয়ে যায় মুহূর্তেই । কিন্তু কারও মুখে প্রশান্তি নেই, সমাধান নেই । বিভ্রান্তি বেড়ে চলে অবিরাম । আমরা কি ব্যর্থ ? আমরা কি মরে যাবো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে ? আচ্ছা, ব্যর্থ মানুষের সংজ্ঞা কি?
প্রিয় ঘাসফুল...
তুমি জানো আমি সবদিক থেকেই একজন ব্যর্থ মানুষ । নাহ, ভ্রু কুঁচকানোর কিছু নেই । ব্যর্থ মানুষের বলার মতো কোনও গল্প থাকে না । আমারও নেই । তাই আমি রাজপুত্রের গল্প বলি, অচেনা তেপান্তরের গল্প বলি । যেসব গল্পে আমি কোনোদিন ছিলাম না, কোনোদিন থাকবোও না । আমার সব গল্পই হবে হাহাকারের গল্প, হারিয়ে ফেলার গল্প । তোমার গল্পটা হারিয়ে ফেলার গল্পও না । যা কোনোদিন ছিলই আমার, তা আবার হারাই কিভাবে! জানো মেয়ে, তুমি মানে হিসেব নেই, কোনও ভাগশেষ নেই । অথচ কোথায় যেন অনিঃশেষ এক গভীরতা পরে রয়েছে তোমার নামে । তুমি মানে স্রেফ ভেসে যাওয়া অজস্র স্রোতের টানে, অথচ কোনও পিছুটান নেই কোথাও । তাই শেষমেষ তুমি আমি তুমি দুটি ব্যাখাহীন শব্দের চিঠি হয়ে রই, পোস্ট হয়ে হয়ে গেছে এক ভুল সময়ে, ঠিকানা ছাড়াই ।
২
আর সব ব্যর্থ মানুষের মতোই হতে পারতো আমার খুব প্রিয় শব্দযুগল । ভাবতে ইচ্ছে করে তুমি চৌকিদারের বাঁশি হতে পারতে, আমার নির্ঘুম রাতগুলো কেটে যেতো তুমিও জেগে আছো এই শুনে । ভাবতে ইচ্ছে করে তুমি ছোট্ট একটা নীলচে দেওয়াল হতে পারতে , আমার রৌদ্রবেলা কেটে যেতো কোথাও আমার অবসর আছে এই ভেবে । ভাবতে ইচ্ছে করে খুব, তুমি কখনও না পৌঁছানো একটা ট্রেন হতে পারতে, আমি নাহয় এক স্টেশনেই কাটিয়ে দিতাম পুরোটা জীবন কোথাও আমার অপেক্ষা আছে জেনে । কিন্তু কিছুই হয়না, হয়না বলেই মাঝে মাঝে মনে আমি শুয়ে আছি আছি একা এক বিশাল বরফে ঢাকা কাঁচের ঘরে । আর আমার সমস্ত অপরাধ, সব নির্বুদ্ধিতার শাস্তি হিসেবে, তুমি রয়ে যাও ঠিক কাঁচের ওপাশে ।
৩
তোমাকে চেয়েছি এর চেয়ে আনন্দময় আর কিছু নেই আমার জীবনে । তুমি আমার নও এরচেয়ে দুঃখময়ও কিছু নেই আমার কাছে । বলতে পারো কি নাম আছে এমন অনুভূতির ? বলতে পারো কোথায় গেলে ইচ্ছে করবে আবার সুখী হতে?
