প্লাস্টিক ল্যামিনেটেড বর্নমালার বইয়ের সেই রঙীন পাতাগুলো আজো ঢিল ছোড়ে টলটলে স্মৃতির পুকুরে.....
নিউজ প্রিন্টের পচা মন্ডের বাল্যশিক্ষার সাদাকালো অক্ষরগুলো যেন থেকে থেকেই স্মৃতির পর্দায় তাজা রঙীন হয়ে ওঠে......
মৃদুকম্প স্মৃতির সেই ঢেউ যেন এক সময় সুরংগ।
নস্টালজী অণুরণিত স্নায়ুকোষগুলো যেন সময় ভ্রমনের ভেল্কীযান....
ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই পিচ্চিবেলায়.......
কানে বাজে আমার মায়ের কন্ঠনালী থেকে স্বর্গমধুরতায় রীণিত - স্রূত সেই অপার স্নেহভরা আওয়াজ :
" পড় আব্বু........
স্বরেঅ / "অ" তে অজগর ঐ আসছে তেড়ে ,
স্বরেআ / "আ" তে আমটি আমি খাবো পেড়ে........"
[অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত]
আজো আমার ডানহাতের তর্জনীতে মায়ের হাতের ছোঁয়া পাই.....
কখনো মেঝেতে , কখনো খাটে বসে এই ছোট্ট "আমি"র তুলতুলে তর্জনীকে নিজের হাতে চুম্বকিত করে "অ" , "আ" , "ক" , "খ" এর উপর বুলিয়ে দিয়েছেন........
শিখিয়েছেন এই অক্ষরগুলোই আমাকে এই পৃথিবী চেনাবে.....
সত্যিই তাই......
সেদিনের সেই চক-স্লেটের ঘষাঘষিতে "আ" লিখার কসরতে আঙুল ব্যথা হয়ে যাওয়া পুচকে আমি আজ অন্তর্জালের এদিকে ওদিকে অক্ষরের বোতাম চাপি খটাখট.......
মনে পড়লে হাসি পায় .....
"ঐ" তে ছিলো ঐরাবত।
হাতি চিনতাম ।
কিন্তু হাতি কিভাবে " ঐরাবত " হলো ????
বাচ্চালু ভাবালুতায় আকাশ পাতাল ভ্রমন করতাম এ রহস্য উদ্ধারে....
সেই অক্ষর , দাড়ি - কমা , আ-কার , ই-কারে অনেক রহস্যই উদ্ধার করেছি আজ অব্দী........
পীথাগোরাসের উপপাদ্যের রহস্য....
শিশুর অন্তরে শিশুর পিতা ঘুমিয়ে থাকার রহস্য......
রাজর্ষি সন্ধি না সমাসের রহস্য.......
নিউটনের গতি সূত্রের রহস্য....
জন ডাল্টনের পরমানু রহস্য.......
মায়ের ভাষার অক্ষরে অক্ষরে রহস্যে ভরা জিনিসগুলো নিয়ে খেলতে খেলতেই আজ এতদুর চলে এলাম.....
আমার মায়ের সেই কন্ঠনালী আর আগের মত ঝরঝরে সুরেলা নয়.....
বাসা বেধেঁছে দুটো কর্কট কোষ......
একটি বাংলিশ , আরেকটি হিংলা.......
সময়ের স্রোতের অমর ভাষা বাংলার নিপাট শুদ্ধ তরলতায় মিশেছে ইংলিশ আর হিন্দির পচা স্রোত.......
কর্কট বেদনায় সেদিনের সেই মমতাময় আওয়াজ আজ কর্কশ হয়ে উঠছে ক্রমশ.........
এ তে অ্যাপল , বি তে ব্যানানার চকচকে আভিজাত্যের কাছে বিবস্ত্র - বিবর্ন অ তে অজগর , ব তে বই......
