আমরা সকলেই অবহিত যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যাবস্হা সম্বলিত ধর্ম ।একজন মানুষের ইহকালীন প্রকৃত শান্তি ও কামিয়াবি এবং পরকালীন নাজাত ও মুক্তি একমাত্র রাসূল (সঃ) এর আনিত দ্বীন ধর্মের মধ্যেই সিমাবদ্ধ ও নিহিত ।কারণ একমাত্র ইসলাম ধর্মই আল্লাহ তালার নিকট মনোনীত ও গ্রহনযোগ্য ধর্ম ।ইসলাম ছাড়া অন্য কোন মত ও পথকে যে দ্বীন এবং ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করবে, তা আল্লাহ পাকের নিকট কখনো গ্রহনিয় নয়, বরং প্রত্যাখ্যাত।ইসলামী বিধি বিধান পালনে বাস্তব নমুনা এবং ধারক বাহক, প্রচার-প্রসারক এবং আল্লাহর সাথে বান্দাদের সম্পর্ক স্হাপনকারী দল হলেন আম্বিয়ায়ে কেরামের পবিত্র এবং নিস্পাপ জামাত ।এ ধারার সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হলেন নবীকুল শিরোমনি, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) ।নবীজির পর আর যেহেতু কোন নবীর আগমন ঘটবেনা তাই বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে নবীজি এ গুরুদায়িত্ব ভার অর্পণ করেন উপস্হিত সাহাবায়ে কিরামের উপর, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা নিজেই নবীজির সহচর হিসেবে নির্বাচিত করেছেন, পরবর্তীতে তাবেঈন এবং তাবে তাবিঈনের জামাত এ দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন ।এভাবে দ্বীন ইসলামের তাবলীগ এবং প্রচার প্রসারের কাজ ধারাবাহিক ভাবে আনঞ্জাম দেন স্ব স্ব যুগের আউলিয়ায়ে কিরাম, হক্কানী উলামায়ে কিরাম আকাবির ও আসলাফের জামাত, যারা যুগে যুগে হক্কের পতাকাকে উড্ডীন ও সুউচ্চ রাখতে গিয়ে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ ও বিলিন করে দিতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করেননি ।তথাপি তারা সত্য দ্বীন, ঈমান ও ইসলাম পালন থেকে এবং এর প্রচার প্রসার থেকে ক্ষণিকের জন্যেও পিছপা হননি এবং বাতিলের কাছে মাথা নত করেননি ওকোন প্রকার আপোষ করেননি ।এমনি ভাবেই তাদের কুরবানী আর ত্যাগের বিনিময়ে ইসলামের আলো সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে ।এমনকি আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশও ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসে ।অতঃপর দীর্ঘ আটশ থেকে সাড়ে আটশ বছর পর্যন্ত মুসলমানরা এই দেশ সুশাসনে রাখে ।বহু আউলিয়া, আবদাল, গাউস, কুতুব, আলিম উলামা, পীর মাশায়িখের জন্ম হয় এই উপমহাদেশে ।এক পর্যায়ে সপ্তদশ শতাব্দীর গোডার দিকেইংরেজরা এই দেশে আসে বণিকের বেশে ।তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে এই দেশের অঢেল ধন সম্পদের উপর ।অন্যদিকে মুসলিম শাসকদের পারস্পরিক কোন্দলের সুযোগে ধীরে ধীরে তারা এই দেশ দখল করতে শুরু করে,এমনকি ইংরেজ প্রভুদের পদলেহী কিছু এদেশিয় গাদ্দার আর মুনাফিকদের যোগ সাজশে এক এক করে মুসলিম শাসকদের তারা উৎখাত করে দেয় ।সর্বশেষ ১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতন ঘটিয়ে এবং ।তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে এদেশ সম্পূর্ণভাবে তারা নিজেদের করতল করে নেয় ।পরিণতিতে মুসলমানরা ইংরেজদের অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়নেরশিকার হয়ে নিঃস নিরীহ ও কোনঠাসা হয়ে পড়ে ।এক পর্যায়ে যখন মুসলমানদের পীঠ দেওয়ালেঠেকে যায়,তখন পুনরায় ফিরে আসে তাদের মধ্যে স্বাধীন ও আযাদী চেতনা ।সমগ্র উপমহাদেশ ব্যাপি দখলদার জালিম ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দানা বাধতে শুরু করে ।