শহর জুড়ে অসুখী মানুষের দল (২)
"আপনার ঘর আছে, বাড়ি আছে, অথচ আপনি সুখী না । বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে করে না আপনার । আপনি ভেবে দেখেছেন কি যদি আপনার এই অনিচ্ছাকৃত জীবনের পেছনে যে খরচটুকু হচ্ছে সেই অর্থে আমরা একটা গরিব শিশুর মুখে খাবার তুলে দিতে পারি ? একজন সম্বলহীনকে বাড়ি তুলে দিতে পারি ? ভেবে দেখেছেন কি আপনি যে জীবনটা অপচয় করছেন, আমার সুখ নেই কেনও বলে, সেই জীবনের বিনিময়ে কারও চোখে জলতে পারে আলো, সুস্থ হতে পারে কারও হৃদপিণ্ড, কারও লিভার? " প্রধানমন্ত্রী চোখ মোছেন , আমরাও আবেগ আক্রান্ত হয়ে পড়ি । "আপনার পেছনে দৈনিক কত বিনিয়োগ হচ্ছে, অথচ এই বিনিয়োগ আমরা কোনও অর্থকরী খাতে বিনিয়োগ করি তাতে আমরা অল্পদিনেই হয়ে উঠতে পারি উন্নত দেশের একটি । এরপরেও যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না , তারা জেনে রাখুন, আপনার আত্মদান বৃথা যাবে না । আপনার নাম স্মরণীয় করে রাখা হবে কোনও না কোনওভাবে । কোথাও না কোথাও যেনও মানুষ আপনাকে স্মরণ করে আমরা সেই ব্যবস্থা আমরা করবো । আপনাকে দেওয়া হবে বীরের মর্যাদা , নামজাদা সব পদক । এছাড়াও আপনার আত্মদান যেনও বৃথা না যায় সে জন্য আপনার উপরে যে বিনিয়োগ আমরা করতাম তার একটা অংশ আমরা আপনাদের পরিবারকে দান করবো । আপনার পরিবার যেমন এতে উপকৃত হবে তেমনি তারা আপনার দেশপ্রেমে গর্ববোধ করবে ।" প্রধানমন্ত্রী চোখ মোছেন । আমরাও চোখ মুছি । "হে দেশপ্রেমিক দেশবাসী, আপনারা যেন আত্মদানে কোনওপ্রকার কষ্ট না পান বা কোনও অতৃপ্তি না থাকে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা করবো সর্বাধিক আরামদায়ক মৃত্যুপদ্ধতি । এছাড়াও স্বেচ্ছায় মৃত্যু পদ্ধতি বেছে নিতে চাইলে থাকছে তারও সুযোগ । যদি কেউ পেট্রোলবোমায় মরতে চান তবে তাকে সেভাবেই মরতে দেওয়া হবে, কেউ ঘুমের অসুধ খেয়ে মারা যেতে চাইলে তাই । এমন সুযোগ আর কেউ কি পেয়েছে কোনওকালে ? তাই প্রিয় দেশবাসী, দেশসেবার এমন সুযোগ হেলায় হারাবেন না । আসছে শনিবার দেশের জন্য আত্মহত্যা করুন । নিজের জীবনকে , নিজের মৃত্যুকে মহিমান্বিত করুন । " আমাদের বুকের ভেতরে দেশপ্রেম উথলে ওঠে, আমরা আকাশ কাঁপিয়ে হাততালি দেই ।
প্রিয় ঘাসফুল... (২)
জানো, আমাদের শহরে শুরু হয়েছে দেশপ্রেমের উৎসব । দলে দলে লোকজন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে । দেশের উন্নতির জন্য সরকারের আহবানে সাড়া দিচ্ছে মানুষ । সবাই যে দেশপ্রেম দেখাচ্ছে তাও না । আমাদের জহীর, বেকার জীবনের উপরে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে মরবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে । বলছে, এই সুযোগ, মরে বীরও হলাম আবার বেকার জীবন থেকেও মুক্তি পেলাম । আর বাবলু স্ত্রী- পরিবারের উপরে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক আগে থেকেই মরবে বলে ঠিক করে রেখেছিলো, এইবার সুযোগ পেয়ে, ও ও ঠিক করেছে মহান আত্মত্যাগী হবে । আর আমি ? আমিও নাম লিখিয়েছি, তোমাকে পাওয়ার আশায় । অবাক হচ্ছো ? এই জীবনে তোমায় নাইবা পেলাম, অন্য জীবনে যদি পাই ! আর সহস্র বছর পর অন্য কোথাও অন্য কোনও সময়ে যদি তুমি চৌকিদারের বাঁশি হও আমি ঠিক জাগবো রাত তোমার সাথে । যদি তুমি নীল দেওয়াল হও, সব ক্লান্তি ফুরালে ঠিকই ফিরবো ঘর । তুমি যদি কখনও না পৌঁছানো ট্রেন হও আমিও ঠিক স্টেশনে বসে রবো দিন রাত্রি অঝোর সময়কাল । সেবার আমার অনেক অনেক গল্প থাকবে , অনেক শব্দের চিঠি থাকবে । তোমায় আমি পড়ে নেবো , হিসেব করেই বুঝে নেবো ।
পাগলামো মনে হচ্ছে ? হোক না । শেষমেশ কাটাকুটি করে ভাগফল কিংবা ভাগশেষ একই জায়গায় এসেই তো মিলে যায় । কিংবা কোথাও মেলে না । দুইটি আলাদা তারা, আলাদা যাদের ছায়াপথ, তাদের আকাশ এক হলেও তারা কখনও মিলেমিশে চলতে পারে না । তারচেয়ে বরং এই হোক । এইটুকু স্বার্থপরতা করলামই নাহয় । আমার অনেক অপরাধের মতো, আরেকবার ক্ষমা করে দিও । এই জন্মের সব অপরাধ, পরের জন্মে পুষিয়ে দিবো । এবার শুধু ক্ষমা করো......
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ...