" দুনিয়ার সাথে তাল মেলাতে হবে।
হায়ার সেকেন্ডারীর পর বাংলা দিয়ে কিচ্ছু হয়না।
ইংরেজীই শেখাতে হবে শুরু থেকে ছেলে মেয়েকে।"
- এমন কথা আজ অনেক বাবা মায়ের মুখেই শোনা যায়।
হ্যা , বুঝলাম , কথা সত্যি , উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইংরেজীর কোন বিকল্প নেই।
কিন্তু বাবা / মা , আব্বু / আম্মু শব্দগুলিকে কিচেন সিংকে ধুয়ে ফেলে বাচ্চাকে যখন শেখানো হয় পাপা / মাম সেগুলো কোন উচ্চতর জ্ঞানের কত নং অধ্যায়ের অংশ ?
আনারসকে চাষাভুষাদের গ্রাম্য শব্দ জ্ঞান করে বাচ্চাকে অ্যাগোরা, পিকিউএস আর হাবিজাবি সব বাংলিশ নামের দোকানে নিয়ে পাইনঅ্যাপল চেনানোটা কোন উচ্চতর জ্ঞানের কত নং অধ্যায়ের অংশ ?
ঠাকুরমার ঝুলিকে মুদি দোকানের ঠোঙার মত করে ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে বাচ্চাকে হ্যারী পটার চেনানো কোন উচ্চতর জ্ঞানের কোন নং অধ্যায়ের অংশ ?
হোজ্জা নাসিরুদ্দিন , বীরবল , গোপাল ভাঁড়ের গল্পকে নাঁক সিটকিয়ে চার্লি চ্যাপলিনে বাচ্চাকে বুদ করে রাখা কোন উচ্চতর জ্ঞানের কত নং অধ্যায়ের অংশ ?
কাকের ময়ূর সেজে আজকাল কার পাপা আর মামদের এই হিজড়ামো কি সন্তানের মেধাচর্চার ভবিষ্যত ভেবে ?
নাকি ভবিষ্যতের " সেলিব্রেটী " হওয়ার জন্য বাচ্চাকে "স্মার্টার - শার্পার" করে গড়ে তুলতে ?
এসব বাচ্চারা ইফতারের টেবিলে ড্রিংকস খোজে , শরবত খোজেনা।
ডেসার্ট খোজে , মিষ্টি - রসমালাই - সন্দেশ খোজেনা।
কেকের ভেতরে পিনাট খোজে , বাদাম খোজেনা।
ক্র্যাকার্স আর স্ন্যাকস খোজে , ভাজাভুজি খোজেনা।
এসব বাচ্চারা দুপুরেও খায়না , রাতেও খায়না।
ওরা এখন লান্চ্ঞ আর ডিনার করে।
তাও আবার ভাত দিয়ে নয় কিন্তু , ওরা লান্চ্ঞ-ডিনার করে রাইস দিয়ে।
ভাত শব্দটা যে কত অচ্ছুত - ভেতো আর চাষাভূষাদের ক্ষেতো শব্দ হয়ে গেছে তা আমি বুঝতে পেরেছিলাম এক আত্নীয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে....
আশে পাশের সবাই যখন খাবার টেবিলে মাঝেমাঝেই "রাইস" চাইছিলো তখন আমিও অসহায়ের মত "রাইস" চেয়েছিলাম... ভাত চাইনি.....
ব্লগে যতোই বাংলাপ্রেম দেখাই না কেন প্রতিদিনকার জীবনে কার সেলফোন সেটটা "কুল" , কাকে দেখতে "পশ" লাগছে আর কার কোন কাজটা "অসাম" হয়েছে তা নিয়ে কত হিজড়া বুলিই আমরা এখনকার বাঙালী বুলবুলিরা হরদম বলে ফেলি.......
চাকরীর বাজারেও নাকি এখন এই বাংলিশের দর উত্থান ঘটছে দিনদিন....
