আমার হলো দ্বিতীয় শ্রেণির কপাল। আর এই দ্বিতীয় শ্রেণির ভাগ্য নিয়ে আমি তৃতীয় সারির জীবন-যাপন করছি। বিশ্বাস না করার কোন কারণই নেই। চেহারা, পোশাক, জুতো থেকে শুরু করে আমার সবকিছুতেই এই ছাপ স্পষ্ট।
ভাগ্য নিয়ে খেদ বা হতাশা কোন কালেই ছিলনা এবং এখনও নেই। হতাশা আমার জীবনে কখনো দুই দিনের বেশি স্থায়ী হয়নি।
কিন্তু এই ভাগ্য মাঝে মাঝে বড় বেশি খেলা-ধুলা করে আমায় নিয়ে।
জীবনের কোন পরীক্ষায় আমি প্রথম হতে পারিনি। ইচ্ছে থাকলেও চেষ্টা করা হয়নি। শিক্ষাজীবনের শেষ পরীক্ষায় যখন অনেকটা স্বল্প চেষ্টাতেই প্রথম হওয়ার দূর্ভাগ্য লাভ করলাম ততদিনে উবে গেছে আমার প্রথম হবার ইচ্ছেটুকু।
আর এখানেই দ্বিতীয় বিভাগের খেল দেখিয়ে দিল ভাগ্য। সিভিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট যুক্ত হতেই চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্তারা সন্দেহের চোখে তাকান আর বলেন, ‘এই রেজাল্ট নিয়ে আপনি তো এখানে থাকবেননা। দুদিন বাদেই চলে যাবেন।’
প্রিয়জনেরা মুখ টিপে হাসে আর বলে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে সেকেন্ড ক্লাস জব, ভালোই তো।
আমার কৈশোরের স্বপ্নের পেশার পেছনে ছুটছি শুনে তারা অট্টহাসি দেয়। যেন আমি ‘পুটি মাছ পাইনা, তাই খাইনা’ টাইপ সেই কানা বগির ছা।
খাওয়া আর পাওয়ার খেলায় যখন খুন-ধর্ষণ,চুরি-ডাকাতির দুঃসংবাদগুলোকে মোহনীয় করে পাঠকের পাতে তুলি তখন আমারও ইচ্ছে করে জীবনানন্দের মত কোন বনলতা সেনের চুলের গন্ধ নিতে নিতে নরম বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিতে। যেখানে স্বপ্নগুলো প্রেমিকার চোখের দুশ্চিন্তার কথা জানান দেবেনা কিংবা দোকানের বাহারি জিনিস কেনার আগে পকেট চাপড়িয়ে নামতা আওড়াতে হবেনা।
...হয়না সেসব কিছুই হয়না। কারণ ঐ জীবনানন্দই।
‘‘ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয় –
আরো এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত ক্লান্ত করে ; ’’
ক্লান্ত আমি খুশি মনেই তাই যাপন করে যাই তৃতীয় সারির জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১:১৬