সর্বপ্রথম এদের বিরুদ্ধে যেই মর্দে মুজাহিদ ঐক্যবদ্ধ ।আন্দোলনের বীজ বপন করেন, তিনি হলেন সমকালিন বিশ্ব রাজনীতিবিদ, মুসলমানদের ত্রাতা, "ইমামুল হিন্দ, শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ)" ।পরবর্তীতে এই আন্দোলনের আরো বেগবান ও তিব্রতর করে এগিয়ে নেন তারই সুযোগ্য সূর্য সন্তান, সিরাজুল হিন্দ, "শাহ আব্দুল আজিজ (রহঃ)" ।১৮০৩ খৃষ্টাব্দে তিনি হানাদার ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়া জারী করেন ।রাজপথে ঘোষণা দেন এই দেশ "দারুল হারব্ বা শত্রু কবলিত দেশ",সুতরাং সমস্ত মুসলমানের উপর দেশকে উদ্ধার করতে এবং শত্রুমুক্ত করতে এদের বিরুদ্ধে জিহাদে ঝঁপিয়ে পড়া ফরজ, এই ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীতে সমগ্র দেশ ব্যাপী মুজাহিদ বাহিনী গঠন করতে শুরু করেন তারই যৌ গ্য উত্তরসূরী ও শীর্ষ, বীর মুজাহিদ, সৈয়দ আহমদ বেরলবী (রহঃ) ।এক পর্যায়ে এদের প্রত্যক্ষ মুকাবিলা হয় ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠী এবং তাদের দোসর ও চাটুকার শিখ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে১৮৩১ খৃষ্টাব্দে ঐতিহাসিক বালাকোট প্রান্তরে মুকাবিলা করেন বীর বিক্রমে ।অবশেষে শাহাদাতের অমৃত সুধা পান করেন তিনি এবং তার সহযোদ্ধা শাহ ইসমাঈল শহীদ দেহলবী (রহঃ) সহ অনেক বীর মুজাহিদীন, যেথায় আজো রক্ত আখরে লিখা আসে তাদের নাম ।এতদাসত্তেও থেমে যায়নি স্বাধীনতা আন্দোলনের সেই উৎসাহ উদ্দীপনা ও স্পৃহা, বরং পরবর্তীতে তা আরো তীব্র আকার ধারণ করে ।এক্ষেত্রে যারা অগ্রনি ভূমিকা পালন করেন এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দেনতাদের অন্যতম হলেন সাইয়্যেদুত তায়িফা, পীরানে পীর, হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ), আল্লামা কাসিম নানুতুবী (রহঃ), হাফেজ জামেন শহীদ (রহঃ), অল্লামা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহঃ) সহ প্রমুখ উলামায়ে কেরাম, যাদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে পুনরায় ইংরেজ হানাদারদের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং লড়াই সংঘঠিত হয় ১৮৫৭ সালে, যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে আখ্যায়িত হয় ।এ যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক পরাজয় হয় ।পরিণতিতে হাজার হাজার উলামা মাশায়িখ, দিনদার মুসলমানদেরকে নির্মম ভাবে ফঁাসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে শহীদ করে দেয় ইংরেজ জালিম গোষ্ঠী ।বহু আলেম ওলামাকে কালাপানিতে নির্বাসনে দেয় এবং অত্যন্ত করুন অবস্হায় সেখানে তাদের জীবন বাতি নির্বাপিত হয় ।পরিস্হিতির ভয়াবহতা এবং শোচনীয়তা চিন্তা করে ওলামায়ে কিরাম আন্দোলনের মোড় পরিবর্তন করেন ।কারণ একের পর এক যুদ্ধের কারণে মুজাহিদীন এবং হক্কানী আলেম ওলামার সংখ্যা নিশ্চিহ্ন এবং খতম হয়ে যাওয়ার আসংখ্যা দেখা দেয় ।যার কারণে তাদের সাথে সরাসরি মোকাবেলার সাথে সাথে একাডেমিক পদ্ধতিতে মুকাবেলা করারও সিদ্ধান্ত নেন ।অতঃপর গভীর চিন্তা ফিকির, গবেষণা ও পারস্পরিক শলা পরামর্শের পর ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন "দারুল উলুম দেওবন্দ" নামে এক ঐতিহাসিক ইলহামী বিদ্যাপীঠ ।যেখান থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বীদা বিশ্বাস শিক্ষা ও দীক্ষা গ্রহণ করে যুগে যুগে বেরিয়ে এসেছে ওয়ালী উল্লাহী ।
চলবে......
(২য় পর্বে সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৫৪