বাইরে নানারকম বাংলিশ কপচানো ফিটফাট , ভেতরে সদরঘাটরা নাকি বেশ ভালোই "জব" করে।
ঢা.বি. অ্যাকাউন্টিং এর ৪/৫ টা বন্ধুর সাথে আড্ডায় শুনেছি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে ওরা এমনই মার খেয়েছে চাকরীর বাজারে যে ব্র্যাকও নাকি চাকুরী দেনেওয়ালা বাপদের কাছে বেশী পছন্দ ঢা.বি.র চাইতে....
জিজ্ঞেস করলাম : কারনটা কি ?
আমার দোস্তদের ঠোঁট উল্টানো উত্তর : ওরা যে ঢং কৈরা ইংলিশ কয়
বুয়েট জীবনে ক্যাফেটেরিয়ার সামনের আড্ডায় পোলাপান যখন পিংক ফ্লয়েড , মেটালিকা , আয়রন মেইডেন আর হাবিজাবি সব পশ্চিমা ব্যান্ড নিয়ে হাউকাউ করতো তখন এই অন্তর্মুখী আমি একা একা ভাবতাম :
" আচ্ছা মেটালিকা , পিংক ফ্লয়েড এটা সেটা - ওরা কি আমার মায়ের দেশ , শেকড়ের দেশ - এই ছোট্ট বাংলাদেশ কে চেনে ?
যদিও বা চিনে থাকে , নাম শুনে আবার নাক সিটকাবে নাতো ? "
কথায় বলে মোর ক্যাথলিক দ্যান দ্য পোপ.....
পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে দেশান্তরী হয়ে দেখেছি
মোর আমেরিকান দ্যান দ্য আমেরিকানস কাকে বলে........
কানে দুল , চোখের ভ্রুতে দুল , মাথার চুল রাতা মোরগের মত - ড্যি জুস সং জাতির কিছু ছেলেপেলে বাপের টাকায় আমেরিকায় পড়তে এসে এমন ভাবখানা নিচ্ছে যেন আমেরিকানদের কেই ওদের কাছে শিখতে হবে স্মার্ট কিভাবে হতে হবে !
এদের আমেরিকানদের চেয়েও বেশী আমেরিকান সাজতে চাওয়াটা যেমন কাকের ময়ূর সাজার মত তেমনি এদের "অ্যামারিকান অ্যাকসেন্টে" ইংরেজী বলার ঢং টাও অনেকটা কাকের গলায় কোকিলের গানের মত......
" ইটস মাই লাইফ " "ক্রেইজী" এই সব বাংরেজ প্রজন্মের কাছে ফেরিওয়ালার হাঁকডাকের মতই নগন্য হয়ে গেছে আব্দুল জব্বারের দরাজ গলা " তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয় ".......
জীবনস্পর্শীতা - মর্মস্পর্শীতা কি সেটা এই সং প্রজন্ম জানেনা.....
মানবজীবনের করুনাভেদীতা কি সেটা ওরা গানের ভেতর খুজে দেখেনা........
ওরা খোজে কেবল "ক্রেইজ".......
অবশ্য এদেরকেই বা দোষ দিয়ে কি লাভ ?
এদের বাবা মায়েরা আরো ২ কাঠি সরেস........
শুদ্ধ - প্রমিত বাংলা লিখতে - বলতে গায়ে জ্বর চলে আসা , ক - লিখতে কলম ভাঙা প্রাকৃত জন গেঁয়ো বাবা মার ঘরে জন্মানো অনেকেই আজ নতুন টাকায় ফিটফাট বাবু......
ওসব বাংলা টাংলা দিয়ে সদ্যলব্ধ বাবুত্বের ঠাটবাট হয়না , সাহেবী ভাষা ইংরেজী না কপচালে সাহেবীয়ানা ঝকমক করেনা।
অবশ্য এদেরকেই বা আর দোষ দিয়ে লাভ কি ?
