আমি যদি পাখির মতন কোথাও উইড়া যাইতে পারতাম এইরকম অদ্ভুত গাম্ভীর্য ঝামেলায় পূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ঘুরে এলাম সিলেট।
সাথে ছিল আমার তিন ভগিনী কন্যা। উনারা বেশিরভাগ ছুটির দিনগুলোতে সর্বক্ষণ আমার মাথায় চড়ে
থাকে এবং আমায় প্রতিনিয়ত অত্যাধিক ঝামেলা প্রদান করে যাদেরকে আহ্ললাদের পাশাপাশি সর্বক্ষণ ধমকের উপর রাখতে এবং ধমক খাইতেও হয়।
আমি উনাদের রেখে কেন সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলাম এই অভিযোগ ও দিনে দিনে বাড়তে বাড়তে আক্রমণাত্মক আকারও ধারন করছিলো।
বিশেষ একজনকে বললাম কি করা যায় উনি পরামর্শ দিলো আধা পাগলগুলারে প্যালেসে নিয়া ছেড়ে দিয়ে তুমি তোমার মত সময় কাঁটাও, ওখানে পরিবেশ এন্ড সিকিউরিটি ভালো তোমাদের একা চার মেয়ে হলেও কোন অসুবিধা হবেনা।
অবশেষে তাই করলাম।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে আমরা সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। আমরা কালীগঞ্জ দিয়ে ঘোড়াশাল ভৈরব পার হয়ে মাত্র ৪ ঘণ্টায় সিলেট পৌছালাম। হাইওয়ে ছিল নিরিবিলি আর সুন্দর।
গান শোনা আর ছবি তোলা ছাড়া তেমন কিছু আর করার ছিলনা সেসময়।
খুব দ্রুতই আমরা ৫ তারকা হোটেল দি প্যালেস রিসোর্ট এন্ড স্পা পৌছে গেলাম।
রুম আগেই বুক করে রেখেছিলাম, আমাদের চেক ইন ছিল ২টায় , চেক আউট ছিল পরদিন ১২ টায়। এই একদিনে আমাকে প্রচুর খরচ করতে হয়েছে, যারা কম টাকায় ভ্রমনে ইচ্ছুক প্যালেস রিসোর্ট তাদের জন্য নয়। আমি ছেলে হলে অবশ্যই এত কস্টলি ভ্রমন করতাম না।
প্যালেসে অনেক কিছুই রয়েছে জিম,ছোটদের খেলার জায়গা, রিমোট কন্ট্রোল কার রেসিং। সুইমিংপুল , পাহাড়, লেক, বন জঙ্গল, থ্রিডি সিনেপ্লেক্স আর চতুর্দিকে সবুজ লন সুন্দর করে সাজানো আর সাথে পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে সাউন্ড সিস্টেমে ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক।
আমার রুম থেকে বাইরের প্রকৃতি
ওদের রুম রিজার্ভের সাথে সাথে মর্নিং ব্রেকফাস্ট ছিল ফ্রী। ডিনার এবং লাঞ্চ করার জন্য ৪/৫ টা ওদের রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা লাঞ্চ ডিনার ব্রেকফাস্ট সব অলিভ রেস্টুরেন্টেই করেছি।
অসাধারণ সব ফুল আর রঙের মেলা
আর্টিফিশিয়াল ট্রি
চারদিকে গুচ্ছ গুচ্ছ সাজানো ফুলের বাগান। নাম না জানা পাহাড়ি বুনোফুল।
লেকে যাওয়ার সিঁড়ি নীচে নেমে গেছে বহুদুর।
লেকে বোটে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার দুই ভগিনীর দুই কন্যাদ্বয়
গাছ গাছালী ছেয়ে আছে চারপাশে।
এদের মুল ভবন ছাড়াও আলাদা আলাদা অনেক কটেজ রয়েছে দেখলাম, ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেগুলোর একটি।
লেকের টলমলে জল
লেকের পাশে দেখলাম বেশ কিছু শুভ্র সাদা রাজহাঁস
কাপলদের জন্য জায়গাটা নিরিবিলি আর অসাধারণ।
অসাধারণ নিরিবিলি পরিবেশ
এখানে শান্তি যেন বিরাজমান সবসময়
অচেনা দুইজন সম্ভবত মা মেয়ে
সবশেষে বুদ্ধদেব বসুর লেখা আমার প্রিয় একটি কবিতার অংশ ।।
আমি যদি মরে যেতে পারতুম
এই শীতে
গাছ যেমন মরে যায়,
সাপ যেমন মরে থাকে
সমস্ত দীর্ঘ শীত ভরে।
যদি আমিও মরে থাকতে পারতুম
যদি পারতুম একেবারে শূন্য হয়ে যেতে,
ডুবে যেতে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে
তবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হতো না
এই বাঁচার চেষ্টায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৮