somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় ঢাকা আর মনুষ্যত্ব

২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন সকাল ৯ টা বাজে, সায়দাবাদ থেকে আমার চট্টগ্রাম যাবার বাস। তাই ফার্মগেট থেকে সায়দাবাদ যাবো। কিন্তু মানুষের তুলনায় বাস নেই। কিছুক্ষণ পর পর যে বাসগুলো আসছিল সব ভর্তি,
উবার-পাঠাও সব ট্রাই মেরে দেখলাম অন্তত ফ্রিতে চড়তে পারি কিনা। কিন্তু উবারে কোনো গাড়ি দেখলাম না আর পাঠাও তে সাইন আপ করা না থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে আর চেষ্টা করলাম না।
উপায়হীন হয়ে একটা সিটিং সার্ভিস(!) বাসেই উঠে পড়লাম। উঠে দেখি পেছন দিকে অনেকগুলো দাঁড়িয়ে যাবার সিট! এত বছর ঢাকায় থেকে কিছু পাই না পাই অন্তত দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে থাকার অভিজ্ঞতা পেয়েছি তাই কোনো সমস্যা হয়না। যথারীতি আমার জায়গা দখল করে নিয়ে নিলাম। গাড়ি চলা শুরু......
কিছুক্ষণ পর হেল্পার ভাড়া নিতে আসলেন, ভাড়া তুলতে গিয়ে ঝামেলা হবেনা তা কি মানায়? কখনোই না। তাই যুগ যুগ ধরে চলে আসা রীতির সম্মান জানাতে বেশ কিছু যাত্রী তাদের যুক্তি হেল্পারের সামনে তুলে ধরা শুরু করলেন। এদিকে হেল্পারও নাছোড়বান্দা, সিটিং সার্ভিসে সে কখনোই লোকাল ভাড়া নিবেননা! আবার যাত্রীরাও লোকাল ভাড়ার চেয়ে একটা পয়সাও দিবেননা।
.
একটার পর একটা টপিক বাসের লোকজনের কথায় কথায় উঠে আসতে লাগলো আর বিজ্ঞ লোকগণ তাদের মতামত দিতে দিতে আনন্দের সাথে বাসযাত্রা উপভোগ করছেন। মতিঝিলের কাছে চলে আসার পর হঠাৎ কোথ থেকে যেন এক মহিলা তার স্কুলগামী বাচ্চা নিয়ে বাসে উঠলেন। কত্ত বড় সাহস!! উনি দেখেছেন যে সামনে মহিলা সিটে কয়েকজন পেন্ট শার্ট পড়া মহিলা(!) বসে আছেন তারপরও কোন সাহসে উনি বাচ্চা নিয়ে বাসে উঠেন!!!
.
এভাবেই চলছে। বাস মতিঝিল অতিক্রম করছে। কিন্তু বেরসিক এক ট্রাফিক পুলিশের দেয়া সিগনালে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তখনো পর্যন্ত মাত্র দুটি বসার সিট খালি হয়েছে আর দুজন ভদ্রলোক প্রতিযোগিতা করেই বসে পড়লেন। উনারাই তো বসবেন, এটাই তো নিয়ম। কারন এগুলো তো সব পুরুষের সিট! এমন সময় পাশের রাস্তায় একটা রিকশাকে পেছন থেকে মজা করে একটা বাস ঠেলা দেয়ায় রিকশার একটা ঠেং বা চাকা ভেঙে গেল। সব রিকশাওয়ালার দোষ, কতটা বেয়াদব হলে এভাবে বাস চলার রাস্তায় এমন নড়বড় রিকশা নিয়ে দাঁড়ায় থাকে!!! এটা দেখে বাসের যাত্রীগণ অমনি করে দুইদলে ভাগ হয়ে গেলেন। একদল রিকশাওয়ালার দোষ আছে বলে যুক্তি শুরু করে দিলেন আরেকদল যেন প্রতিজ্ঞা করলেন তারা পালটা যুক্তি দিয়ে রিকশাওয়ালাকে নির্দোষ প্রমাণ করেই ছাড়বেন।
.
ওদিকে রিকশাওয়ালা আর রসিক বাস ড্রাইভারের গালাগালি পর্ব চলছে। আবার রিকশাওয়ালার সাথে রিকশায় বসে থাকা দুজন লোকও তাল মেলাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কি ঘটলো তা আর দেখার সুযোগ হলোনা। বাস ছেড়ে দিলো আর বাসের বিজ্ঞ যাত্রীগণ নতুন একটা টপিক পেয়ে গেলেন। অমনি আবারো শুরু..... এবার তাদের সাথে বাসের হেল্পারসাহেবও যোগ দিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করলেন। এভাবে নতুন একটা টপিক আসলো "দুনিয়ায় ভালো মানুষের বড্ড অভাব"
সবাই যার যার সিটে বসে আফসোস করছেন যে দুনিয়ায় ভালো মানুষ নেই। তবে হেল্পার সাহেব এটা মানতে রাজি নন, তার মতে অবশ্যই ভাল মানুষ আছে এ দুনিয়ায়। তর্ক চলতে চলতে বাস সায়দাবাদ এসে পৌঁছালে আমি নেমে যেতে যেতে ভাবলাম, হয়তো বাসের হেল্পার সঠিক। এখনো অনেক ভাল মানুষ আছে এ দুনিয়ায়। কেবল ঐ বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া মহিলা আর ঠেংভাঙা রিকশাটার ফাজিল রিকশাওয়ালাদের জন্যই ভালো মানুষরাও খারাপ বনে হারিয়ে যান।
.
এটাই ঢাকা, এটাই আমাদের শহর, এটাই আমাদের কংক্রিটের দুনিয়া যেখানে কংক্রিটের ভিড়ে যেমনি সবুজ গাছপালা হারিয়ে যায় তেমনি কৃত্রিমতার ভিড়েই হারিয়ে যায় অকৃত্রিম মনুষ্যত্ব। তবুও দিনশেষে মানুষ অমানুষ সকলকে আপন করে নেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়েই ভোরের আলোর অপেক্ষায় থাকে ভালবাসার ঢাকা শহর........
বিদায় ঢাকা, দেখা হবে আবার হয়তো মাঝরাতের বাস থেকে নেমেই অথবা ভরদুপুরের কাঠপোড়া রৌদে..........
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×