বাঙালীত্বপনার মহান দিকপাল , পাকিস্তানী স্ত্রীর স্বামী ডঃ কামাল হোসেনের মেয়ে সারাহ যেভাবে একুশে টিভিতে বাংলিশ প্যাচাল পেড়ে নিজের "ইংলিশ " কেতাদুরস্ততার মাধ্যমে বারিস্টারীপনা জাহির করেন তাতে ভাবাই যায় - বাংলিশ শিখলেই সাক্ষাৎ স্টার।
শুনলে অবাক হবেন মাহফুজ আনামের মেয়ে তাহমিমা আনাম বাংলাই বলতে পারেনা !
নিজদেশের নোবেল জয়ী ডঃ ইউনুসকে সমালোচনা করে পরদেশী অমর্ত্যসেনকে নিয়ে দোস্তিপনায় মেতে থাকা রেহমান সোবহানের প্রিয় সংগীত মধ্য ইউরোপীয়ান ক্লাসিক.....
কেঁচো খুজলে এমন আরো অনেক "বংগেত জন্মি হিংসে বংগবাণী" সাপই বের হয়ে আসবে......
হায় আমার মায়ের ভাষা বাংলা , তোমাকে যারা সম্মান দেয়নি , আমিও ওদের সম্মান দেবোনা কখনো , খোদার কসম.......
শুধু কি বাচ্চা , নব্যধনী বাবা মা আর দেশপুংগব "বংগেত জন্মি হিংসে বংগবাণী" সুশীলরাই এমনটা করছে ?
আমরা ও কি পিছিয়ে আছি ?
ছোট বেলায় কতবার মামাতো - খালাতো- চাচাতো - ফুফাতো ভাইবোনরা মিলে ঈদের সময় , শীতের ছুটিতে চোর পুলিশ খেলেছি , লুডু খেলেছি.....
এখন আর কেউ মামাতো - খালাতো - ফুফাতো - চাচাতো নয় ......
সবাই এখন কাজিন
যদি তাই হয় তবে শব্দটিকে বাংলা অভিধানে ঢুকিয়ে ফেলা হোক.....
হসপিটাল যদি হাসপাতাল হয়ে , বটল যদি বোতল হয়ে বাংলায় ঢুকে যায় তবে কাজিন আর কি দোষ করলো ?
নারী-পুরুষের হৃদয় রসায়নের প্রেম-ভালোবাসা-মনের দুর্বলতা চিরন্তন....
অনেকেরই তাই ভালোলাগার মানুষ থাকে , মনের মানুষ থাকে......
কিন্তু আজ আর কোন ভালো লাগার মানুষও নেই , মনের মানুষও নেই....
সবার থাকে অ্যাফেয়ার , সবাই এখন ডেট , বিএফ , জিএফ
তাই বোধহয় সিডির বাজারে দেশী থ্রীর রমরমা ব্যবসা আজ।
রেডিও টেলিভিশনে "আরজে / প্রেসেন্টার " নামক চিড়িয়াদের হিজড়ামো ভাবভংগীমায় উৎকট বাংলিশ চিৎকার শুনে হাসি পেয়ে যায় :
" পশ্চাৎদেশ মৃত কাক নাকি আকাশ ফাটিয়ে চেঁচায় - কাআ কাআআআআ "
আমরা কেউ আর সুপ্রিয় দর্শক নই , সবাই এখন ডিয়ার ভিউ্যয়ারস.....
কেউ আর সুপ্রিয় শ্রোতা নই , সবাই এখন ডিয়ার লিসেনারস......
পুরস্কার বিজয়ে , উপহার প্রাপ্তিতে হাততালির যুগ চলে গেছে......
সময়টা এখন "গিফট হ্যাম্পার" পাওয়া "উইনার"দেরকে "বিগ হ্যান্ডে"
"কনগ্রাটস" করার.......
" মিউজিক এক্সপ্রেস " এর ঝাকানাকা বাদ্য বাজনার কাছে হেরে গেছে "হারানো দিনের গান"...
