দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য
পানি যেমনি একান্ত প্রয়োজন. ঠিক
তেমনি পবিত্রতা হাসিলের জন্য ও
তা হচ্ছে প্রধান ও অন্যতম
উপকরাণ। যার মাধ্যমে মুসলমানগণ
সর্বপ্রকার নোংরা বা নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জন
করতঃ এক আল্লাহ্ পাক এর ইবাদত-
বন্দেগী করে থাকে। আল্লাহ্ পাক
বলেনঃ “এবং তিনি(আল্লাহ্ পাক),
তোমাদের পবিত্রতা সাধনের জন্য
আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন।“ এ পানি কত রকম হয় দেখাযাকঃ
হাদীস
শরীফে এশেছে “পানি সর্বদাই
পাক, যতক্ষণ তাতে নাপাক কিছু
পতিত হয়ে পানির গন্ধ, স্বাদ
এবং রং পরিবর্তন না করে। অথাৎ হাদীস শরীফ
আনুসারে পানির ৩ টি গুন
(১) গন্ধ, (২) স্বাদ এবং (৩) রং। পানি প্রথমত ৩ প্রকার
১. বদ্ধ পানি।
২. প্রবাহিত পানি।
৩. ব্যবহৃত পানি।
আন্য ভাবে পানি আবার ২ প্রকার
ক. বেশী পানি। খ. অল্প পানি। ১. বদ্ধ পানিঃ পানি যদি কম হয়
এবং স্হিয়, তাতে নাপাকী পতিত
হলে তা দ্বারা ওযু-গোসল জায়েয
হবে না। তবে এপ্রকার পানির
তিনটি গুণের (রং, স্বাদ, গন্ধ)
কোন একটি মওজুদ থাকলে, তা দ্বারা ওযু-গোসল জায়েয হবে।
২. প্রবাহিত পানিঃ আর পানি,
প্রবাহিত কিম্বা বেশী পানির হয়,
অর্থাৎ স্রোতের পানি অথবা এমন
বড় পুকুর কিম্বা হাউজ,
যা অন্ততঃপক্ষে ১০হাত দৈর্ঘ্য, ১০হাত প্রস্থ এবং কমপক্ষে এতটুকু
গভীর যে, কোশ
ভরে পানি উঠালে হাত
মাটিতে লাগেনা, এমন
পানিতে নাপাকি পতিত হলেও
তা পাক এবং তা দ্বারা ওযু-গোসল জায়েয হবে। তবে এ প্রকার পানির
তিনটি গুণের (রং, স্বাদ, গন্ধ)
যে কোন একটি নষ্ট হলে,
তা দ্বারা ওযু-গোসল জায়েয
হবে না।
৩. ব্যবহৃত পানিঃ আর ব্যবহৃত পানি, যা ওযু-গোসল সম্পন্ন করার সময়
শরীর থেকে নির্গত হয়। এ প্রকার
পানি নিজে পাক, কিন্তু অন্য কোন
নাপাক বস্তু পাক করতে পারে না।
অতএব ব্যবহৃত পানি যদি কোন
পানিতে পড়ে, আর তার পরিমাণ যদি সমান কিংবা বেশী হয়,
তবে সে পানি দ্বারা ওযু-গোসল
জায়েয হবে না। আর ব্যবহৃত পানির
পরিমাণ এর কম হলে জায়েয হবে। মাসায়েল:
* বৃষ্টির পানি, নদীর পানি, খাল-
বিলের পানি, ঝর্ণার পানি,
সমুদ্রের পানি,
পাতকুয়া বা পাকাকুয়ার
পানি এবং পুকুর ইত্যাদির পানিতে ওযু-গোসল জায়েয আছে,
তা মিঠা পানি হোক
কিম্বা লোনা পানি হোক।
* কোন ফল, গাছ
বা পাতা নিংড়ায়ে রস বের
করে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা জায়েয হবে না। তদ্রুপ
তরমুজের পানি, আখের বা খেজুরের
রস ইত্যাদি দ্বারাও ওযু-গোসল
জায়েয নেই।
* যে পানির সাথে কোন জিনিস
মিশ্রিত্র হওয়ায় বা তা দ্বারা কোন জিনিস
রান্না করায় এমন হয়েছে যে, এখন
লোকে তাকে পানি বলেনা, ওটার
অন্য নাম হয়ে গিয়েছে, এরুপ
পানি দ্বারা ওযু-গোসল জায়েয
নেই। যেমন- শরবত, শিরা, শুরবা, সিরকা, গোলাপ জল ইত্যাদি।
