ধিক্কার এই নারীদেহ-কে; যার উপর পুরুষ-রূপী রাক্ষসের কামতাড়িত দৃষ্টিপাত হয়...যাদের উপস্থিতি চতুর্দিকে টের পেয়েও আমি তাদের মুখোশ খুলতে পারিনা, পারি কেবল চার-প্রস্থ ভারী কাপড়ে নিজের এই কামোদ্দীপক শরীরকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঢেকে রাখতে।
ধিক্কার আমার অসহায়ত্ব-কে; যখন চাইলেই রাস্তাঘাটে কোনও পশু আমায় গায়ের জোরে নাস্তার মত ভোগ করতে পারে। যার প্রতিবাদ করতে গেলে আমার মুখ চেপে ধরা হয় সামাজিক প্রতিকূলতায়। সারাজীবন জেনে এসেছি অত্যাচারের প্রমাণে শাস্তি হয় নিপীড়কের; কেবল আমার উপর নির্যাতনের দৃশ্যপ্রমাণ থাকলে শাস্তি পাব আমিই। কারণ আমার উপর নিপীড়ণের দৃশ্য কারো মনে আনন্দ-অনুভূতি জাগায়। আর নিপীড়িত হওয়ার "অপরাধে" সমাজ-সংসার থেকে চোরের মত মুখ লুকিয়ে গঞ্জনা সইতে হয় আমাকেই!! অত্যাচারীকে কেউ মনে রাখেনা, তার শাস্তি-বিধান হয় মারাত্মক শিথিল। কেবল আমার জীবন হয়ে যায় স্থবির, কলংকিত, নষ্ট!! আমি নিরপরাধ হয়ে অপরাধীর মত বেঁচে থাকি, নয়তো একদিন স্বেচ্ছামৃত্যুর আশ্রয় নিয়ে সমাজকে আমার-বোঝা বহনের হাত থেকে নিষ্কৃতি দেই।
ধিক্কার আমার মাতৃত্বকে, যখন কন্যাসন্তানকে আমি অন্যায়ের সাথে সমঝোতা করতে বলি "ঐ পশুদের পশুত্বে প্রতিবাদ করে লাভ নেই। বরং নিজেকে ওদের কাছ থেকে দূরে রাখো। গা-বাঁচিয়ে চলো! মেয়ে হয়ে জন্মেছ, নিজের শরীরটাকে তো আর গা-থেকে ফেলে দিতে পারবেনা!"
ধিক্কার আমার শিক্ষাকে; এই শিক্ষিত সমাজের একজন হয়ে চুপচাপ তাকিয়ে থাকি আর এই নরপশুদের নারকীয় পাপের প্রতিবাদ করতে পারিনা। পারিনা তাদের এই কার্যকলাপের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে। পারিনা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চিরজনমের জন্য বন্ধ করে দিতে। পারি কেবল শিক্ষার ওজনে ভারী জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দিতে; তাতে কার কী যায় আসে?
আমি আমার কলংকিত নারীজন্ম নিয়ে লজ্জিত!
৯ মাস রক্তক্ষরণের যূদ্ধে গর্বিত-স্বাধীণ আমার এই দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা নিয়ে আমি সন্দিহান!
আমি আমার ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিয়ে শংকিত!
আমি জানিনা, দেশের অগণিত বোদ্ধা কিংবা মাথা-উঁচু করে থাকা প্রশাসকরা, সমাজের প্রতিটা মানুষ এই লজ্জার দায়ভার নিজের কাঁধে নেবে কী না...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:১৮