দেবু-কাহিনী-০৪
আজ একমাস পর আবার দেবুর পরীক্ষা। পরীক্ষার নাম বোটানী বোরিং। এই বিষয়টাকে শুধু ফালতু একটা বিষয় বলে মনে হয়। কি সব আজে বাজে গাছ গাছড়ার কথাবার্তা লিখে রেখেছে। আর একেক টা গাছের একেক রকম কুৎসিত নাম।
শুধু যে নাম গুলোই কুৎসিত তা না কিছু কিছু গাছের চেহারাও কুৎসিত। ফেয়ার এন্ড লাভলী কোম্পানী মনে হয় এদের কে আগে দেখেনি দেখলে হয়তো এসব গাছকেই তাদের কোম্পানীর ব্রান্ড এম্বাসেডর করতো। এর প্রধান কারন বাঙলিরা নতুন কিছু করো তে অভ্যস্ত। যাই হোক এবার বাদ দেয়া যাক এই গাছের কথা। এসব কুৎসিত গাছের চেয়েও মানসিক ভাবে কুৎসিত অনেক মানুষ দেবুর চেনা...
3 days earliar.......
তিন দিন পুর্বে দেবু লক্ষ্য করলো কিছু একটা মিসিং সে কাউকে অনেক দিন যাবৎ দেখছে না। কে হতে পারে? নাকি তার সৃমতি ভ্রম?। যাইহোক এবার কাহিনী পরিষ্কার। মারিয়া দেবু কে ব্লক করেছে....
দেবু কিছু মনে করলো না। কারন Out of side out of mind. হলো মারিয়ার বিখ্যাত উক্তি গুলোর একটি। যদিও এটা একটা প্রবাদ বাক্য। প্রথমে আনফ্রেন্ড তার পর ব্লক এরপর পারলে আরো অনেক কিছু এটাই স্বাভাবিক।
দেবু ব্যমাগারে ব্যায়াম করছে, না কিছুক্ষন আগের ব্যয়াম আর এখনকার ব্যয়াম এক নয়। ব্লক খবরে দেবু কিছু মনে না করলেও এবার তার ভাবের উদয় হচ্ছে। তখনকার দেবুর ভাবন্তর হলো এই রকম।
এই কে আমাকে ব্লক করেছে? মারিয়া? ওহ নো। ও কেন আমার সাথে এমন করবে? এর তো কোন মানে হয় না।
ডামবেল গুলোর আওয়াজ বাড়ছে। মালিক কাম ইন্সট্রাকটর এসে বলল কি ব্যাপার দেবুদা আজকে মেজাজ গরম নাকি? এত জোরে জোরে কাজ চলতেছে!!! নিচতলায় টাইলসের দোকান। ভাঙলে কিন্তু আমি শেষ..
দেবু মনে মনে ভাবছে...
ওহ নো শালার ইন্সট্রাকটর এখানে এসে এত ভ্যা ভ্যা করছে কেন? শালার মাথায় ডামবেল দিয়ে একটা বাড়ি দিলে কেমন হয়? কিইবা হবে শালার মাথায় একটা বাড়ি দিলে? না ডাম্বেল না পুরো ওয়েট মিরর টাই ওর মাথায় মারতে পারলে এই মুহুর্তে শান্তি পাওয়া যেত কিছুটা। আচ্ছা ওর মাথায় বাড়ি দিলে ওর অবস্থাটা কেমন হবে? ও ভ্যাউ করে একটা চিৎকার দিবে ও বাবাগো ও মাগো... আমি শ্যাষ.....
যাইহোক কয়েকদিন পর পরীক্ষা এখন একটু চুল আর দাড়ি না কাটালে পরিক্ষার হলের দারোয়ান দারোয়ান লাগবে। হয়তোবা দেবুকে পরীক্ষার হলে ঢুকতেই দিবে না। যাই হোক এখন সেলুনে যাওয়া যাক।
নাহ একা চুল কাটানোর কোন মানেই হয়না। জামাতের সাথে গেলে ভালো হয়। কাকে ফোন দেয়া যায়? আচ্ছা রুহুল পটলা আর রাজুর ঘরের রাজুকে ফোন দেয়া যাক। আর কাকে ফোন দেয়া যায়? রবি, নোমান কে ফোন দেয়া যাক।
রাত দশটা। দেবু ও তার বন্ধুরা সবাই সেলুনে সবার আগে দেবুর পালা। নরসুন্দর তার কাজ শেষ করার পর এবার আরেকজনের পালা।
আবার উঠলো মারিয়া পর্ব। দেবু চেপে যেতে চাইল। আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো এই কাহানী তারা ব্লকের খবর শুনে হাসতে লাগলো একজন তো একটা খারাপ কমেণ্ট করেই ফেলল। যদিও কেউই দেবুর মারিয়া কে খারাপ কমেন্ট করার সাহস পায়নি। কারন কারো ভালোবাসা নিয়ে বন্ধু মহলে রসাত্মক বা রগরগে আলোচনা দেবু ঘৃনা ভরে অপছন্দ করে এটা সবাই জানে..
দেবু বলল, আমার মারিয়া যতই খারাপ হোক তবুও আমার অনেক টা বাকা হোক ত্যাড়া হোক তবুও আমার টাইপের...
যে কথাটার জন্য দেবু বন্ধু মহলে সবচাইতে বেশী আলোচিত সেটা হলো "আমার মারিয়া"
যাইহোক কয়েকবার নিষেধ করল দেবু।
আমার মারিয়া কে নিয়ে আর একটা বাজে কথাও নয়। একপর্যায়ে চরম পর্যায়ে বাকবিতণ্ডা। চলে যায় রাজু। রইল বাকি তিন জন। যাইহোক এ তিনজন এবার ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করতে থাকে দেবু কে।
মেজাজ টা বিগড়ে যাচ্ছে দেবুর...
এই তুই আত্মহত্যা করতে পারবি? তোর "আমার মারিয়ার জন্য" বলে নোমান।
কথাটা হাসিচ্ছলে বললেও দেবুর প্রস্তাব টা পছন্দ হয়েছে। একবার চেষ্টা করলেই বা ক্ষতি কি? এবার দেবুর খুব রাগ হচ্ছে সে রাগ দমন করার জন্য বেঞ্চিতে শুয়ে পাড়লো। কেন কেন এই মেয়ে তাকে ব্লক করবে? কোন কারন ছাড়া।
আহ এবার আত্মহত্যা করার জন্য যথেষ্ট পরিমান রাগ তার হয়েছে এ আত্মহত্যার কারন কি হতে পারে? হ্যা এ আত্মহত্যার কারন হতে পারে মারিয়ার প্রশ্রয়। ও দেবুকে ভালোবাসে না ভালো কথা তাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো কেন?
হ্যা এর ও সহজ একটা সমাধান আছে। আমি আমার সব ফ্রেন্ডের সাথেই অনেক অনেক কথা বলি এই উত্তর টা দিয়ে মারিয়া সহজেই দায় এড়াতে পারে। কিন্তু না দেবু-মারিয়া সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে একটু বেশি ছিল বলেই আচ করা যায়।
তাদের সম্পর্ক টা ঠিক বন্ধুত্বেরও না আবার খুব কাছের ও না।
এমন অবস্থা যেন ঘুষের জন্য ফাইল আটকে দিয়েছে ঘুষখোর অফিসার । আর ভিক্টিম অসহায়ের মত দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে....
হঠাৎ বসা থেকে উঠে দাড়ালো দেবু ড্রয়ারে রাখা নরসুন্দর সাহেবের ক্ষুর খানা দিয়ে দিল এক পোচ ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে লাগ্লো গলা বেয়ে। নোমান পটলা রবি সবাই অবাক। সকলের প্রচেষ্টায় আত্মহত্যার দ্বিতীয় আয়োজন এখানেই বন্ধ।
রাত ১১. ৩০।
ঘুম জাতীয় কোন ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছিল হয়ত। তবে মেডিসিন প্রকৃতির কাছে ব্যার্থ। মস্তিষ্কের যে অংশ গুলো জেগে থাকলে মানুষ ঘুমাতে পারে না সে অংশ গুলো দৌড়াচ্ছে.. মনে হচ্ছে মাথার ভিতর ট্রেন যাচ্ছে আর আসছে...