* যে পানির মধ্যে কোন পাক
জিনিস পড়ায় তার রং, গন্ধ
বা স্বাদ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে,
কিন্তু ঐ জিনিস ঐ
পানিতে রান্না করা হয়নি আর পানির তরলতা দুর হয়ে গাঢ়ও
হয়ে যায়নি। যেমন-
বর্ষাকালে নদীর পানির
সাথে বালু মিশ্রিত
হয়ে থাকে বা পানির
মধ্যে জাফরান পড়ে সামান্য কিছু রঙ্গিন
হয়ে গিয়েছে কিম্বা সাবান
বা অনুরুপ কোন জিনিস পড়েছে। এসব
পানির দ্বারা ওযু-গোসল জায়েয
হবে।
* যদি কোন জিনিস পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করায় পানির
রং, গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তন
হয়ে থাকে,
তবে সে পানি দ্বারা ওযু-গোসল
জায়েয হবে না। যদি এমন কোন
জিনিস সিদ্ধ করে থাকে যে তার দ্বারা ময়লা পরিস্কার করা হয়,
আর সে জিনিস সিদ্ধ করার
কারণে পানি গাঢ়ও হয়নি,
তবে সে পানির দ্বারা ওযু-গোসল
জায়েয আছে। যেমন- মুর্দাকে গোসল
দেয়ার জন্য কুলপাতা দিয়ে সিদ্ধ করা হয়ে থাকেম এতে কোন
ক্ষতি নেই। কিন্তু যদি পাতা এত
বেশী দেয় যে, পান গাঢ় হয়ে যায়,
তবে সে পানি দ্বারা ওযু-গোসল
জায়েয হবে না।
* পানিতে কাদা অথবা চুন পতিত হয়ে পানির গুন পরিবর্তন
হয়ে গেলে, যদি তরল থাকে ও
পানির অংশ বেশী থাকে, তবে ওযু-
গোসল জায়েয হবে। আর কাদার
ন্যায় গাঢ় হলে জায়েয হবে না।
দুধ মিশ্রিত পানির রং কিম্বা স্বাদ পরিবর্তন হলে,
তা দ্বারা ওযু-গোসল জায়েয
হবে না। আর যদি এত অল্প
পড়ে থাকে যে দুধের রং দেখা যায়
না, তবে জায়েয হবে।
* মশা মাছি, বোলতা-ভিমরূল, বিচ্ছু ইত্যাদি ধরনের
প্রাণী পানিতে মরে থাকলে বা বাইরে মরে পানিত
পড়লে, তাতে পানি নাপাক হয় না।
আর যেসব প্রাণী পানিতে পয়দা হয়
না, কিন্তু পানিতে বাস করে,
সে সব প্রাণী পানিতে মরলে বা বাইরে মরে পানিতে পড়লেম
পানি নাপাক হয়ে যায়।যেমন-
হাঁস, পানি কড়ি ইত্যাদি।
* যেসব
প্রাণী পানিতে জন্মে এবং পানিতেই
থাকে সেসব প্রাণী পানিতে মরলে তাতে পানি নাপাক
হয় না। যেমন- মাছ, ব্যাঙ, কচ্ছপ,
কাঁকড়া ইত্যাদি। ব্যাঙ শুকনার
হোক বা পানির হোক উভয়েরই একই
নিয়ম। ব্যাঙ, কচ্ছপ
ইত্যাদি পানিতে মরে, পঁচে, গলেও যায়, তবুও পানি পাক থাকবে।
তবে এরকম পানি পান
করা বা তা দ্বারা খাদ্য
পাকানো জায়েয হবে না। কিন্তু
ওযু-গোসল জায়েয আছে।
* শুকর ব্যতীত অন্যান্য মৃত জন্তুর পশম, শিং, হাড় এবং দাঁত পাক।
তা যদি পানিতে পড়ে,
পানি নাপাক হয় না। কিন্তু
যদি হাড় বা দাঁতে কিছু
চর্বি কিম্বা গোশত
লাগা থাকে এবং তা পানিতে পড়লে, পানি নাপাক হয়ে যাবে।
* রোদের কারণে পানি এত গরম হয়
যে, তা ব্যবহারে শ্বেতকুষ্ঠ রোগ
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,
তবে সে পানি ব্যবহার করা জায়েয
হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫০