somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তবুদ্ধি চর্চার ছত্রছায়ায় ইসলাম ও মুসলিম জাতিসত্তার বিরোধিতা কেন ?

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মাধ্যমে এদেশে আগ্রাসী হস্তক্ষেপকারী বৃটিশ-
খৃষ্টানদের সুদূর স্বপ্ন ইতিমধ্যেই অনেকটা বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে!
দ্বীনী শিক্ষাকে তাড়িয়ে দিয়ে তদস্থলে পাশ্চাত্যমুখী ইংরেজী শিক্ষাব্যবস্থা এদেশে প্রবর্তনকালে লর্ড
ম্যাকল বলেছিলেন – “আমরা ভারতবর্ষে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি – যা গ্রহণ করে এদেশের সন্তানরা রং ও বর্ণের দিক দিয়ে থাকবে যদিও ভারতীয়, কিন্তু ধ্যান-ধারণা ও মন-মস্তিষ্কের দিক দিয়ে তারা হবে সম্পূর্ণ বিলাতী (বৃটিশ খৃষ্টান)।” এদেশে লর্ড ম্যাকলের সেই ভবিষ্যদ্বাণীর চিত্রই যেন অহর্নিশ ফুটে উঠছে। বস্তুতঃ তদানীন্তনকালে উলামামে কিরাম
নিছক ইংরেজী শিক্ষাকে হারাম ফাতওয়া দেননি, হারাম ফাতওয়া দিয়েছিলেন ইংরেজী শিক্ষার ছত্রছায়ায় ইংরেজ বনে যাওয়াকে। তখন যদিও সেই
দৃষ্টিভঙ্গি বেখাপ্পা লাগছিল, কিন্তু তার ফলাফল দর্শনে আজ তার মর্ম
হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। মুসলিম বাঙ্গালী জাতির জন্য নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত যে, বলতে গেলে সেই ইংরেজী বিদ্যার সুবাদেই আজ জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র থেকে একদল মুসলমান নামধারণকারী নতুন প্রজাতির খৃষ্টান মস্তিষ্ক পয়দা হয়েছেন – যারা তাদের দেশীয় মুসলিম ঐতিহ্য ও বাপ-দাদার ধর্ম- কৃষ্টিকে সেকেলে আখ্যা দিয়ে এর উৎখাতে বিজাতীয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে লেগেছেন।
ধর্মের পক্ষের কোন দৃশ্য যেন তাদের চক্ষুশূল এবং ধর্মের পক্ষের কোন কথা যেন তাদের কর্ণরন্ধ্র। এক কথায়, ইসলামের নামই যেন তাদের গায়ে জ্বালা ধরায়। তাদের মধ্যে যারা মুসলমান দাবীদার, এদের মুসলমানিত্বে নাকি নামায- রোযার পাবন্দী, হালাল-হারামের বাছ-বিচার, জায়িয-নাজায়িযের ফাতওয়া সীমারেখা, কুরআন- হাদীস-শরীয়ত অনুসরণ ইত্যকার ঝঞ্জাল-ঝামেলা নেই! ওসব নাকি বাড়াবাড়ির মৌলবাদ আর ফতোয়াবাজী এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার বিরোধী! (নাউযুবিল্লাহ) এদের মুসলমানিত্বে শুধু রয়েছে নিজেদেরকে জোরেশোরে ধর্মের
স্বপক্ষ বলে ইজহার করা আর কার্যত মাঝে মধ্যে কিছু হস্ত প্রার্থনা প্রদর্শনী, হাফ পাঞ্জাবী-পাজামা ও টুপীর জড়াজড়ি, আর মরণ শেষে জানাযা ও কুলখানী, এই ব্যাস। এতটুকু সম্পাদনেই মুসলমানিত্বের কর্তব্য নাকি শেষ! এরপর যা ইচ্ছা বলো, যা খুশী করো, যেভাবে মর্জি চলো – তাতে ইসলামের চৌদ্দটা বাজলেও নাকি তাদের মুসলমানিত্ব বহাল- তবীয়ত থাকে! এর নাম নাকি তাদের ভাষায় মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র। আরো শংকা হলÑতাদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই নাস্তিকরূপে সগর্বে জাহির হয়েছেন, তাদের খড়গ হস্তে যেভাবে ইসলাম প্রহৃত বা লাঠি পেটা হচ্ছে, তাদের কলমের ধারালো খোঁচায় যেমন করে দ্বীন-ধর্মের রূহ-জেসেম বিদীর্ণ-ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, তাদের অঙ্গুলীর হিংস্র ইঙ্গিতে যে ধারায় ধর্মীয় কৃষ্টি- কালচার পদদলিত-নিষ্পেষিত হচ্ছে, তা বড়ই ভয়াবহ ব্যাপার। দেশের উলামায়ে কিরাম ও দ্বীনদার মুসলমানগণ দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি মনে প্রাণে চান, কিন্তু ক্ষুধার উপশমে রুটি বিতরণের পাশাপাশি বিষমিশ্রিত পানি পিয়ানোর মাধ্যমে প্রাণ হরণের নীলনকশা বাস্তবায়ন কোন্ সংজ্ঞায় “সেবা”? ধর্মবাহকগণ লেখার স্বাধীনতার বিরোধী নন, কিন্তু লেখার স্বাধীনতার উপর সওয়ার হয়ে দেশ-ধর্মের অস্তিত্বকে হুমকীর সম্মুখীন করা লেখার স্বাধীনতার কোন্ ধারা? ধর্মপ্রাণগণ বস্তুতঃ বাক স্বাধীনতার স্বপক্ষ সৈনিকই বটে, কিন্তু বাক স্বাধীনতার ভিসা নিয়ে দেশ-জাতি-ধর্মের আঙ্গিনায় বিপর্যয় ঘটানো সুদূর ষড়যন্ত্রের পরিচায়ক বৈকি! আশ্চর্যের বিষয় যে, কথায় কথায় তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির খল অভিনেতা সেজে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ইসলাম, উলামায়ে কিরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিপক্ষ ভূমিকায় স্থাপন করেন। এ ধৃষ্টতার সাহস তারা পেলেন কোত্থেকে? কে, কোন্ অপশক্তি তাদেরকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের স্বান্ত্রত্য ও স্বাধীনতার মূলে (যার স্বরূপ-ভিত্তি ছিল ইসলাম ও মুসলমান) আঘাত করে ইসলামী দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ
মুক্তিযোদ্ধা কাফেলাকে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী বলে মিথ্যা চিত্র লেপনের অপপ্রয়াসে ওয়াসওয়াস দেয়? এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের ধর্মপ্রাণ জনতার ধার্মিক সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের
ভাবমূর্তিকে অধর্মমূলক বিভ্রান্তির
করালস্রোতে প্রবাহনের অপচেষ্টা সেক্যুলার ফান্ডমেন্টালিষ্টদের প্রভূগুরু কর্তৃক দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে তাদের দূরভিসন্ধিপুষ্ট দীর্ঘলালিত নীলস্বপ্নের লীলাভূমির পথে পর্যবসিত করারই একটি ঘৃণ্য অপপ্রয়াস। আজ তাই জাতিকে সজাগ হতে হবে। দেশের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে হুঁশিয়ার হতে হবে। বিভেদ-প্রভেদের বিচ্ছিন্নতা-গ্লানি মুছে দেশ- ধর্মপ্রেমিক সকল নাগরিককে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ যুগের তাগূত, ফির‘আউন, আবু জাহ্ল, আবু লাহাব ও উতবাদের হিদায়াত কিংবা প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশের
অস্তিত্বের স্বার্থে, জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে ও দ্বীন-ধর্মের হিফাজতের স্বার্থে।

লেখক: মুফতী আবুল হাসান
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×