সমুদ্র দেখার ইচ্ছে ছিল যখন একটু বোঝার বয়স হয়েছিলো তখন থেকেই, কিন্তু সে সুযোগ কখনোই হয়ে ওঠেনি। এবার যখন অফিস থেকে
সেন্টমার্টিন যাবার কথা উঠলো ৩০/৪০ জন দল বেঁধে সমুদ্র দেখতে যাচ্ছে, বাসায় ফিরে আমার মা কে ভীষণ অনুরোধ করলাম, মা কে এ যাবত কাল এই জাতীয় কিছু বললে কখনোই পারমিশন দিতো না, এই জন্য না যে আমার উপর তার বিশ্বাস নেই, পারমিশন দেয়নি আমার সিকিরিউটির জন্য, কিন্তু এইবার যখন খুব রিকুয়েস্ট করলাম কদিন আগে এক্সিডেন্ট করা জেনির কথা বললাম যে আমি যদি এভাবে এক্সিডেন্ট করে ওর মত স্মৃতি হারিয়ে ফেলি তখন তো আর বুঝবোই না সমুদ্র কি! এসব কথা বলা অবস্থায় মা আমাকে অবাক করে থামিয়ে দিয়ে রাজি হয়ে গেলো।
কিন্তু সত্যি বলতে কি আজ যখন দেখতে দেখতে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন চলেই এলো আমার আর যেতেই ইচ্ছে করছেনা, হায় এই ধুলো বালি জ্যামের শহর ফেলে আমি যেন কোথাও যেতে চাইছি না,
আমার কি হল! আমি কি আমার সারাটা জীবন ঢাকায় কাটিয়ে দিয়ে একঘরে ঘরকুণো হয়ে গেলাম!! তবে আমি যে দেশ বিদেশ ঘুরে ঘুরে ফটোগ্রাফি করার স্বপ্ন দেখি তার কি হবে!! আমি এত একঘরে কবে হলাম! ভেবে ভেবে শংকিত হচ্ছি, না জানি কতই না বাজে হবে এই কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দীপ ভ্রমন!! বাজে বাজে বাজে।
সব পোটলা পাটলি গুছিয়ে অফিসে এসেছি এখান থেকেই সবাই মিলে রওয়ানা দেবো, আমার বিশাল দুই দুইটা ভ্রমন ব্যাগ নিয়ে বাসে উঠতে উঠতে এক হেল্পার কে ব্যাগ দিয়ে এমন চাপা দিয়েছি ( দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল কিনা) সে বার বার বলল মামা এম্নে এই সব ব্যাগ ধরে নাকি আমি যেই ব্যাথা পাইছি! জবাবে আমি হেসে দিয়েছি কি করবো এত ব্যাগ টানায় অভ্যস্ত না যে!
ভাবছি এখানকার সব কিছু কি ভীষণ ভাবেই না মিস করবো আমি, এই হেল্লপার, এই বাস, এই পাশে বসা মেয়ে যাত্রীটি, এই যে চেকপোস্টের পুলিশ গুলা, এই যে ঢাকা চাকা বাসটা, এই যে প্রতিদিনের গুলশান মোড়ের সকাল, অফিস, অফিসের টেবিল, কফির মগ, প্রতিদিনের ব্যস্ত ফাইলগুলো আমার! সব কিছু মিস করবো আমি।
ভীষণ একলা হয়ে যাচ্ছি আরও দূর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর
আয় একটিবার তুই সন্ধ্যা নামার আগে
আয় একটিবার তুই বুকের বারান্দায়
আয় একটি বার তুই অভিমানে রাগে
আয় একটিবার তুই বাক-বিতন্ডায়
তোকে বুঝতে থাকার চেষ্টায়
আমি পেরুচ্ছি রোদ্দুর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর
___রুদ্র গোস্বামী
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৪