আজ শনিবার । আত্মহত্যা দিবস । এক নীল তাঁবুর নীচে জড়ো হয়েছি আত্মত্যাগী 'দেশপ্রেমিক' মানুষেরা । তাঁবুটা জনসম্মুখ থেকে একটু আড়ালে । বাইরের শব্দ পাওয়া যায় কিন্তু বাহির থেকে ভিতরে কিংবা ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যায়না । আমি গলা উঁচিয়ে আশেপাশে তাকাই । পরিচিত কেউ কি চোখে পরে? জহির আসবে না জানি, একটা স্কলারশিপ হয়ে গেছে ওর, ও এখন বিদেশে গিয়ে দেশের সেবা করতে চায়, আত্মহত্যা করলে দেশের উপকার হবে এই থিওরি আর সে বিশ্বাস করে না । বাবলুও আসবে না । যে পরিবারের উপরে সে চরম বিতৃষ্ণ হয়েছিলো, হঠাৎ ওর মনে হয়েছে, নাহ পরিবারকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার দরকার । নাহলে বড্ড অন্যায় হয়ে যাবে তাদের প্রতি । তাই বলে অপরিচিত সবাই তা নয় , কাউকে কাউকে চিনতে পারলাম । সাদা পাঞ্জাবী পরা মাঝবয়সী ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো রাস্তায় । হঠাৎ রাস্তায় হাত চেপে ধরে বলেছিলো, তার মেয়েটা পড়াশুনা শেষ করতে পারছে না টাকার অভাবে । মেয়েটার পড়া শেষ হলেই একটা চাকরি হবে, ফুরাবে দুঃখ কষ্টের দিন । সামান্য কিছু টাকা সাহায্য চেয়েছিলেন ভদ্রলোক, এসব ব্যাপার এড়িয়ে যেতে হয় মিথ্যা কথা ভেবে , আমিও হাতটা ঝাঁকুনি দিয়ে সরে গিয়েছিলাম, সরে যাওয়ায় নিয়ম । চিনলাম এক পা'ওয়ালা রিকশাওয়ালাকে । একটা কৃত্রিম পায়ের জন্য টাকা জমাচ্ছিলো সে । দুটো পা হলেই আয় রোজগার বাড়বে এই আশায় । এক কোনায় বসে মুখ লুকাতে ব্যস্ত মেয়েটাকেও চিনলাম । না চেনার কারণ নেই, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কল্পনা করে কতদিন সরস হয়েছে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডা । বড় বেশি সুন্দর ছিলো মেয়েটা, সেটাই তার জন্য কাল হবে কে জানতো । হঠাৎ মনে হলো এখানে যারা আসেছে কেউই স্বেচ্ছায় দেশপ্রেম দেখাতে আসেনি । অথচ বাহিরে তাদের তাদের নামেই উৎসব । জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ , সরকারী দল, বিরোধী দল । দেশপ্রেমী মানুষগুলোকে দেখার বিপুল আগ্রহ নিয়ে । মাইকে সরকারী কর্মকর্তারা একে একে নাম ঘোষণা করছে আর সরকারী দলের লোকজন তীব্র হর্ষধ্বনিতে গুণগান করছে তার । অথচ প্রতিটা নাম শোনার সাথে সাথে শিটকে যাচ্ছে লোকজন, হর্শধনিতে শিউরে উঠছে । কারও মুখে ক্ষীণ সুখ নেই, আলো নেই । বাহিরে কোনও মহান নেতা, তীব্র আবেগে, আত্মদান প্রকল্পের সফলতা বর্ননা করছেন, " আমাদের মতো মহান জাতির পক্ষেই সম্ভব এমন আত্মত্যাগ করা । এইভাবেই সারা বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিবো আমরাও পারি । আজ সর্বাধিক সংখ্যক আত্মহত্যাকারী দেশ হিসেবে আমাদের নাম উঠতে যাচ্ছে রেকর্ড বুকে।" উল্লাসে ফেটে পড়ে বাহিরের মানুষ, ভেতরের মানুষেরা আর শিটকে যায় । আমি মেয়েটার দিকে তাকাই । তারও কি স্বপ্ন ছিলো কোনও ঘোড়ায় চড়া রাজকুমারের? একটা ছোট্ট হলদেটে সংসারের আর নীল দেওয়ালের ? বাহিরে আবার কারও নাম ঘোষণা হয়, বলা হয় তার আত্মত্যাগকে কতভাবে পুরস্কৃত করা হবে , তার নামে জয়ধ্বনি হয় । হঠাৎ খুব চাপাস্বরে ফোঁপানির আওয়াজ শুনি । কারও হয়তো মনে পরে গেছে বালিশের নীচে গোলমেলে হিসেবের জীবনের কথা । আমার আর খুঁজে দেখতে ইচ্ছে করে না, কিছু শুনতে ইচ্ছে করে না । আমি বরং তোমার কথা ভাবি ।
২
অনেক বছর পর, সহস্র কিংবা তারও বেশি, যখন আবার আমি জন্ম নিবো, তখন তুমি আমাকে চিনতে পারবে তো ?