গঙ্গা:
মহাভারত আদিতে আছে - দেবর্ষি নারদ রাগ রাগিনীযুক্ত সঙ্গীতজ্ঞ হলেও তার ত্রুটির জন্য সঙ্গীতের তাল ভঙ্গ হয়ে যেত অথচ তা তিনি স্বীকার করতেন না। নারদকে শিক্ষা দেয়ার জন্য রাগ রাগিনীরা বিকলাঙ্গ নর-নারীর রুপ নিয়ে পথে পড়ে থাকে। নারদ তাদের দেখে বিকলাঙ্গ হওয়ার কারন জানতে চান। নিজ ত্রুটির কথা জানতে পেরে রাগ রাগিনীর এমন বিকলাঙ্গ দূর করার উপায় শুনতে চান। উত্তরে তারা জানায় যে, মহাদেব স্বয়ং এসে সঙ্গীত শোনালে তারা পূর্ব দেহ ফিরে পাবে।
নারদ মহাদেবকে গান গাইতে রাজি করান। তবে গান শোনার জন্য মহাদেব ব্রক্ষ্মা এবং বিষ্ণুকে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থাকার শর্ত দেন। পূন্য বলে নারদ তাদের নিয়ে আসেন। মহাদেবের গান শোনে রাগ রাগিনীরা সুস্থতা পায়। কিন্তু মহাদেবের সঙ্গীতের প্রকৃত মর্ম ব্রক্ষ্মা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন। বিষ্ণু তার সঙ্গীতের মর্ম কিছুটা নিতে পেরেছিলেন বলে দ্রবীভূত হয়ে যান। ব্রক্ষ্মা দ্রবীভূত বিষ্ণুকে হাতের তালুতে রক্ষা করেন। পরে সগীর বংশীয় রাজপুত্র ভগীরথ ব্রক্ষ্মাকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে দ্রবীভূত বিষ্ণুকে গঙ্গা নদী রূপে মর্তে নিয়ে আসেন। গঙ্গাই বিষ্ণু অর্থাৎ সাক্ষাত ভগবান। তাই গঙ্গা বা তার জল হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র।
যমুনা:
মার্কেন্ডেয় পরানে আছে, বিশ্বকর্মার কন্যা সংজ্ঞার সঙ্গে সূর্যের বিবাহ হয়। সংজ্ঞা সূর্যের তেজে চোখ নিমীলিত করে রাখতেন। এতে ক্রুদ্ধ সূর্য তাকে এই অভিশাপ দেন যে, সংজ্ঞা চোখ মেহন করেছেন। তাই তার গর্ভে যে পুত্র হবে সেই পুত্র প্রজা মেহনকারী যম হবে অর্থাৎ প্রজাদের মৃত্যুর ব্যবস্থা করবে। সূর্যের এই অভিশাপে ভীত সংজ্ঞা স্বামীর প্রতি চপলভাবে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন। সূর্য তখন বললেন, আমার প্রতি চঞ্চলা দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে তোমার যে কন্যা হবে সে চঞ্চলা নদীতে পরিণত হবে। যথা কালে কন্যার জন্ম হলে কন্যাটি পিতৃ অভিশাপে কালিন্দ পর্বত হতে চঞ্চল স্বভাবা নদী রূপে নেমে আসে।সেটাই বর্তমান যমুনা।
সরস্বতী:
মৎস্য পুরানে আছে, ব্রক্ষ্মা নিজ মুখ থেকে শুক্ল বর্ণা বীণাধারিণী এবং চন্দ্রের শোভাযুক্তা এক কন্যা সৃষ্টি করেন যার নাম সরস্বতী। ব্রক্ষ্মা নিজ কন্যার রুপে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হন। এর ফলে সরস্বতী গর্ভবতী হন এবং মনু নামের পুত্র প্রসব করেন। মনুর পুত্র কন্যা হতে মনুষ্য জাতির বিস্তার হয়। তাই তারা মানব। সরস্বতী থেকে মানব সৃষ্টি ও বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু। ফলে তিনি বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।