" ডেফিনেশন ডিজে " এর দোলাদুলির কাছে চিৎপটাং "আধুনিক বাংলা গান".....
ফেসবুকে অসংখ্য ছেলেমেয়ের প্রিয় সংগীতের তালিকায় থাকে পশ্চিমা গায়ক , ব্যান্ড আর গান.....
মস্তিষ্কের শ্রদ্ধার কোষগুলো থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সাবিনা ইয়াসমীন , রুনা লায়লা , আব্দুল হাদী , আবদুল জব্বার , বেবী নাজনীনরা........
ক্যাটস আই , কে ক্র্যাফট , রেক্স , ইনটেনয - হাজারটা ইংরেজী পুচ্ছ পাছায় নিয়ে নিয়ে বাংলা ফ্যাশনের চর্চা করা দোকানপাটে দেশটা ভরে যাচ্ছে....
বাংলিশে বাংলিশে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে , দুঃখ - চীন থেকে আমাদের আলপিন আমদানী এখনো বন্ধ হলোনা !
এতসব সাত পাচ চিন্তা করতে করতে মাঝে মাঝে নিজেকেই গেঁয়ো , ক্ষ্যাত , অসুস্থ মনে হয়.....
সেই অসুস্থতা কাটাতে ধার নিতে হয় কুমার বিশ্বজিতের সেই গানটি....
এত গেলো বাংলিশ বর্নন ।
বাংলার সাথে হিন্দী মিশিয়ে হিংলা নামে যে নতুন কিছু হিজড়া বুলি প্রসার পাচ্ছে দিনকে দিন সে আরেক নতুন উৎপাত।
অনেকেই বলে - পাকিস্তানীদের মোটা বুদ্ধিতে কুলোয় নি , তাই ওরা ডান্ডার বাড়ি দিয়ে আমাদেরকে উর্দু গেলাতে চেয়েছিলো।
ভারতীয়দের চিকন বুদ্ধি নাকি সুইয়ের চেয়েও সরু........
তাই ওরা হিন্দি সিনেমা আর সিরিয়ালের মিষ্টির ভেতরে হিন্দির ক্যাপসুল গিলিয়ে দিচ্ছে আমাদেরকে......
সত্যিই তাই......
নিউমার্কেট - গাউসিয়ায় প্রতি ঈদে কারিশমা লেহাংগা , মাধুরী ঘাগড়া , দেবদাস চুড়ী নিয়ে ঢাকাই নারীকূলের কাড়াকাড়ি ঘিলুতে কড়া নাড়িয়ে দেয় - হিংলার প্রভাব কতোটা প্রকট !
মনে পড়ে - হিন্দী সিরিয়াল "জ্যাসি জ্যাসি কোই নেহী" শুরু হলে শুধু টিভির রুমটা বাদে পুরো বাসার অবস্থা দাড়াতো - " ঘরমে আদমী কোই নেহী ".......
জ্যাসির বর্তমান কেমন যাচ্ছে , ভবিষ্যতে কি হবে- এই নিয়ে নিখিল বংগ নারীকুলের সেই কি উৎকন্ঠা !
বোধহয় দেখানো হতো সনি চ্যানেলে.....
বাংলিশ বুঝতে - বলতে না হয় দু চার কলম ইংরেজী পড়তে জানতে হয়.......
কিন্তু হিংলা ?
ফুটপাথে দাড়িয়ে যে টোকাইগুলো ইলেক্ট্রনিক শো রূমের বাইরে দাড়িয়ে আয়নার ভেতর দিয়ে সদাচালু টিভির পর্দায় তাকিয়ে থাকে ওরাও হিংলা বলতে পারে......
জাবিকো লাড়কী দেখো মেরা দিল দিওয়ানা বলে ওলে ওলে ওলে ....
হায় সেক্সী হ্যালো সেক্সী কিউ বলে ......
রুখ রুখ রুখ , আরি বাবা রুখ ......
তু চীজ বড়া হ্যায় মাস্ত মাস্ত.......
