প্রচলিত কিছু খনার বচন:
১.
'দুই হাত অন্তর কলা রুয়ে
থাক গে চাষী মাচায় শুয়ে
কলা রুয়ে না কেটো পাত,
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত'
ব্যখ্যা: কলার পাতা তখন মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করত! কিন্তু খনা কলার পাতা না কাটতে বলে। কলার পাতা নাকাটা হলে প্রথমে ঝুলে পড়ে, পরে শুকিয়ে পঁচে যায়। তাতে মাটিতে সার হয়। এতে কলার ফলন ভালো হয়, অনেক লাভ হয়।
২.
'যদি বর্ষে পৌষে
কড়ি হয় তুষে
যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজার পূন্যি দেশ
যদি বর্ষে ফাগুনে
রাজা যায় মাগুনে'
ব্যখ্যা: এটা হলো যদি পৌষ মাসে বৃষ্টি হয়, তবে ভালো ধান হয় না, তুষ হয়ে যায়, তখন তুষ বেঁচেই টাকা আয় করতে হয়।
যদি মাঘের শেষে বৃষ্টি হয়, তাহলে অনেক ফসল ফলে।
যদি ফাল্গুনে বর্ষে, তাহলে রাজাকেও ভিক্ষা করতে হয়।
৩.
"আগারে দিয়ে দক্ষিণ পা।
যথা ইচ্ছা তথা যা।"
অর্থ হলো-- যে কোন স্থানে রওনা হতে প্রথমে ডান পা বাড়ালে সব অমঙ্গল দূর হয়।
৪.
পরের বাড়ির পিঠা
খাইতে বড়ই মিঠা।
একটা নোয়াখাইল্যা বচন:
৫.
"হাইদলে জামাই খায় না-
শেষে জামাই ভোঁতার লাগুর হায় না।"
অর্থ হলো--
হাইদলে --> সাধাসাধি করলে
ভোঁতা --> কাঠালের ভিতরের শক্ত অংশটা
লাগুর --> নাগাল পাওয়া
ব্যখ্যা:সাধারনত শ্বশুরবাড়িতে নতুন/পুরানো জামাইরা গেলে লজ্জা-টজ্জা পাওয়ার ভান করে থাকে। তো এক নোয়াইল্লা জামাই গেসে শ্বশুর বাড়িতে জোষ্ঠমাসে। বাড়ির সবাই কাঁঠাল খাচ্ছে। জামাই-বাবুকেও শালা-শালীরা খুব সাধাসাধি করতাসে খাওয়ার জন্য, মাগার জামাই লজ্জার চোটে খাইতে পারতাসে না। এদিকে খিদাও লাগসে। শেষে সবার খাওয়া শেষ হইলে পরে জামাই লুকাইয়া বাড়ির পিসনে গেসে যদি কাঁঠালের ২-১ টা কোয়া পাওয়া যায়-এই আশায়। যাইয়া দেখে কোন কোয়াতো নাই-ই বরং ভোঁতাটা পর্যন্ত রাস্তার কুকুর চিবাইয়া চিবাইয়া খাইতেসে।
উইকিসংকলন থেকে নেওয়া আরও কিছু প্রচলিত খনার বচন-
৬.
নদীর জল ঘোলাও ভালো,
জাতের মেয়ে কালোও ভালো
৭.
তেলা মাথায় ঢালো তেল,
শুকনো মাথায় ভাঙ্গ বেল।
৮.
মেয়ে নষ্ট ঘাটে,
ছেলে নষ্ট হাটে।
৯.
বিপদে পড় নহে ভয়
অভিজ্ঞতায় হবে জয়
১০.
উত্তর দুয়ারি ঘরের রাজা
দক্ষিণ দুয়ারি তাহার প্রজা।
পূর্ব দুয়ারির খাজনা নাই
পশ্চিম দুয়ারির মুখে ছাই।।
১১.
কপালে নাই ঘি,
ঠকঠকালে হবে কি!
১২.
নিজের বেলায় আটিঁগাটি,
পরের বেলায় চিমটি কাটি।
১৩.
পুকুরে তে পানি নাই, পাতা কেনো ভাসে
যার কথা মনে করি সেই কেনো হাসে ?
১৪.
ভাদরে করে কলা রোপন
স্ববংশে মরিল রাবণ।
১৫.
খনা বলে শুনে যাও
নারিকেল মুলে চিটা দাও
গাছ হয় তাজা মোটা
তাড়াতাড়ি ধরে গোটা।
১৬.
ডাক ছেড়ে বলে রাবণ
কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ।
১৭.
পুত্র ভাগ্যে যশ
কন্যা ভাগ্যে লক্ষী
১৮.
উঠান ভরা লাউ শশা
ঘরে তার লক্ষীর দশা
১৯.
বেঙ ডাকে ঘনঘন
শীঘ্র হবে বৃষ্টি জান।
২০.
আউশ ধানের চাষ
লাগে তিন মাস।
২১.
যদি বর্ষে ফাল্গুনে
চিনা কাউন দ্বিগুনে।
২২.
যদি হয় চৈতে বৃষ্টি
তবে হবে ধানের সৃষ্টি।
২৩.
চালায় চালায় কুমুড় পাতা
লক্ষ্মী বলেন আছি তথা।
২৪.
সোমে ও বুধে না দিও হাত
ধার করিয়া খাইও ভাত।
২৫.
জৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে।
২৬.
বাঁশের ধারে হলুদ দিলে
খনা বলে দ্বিগুণ বাড়ে।
২৭.
গাই পালে মেয়ে
দুধ পড়ে বেয়ে।
২৮.