ঝাপসা চোখে দেখা যাচ্ছে প্রফেসর সাহেব এসেছেন উনার পত্মীও এসেছেন দেবুকে দেখার জন্য। ইতিমধ্যে রাজুও উপস্থিত। ওর চোখ দিয়ে পানি পড়বে পড়বে ভাব। ও আচ্ছা প্রফেসর সাহেব সম্পর্কে বলা হয় নি।
উনি দেবুর বাবা। আল্লাহ ওয়ালাদের মাঝে এলাকায় উনি দ্বিতীয়জন বলে দেবুর ধারনা। কারন দেবুর মতে এলাকায় আল্লাহওয়ালাদের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার কারী মসজিদের ইমাম সাব। কারন আল্লাহ ঘরের খেদমত করা সবার ভাগ্যে থাকেনা।
প্রফেসর সাহেব কিছু একটা বলছেন। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেনা দেবু। কেমন মোটা মোটা কন্ঠ। যাই হোক।
আজকের পরীক্ষা দেবুর মোটামুটি ভালোই হল। পরীক্ষা শেষে সবাই খেলা নিয়ে ব্যাস্ত। এর মাঝে বিরোধ সাধলো রাজিব।
#দোস্ত আমিতো ঢাকা মেডিকেল যাবো, তুই যাবি আমার সাথে? ওরাও যাবে।
ঃ আচ্ছা চল যাওয়া যাক।
অবশেষে সাগর এল কোত্থেকে যেন লাফিয়ে লাফিয়ে।
(লাফিয়ে লাফিয়ে বা লাফাইয়া লাফাইয়া কথাটা বলা ছিল মারিয়ার মুদ্রাদোষ এর একটি। যেমনঃ আরে তোমার জন্য আজকে আমি লাফাইয়া লাফাইয়া ঘুম থেকে উঠে রওনা দিছি সেই সকালে। আইসা দেখি তুমি নাই। মেজাজটাই গরম। আচ্ছা হোয়াটেভার....)
= দোস্ত আমিও যাব।
ঃআচ্ছা চল।
প্রথমে ওরা গেল ঢামেক হাসপাতাল। সেখান থেকে বাদ। খবর পেল গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আছে। দে ছুট। সাগর গুলিস্তান চলে যাওয়ায় দুজন দুজন করে রিকশা নিল। হাসিব, রাজিব এক রিকশা আর সাব্বির, দেবু এক রিকশায়। রিকশা ভুতের গলি হয়ে ল্যাব এইড এর কিনারা ঘেষে ওয়ার্ল ইউনিভার্সিটির পাশ দিয়ে গ্রিন লাইফে পৌছালো। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি দেখে দেবুর ভেতর টা মোচড় দিল। কত টা সময় অপেক্ষার প্রহর গুনেছে এর আশে পাশে শুধু একবার মারিয়া কে দেখার জন্য।
যাইহোক অবশেষে যাত্রা বিরতি দেবুরা রোগীকে দেখতে পারল না। এত পরিমান কুপিয়েছে যে এখানেও রাখেনি। সোজা পঙ্গু হাসপাতাল।
আরে নির্বাচনের কোপাকুপি বলে কথা।
যাইহোক এবার হাটার পালা হাটতে হাটতে ফিরছে তারা এর মাঝে সাব্বিরের কৌতুক ছিল অসাধারন।
ভাইয়া দেখছো? লাইক
তুই ওকে টুত বললি? লাইক
তুই জানিস অক্সফোর্ড ..... লাইক.
অবশেষে দেবু বাসায় ফিরলো।
এই দিনে দেবু কয়েকজন বন্ধুর ব্যাবহারে মুগ্ধ হলো। সে মনে করত যে এরা তাকে কিছুই ভাবে না কিন্তু আসলে বিষয় টা Out of side, Out of mind এর কারনেই হয়েছে এটা বুঝতে বাকি রইল না...
দেবু ভাবছে আবার নতুন বন্ধুত্বের সুত্রপাত ঘটাবে যেখানে থাকবে না কোন কালিমা....
বন্ধু চিরন্তন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ৩:৩০