মেরা পিয়া ঘরে আয়া ও রামজী.......
এভাবে বলে শেষ হবেনা...
এমন সব হিন্দী গান যেন বছরের পর বছর এদেশের চায়ের দোকান , চুলকাটার সেলুন , হোটেল রেস্তোরা আর দুরপাল্লার বাসগুলোর "জব্বর গান" !
হিন্দি সিনেমার যত কিম্ভুতকিমাকার গান আছে সব যেন এদেশের আপামর মহান জনগনের বর্ষসেরা রসিয়া সংগীত !
বুঝতে হবে - "যৌবন আমার লাল টমেটু " কি এমনি এমনি সুপার ডুপার হিট ???
হিংলায় মজে যাওয়া কিছু ফেসবুক বন্ধুকে দেখি স্ট্যাটাস দেয় :
Tujhko jo paaya... To jeena aaya... Ab ye lamha theher jaye... tham jaye... bas jaye... hum Dono ke darmiyaaaaan.........
ফেসবুকেই একবার এক ছেলেবন্ধু আর মেয়েবন্ধুকে মেসেজ দিয়েছিলাম এ নিয়ে....
কাকতালীয়ভাবে দুজনেরই উত্তরটা ছিলো একই -
"ঐ হিন্দি লাইনগুলোতে জীবনের অনেক সুন্দর ফিলোসোফি থাকে , এগুলা তুমি বুঝবানা"...
হিন্দিতে লুকিয়ে থাকা জীবনের সব গূঢ় দর্শন না হয় বাদই দিলাম...ওটা না হয় আমি বুঝবো না...
কিন্তু ....এইতো কদিন আগে শাহরুখ আর তার টু পিস গং এর নর্তন কুর্দনে আর্মি স্টেডিয়ামে বসেছিলো যেন ছাদখোলা জাতীয় জলসা !
সেবার শাহরুখের সাথে হিন্দি বাতচিতে লেজে গোবর মাখিয়েছিলো বেকুব মর্কট গাজী ইলিয়াস....
মন্চ্ঞ থেকে নেমে লেজের গোবর ধোয়ার আগেই গাজির মুখে এসে পড়েছিলো বাংলিশ গালির গোবর.........
গোবর তো এদেরকেও ছুড়ে মারা দরকার....
অ্যাকটেল এক্সীড , ফ্লেক্সীলোড , ইজিলোড , এফএনএফ হাবিজাবি সব বাংলিশ গিলিয়ে কর্পোরেট কোম্পানী গুলোই আবার দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিটের ভন্ডামী করে.....
জানিনা এই বাংলিশ- হিংলার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোতে কি আছে.....
আমি শুধু মাকে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি -
নশ্বরতার অমোঘ নিয়ম মেনে তুমি একদিন হারিয়ে যাবে....
জীবন-মৃত্যুর বিভেদ ঝিল্লী ছেদ করে চলে যাবে অন্যপাশে......
তোমাকে আমি ধরে রাখতে পারবো না জানি.....
কিন্তু তোমার স্মৃতিকে আমি হারিয়ে যেতে দেবোনা.....
তোমার স্মৃতিকে বাচানোর জন্যই তোমার কন্ঠনালীর সেই আওয়াজ আমি হারিয়ে যেতে দেবোনা.....
অনাগত জীবনের স্ত্রী সন্তানের ভেতর হয়তো তোমার ভাষা বেঁচে থাকবেনা প্রাচীন পরিশুদ্ধতায়.....
কিন্তু আমার ভেতরে তোমার ভাষাকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো......
শুধু তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আমার স্মৃতিকোষ গুলোতে....
এ আমাকে পারতেই হবে......
[১]
অমর আমার মায়ের ভাষা.......
অমর আমার প্রাণের ভাষা.......
আ-মরি বাংলাভাষা......
[১] ছবিসত্ত্ব : আরিফুর রহমান / ফ্লিকর লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০৪