শুনরে বাপু চাষার বেটা
মাটির মধ্যে বেলে যেটা
তাতে যদি বুনিস পটল
তাতে তোর আশার সফল।
২৯.
চৈতের কুয়া আমের ক্ষয়
তাল তেঁতুলের কিবা হয়।
অর্থ-কুয়াশায় আমের বোল নষ্ট হয়ে যায়
৩০.
আমে ধান
তেঁতুলে বান।
অর্থ- আম বেশি ফললে ধান বেশি জন্মে। তেঁতুল বেশি ফললে ঝড় বন্যা হয়।
৩১.
সমানে সমানে দোস্তি
সমানে সমানে কুস্তি।
৩২.
হোলা গোশশা অইলে বাশশা,
মাইয়া গোশশা অইলে বেইশশা
৩৩.
যদি না হয় আগনে বৃষ্টি
তবে না হয় কাঁঠালের সৃষ্টি
৩৪.
আল্লায় দিয়া ধন দেখে মন,
কাইড়া নিতে কতক্ষণ।
৩৫.
যদি থাকে বন্ধুরে মন
গাং সাঁতরাইতে কতক্ষন।
৩৬.
কাল ধানের ধলা পিঠা,
মা'র চেয়ে মাসি মিঠা।
৩৭.
ঘরের কোনে মরিচ গাছ
লালমরিচ ধরে,
তোমার কথা মনে হলে
চোখের পানি পড়ে!
৩৮.
সোল বোয়ালের পোনা
যার যারটা তার তার কাছে সোনা।
৩৯.
যা করিবে বান্দা তা-ই পাইবে।
সুই চুরি করিলে কুড়াল হারাইবে।
৪০.
পূর্ব আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়
সেই বছর বন্যা হয়।
৪১.
চৈত্রে চালিতা,
বৈশাখে নালিতা,
আষাড়ে.........
ভাদ্রে তালের পিঠা।
আর্শ্বিনে ওল,
কার্তিকে কৈয়ের ঝুল
৪২.
মিললে মেলা।
না মিললে একলা, একলা ভালা!
৪৩.
সাত পুরুষে কুমাড়ের ঝি,
সরা দেইখা কয়, এইটা কি?
৪৪.
না পাইয়া পাইছে ধন;
বাপে পুতে কীর্তন।
৪৫.
কাচায় না নোয়ালে বাশ,
পাকলে করে ঠাস ঠাস!
৪৬.
যুগরে খাইছে ভূতে
বাপরে মারে পুতে।
৪৭.
দশে মিলে করি কাজ
হারি জিতি নাহি লাজ।
৪৮.
ফুল তুলিয়া রুমাল দিলাম যতন করি রাখিও।
আমার কথা মনে ফইল্লে রুমাল খুলি দেখিও।
৪৯.
একেতে নাচুনী বুড়ি,
তার উপর ঢোলের বারি
৫০.
চোরের মার বড় গলা
লাফ দিয়ে খায় গাছের কলা
৫১.
ভাই বড়ো ধন, রক্তের বাঁধন
যদিও পৃথক হয়, নারীর কারন।
৫২.
জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।
শস্যের ভার না সহে ধরা।
৫৩.
যদি হয় সুজন
এক পিড়িতে নয় জন।
যদি হয় কুজন
নয় পিড়িতে নয় জন
(যদি হয় সুজন,
তেতুল পাতায় ন'জন।)
৫৪.
হাতিরও পিছলে পাও।
সুজনেরও ডুবে নাও।
৫৫.
গাঙ দেখলে মুত আসে
নাঙ দেখলে হাস আসে (নাঙ মানে- স্বামী)
৫৬.
ক্ষেত আর পুত।
যত্ন বিনে যমদূত।।
৫৭.
গরু ছাগলের মুখে বিষ।
চারা না খায় রাখিস দিশ ।।
৫৮.
আকাশে কোদালীর বাউ।
ওগো শ্বশুড় মাঠে যাও।।
মাঠে গিয়া বাঁধো আলি।
বৃষ্টি হবে আজিকালি।।
৫৯.
যদি ঝরে কাত্তি।
সোনা রাত্তি রাত্তি।।
৬০.
আষাঢ়ের পানি।
তলে দিয়া গেলে সার।
উপরে দিয়া গেলে ক্ষার।।
৬১.
গাঁ গড়ানে ঘন পা।
যেমন মা তেমন ছা।।
থেকে বলদ নাবয় হাল,
তার দু:খ সর্ব্বকাল।
৬২.
গরুর পিঠে তুললে হাত।
গিরস্থে কভু পায়না ভাত।।
গাই দিয়া বায় হাল
দু:খ তার চিরকাল।
৬৩.
যদি থাকে টাকা করবার গোঁ।
চৈত্র মাসে ভুট্টা দিয়ে রো।।
৬৪.
হলে ফুল কাট শনা।
পাট পাকিলে লাভ দ্বিগুণা।।
৬৫.
রোদে ধান, ছায়ায় পান।
৬৬.
ষোল চাষে মূলা, তার অর্ধেক তুলা
তার অর্ধেক ধান, তার অর্ধেক পান।
৬৭.
বার পুত, তের নাতি
তবে কর কুশার ক্ষেতি।
৬৮.
তাল বাড়ে ঝোপে
খেজুর বাড়ে কোপে।
৬৯.
ঘন সরিষা পাতলা রাই
নেংগে নেংগে কার্পাস পাই।
৭০.
বারো মাসে বারো ফল
না খেলে যায় রসাতল।
৭১.
ফল খেয়ে জল খায়
জম বলে আয় আয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:৩৭