রূপকথার এক দেশে একবার দুর্ভিক্ষ হলো
আধপেটা খাওয়া কৃষকগণ না খেয়ে মরলো, তবুও
জমিদারগণ খাজনা আদায় থেকে বিরত হলেন না
রাজকোষেও যথারীতি খাজনা জমা হলো এবং
রাজকবিগণও যথারীতি কবিতা লিখলেন
তাদের কবিতা শুনে রাজা শান্তিতে ঘুমাতে গেলেন
কবিরা স্বভাবতই আবেগী, তাই
কেউ কেউ কৃষকগণের দূরাবস্থা নিয়েও কবিতা লিখলেন, যদিও
সেসব কবিতা রাজাকে শুনানো হলো না
(এই দুর্ভিক্ষে নির্বিঘ্নে পেট পুরে ভাত খাওয়ার সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায় ?)
রূপকথার সেই দেশে কিছু গেয়ো কবি ছিল
রাজার দরবারে সম্মান না পেলেও কৃষকগণ তাদের খুব ভালবাসত
কৃষকদের প্রতি তাঁদেরও ছিল অনেক মমত্ববোধ
বিনোদনহীন কৃষকদের আনন্দ দেয়ার মধ্যেই ছিল তাঁদের সুখ
কালের বিবর্তনে রাজকবিগণের উত্তরসুরিরা আধুনিক হলেন
তাঁদের আধুনিকতার দাপটে গেয়ো কবিগণ হারিয়ে গেলেন
কৃষকগণ কবিতা থেকে বঞ্চিত হলো, এবং
কবিতা তার আভিজাত্য ফিরে পেলো
(গেয়ো কৃষকরা কবিতার কী বোঝে ?)
রূপকথার সেই দেশে একবার যুদ্ধ শুরু হলো
কবিগণ শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে বলে (মনে মনে) বিরক্ত হলেন
নির্বিঘ্নে কবিতা রচনা করার জন্য তাঁরা সীমান্ত পাড়ি দিলেন এবং
সীমান্তের ওপারে বসে তাঁরা দেশের জন্য কবিতা লিখলেন
কৃষকগণ কবিতা লিখতে জানে না, সুতরাং
যারা ওপারে গেল তারা কবিদের মত আদৃত হল না
রিফিউজি ক্যাম্পে কেউ মারা গেল, কেউ অর্ধমৃত হয়ে বেঁচে রইলো
বেশিরভাগ কৃষকই বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে নড়ল না
তারা লাঙল ছেড়ে জোয়াল কাধে শত্রু হননে নেমে গেল
যুদ্ধে যোগ দেয়ার অপরাধে অনেকেরই মা-বোন-বউ ধর্ষিত হল
বাবা-ভাই-সন্তান বেয়নেটের ধারাল খোচা আর গুলি খেয়ে মারা গেল
দেশে কৃষকদের এইসব বীরত্মগাথা শুনে কবিরা কবিতা লিখলেন
যুদ্ধ শেষে কবিরা সবাই দেশে ফিরলেন
বিজয়ের আনন্দে তারা হাজার হাজার কবিতা লিখলেন
কৃষকদের অনেকেই যুদ্ধ শেষেও ফিরল না
কবিরা তাদের নিয়েও কবিতা লিখলেন
রূপকথার সে দেশে কবিরা আজও কবিতা লেখেন
জোছনার ঠ্যাং, গোধুলির টিকোলো নাক কবিদের ভাষায় বিমূর্ত মূর্তি লাভ করে
কবিদের সেসব কবিতায় কৃষকের লাঙলের ফলার কথাও থাকে
কাস্তের মত প্রিয়ার বাঁকা গ্রীবা অথবা মন
ধান কাটা শেষে শস্যহীন মাঠের মত ফাঁকা হৃদয়
কবিদের উপমায় ধন্য হয় কৃষকের যাবতীয় উপকরণ, তবে
কৃষকগণ সেসব কবিতা যদিবা কোনদিন মরিচের ঠোঙায় পেয়েও থাকে
তা বোঝার সাধ্যি তাদের থাকে না, কেননা
কবিরা নিজেরাই যে সেসব ......
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১৩